অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়ান দিবসে-শ্রদ্ধা ও প্রণাম
অপরাজেয় কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ও জীবন নির্বাহ হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ১৮৭৬, ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ১৯৩৮, পরাধীন ভারতবর্ষে। উদাসী পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায়ের নিদারুণ দারিদ্রের প্রভাব শরৎচন্দ্রের হয়ত এক আশীর্বাদ হয়েই উঠেছিল। ভাগলপুরে মামাবাড়িতে প্রথম বাস ও স্কুলজীবন । ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ভাগলপুরের “তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল ” থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন ।
কলেজে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে এফ . এ পরীক্ষা দিতে পারেননি , শিক্ষাজীবনের ইতি। তাতে কি, শরৎচন্দ্রের নিজ মনোজগতে যে অনেক বড়ো, ধীরে ঋদ্ধ হতে থাকলেন আপন খেয়ালমনে – খুশির রাজ্যে । তিনি থিয়েটারে অভিনয় ও গান – বাজনা নিয়ে মেতে উঠলেন । ১৮৯৫ সালে তাঁর মা মারা গেলেন । ছন্নছাড়া ভবঘুরে শরৎচন্দ্র ১৯০৩ সালে গেলেন শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে জীবিকার সন্ধানে,তখন তার বয়স ২৭ বছর । রেঙ্গুনে অঘােরনাথ বাবু বর্মা রেলওয়েতে ৭৫ টাকা বেতনে শরৎচন্দ্রের একটি চাকরি জুটিয়ে দেন।
লেখালেখির নেশার ঘোর আরও আগে থাকতেই এসে গিয়েছিল।
কলম তার শানিত হতে থাকল ধীরে ধীরে, চেনা জগৎকে ঘিরে— সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মবিদ্বেষ, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, জাতপাতের ভণ্ডামী, শাসন শোষনের প্রতি হয়ে উঠলেন সোচ্চার, কলম কালিতে শুধুই সুখপাঠ্য তার নকশা। আর ছিল অসাধারণ দূরদর্শিতার বুৎপত্তি।
“মহেশ” গল্প প্রসঙ্গে কি বলেছিলেন শরৎচন্দ্র এখানে তা উদ্ধৃতি দিচ্ছি। শিক্ষা ও সমাজ শাসনের, এর চেয়ে বড়ো নজির আর কিছু নেই।
[[শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
(মুসলিম সাহিত্য সমাজ)
মহেশ প্রসঙ্গ—
“আমার ভয় শুধু তাঁদের যাঁরা সাহিত্য-সেবা না করেও সাহিত্যের মুরুব্বি হয়ে বসেছেন। প্রিয় না হলেও একটা দৃষ্টান্ত দিই। ‘মহেশ’ নামে আমার লেখা একটি ছোট গল্প আছে, সেটি সাহিত্যপ্রিয় বহু লোকেরই প্রশংসা পেয়েছিল। একদিন শুনতে পেলাম গল্পটি Matric-এর পাঠ্য-পুস্তকে স্থান পেয়েছে। আবার একদিন কানে এলো সেটি নাকি স্থানভ্রষ্ট হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজের কোন যোগ নেই, ভাবলাম এমনিই হয়ত নিয়ম। কিছুদিন থাকে, আবার যায়। কিন্তু বহুদিন পরে এক সাহিত্যিক বন্ধুর মুখে কথায় কথায় তার আসল কারণ শুনতে পেলাম। আমার গল্পটিতে নাকি গো-হত্যা আছে। আহা! হিন্দু বালকের বুকে যে শূল বিদ্ধ হবে! বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বহু টাকা মাইনের কর্তা-মশায় এ অনাচার সইবেন কি করে? তাই ‘মহেশ’, এর স্থানে শুভাগমন করেছেন তাঁর স্বরচিত গল্প ‘প্রেমের ঠাকুর’।”
মহেশের ভাগ্যে অন্য দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাইনে, কিন্তু নিঃসংশয়ে জানি এক হিন্দু জমিদার রক্তচক্ষু হয়ে শাসিয়ে বলেছিলেন, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের সাহায্যে ছাপা মাসিক বা সাপ্তাহিকে এ ধরনের গল্প যেন আর ছাপা না হয়। এতে জমিদারের বিরুদ্ধে প্রজা ক্ষেপিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ দেশের সর্বনাশ হয়।”]]
১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন উৎসবে,শরৎচন্দ্র পান ডি. লিট্ উপাধি,আরও দুজনের সাথে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়( রসায়ন) ও যদুনাথ সরকার ( ইতিহাস) ছবিতে ধরা আছেন সাথে ভাইস চ্যান্সেলর মিঃ রহিম ও,তদানীন্তন ভাইসরয় আলেকজান্ডার জন হোপ ।
“মনীষী রােমাঁ রােলাঁ শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত পড়ে বলেছিলেন নােবেল পুরস্কার পাওয়ার মতাে উপন্যাস ।”