Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্পোকেন ইংলিশ মার্ডার মিস্ট্রি || Sujan Dasgupta » Page 3

স্পোকেন ইংলিশ মার্ডার মিস্ট্রি || Sujan Dasgupta

এরমধ্যে মা-কে নিয়ে দিন কয়েকের জন্যে এক বিয়ে উপলক্ষে ধানবাদ যেতে হল। ফিরে এসে প্রমথর কাছে শুনলাম একেনবাবু পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই খুনের ব্যাপারে পুলিশ নাকি খুব একটা এগোতে পারেনি। একেনবাবু নন্দিতার কেসটা হাতে নিয়েছেন দেখে অধীরবাবু নাকি খুবই খুশি। একেনবাবুর সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করছেন। এই হত্যাকাণ্ডের খুনি ধরা পড়লে ওঁর মাথা থেকে একটা মস্ত বোঝ নামবে। বিস্তারিত খবর আজ বিকেলেই জানা যাবে, ‘মিলনী কাফে’তে একেনবাবু আমাদের মোগলাই পরোটা খাওয়াচ্ছেন!

মানতেই হবে ধন্য প্রমথর অধ্যবসায়! কী যে বলেন স্যার, আপনাদের একদিন খাওয়াতে পারব না’ বলে ঘোষণা করলেও এ নিয়ে অনেক টালবাহানা চলছিল।

কিন্তু প্রমথ হাল ছাড়েনি। ফ্যামিলির শরীরটা ভালো যাচ্ছে না বলে ব্যাপারটা স্থগিত রাখার শেষ চেষ্টাও ধোপে ঠিক টেকেনি।

‘বাড়িতে লুচি পরোটা রান্না করলে কি বউদির শরীর ভালো হয়ে যাবে? পয়সা খসাতে চান না সোজাসুজি বলুন, এরকম ফালতু এক্সকিউজ দিচ্ছেন কেন!’ প্রমথর এই বাক্যবাণের সঙ্গে যখন যোগ হয়েছে একেনবউদির প্রশ্ন, ‘আমার আবার শরীর খারাপ কোথায় দেখলে?’ একেনবাবুকে তখন রণেভঙ্গ দিতে হয়েছে। সুতরাং মোগলাই আজ হবেই।

মিলনী কাফে-টা বাইরে থেকে দেখে প্রথমে চিনতে পারিনি। পুরোনো বিশাল সবুজ সাইন বোর্ডটা আর নেই, সেখানে লাল রঙের একটা বোর্ডে লেখা ‘আইডিয়াল স্পোকেন ইংলিশ ইনস্টিটিউশন’। দোতলায় জানলার ফাঁক দিয়ে বেশ কয়েকটা ছেলেমেয়ের মুখ চোখে পড়ল। বুঝলাম ভাড়াটেদের তুলে দিয়ে ওখানে স্কুল হয়েছে। মিলনী কাফেটা স্ব-স্থানেই আছে। দরজার ওপরে মেটাল প্লেটে খোদাই করে নামটা রয়েছে, কিন্তু রাস্তা থেকে চট করে চোখে পড়বে না। উলটোদিকে গানের যে স্কুলটা ছিল সেটাও নেই। সেখানে এখন একটা কোচিং সেন্টার। সেখানে খুব ভিড়, সম্ভবত অ্যাডমিশন চলছে। কাছাকাছি কোনো পার্কিং-এর জায়গা পাওয়া গেল না। দূরে গাড়ি রেখে অনেকটা হাঁটতে হল।

বড়ো সাইন বোর্ডটা অদৃশ্য হলেও মিলনী কাফের পপুলারিটি দেখলাম কমেনি। মাত্র একটা টেবিলই ফাঁকা পড়েছিল। সেটা দখল করে আমিই মোগলাই পরোটা অর্ডার করলাম। সেই সঙ্গে মাংস আর একেনবউদির জন্য আলুর দম। ক্যাশিয়ার কাউন্টারে দেখলাম মৃত্যুঞ্জয়বাবু বসে আছেন। এই আট বছরে বেশ খানিকটা বুড়িয়েছেন! চুলে পাক ধরেছে, একটু যেন কুঁজোও হয়ে গেছেন। একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে নানান

দিকে তাকাচ্ছেন। দেখে যেন মনে হয় কাউকে খুঁজছেন। হঠাৎ আমাদের দিকে চোখ পড়ল। লোকটির সঙ্গে কথা বলা শেষ করে আমাদের টেবিলে এসে দাঁড়ালেন।

“কবে এলেন?” একেনবাবুকে প্রশ্নটা করলেন বটে, কিন্তু গলার স্বরে আন্তরিকতার অভাব, যেন করার জন্যই প্রশ্নটা করা।

“এই তো ক’দিন আগে। আপনি কেমন আছেন স্যার?”

“চলছে, আমাদের আর থাকা না থাকা।”

“কেন স্যার, আবার কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি?”

