Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – নবম পর্ব

সেদিন অফিস থেকে ফিরতে অন্যন্যার বেশ অনেকটাই রাত হয়ে গেলো। কাজের চাপে ওর খেয়ালই নেই ঘড়িতে তখন প্রায় রাত নয়টা। বসকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে অন্যন্যা যখন অফিস থেকে বেরোয় তখন ঘড়িতে নয়টা বেজে দশ মিনিট। অন্যন্যা জানত যে এখন যদি ও বাসের জন্য অপেক্ষা করে তাহলে আরো রাত হয়ে যাবে তাই ও একটা ক্যাব বুক করে নিল যাতে ওকে কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। ক্যাব ও চলে আসে কিছুক্ষণের মধ্যে। ক্যাবে উঠে অন্যন্যা ক্যাবের নম্বর আর সমস্ত ডিটেলস তৃণা আর তিয়াসাকে পাঠিয়ে দিল নিজের সেফটির কথা ভেবে। কিছুদূর যাবার পর অন্যন্যার ফোন বেজে উঠলো তৃণার ফোন তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরলো অন্যন্যা। তৃণা বললো অফিসে কাজের চাপ থাকায় ও ফোনটা ধরতে পারেনি তার জন্য ও খুব দুঃখিত। অন্যন্যা বলে নারে আসলে আমি জানি আমি নিজেই খুব ভুল সময় ফোন করে ফেলেছি কিন্তু সেই মুহুর্তে কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না আর তাই তোকে ফোন করেছিলাম। তৃণা উদ্ভিগ্ন হয়ে জানতে চায়: কি হয়েছে অন্যন্যা আবার কোনো প্রবলেম ওরা কি আবার কোনো সমস্যা করলো? অন্যন্যা খুব চিন্তিত হয়ে উত্তর দেয় সেটাই তো বুঝতে পারছি না তৃণা যে ফোনটা কে করলো? কিন্তু এটা তো সিওর যে এটা ওদেরই কাজ কিন্তু গলাটা অচেনা লাগলো। তারপর অন্যন্যা সবটা খুলে বললো তৃণাকে। তৃণা এবার জানতে চায়: তুই এখন কোথায় আছিস অন্যন্যা? অন্যন্যা বলে আজ অফিসে এতো কাজ ছিল যে ওর বেরোতে নয়টার বেশি হয়ে গেছে এখন ও একটা ক্যাবে করে বাড়ি ফিরছে আর তার ডিটেলস টাই ও পাঠিয়েছে তৃণাকে। তৃণা ওকে পরামর্শ দেয়: কয়েকটা দিন যেনো অন্যন্যা রাত না করে বাড়ি ফিরতে কারণ ওরা এখন অনেক ভাবে ওকে ক্ষতি করার ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে তাই অন্যন্যা যেনো টাইম মতো অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। তৃণা জানতে চায় আচ্ছা কাকু কাকিমাকে জানিয়েছিস এসব? অন্যন্যা বলে নারে মা বাবাকে বললে খুব দুশ্চিন্তা করবে আর মা আমার অফিস আসাই বন্ধ করে দেবে । বাবার একার উপর সব চাপ পরে যাবে তাই এখন ও কাউকে কিছু জানাতে চায় না। তৃণা বলে অন্যন্যা তুই সাবধানে বাড়ি ফের আর পৌঁছে আমাকে কিন্তু অবশ্যই জানাবি ভুলে যাবি না হ্যাঁ আমি একটা ভালো উকিলের খোঁজ পেয়েছি আমি আরো ভালো করে সব জেনে নিয়ে তোকে জানাচ্ছি এই উইকে কাজের অনেক চাপ তাই হয়তো সময় হবে না নেক্সট উইক আমরা যাবো সেখানে এই কয়েকটা দিন যেনো অন্যন্যা একটু সাবধানে থাকে তারপর কিছু একটা ব্যাবস্থা ঠিক হবে ও যেনো বেশি টেনশন না করে শুধু চোখ কান খোলা রাখে। তারপর ও অন্যন্যাকে বলে ফোন রেখে দেয়। অন্যন্যা তখন ও বেশ টেনশনে পৌঁছতে এখনও প্রায় কুড়ি মিনিট মতো সময় লাগবে ড্রাইভারকে বার বার বলতে থাকে তাড়াতাড়ি চালাতে। অবশেষে অন্যন্যা বাড়ি পৌঁছে যায়। গাড়ির শব্দ শুনে অন্যন্যার বাবা বেরিয়ে আসে অন্যন্যা বাবাকে দেখতে পেয়ে বলে চিন্তা করোনা বাবা আমি চলে এসেছি এরপর ক্যাবের ভাড়া মিটিয়ে অন্যন্যা বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। ঘরে ঢোকার পর অন্যন্যার মা বলে এতো রাত কেনো করলি? কি এমন কাজ যেটা কালকে গিয়ে করা যেতো না। এমনি দিনকালের পরিস্থিতি ভালো না তার উপর এই ঝামেলা। যতক্ষণ তোরা ঘরে না আসিস ততোক্ষণ এক দন্ড শান্তিতে বসতে পারি না। নানা রকম চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। অন্যন্যা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি এতো ভয় পেয়ো না মা দেশে আইন বলে এখনও একটা বস্তু আছে সবকিছু কি এত সহজ বলো? আমি এখন একটু আগে ফ্রেশ হয়ে আসি। খুব টায়ার্ড লাগছে তারপর এসে কথা বলছি। বলে অন্যন্যা চলে গেলো ফ্রেশ হতে। রিনা দেবী নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে রান্না ঘরের দিকে গেলো মায়ের চিন্তা কি আর বুজবি? কেনো ভয় পাই এর থেকে ছেলে হলে এতো ভয় কাদা হয়ে থাকতে হতো না। আমি আর এই চিন্তা নিতে পারি না। বিকাশ বাবু কথাটা শুনলেও কোনো কিছু বলে না কারণ উনি স্ত্রী এর চিন্তার কারণটা বুঝতে পারে।

