Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আজকের কংসবধ পালা || Tapan Kumar Chattopadhyay

আজকের কংসবধ পালা || Tapan Kumar Chattopadhyay

সন্ধ্যে হওয়ার আগে থেকেই আকাশটা কালো মেঘে ভরে গিয়েছিল। জীবনপুর গ্রামীণ হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের সামনে প্রসূতিদের আত্মীয়-স্বজনঅধীর অপেক্ষায় । আশাতীত ভাবেই কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়ে গেল, আশপাশের বাড়ীর ছেলেমেয়েরা উঠানে আম কুড়োতে ব্যস্ত, মংলু দারোয়ানের মেয়ে ডুংরীও হাসপাতালের আমতলায় আরো কয়েকটা ছেলেমেয়েদের সাথে আম কুড়োতে ব্যস্ত। হঠাৎ আকাশ চিরে তীব্র আলোর ঝলকানি, কাছেই কোথাও প্রচন্ড শব্দে বাজ পড়ল। মংলু তাড়াতাড়ি মেয়েকে টেনে ঘরে নিয়ে চলে গেল , ডুংরির মা দুজনকে ছোলাসেদ্ধ মুড়ি খেতে দিয়ে চা বসাতে গেল। ঝড়ের জন্য রান্না ঘরের জানলাটা বন্ধ করা ছিল, নুরী শুনতে পেল একজন অপরজনকে বলছে , লে ধর কেনে, বড়কর্তা ফোনটো কইরছ্যান কি বলে শুন। অপরজন বলে পেন্নাম কর্তা , বলেন কি আদ্যেশ , পাশের জন বলে আরে পীকারে ক্যানে, আম্মোও শুনি । নুরী জানলায় কান পেতে শুনল ,আজ বড়কর্তার মেয়ে এখুনি হাসপাতালে ভর্তি হবে বাচ্চাটাকে মেরে লোপাটের ব্যাবস্থা করতে হবে। এরপর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গ্যালো আর টিনের চালে বৃষ্টির আওয়াজে কিছুই শোনা গ্যালো না। মংলুকে চা দিয়ে যতটুকু শুনেছে সবটাই বলল, সবশুনে গম্ভীর স্বরে সে বলল ছোট দিদিমণি প্রশান্ত দাদাকে মন্দিরে লিয়ে গিয়ে বিহা কইরছে , কারণ অনেক দিন ধরে মেলামেশার ফলে ই-ঘটনাটো ঘোটেছে বটে। ঝাইহোক আমি বড়ডাক্তারের সঙে কুথা বলে দেখি , কিছুতো একটা কইরতে হবেক। ইদিকে শুনছি প্রশান্তদাও নিখোঁজ, উয়ার বাড়ি থেকে থানায় কমপেলেন কইরছেক্।

সব প্রসূতিদের প্রসব সুষ্ঠভাবে করার পর অনিন্দ্য ডাক্তার চা নিয়ে বসেছে , সেই সময় বড়কর্তাপ্রসূতি মেয়েকে নিয়ে ঢুকে বললেন ,শোনো ডাক্তার, আমার মেয়ের বাচ্ছা যেন ভালো ভাবে হয় তার ব্যাবস্থা করো। আমি একটা জরুরি কাজ সেরে আসছি, দুজন লোক রেখে গেলাম বাকি সবকিছু ওরা সামলাবে। অনিন্দ্য মংলুর কাছে সব আগেই শুনে ছিলো, তাই বড়কর্তার লোক দুটোকে ভালো করে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে বলেছিল আর মংলু তাদের আকন্ঠ দেশীমদ খাইয়ে বেসামাল করে দিয়েছিল। আর বেশ কিছুক্ষণ পর সেদিন প্রসব হওয়া একটা মৃত বাচ্ছাকে ওদের হাতে তুলে দিয়েছিল। পরের দিন মৃত শিশুটির মারও মৃত্যু হয়। অনিন্দ্য তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে আর মংলুকে বলে বড়কর্তার নাতিকে ওদের হাতে তুলে দিতে, ঈশ্বরের কৃপায় তারা ঐ শিশুটিকে কোনো অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিতে কারণ তাদের দুঃখ একটাই ঐ শিশুটির জন্য তার মা মারা গ্যাছে, তাই সে অপয়া। রাখে হরি মারে কে? সদ্য সন্তানহারা অনিন্দ্য আদরের সাথে তাকে কোলে তুলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নুরীকে সাথে নিয়ে বাচ্ছাটীকে নিজের বাড়ী কলকাতায় নিয়ে এসে মাধুরীর কোলে দিয়ে বলে তোমার আনন্দ আবার ফিরে এসেছে। এরপর আনন্দ মাধুরীর স্নেহ ভালোবাসায় বেড়ে উঠতে লাগল। একদিকে মা যশোদার কাছে কানাই বড় হতে লাগল আর অন্যদিকে শোকেতাপে আহার নিদ্রা ত্যাগ করে দেবকী অর্ধমৃত,অনিন্দ্যর পরামর্শে নুরী তাকে খবরটা জানিয়ে বলে তুমি তোমার দাদা অর্থাৎ বড়কর্তাকে বলে কলকাতার স্কুলেই আবার ফিরে যাও, বড়ডাক্তার বাবুর বাড়ীর কাছাকাছি কোথাও বাসার ব্যাবস্থা করো, আর মাঝে মধ্যে বড় ডাক্তারবাবু তাকে নিয়ে আসবে। যাইহোক নীলাক্ষী সেইমত নিজের ব্যাবস্থা করে নিল, আর অনিন্দ্য প্রশান্তর খোঁজ খবর শুরু করল, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের অফিসার অনিন্দ্যর বন্ধু সুমন সেন, পর্য্যন্ত কোনো তদন্তে অসফল হয়নি। কয়েক মাসের মধ্যে জানতে পারল , বড়কর্তা তাকে পঙ্গুকরে জয়সলমীরে ছেড়ে দিয়ে এসেছিল, তারপর সে কোনো রকমে ভিক্ষা করে বেঁচে আছে,ভয়ে আর অভাবে ফেরার ইচ্ছা ত্যাগ করেছে। নীলা, অনিন্দ্যর চেষ্টায় সেখানে গিয়ে তার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেছে , ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। নীলা নিজের চেষ্টায় সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিয়ে প্রথমে দিল্লীতে পরে স্বামীর অসুস্থতার কারনে রাজস্থানের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। এদিকে আনন্দ এখন আই, পি,এস পরীক্ষা দিয়ে, বর্ধমানের সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ। অনিন্দ্য অবসরের পর কলকাতার এক নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রী ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে যুক্ত রয়েছে। আজ আনন্দর জন্মদিন , আজ মাধুরী নেই, তিন বছর আগে হঠাৎ একদিনের অজানা জ্বরে রামকৃষ্ণ লোকে স্থান পেয়েছে। সকালে বৃদ্ধ প্রশান্ত ও নীলা তার বাড়ীতে পৌঁছেছে। ব্রেকফাস্ট টেবিলে আনন্দকে বলে অনিন্দ্য, এনাদের প্রণাম কর ,প্রণাম হয়ে গেলে , অনিন্দ্য সমস্ত ঘটনা খুলে বললে, তিন জনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। অনিন্দ্য একটা দস্তাবেজ দিয়ে বলে আনন্দ এতে সমস্ত তদন্তের বিবরণ আছে তুমি প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী তোমার কংসমামার বিচার করে মা-বাবার উপর অবিচারের সুবিচার করলে,তোমার নতুন মা শান্তি পাবে।

এরপর আনন্দ সমস্ত রকমের প্রশাসনিক নিয়ম মেনে অশীতিপর বৃদ্ধ বড়কর্তা, প্রদোষ মহান্তকে খুনের চেষ্টার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জেলে পাঠাল।পরে প্রশান্ত ও নীলার আবেদনে তার সমস্ত স্থাবর ,অস্থাবর সম্পত্তি সরকারে নস্ত্য করে , এক অভাবগ্রস্ত বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করে, সেখানেই
আমৃত্যু বন্দীদশা কাটানোর ব্যাবস্থা হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress