ঠিক এরকমই দেখি— যে মৌমাছি ছেড়ে দিয়ে গেছি
আমার আত্মার প্রতিনিধি; চুপ করে উড়ে যায়
ভেবেছিলাম এই যে থমথমে ভাব চারপাশে
তাতে সে বিশেষ মাত্রা হয়ে উঠবে, দেখি তা হয়নি
দূর দিয়ে চরাচর মাঠ হয়ে চলে গেছে, যেটি
একদিন বাইশটা কিশোর একটি বল নিয়ে
কেবল ছুটবে, পরিবর্তে খুব সাবধানে, পাশ
দিয়ে আরও চুপ করে চলে গেছে একটি বারান্দা
আর তার রেলিঙের ধার ধরে ঝুঁকে আছে ও কে?
কালো লম্বা যে তরুণী, শাড়ি পরা, কোথায় দেখেছি?
সব অলৌকিক মাছেদের সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসে?
আমি তার পাশে গিয়ে দেখি তার দৃষ্টি মৌমাছির
দিকে— যাই হোক সেও তো বাংলার মেয়ে, কালো মেয়ে
বাংলার বৃষ্টিতে ভিজে তরুণী হয়েছে, তারপর
এইখানে তুমি আজ প্রথম এসেছ, মনে করে
দ্যাখো আমি তোমাদের বাড়িতে যেতাম, আর ঠিক
এই রেলিঙের ধার ধরে দাঁড়াতাম আমরাই
মনে পড়ে? তোমার বাবার সঙ্গে পাইন বাগান
দিয়ে জীবনে প্রথম বড় হয়ে টুক টুক করে
হাঁটছিলে, যে দুটি কিশোর আর থাকতে না পেরে
তোমাকে ও তোমার বাবাকে আওয়াজ দিয়েছিল
তার একজন আমি…
সে রেলিং, রেলিঙের ধার
অসীমের মধ্যে দিয়ে চলে যাচ্ছে সুদূর ট্রেনের
মতো, তোমাদের বাড়ি পড়ে আছে গরিব বাংলায়
গমকল আর তার ডাক ঝোপের ভেতর, তার চালে
অল্প সজনের ছায়ায় শুয়ে আছে বাড়ির বিড়াল
এই সব থেকে মুক্ত হয়ে চলে এসেছে রেলিং
তুমি ধরে ছিলে, শাড়ি পালটাবার সময় পাওনি
হাতে কাঁটা, উল, গরমের ছুটি কবে হচ্ছে, শোনো
তুমি বিনু, আমি চাই তুমি এই স্তব্ধ জায়গায়
একটু বিরাজ করো, তোমার হাতের উল আমি
নিজে ধরে রাখলাম, তুমি প্রকৃতির মধ্যে গিয়ে
বাইরে বেড়িয়ে এসে একটি মৌমাছি হয়ে দেখা
দাও, বারান্দায়— যেটি এ মাঠের একপাশ দিয়ে
চলে গেছে, শোনো আমি আবার তোমার সাথে দেখা
করে নেব কলেজ ক্যাম্পাসে; আর যদি নাই পারি
তোমার বাবাকে নিয়ে বড় হয়ে বেরিয়েছ যেই
সেদিন আবার আওয়াজ দেব পাইন বাগানে।