রামায়ণ : সুন্দরাকাণ্ড – হনুমান কর্ত্তৃক সিংহিকা রাক্ষসী বধ
এত শুনি আনন্দিত হয় গিরিবর।
দক্ষিণেতে চলিলেন পবন-কোঙর।।
কত দূরে যবে তিনি করিলা গমন।
দক্ষিণেতে চলিলেন পবন-নন্দন।।
কত দূরে যবে তিনি করিলা গমন।
সিংহিকা রাক্ষসী তাঁরে করিলা দর্শন।।
দেখি চিন্তা করে সেই দুষ্টা নিশাচরী।
বুঝি আজি ভুঞ্জিতে পাইব পেট ভরি।।
যাইতেছে আকাশেতে বড় এক প্রাণী।
ইহার ছায়াকে ধরি আকর্ষিয়া আনি।।
এত ভাবি মারুতির ছায়াস্পর্শ পাই।
আকর্ষিতে আরম্ভিল মুখখান বাই।।
তার আকর্ষণে ন্যূন দেখি নিজ বেগ।
মনে চিন্তা করিছেন মারুতি সোদ্বেগ।।
একি মোর গতিবেগ ন্যূন হয় কেন।
দৃঢ়রজ্জু দিয়া কেহ বান্ধিলেক যেন।।
এত ভাবি সব দিক দেখিতে দেখিতে।
দেখিলেন রাক্ষসীরে নিজ অধোভিতে।।
পাতাল সমান মুখ বিস্তারণ করি।
রহিয়াছে অম্বরেতে দুষ্টা নিশাচরী।।
তাহা দেখি ভাবনা করেন পুনর্ব্বার।
একি অধোভাগে দেখি বিকট আকার।।
বুঝি এইজন মোরে করে আকর্ষণ।
আপনার মুখে করাইতে প্রবেশন।।
সম্পাতির বাণী মনে হইল স্মরণ।
এই বটে সিংহিকা রাক্ষসী দুষ্টা জন।।
আজি আমি প্রতিকার ইহার করিব।
এ পথের কণ্টক নিঃশেষে ঘুচাইব।।
এত ভাবি ক্ষুদ্র মূর্ত্তি হয়ে কপিবর।
প্রবেশিলা সিংহিকার বদন ভিতর।।
সেই বড় সুখী হয়ে মুদিল বদন।
যেন কেহ বিষ খায় মরণ কারণ।।
তবে তার হৃদয় প্রবেশি হনুমান।
নখে করি বিদারি করিল খান খান।।
সেই ছিদ্র দিয়া নিজে হইল বাহির।
তাহে রাক্ষসীর প্রাণ ছাড়িল শরীর।।
তবে ঘুরি ঘুরি সেই দুষ্টা নিশাচরী।
পড়িল পরেতে সেই পয়োধি উপরি।।
তাহে সুখী হলো বহু কোটি জলচর।
ভোজন করিয়া তার মাংস বহুতর।।
বুঝিলাম বহু মাংস পূর্ব্বে খেয়েছিল।
আজি সেই সকলের শোধন করিল।।
সিংহিকার মৃত্যু দেখি যত দেবগণ।
করিছেন হনুমানে বহু প্রশংসন।।
সর্ব্বদা বিজয়ী হও পবন-কুমার।
করুণ শ্রীভগবান কল্যাণ তোমার।।
যে কর্ম্ম করিলে তুমি সিংহিকা নিধনে।
ইহার সম্ভব নহে এ তিন ভুবনে।।
একে নিরালম্বে শত যোজন লঙ্ঘন।
তাহে পুনঃ সুদুর্দ্দান্ত সিংহিকা মারণ।।
এ দুষ্টা রাক্ষসী ভয়ে যত দেবভাগ।
করেছিলা এই ব্যোম মার্গ পরিত্যাগ।।
আজি তুমি করিলে এ পথ অকণ্টক।
সুখে বিহরুক তবে সব বৃন্দারক।।
তোমা হৈতে রাজকার্য্য নিষ্পন্ন-হইবে।
তোমা হৈতে ত্রিভুবন আনন্দ পাইবে।।
একি বল, একি বীর্য্য একি পরাক্রম।
ত্রিভুবনে কোথাও না দেখি যার সম।।
ধরা ধরাধর সব যাবৎ থাকিবে।
তাবৎ পর্য্যন্ত তব এ যশ ঘুষিবে।।
যাহ যাহ, করিতেছি মোরা আশীর্ব্বাদ।
কৃতকার্য্য হয়ে ফিরি এস অবিবাদ।।
এত বলি পুষ্পবৃষ্টি করে দেবগণ।
শুনি আনন্দিত বীর করিলা গমন।।
কিছুদূর হৈতে লঙ্কা করি নিরীক্ষণ।
মনে মনে ভাবিতেছে পবন-নন্দন।।
হেন মহাদেহে যদি প্রবেশি এ লঙ্কা।
তবে সকলেতে মোরে করিবেক শঙ্কা।।
অতএব ক্ষুদ্র মূর্ত্তি হয়ে প্রবেশিব।
উচিত সময়ে নিজ কার্য্য সমাধির।।
এত ভাবি আপন সহজ মূর্ত্তি ধরি।
সিন্ধু তরি পড়িলেন সুবেল উপরি।।
সেই ত সুবেল গিরি ভয়েতে তাঁহার।
কাঁপিতে লাগিল লঙ্কাদ্বীপ সহকার।।
আর এক হলো বড় সে সময়ে রঙ্গ।
সীতা আর রাবণের নাচে বাম-অঙ্গ।।
যদ্যপি তরিল সেই শতেক যোজন।
তথাপি নাহিক কিছু শ্রম একক্ষণ।।
সাগর লঙ্ঘন কথা অমৃতের ভাণ্ড।
শুনিলে পাতকরাশি হয় খণ্ড খণ্ড।।