সর্বনাশা র্যাগিং
মিরাটে বিজয়া ব্যাঙ্কে পোস্টিং। স্ত্রীকে নিয়ে ট্রেনে যাচ্ছি। সামনের সিটে মা- ছেলে সহযাত্রী। মিরাটে এ্যারোনোটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং – এ ছেলেকে ভর্তি করতে যাচ্ছে। আলাপ হলে আমরাও মিরাটে যাচ্ছি শুনে, ভদ্রমহিলা খুব খুশি। কিভাবে যাওয়া সহজ হবে জানতে চাইলেন।
আমরা নিঃসন্তান। স্বভাবতই আমার স্ত্রী লীনার ছেলেটিকে খুব ভালো লাগলো। গল্পের মাঝে মহিলা বললেন, ভালোই হলো, ঠাকুরের কৃপায় আপনারা সফর সঙ্গী। মিরাটে আমাদের কেউ নেই, তাই ওর বাবার আপত্তি।
লোকাল গার্জিয়ান হিসেবে যদি আপনাদের নামটা দিই আপত্তি আছে?
লীনা বললো, ও আমার বাড়ি থেকে কলেজ করবে। মহিলা হাসলেন।
ছেলটির নাম নীলাঞ্জন, খুব ভালো ছেলে।
যাহোক, ওর মা ছেলেকে ভর্তি করে ফিরে গেলেন।
আমরা লোকাল গার্জিয়ান। প্রথম কয়েক দিন ফোন করে খবর নিলেও পরে সেরকম নিতাম না।
ওদিকে নীলাঞ্জন র্্যগিংয়ের কবলে।
একদিন ওর মা ফোন করে বললেন, দাদা নীলাঞ্জনের সঙ্গে আজ তিনদিন হয় যোগাযোগ করতে পারছি না। হোস্টেল সুপারও ফোন ধরছে না। দয়া করে একটু যদি খবর নেন। আমি খুব উগ্বেগে আছি।
বললাম, নিশ্চয় আমি কালকেই দেখা করবো।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনে চেষ্টা করলাম। ফোন বেজেই চলেছে, ধরছে না কেউ।
পরদিন যাবার জন্য তৈরি হচ্ছি, কলেজ থেকে ফোন নীলাঞ্জনের শরীর খারাপ, একটু আসতে হবে।
গিয়ে দেখি, নীলাঞ্জন টাল খাচ্ছে; ঠিকমত হাঁটতে পারছে না।
আমি যেতেই হোস্টেল ডিন বললেন, নেশা করে ছেলে। সবসময় সিগারেট, ড্রিঙ্ক চলছে।
আমি নীলাঞ্জনের মাথায় হাত রাখতেই, আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজে মৃদু স্বরে বলল, আঙ্কেল আমাকে বাঁচান, এখানে মরে যাবো।
আমার কেমন খটকা লাগলো। একজন মা ছেলেকে আমাদের ভরসায় রেখে গেছে!
আমি ডিন’কে বললাম, কয়েকদিন আমার বাড়িতে নিয়ে রাখি, সুস্থ হলে আসবে।
একটি ছেলে বলল, আঙ্কেল আমরা তো আছি, ক্লাস কামাই করবার দরকার নেই। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে, সুস্থ হয়ে যাবে।
আমি বললাম, ঠিক আছে ওর জিনিসপত্র থাক, সুস্থ হয়ে এসে ক্লাস করবে।
নীলাঞ্জনকে গাড়ি করে নিয়ে আসছি; ও কাঁদছে আর একটা কথাই বলছে,” আঙ্কেল আপনার পায়ে পড়ি , আমাকে বাঁচান। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, এরপর আমার লাশ পাবেন।
যে ছেলেটা আপনাকে বলল, বাড়ি নিয়ে যেতে হবেনা, রোজ রাতে একদল ছেলে নিয়ে এসে আমাদের কয়েকটা ছেলেকে জোর করে সিগারেট, গাঁজা,মদ খাওয়ায়। মেয়েদের রুমে নিয়ে গিয়ে খালি গায়ে জড়িয়ে ধরে শুতে বলে, চুমু খেতে বলে। সবাইকে বাধ্য করে, নাহলে মারে, অশ্লিল গালিগালাজ করে। ডিন-ও ওদের সাথে থাকে। মোবাইল কেড়ে নেয়, বাড়িতে ফোন করতে দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি সিগারেট পর্যন্ত খাইনা। সহ্য করতে না পেরে আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম”।
আমি বুঝলাম এখানে থাকলে অঘটন ঘটতে পারে।
পরদিন প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়ে হোস্টেলে গিয়ে ওর জিনিসপত্র সব নিয়ে এলাম এবং ওকে সুস্থ করে ফ্লাইটে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।
আজ ওদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক।