রামায়ণ : সুন্দরাকাণ্ড – হনুমানের সাগর লঙ্ঘনোদ্যোগ
তদন্তর বায়ুপুত্র প্রসন্ন হৃদয়।
উঠি দাঁড়াইলা বলি রামজয় জয়।।
যুবরাজ অঙ্গদেরে করি আলিঙ্গন।
বন্দনীয় সর্ব্বজনে করিলা বন্দন।।
অন্য আর কপিগণে আলিঙ্গণ দিয়া।
কহিছেন সকলেরে উল্লাসিত হৈয়া।।
আমি যবে লম্ফ দিব সাগর লঙ্ঘিতে।
না পারিবে মোর ভার ধরণী সহিতে।।
অতএব চড় সবে মহেন্দ্র-ভূধরে।
লম্ফ দিব থাকি ঐ গিরির উপরে।।
এত শুনি অগ্রে করি পবন-কোঙরে।
উঠিলেন কপিগণ সেই ধরাধরে।।
মহেন্দ্র উপরে শোভে মারৎনন্দন।
যেন অন্য গিরি আসি কৈল আরোহণ।।
হেনকালে যাবতীয় অমর কিন্নর।
দেখিবারে আইলেন অম্বর উপর।।
বিদ্যাধর অপ্সর গন্ধর্ব্ব নাগগণ।
যক্ষ ভূত সিদ্ধ সাধ্য মুনি তপোধন।।
সবে মিলি যাবতীয় শাখামৃগ-কুল।
গাঁথিলেক এক মাল্য তুলি নানা ফুল।।
সেই মালা যুবরাজ লয়ে নিজ করে।
সমর্পিলা পবন-তনয় কণ্ঠোপরে।।
শোভিত শ্রীহনুমান সেই মালা পরি।
যেন মণিমালা গলে ঐরাবত করী।।
তবে সব কপিস্থানে অনুমতি লয়ে।
বসিলেন হনুমান পূর্ব্বমুখ হয়ে।।
ভক্তিযুক্ত মনে কৈলা দণ্ডবৎ নতি।
গণেশাদি পঞ্চদেব দিক্পাল প্রতি।।
বিশেষতঃ প্রণমিলা পরম পিতারে।
কেশরী অঞ্জনা শ্রীসুগ্রীব কপিবরে।।
লক্ষ্মণ-জানকী-পদ করিয়া বন্দন।
আরম্ভিলা রামচন্দ্রে করিতে চিন্তন।।
চিন্তামাত্রে হৃদয়ে প্রকাশ রঘুবর।
দেখিয়া মারুতি মনে করেন সাদর।।
জয় জয় রামচন্দ্র রঘুকুলপতি।
কৃপামৃত পারাবার অগ্রতির গতি।।
তুমি যদি চাহ প্রভু হইয়া সগয়।
তবে পিপীলিকা মেরু তুলিতে পারয়।।
পরমাণু দেখিতে পারয়ে অন্ধজন।
পঙ্গু পারে পারাপার করিতে ল্ঙ্ঘন।।
এইত সাহসে আমি হেন গুরু কাজ।
করিবারে সাহস করেছি রঘুরাজ।।
যদি সিদ্ধ নাহি কর তুমি সেই কামে।
দোষ হবে তব প্রভু কল্পতরু নামে।।
অতএব তব পদে করি নিবেদন।
কর মোর প্রতি কৃপা-কটাক্ষ অর্পণ।।
এত নিবেদন কৈলা যবে হনুমান।
কটাক্ষেতে অনুমতি দিলা ভগবান।।
তবে প্রভু অন্তরেই কৈলা অন্তর্দ্ধান।
প্রভু নাহি দেখি বীর ত্যাজিলেন ধ্যান।।
প্রভু অনুগ্রহ পেয়ে আনন্দিত মন।
কহিছেন কপিগণে পবন-নন্দন।।
আর নাহি করি আমি কোনই চিন্তন।
হইয়াছি রাম-কৃপাকটাক্ষ-ভাজন।।
এবে দেখি সমুদ্রেরে গোষ্পদ যেমন।
শত কোটিবার লঙ্ঘিবারে করি মন।।
স্বংশে রাবণ বধে সাহস করি যে।
লঙ্কা তুলি এখানেতে আনিতে পারি যে।।
ভুজে করি ফেলাইয়া সাগরের বারি।
ইচ্ছা হইলে ব্রহ্মাণ্ডেরে ডুবাইতে পারি।।
মারুতির বাণী শুনি সুখী কপিগণ।
শিখী যেন শুনি ধরাধরের গর্জ্জন।।
তবে পুনঃ মারুতি অঙ্গদে আলিঙ্গিয়া।
বৃদ্ধ কপি জাম্বাবানের চরণ বন্দিয়া।।
দাঁড়ায় দক্ষিণ-মুখে লঙ্ঘিতে সাগর।
শ্রীরামচন্দ্রের পদে রাখিয়া অন্তর।।