অন্যন্যা সারাদিনের ক্লান্তির পর শাওয়ার চালিয়ে তার নীচে দাঁড়িয়ে তখনও এটাই ভাবতে থাকলো যে ফোনে গলাটা কার ছিল? অয়ন ওর বাবা নাকি অন্য কেউ? কিছুতেই যেনো বুঝে উঠতে পারছে না ও। আর কেনই বা অয়ন বা ওর পরিবারের ডিভোর্স দিতে এতো আপত্তি? অয়ন নিজেও জানে ওর ভালো লাগা বা ভালোবাসা আর পাঁচ জনের মতো না আর ও কোনোদিন ও অন্যন্যাকে ভালোবাসতে বা স্ত্রী এর সন্মান দিতে পারবে না আর ওর পরিবারের ও সবাই সেটা জানে তাহলে কেনো ওরা ওর জীবনটা এই ভাবে নষ্ট করে দিতে চাইছে? কি ক্ষতি করেছে ও ওদের? অন্যন্যা কতক্ষন এই ভাবে দাঁড়ানো সেটা ওর খেয়ালই নেই নানা কথা চিন্তা করতে করতে। অন্যন্যার মা এসে বাথরুমের দরজা নক করে : কি রে এত রাতে আর কত স্নান করবি? এরপর তো ঠান্ডা লেগে যাবে। মায়ের ডাকে হুস ফেরে অন্যন্যার। ও উত্তর দেয়: না না হয়ে গেছে মা তুমি যাও আমি দুমিনিটের মধ্যে আসছি। কিছুক্ষন পরেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে অন্যন্যা ডাইনিং গিয়ে বসে তারপর বলতে শুরু করে আজ খুব কাজের চাপ ছিল অনেকদিন বাদে এতটা চাপ গেছে খুব টায়ার্ড লাগছিল এখন একটু ভালো লাগছে মাকে বললো মা আমার খুব ক্ষিদে ও পেয়ে গেছে। রিনা দেবী বলে পেটের আর কি দোষ সারাদিন না খেয়ে থাকলে ক্ষিদে তো পাবেই। রান্না হয়ে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই দিয়ে দিচ্ছি সবাই একসাথে বসে খেয়ে নেবে কোনো কথা করো শুনতে চাই না। আর তুমি ডাকো তোমার আদরের ছোটো মেয়েকে ওই মেয়ের সাথে একদম আমি কথা বলতে চাই না। অন্যন্যা বুজলো তিয়াসার সাথে আবার মার কোনো ঝামেলা হয়েছে। ও রিনা দেবীর দিকে তাঁকিয়ে বললো আবার তোমাদের ঝামেলা সত্যি মা পারো বটে তোমরা দুজনেই। কাউকে কোথাও যেতে হবে না আমি ডেকে আনছি ওকে তুমি খাবার রেডি করো এই বলে অন্যন্যা তিয়াসাকে ডাকতে চলে যায়।

তিয়াসা রুমে গিয়ে অন্যন্যা দেখলো ও তখন ও বেশ মন দিয়ে পড়ছে। অন্যন্যা গিয়ে ওকে ডাকলো : কিরে আজ বেশ মন দিয়ে পড়ছিস দেখছি? আমি এলাম তাও টের পেলি না। বাহ্ বেশ ভালো, নে এখন চল দেখি মা খেতে ডাকছে সবাইকে। তিয়াসা খুব গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয় না তোরা সবাই খেয়ে নে আমার ক্ষিদে নেই খাবো না আমি। অন্যন্যা গাল ফুলিয়ে মজা করে বললো হমম সেতো আমি বুঝতেই পারছি আজ মেয়ের যে মার উপর অনেক রাগ হয়েছে। তিয়াসা অন্যন্যাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্যন্যা বোনকে জড়িয়ে ধরে বললো রাগ করিস না মার উপর। এসব কিছুর জন্য তো আসলে আমিই দাই বল!!! আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে মার মেজাজ ঠিক থাকছে না। মা যদি কিছু বলে থাকে তুই সেটা আমাকে বল কিন্তু মার উপর রাগ করে থাকিস না।

এবার তিয়াসা দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলে বকলো মা অকারণে আর দাই হয়ে গেলি তুই? মা সারাক্ষণ আমাকে এই ভাবেই বকে। আমি আজ কিছুতেই খাবো না। অন্যন্যা ও বললো বেশ ঠিক আছে তাহলে আজ আমার ও খেয়ে দরকার নেই। সারাদিন এমনি কিছু খাওয়া হয়নি রাতে ও না হয় খাবো না, ঠিক আছে আমি যাই শুয়ে পরি খুব ক্লান্ত ও লাগছে আমার। দাঁড়া দিদিয়া আমি যাচ্ছি না খেয়ে থাকতে হবে না কিন্তু এগুলো ঠিক না এটাই বললাম। অন্যন্যা বোনের গাল টিপে আদর করে বললো জানি তো ঠিক না যে আমি মাকে বারণ করে দেবো আমার এই ছোট্ট বোনটাকে একদম বকাবকি না করতে খুশি? নে এবার চল না হলে না আমি ক্ষিদের চোটে অজ্ঞানই হয়ে যাবো।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress