সীমান্ত বাংলার লোকদেবী মা বীর বাঁকুড়া
বাবা রামেশ্বরের দেউল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার মতো দূরত্বে গড়ধড়া গ্রাম।
ডুলুং নদীর একটি শাখা বেরিয়ে মিশেছে সুবর্ণরেখাতে। এই মিলন স্থলের কাছেই মা বীর বাঁকুড়ার আটন। নদীর তীরে দিগন্ত বিস্তৃত সবজি ক্ষেত। সরষে ফুলের হলুদ গালিচায় মৌমাছি প্রজাপতির সোহাগ যাচা চলেছে।
শীতের মিঠেল রোদ গায়ে মেখে রামেশ্বর থেকে চলেছি এই পথে। দুপাশেই সবজি খেত। দূরে সুবর্ণরেখার অথৈ বিস্তৃতি। দন্ড ছাত্রী মাঝি ও জেলেদের একাধিপত্য সেখানে। কেউ মাছ ধরছে কেউবা নুড়ি তুলছে। নদী যে এখানে মাতৃরূপা। তার সন্তানদের দুধে ভাতে রাখার জন্য আঁচল উপচে দেয় মীন ফসলে। মাঝে মাঝে দল বেঁধে আসে দলমার দামাল মহাকালের দল। ধান খেত সবজি খেত তছনছ করে, মানুষের মনে আতঙ্ক জাগিয়ে আবার মিলিয়ে যায় জঙ্গলের গভীরে!
ডুলুং শাখাটি মীন ফসলে সমৃদ্ধ। নদী জুড়েই দুধে আলতা রঙ্গা শাপলা ফুলের সমারোহ। বড় মন মুগ্ধকর। মা বীর বাঁকুড়ার আটনের পেছনে দিগন্ত বিস্তৃত সবজি ও সরষে খেত। সবুজ হলুদের মীনাকারিতে প্রকৃতি গরবিনী। আব্রাহ্মণ দেহুরীর ভক্তি কুসুমের আরাধনায় মা অচলা এখানে। পৌষ সংক্রান্তিতে বসে মেলা। বার্ষিক পুজো হয় মাঘের চার তারিখে। ছায়া সুনিবিড় আটনের ঝরা পাতা বলে যায় প্রাচীনকালের পরান কথা—–
অনেক কাল আগে মা বীর বাঁকুড়ার আটন ছিল ডুলুং শাখার জলের তলে। দেহুরি বার্ষিক পূজা নিয়ে যেত সেখানে আরাধনার জন্য।
বলি প্রথা প্রচলিত আছে তাই পাঁঠা ও ডাকুয়ার বলি হয়। বলির জন্য খড়্গ বা কাতান নিয়ে যেতে হয়। কথিত যে একবার দেহুরী কাতান ফেলে আসে সেখানে। ফিরে আনতে গিয়ে দেখেন মা ভোগ গ্রহণ করছেন। মা দেহুরীর ওপর অসন্তুষ্ট হন। নদীর বন্যায় ওই আটন জলমগ্ন হয়।
আবার ভক্তরা নদীর পূর্ব পাড়ে মায়ের নতুন আটন গড়ে। সেই আটন ও আবার নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমান আটন টি তৃতীয় বার তৈরি করা হয়েছে।
অর্জুন গাছের তলায় ছলন স্তুপের মধ্যে রৌদ্রছায়া লুকোচুরি খেলে। নদীর লিলুয়া বাতাসে শোনা যায় মায়ের লোককথার রেশ। দুর দিকচক্র বালে জঙ্গলের আবছায়া কুয়াশার ওড়নায় মুখ ঢাকে। সুবর্ণরেখার বুকের চরে ডুলুং শাখার তির তিরে জলের রাশি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। দূর থেকে ভেসে আসে দেব দেউলের ঘন্টা ধ্বনি। মন বাউলের আর্তিকে হিমেল বাতাসটা বয়ে নিয়ে চলে অনন্তের পানে— পরিক্রমা সফল হয়!