“ঝামেলা, কেন বলুন তো!” কেমন একটা শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকালেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু।

“সেই যে ড্রাগ-ডিলার চক্র?”

“না না, ওরকম আর কিছু হয়নি। এর পর কিছু একটা বলতে গিয়ে কেমন জানি চুপ করে গেলেন। তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনাদেরও তো অনেক দিন দেখিনি।”

প্রমথ বলল, “আমরাও তো ওঁর সঙ্গে বাইরে আছি।”

“তাই নাকি, কোথায়?”

এমন সময় অন্য প্রান্তে বসা ফুলহাতা সোয়েটার গায়ে মাঝবয়সি গোঁফ-অলা মুষকো একটা লোক উচচস্বরে কাউকে বলল, “যা, তোর বাবুকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর, চা কি পাওয়া যাবে, না অনন্তকাল এখানে বসে থাকতে হবে!”

লোকটির মুখোমুখি বসা কমবয়সি একটি মেয়ে। দূর থেকে দেখছি, তাই জোর করে কিছু বলা শক্ত, কিন্তু মনে হল মেয়েটার মুখে একটা অস্বাচ্ছন্দ্যের ভাব।

যে ছেলেটি পাশের টেবিলে খাবার দিচ্ছিল, মৃত্যুঞ্জয়বাবু তাকে বললেন, “দ্যাখ তো রতন, চা দিতে দেরি হচ্ছে কেন!”

রতন বলল, “দেরি কেন হবে! উনি তো এইমাত্র হরিদাকে অর্ডার দিলেন, আমি নিজে শুনেছি!”

মৃত্যুঞ্জয়বাবু নিচুস্বরে বললেন, “এই এক জ্বালা হয়েছে এঁকে নিয়ে।”

“ইনি কে স্যার?”

“ওই ওপরে স্পোকেন ইংলিশের মালিক।”

“আগে তো স্কুলটা ছিল না, তাই না?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“না, এই বছর চারেক হল হয়েছে। তার পরেই এই উৎপাত! শনির দশা!”

কেন শনির দশা, সেটা আর জিজ্ঞেস করা হল না। কিছু না বলে অ্যাব্রাপ্টলি মৃত্যুঞ্জয়বাবু চলে গেলেন। খানিকক্ষণ বাদে দেখলাম নিজেই ঘুরে ঘুরে কাস্টমারদের অর্ডার নিচ্ছেন, রতন বা রতনের হরিদার ওপর ভরসা না রেখে।

আমাদের খাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে গেল। এনে দিল সেই রতন। রতনকে এবার আমি চিনতে পারলাম। বছর সাতেক আগেও এখানে কাজ করত। বড়ো জোর বছর দশ কি বারো বয়স ছিল তখন। শিশুশ্রম আইন-টাইনগুলো কেউ মানত না। এখনও তেমন মানে কি?

খাবার দিতে দিতে রতন আমাদের জিজ্ঞেস করল, “আমাকে চিনতে পারছেন দাদাবাবুরা?”

“পারব না কেন!” প্রমথ বলল, “কেমন আছিস?”

“আপনাদের আশীর্বাদে ভালোই আছি।”

“হ্যাঁরে, মৃত্যুঞ্জয়বাবু কি অসুস্থ? শরীরটা একেবারে ঝরে গেছে! আগের মতো কথাবার্তাও বলছেন না।”

“বাবুর ট্র্যাজেডি হয়েছে দাদাবাবু।”

“ট্র্যাজেডি!”

“আবিরদা সুইসাইড করলেন যে!”

“আবিরদা কে?”

“দেখেননি আপনারা? বাবুর ছেলে!”

“সুইসাইড করল কেন?”

উত্তরটা রতনের দেওয়া হল না, তার আগেই মৃত্যুঞ্জয়বাবু রতনকে এসে ধমক লাগালেন। “দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিস এখানে! দেখছিস না, কাস্টমার বসে আছে অর্ডার দেওয়ার জন্য!”

রতন তাড়াহুড়ো করে চলে গেল। মৃত্যুঞ্জয়বাবু আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কিছু মনে করবেন না, দিনকে দিন ফাঁকিবাজ হচ্ছে ছেলেটা। খালি কথা আর কথা!”

মৃত্যুঞ্জয়বাবু চলে যেতেই এবার আবছা মনে পড়ল। আমাদের থেকে একটু ছোটো, মাঝেমাঝে ক্যাশবাক্স সামলাতো একটা ছেলে। হয়তো সেই আবির হবে। ট্র্যাজেডি বলে

ট্র্যাজেডি! সন্তানের এভাবে মৃত্যু ঘটার থেকে আর কী দুঃখের হতে পারে! বেশ খারাপই লাগল কথাটা শুনে। কিন্তু সেটা সাময়িক। সামনে গরম গরম মোগলাইপরোটা আর মাংস। সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। হাইলাইট অফ দ্য ডে হল একেনবাবু খাবারের বিলটা মেটালেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *