Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মাথামোটা শংকর এবং গ্রীন বয়েজ ফুটবল ক্লাব

থ্রী থেকে ফোরে উঠব।

বার্ষিক পরীক্ষা এসে গেছে। বাড়িতে বাড়িতে পড়াশোনার ধুম। আমি নির্বিকার। বই নিয়ে বসতে ভালো লাগে না, যদিও পড়তে বসতে হয়। সেই বসাটা পুরোপুরিই ভান। সবাই দেখল, আমি বই নিয়ে বসে আছি, এই পর্যন্তই। তখন প্রতি সন্ধ্যায় সিলেট শহরে মজাদার ব্যাপার হত-তার নাম লেমটন লেচকার। কথাটা বোধহয় লণ্ঠন লেকচার-এর বিকৃত রূপ। ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে জায়গায় জায়গায় সিনেমা দেখানো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ম্যালেরিয়া এইসব ভালো ভালো জিনিস। আমাদের কাজের ছেলে রফিক খোঁজ নিয়ে আসে আজ কোথায় লেমটন লেচকার হচ্ছে—মুহূর্তে আমরা দুজন হাওয়া। রফিক তখন আমার বন্ধুস্থানীয়। তার কাছ থেকে বিড়ি খাওয়ার উপর কোর্স নিচ্ছি। বিড়ি খেলে কচি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে মুখের গন্ধ নষ্ট করতে হয় এসব গুহ্যবিদ্যা শিখে নিচ্ছি। এই জাতীয় শিক্ষায় আমার আগ্রহের কোনো অভাব দেখা যাচ্ছে না।

লেমটন লেকচারের ভূত আমার ঘাড় থেকে নামানোর অনেক চেষ্টা করা হল। নামানো গেল না। মা হাল ছেড়ে দিলেন। এখন আর সন্ধ্যা হলে পড়তে বসতেও বলেন না। আমি মোটামুটি সুখে আছি বলা চলে।

এমন এক সুখের সময়ে মাথামোটা শংকর খুব উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল, তার মা তাকে বলেছেন সে যদি ক্লাস থ্রী থেকে পাশ করে ফোর-এ উঠতে পারে তা হলে তাকে ফুটবল কিনে দেবেন।

সে আমার কাছে এসেছে সাহায্যের জন্য, কী করে এক ধাক্কায় পরের ক্লাসে ওঠা যায়। একটা চামড়ার ফুটবলের আমাদের খুবই শখ। সেই ফুটবল এখন মনে হচ্ছে খুব দূরের ব্যাপার নয়। সেইদিনই পরম উৎসাহে শংকরকে পড়াতে বসলাম। যে করেই হোক তাকে পাশ করাতে হবে। দুজন একই ক্লাসে পড়ি। এখন সে ছাত্র, আমি শিক্ষক। ওকে পড়ানোর জন্যে নিজেকে প্রথম পড়তে হয়, বুঝতে হয়। যা পড়াই কি করে মাথায় ঢোকে না। মনে হয় তার দুই কানে রিফ্লেক্টর লাগানো। যা বলা হয় সেই রিফ্লেক্টরে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে, ভেতরে ঢুকতে পারে না। যাই হোক প্রাণপণ পরিশ্রমে ছাত্র তৈরী হল। দুজন পরীক্ষা দিলাম। ফল বের হলে দেখা গেল আমার ছাত্র ফেল করেছে এবং আমি মকুলের সমস্ত শিক্ষকদের স্তম্ভিত করে প্রথম হয়ে গেছি। ফুটবল পাওয়া যাবে না এই দুঃখে রিপোর্ট কার্ড হাতে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলাম।

এই রুদ্র ঘটনা বাবাকে খুব মুগ্ধ করল। বাসায় যে-ই আসে বলেন, আমার ছেলের কাণ্ড শুনুন। পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরেছে। কারণ হল…চ

এই ঘটনার আরেকটি সুফল হল বাবা মাকে ডেকে বলে দিলেন-কাজলকে পড়াশোনা নিয়ে কখনো কিছু বলার দরকার নেই। ও ইচ্ছা হলে পড়বে, ইচ্ছা না হলে না। তাকে নিজের মতো থাকতে দাও।

আমি পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে গেলাম।

এই আনন্দের চেয়েও বড় আনন্দ, বিশেষ বিবেচনায় মাথামোটা শংকরকে প্রমোশন দিয়ে দেয়া হল। তার মা সেই খুশিতে তাকে একটা একনম্বরি ফুটবল এবং পাম্পার কিনে দিলেন।

গ্রীন বয়েজ ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হল। আমি ক্লাবের প্রধান এবং শংকর আমার অ্যাসিসটেন্ট। আমাদের বাসার কাজের ছেলে রফিক আমাদের ফুলব্যাক। অসাধারণ খেলোয়াড়।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress