Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হাউসবোটে নিখোঁজ || Sujan Dasgupta » Page 5

হাউসবোটে নিখোঁজ || Sujan Dasgupta

ক’দিন বাদে কলেজে একটা ফোন পেলাম একেনবাবুর কাছ থেকে। নিউ ইয়র্কে এখন রাত্রি সাড়ে বারোটা। এত রাত্রে পয়সা খরচ করে একেনবাবুর ফোন!

“কী ব্যাপার?”

“আই ওয়াজ এ ফুল স্যার, আই ওয়াজ এ ফুল!”

“কী যা-তা বলছেন আপনি?”

“আমাকে শুধু বলুন, প্রথম দিন অনিমেষবাবু কি ঠিক দুটোর সময় আপনার কাছ থেকে চলে গিয়েছিলেন?”

আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, একেনবাবু কীসের কথা বলছেন।

“আপনার সেমিনারের দিন স্যার?”

“ও হ্যাঁ, আমার একটা সেমিনার ছিল, তাই।”

“সেটা জানি স্যার। উনিই কি ঘড়ি দেখে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন আর বলেছিলেন আপনার সেমিনারের দেরি হয়ে যাচ্ছে?”

“তাই তো বলেছিল, কারণ তখন প্রায় দুটো বেজেছিল।”

“কিন্তু স্যার, ওঁর ঘড়ি অনুসারে তখনও তো দশ মিনিট সময় ছিল, এত তাড়াহুড়ো করলেন কেন?”

“আমার কোনও ধারণাই নেই।”

“আপনার বন্ধু অত্যন্ত ক্লেভার স্যার, এ ভেরি ক্লেভার এন্ড ডেঞ্জারাস ম্যান। আমি মলয়কে ফোন করে বলছি, টু টেক ইমিডিয়েট অ্যাকশন।”

লাইনটা হঠাৎ কেটে গেল। মোবাইল ফোনের টিপিক্যাল সমস্যা। চেষ্টা করেও একেনবাবুকে ধরতে পারলাম না।

রাত্রে অর্থাৎ নিউ ইয়র্কের সকালে একেনবাবুকে পেলাম।

“কী ব্যাপার, সাসপেন্সের মধ্যে ফেলে রেখে হঠাৎ ফোন কেটে দিলেন যে কাল?”

“ব্যাটারিতে চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল, স্যার। কিন্তু সাসপেন্স কেন, মলয় কিছু বলেনি আপনাকে?”

“নাঃ!”

“হয়তো অন্য কোনও তদন্তে জড়িয়ে পড়েছে।”

যাইহোক একেনবাবুর কাছ থেকে যা যা ঘটেছে সব কিছুই জানলাম। একেনবাবুর কথা শুনেই অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে বারীনকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন মলয়বাবু। জানতে পেরেছেন, বারীন যে পৈত্রিক বাড়িটা প্রমোটারকে বিক্রি করে দিচ্ছে, অনিমেষ সেই বাড়িতেই থাকে। এই তথ্য আমার অজানা নয়, নাকতলার পার্টিতেই জেনেছিলাম, আর একেনবাবুকে জানিয়েও ছিলাম। কিন্তু এর তাৎপর্যটা কী হতে পারে খেয়াল করিনি। অনিমেষ শুধু বারীনের বাড়িতে ফ্রি থাকে তা নয়, ওই বাড়িতেই টিউটোরিয়ালের রমরমা ব্যাবসা চালায়। বাড়ি বিক্রি হলে সেই ব্যাবসা লাটে উঠবে। অনিমেষ বারীনকে বলেছিল বিক্রির ব্যাপারে অপেক্ষা করতে, কিছুদিন বারীন করেছিল। কিন্তু হঠাৎ একটা ভালো ডিল পেয়ে যাওয়ায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়।

হার্ড ফ্যাক্ট বলতে এটুকুই। এবার শুরু হচ্ছে লজিক। সেটাই একেনবাবু বিশদ করলেন।

“এই বিক্রিটা একমাত্র বন্ধ করা যায় যদি সুপারি কিলার দিয়ে বারীনবাবুকে সরানো যায়। কিন্তু তাতে সন্দেহের তির অনিমেষবাবুর ওপর পড়বে, যেহেতু ওঁর ফাইনানশিয়াল ইন্টারেস্ট আছে। তখনই এই ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়াটা অনিমেষবাবুর মাথায় আসে। যদি বারীনবাবুকে কোনও মতে খুনের মামলায় জড়ানো যায়, তাহলে ফাঁসি না হলেও বহুদিনের জন্য বারীনবাবুকে শ্রীঘরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে অনিমেষবাবুর বাড়ি ছাড়ার কোনও প্রশ্নই উঠবে না। ভাস্বতাঁকে অনিমেষবাবু খুব ভালোভাবেই চিনতেন, ওকে মাস দুই পড়িয়েছিলেন। শিক্ষক-ছাত্রীদের মধ্যে অনেক সময় যা হয়, একটু প্রেম প্রেম ভাব হয়তো এক সময়ে হয়েছিল। এইটেই অনিমেষবাবু কাজে লাগালেন। বোটে যাবার আগে একদিন কোনও এক ফাঁকে অনিমেষবাবু ভাস্বতাঁকে প্রেম নিবেদন করে ইলোপ করার প্রসঙ্গটা তুললেন। নিশ্চয় বলেছিলেন এটা খুব প্রাইভেট, বারীনবাবুকেও যেন না জানে। তবে কোনও এক বন্ধুকে জানিয়ে রাখতে বলেছিলেন, অবশ্যই অনিমেষবাবুর নাম না করে। তাহলে পালিয়ে যাবার পরে বাবা-মা বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না। আসল উদ্দেশ্য, পরে তদন্তের সময় পুলিশ যেন এই তথ্যটা পায়। ভাস্বতী সত্যি সত্যিই অনিমেষবাবুর সঙ্গে পালাত কি না বলা শক্ত। কিন্তু একজন যুবাপুরুষ ওকে এরকম ভাবে কামনা করছে … খবরটা ভাস্বতী ওর এক বন্ধুকে না জানিয়ে পারেনি।

“বোটে উঠে সবাই যখন বাইরের ডেকে বসে আছে, অনিমেষবাবু চট করে ভাস্বতীর সঙ্গে দেখা করে আসেন। নিশ্চয় বলেন সাড়ে বারোটার আগেই ওর কাছে অনিমেষবাবু আসবেন। অন্যদের ড্রিংকস-এ ঘুমের ওষুধ অনিমেষই মেশান। তারপর ইচ্ছে করে আউট হয়ে যাবার ভান করেন। হাউসবোটে সময়ের হিসেব অনেকগুলোই হয়তো অনিমেবাবুর বানানো। তবে এটা মনে হয় ঠিক, সবাই চলে গেলে বারীনবাবুকে নিয়ে অনিমেষবাবু কেবিনে গিয়েছিলেন। তারপর বারীনবাবু শুয়ে চোখ বুজতেই গিয়েছিলেন ভাস্বতীর কাছে। ভাস্বতীর হাত থেকে কোনও এক ছুতোয় বইটা নিয়ে আচমকা দড়াম করে মুখে বা মাথায় মেরেছিলেন।…”

“খুন করার জন্য?”

“না স্যার, আমার ধারণা উদ্দেশ্য ছিল অজ্ঞান বা হতবুদ্ধি করে দেওয়া, যাতে ধাক্কা দিয়ে জলে ফেলে দেওয়ার সময় ভাস্বতী চেঁচাতে না পারে। তারপর বই আর হ্যারিকেন দুটোই জলে বিসর্জন দিয়ে কেবিনে এসে শুয়ে পড়েন।”

একেনবাবুর কাছে এতটা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বইয়ে না হয় রক্ত লেগে থাকতে পারে, কিন্তু হ্যারিকেনটা ফেলে দেবার কারণ কী?”

“আমার ধারণা স্যার, হ্যারিকেনের আলোয় বসে মেয়েটা পড়ছিল। মেয়েটাকে জলে ফেলে দেবার সময়ে হ্যারিকেনটাও উলটে জলে পড়ে যায়। বুঝতে পারছি এক্ষেত্রে ‘বিসর্জন’ কথাটা ঠিক খাটে না। কিন্তু যেটা ইন্টারেস্টিং, সেটা হল এর পরে অনিমেষবাবুর অভিনয় এবং আমাদের ভুল পথে চালানোর চেষ্টা। টুকরো টুকরো নানান ইনফরমেশন দিয়ে বারীনবাবুর ওপর সন্দেহ জাগানো, সবার যেন মনে হয় ভাস্বতীর এই অন্তর্ধান বা খুনের পেছনে বারীনবাবুর হাত আছে। না স্যার, সোজাসুজি নয়, তবে সেই তথ্যগুলোর যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা খাড়া করে সেই সিদ্ধান্তেই সবাই যেন আসি। যেমন ধরুন, দশ মিনিট বাদে মিটিং-এ এসে ঠিক সময়ে এসেছি ভান করা। মলয় তাতে বিরক্ত হলেও দেরিটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়াই ছিল অনিমেষবাবুর প্ল্যান। দেরিটা আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি। যাতে পরে আমরা ভাবি, এটা বারীনবাবুর টাইম-অ্যালিবাই তৈরি করার চেষ্টা.. হাউসবোটে অনিমেষবাবুর ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দেওয়া এবং পরে সময় মেলানোতে ভুল করা… সবকিছুই পারফেক্ট। কিন্তু একটা ভুল করেছিলেন অনিমেষবাবু, সেটাই কাল হল। প্রথমদিন অসতর্ক ভাবে ঘড়ি দেখে দুটোর সময় দুটো বলা। এত করেও শেষ রক্ষা হল না।”

।।শেষ কথা।i

তবে দোষী প্রমাণ শুধু লজিক দিয়ে হয় না। জেরার চাপে অনিমেষ অপরাধ স্বীকার করেছে। জেরা করার সময়ে মলয়বাবু মিথ্যে করেই ভাস্বতীর ডায়রিতে অনিমেষের উল্লেখ রয়েছে বলেছিলেন, তাতেই কাজ হয়েছে। বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে অনিমেষের ঘোরতর আপত্তির কথা বারীন জানিয়েছে। বারীনকে সরানোর জন্য অনিমেষ একজন কনট্রাক্ট কিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, সেটাও জানা গেছে। তদন্তের জাল মোটামুটি গুটিয়ে এসেছে।

Pages: 1 2 3 4 5
Pages ( 5 of 5 ): « পূর্ববর্তী1 ... 34 5

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress