Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – বিষতম পর্ব

অন্যন্যা বেরিয়ে আসে সেন সাহেবের কেবিন থেকে। অন্যন্যার একবার মনে হয় যে কৃষ্ণেন্দুকে ওর একবার বলে বেরোনো উচিত কারণ এই সমস্ত ব্যাপারে যদি কৃষ্ণেন্দু ওকে সাহায্য না করতো তাহলে হয়তো সবকিছু এতো সহজ হতো না ওর পক্ষে। ও কৃষ্ণেন্দুর কেবিনের কাছে যেতে উদ্যত হয়ে ও আবার থেমে যায়। মনে মনে চিন্তা করে কাল থেকে কৃষ্ণেন্দু ওর সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলছে না ও জানে আজকে অন্যন্যার উকিলের কাছে যাবার আছে ও তাও কিছু জানতে চাইলো না বললো না!!!! তাই থাক ওকে আর বিরক্ত করে লাভ নেই। অন্যন্যা বেরিয়ে যায় অফিসে থেকে। ঠিক সময় মতো তৃণা আর অন্যন্যার দেখা ও হয়ে যায়। তৃণা অন্যন্যাকে বলে: কাছেই একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে গিয়ে আগে খাবার অর্ডার দেবো ভীষণ ক্ষিদে পেয়ে গেছে। অন্যন্যা ও সম্মতি জানিয়ে বলে: হ্যাঁ, তাই চল কাজ শেষ করে বেরোতে গিয়ে আমার ও কিছু খেয়ে আসা হয়নি আর তাছাড়া ইচ্ছে ছিলো আজকে দুজনে এক সাথে লাঞ্চ করবো কতদিন একসাথে বসে খাইনি। ওরা কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে বসে খাবার অর্ডার করলো। তারপর তৃণা অন্যন্যাকে বললো: ” নে এবার বল কি তোর কথা যেটা তুই বলতে না পারলে শান্তি পাচ্ছিস না। আর হ্যাঁ এই উকিল বাবুটিকে কোথায় পেলি? মানে খোঁজ কে দিল”?

অন্যন্যা প্রথম থেকে সব কথা এক এক করে বললো তৃনাকে। এরমধ্যে ওদের খাবার ও এসে গেলো। তৃণা অন্যন্যার দিকে তাঁকিয়ে বললো: তোকে একটা কথা বলি!!! আর সেটা হচ্ছে তুই কিন্তু আজকে কাজটা মোটেও ঠিক কাজ করিসনি। তোকে এই ভাবে প্রোটেক্ট করার পরে ও একবার বলে এলি না তুই? তুই তো এরকম না। এটা তুই কি করলি?

অন্যন্যা মাথা নীচু করে বললো: আসলে আমার ও খুব রাগ হয়ে গেছিলো একবার ও আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলো না মুখের দিকে তাঁকিয়ে পর্যন্ত কথা বলছে না। আমি কি ভুল বলেছি? আমি কি এর আগে অফিসে যায়নি? আজকে ও আসার আগে ফাইল দিতে গেলাম কোনো কথাই বললো না। তাহলে কেনো আমি কিছু বলবো? তৃণা অন্যন্যার মুখের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে দেখে অন্যন্যা বিরক্ত হয়ে বললো: এই তোর হাঁসার মতো কি হলো রে? ভালো লাগছে না কিন্তু তৃণা। তৃণা এবার আরো হেঁসে বললো: ডিয়ার অনু এটাই বোঝার চেষ্টা করছিলাম আগুন টা কতোটা ছড়িয়েছে একদিক জ্বলছে নাকি উভয় দিকেই লেগেছে? অন্যন্যা ভ্রু কুঁচকে বলে: মানে টা কি? কিসের আগুন? তৃণা হেঁসে বলে প্রেমের আগুন আমার সোনা। অন্যন্যা রেগে গিয়ে বলে: তৃণা প্লীজ এইসব বাজে ঠাট্টা কিন্তু আমার একদম পছন্দ না। একেতো সে আমার বস তারপর বয়স? আর তাছাড়া …. উফ্ আমি না বুঝতে পারছি না আমি তোকে কি বলবো? কেনো এসব বাজে কথা বলছিস? তৃণা এবার শান্ত ভাবে বলে: অন্যন্যা তোর সমস্যা আসলে কোনটা? তোর থেকে বয়সটা একটু বেশি নাকি তোর বস? আর তার থেকে বড় কথা হলো এই দুটো থাকলে কি একটা সম্পর্ক হতে নেই? নাকি হওয়া উচিত না? কোনটা অন্যন্যা? তুই এসব কি বলছিস তৃণা!!!! চিন্তিত ভাবে উত্তর দেয় অন্যন্যা। উনি ডিভোর্সি তোকে তো আমি আগেই বললাম। এটা তুই কি বলছিস অন্যন্যা? ডিভোর্সি মানেই যে সে খারাপ লোক সেটা তুই কি করে বলতে পারিস? সেটা তো নাও হতে পারে। অন্যন্যা বলে: তৃণা আমার অভিজ্ঞতা আমাকে সেটা ভাবতে বাধ্য করছে। আমরা তো অয়নকে ও ভালো ছেলেই ভেবেছিলাম কি হলো? কোথায় এসে দাঁড়ালো আমার জীবনটা? হ্যাঁ, আমি মানছি আমি কৃষ্ণেন্দুর কাছে সাহায্য চেয়েছি আমি যতটুকু চেয়েছি আমার জন্য তার থেকে বেশিই ও করেছে। আমাকে অফিসে ও অনেক বড় সমস্যার হাত থেকে বাঁচিয়েছে। সবটাই মানছি আমি। কিন্তু তাই বলে শুধু সেই টুকুর উপর ভিত্তি করে একটা সম্পর্ক দাঁড়াতে পারে না। তাছাড়া আমরা যেমন ডিভোর্সের জন্য কৃষ্ণেন্দুকে দোষী ভাবতে পারি না। তেমনি ওই মেয়েটাকে ও পারি না। কারণ আমরা এদের কাউকেই সামনে থেকে চিনি না জানি না এদের সম্পর্কে কিছুই। অনেক কিছুই হতে পারে সেখানে। আর তাছাড়া আমি আর এসবের মধ্যে যেতে চাই না তৃণা। ডিভোর্সের ঝামেলাটা মিটিয়ে আমি বাইরে জব অ্যাপ্লাই করবো এখানে আমি আর থাকবো না। এখানে আমি যতদিন থাকবো এই শহর আমায় শুধু কষ্টই দেবে। আমি সবকিছু ভুলে যেতে চাই তৃণা। তৃণা আসতে করে উত্তর দেয়: আমি তোর কথাগুলো কোনোটাই অস্বীকার করছি না। আমি শুধু বলতে চাইছি লোকটা যদি ভালো হয় মানে সবদিক থেকেই ভালো হয় তাহলে কি সমস্যা? যেটুকু তোর মুখ থেকে শুনলাম তাতে সত্যি বলছি লোকটাকে আমার খারাপ মনে হচ্ছে না। তবে অন্যন্যা তোকে একটা কথা বলবো কোনো কিছু নিয়েই এতো চিন্তা করিস না, গো উইথ দ্যা ফ্লো। তোর বাইরে চলে যাবার সিদ্ধান্তটা কাকু কাকিমা জানে? না, আমি কাউকে এখনও কিছু বলিনি। আগে কেসটা কতদিনে সলভ হয় সেটা দেখা যাক। তবে উকিল বাবু তো বললেন বেশীদিন আশা করা যায় টানবার দরকার পড়বে না। এবার কি ভাবে ডেট পরে সেটার উপর ডিপেন্ড করছে সবটা অন্যন্যা উত্তর দেয়।

এরপর খাওয়া শেষ হলে তৃণা বলে অন্যন্যা খাওয়া তো অনেকক্ষণ শেষ সময় ও অনেকটাই বাকি কি করবো এতক্ষন? হুমম তুই ঠিক বলেছিস সম্মতি জানায় অন্যন্যা!!! চল একাট ক্যাব বুক করে লেকমলে চলে যাই। তারপর সোজা উকিলের কাছে। তৃণা লাফিয়ে উঠে বললে: দারুন আইডিয়া, অনেকদিন শপিং করা হয় না। তারপর ওরা একটা ক্যাব বুক করে চলে যায় লেকমল। দেখতে দেখতে প্রায় সাতটা বাজে তৃণা অন্যন্যাকে বলে: এই অন্যন্যা এই সাতটা বাজে কিন্তু, চল এবার বেরিয়ে পড়ি নাহলে দেরী হয়ে যেতে পারে। অন্যন্যা নিজের রিস্ট ওয়াচ টার দিকে তাঁকিয়ে বলে তৃণা সারাদিনে বাড়িতে একটা ফোন করা হয়নি। চল বেরোতে বেরোতে বাড়িতে একটা ফোন করেনি। অন্যন্যা ফোন করে বাড়িতে। ফোনটা রিনা দেবী ধরলে অন্যন্যা বলে: মা, আমরা এখন যাচ্ছি উকিলের কাছে তৃণা আছে আমার সাথে তুমি চিন্তা করো না কিন্তু। আমি সময় মতো বাড়ি ফিরে যাবো। আচ্ছা বলে ফোন কেটে দেয় রিনা দেবী। অন্যন্যা আর তৃণা মলের বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে আকাশ কালো হয়ে এসেছে। মনে হয় এখুনি ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। ওরা তাড়াতাড়ি করে একটা ক্যাব বুক করে তারপর সোজা চলে যায় উকিলের কাছে। তখন প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা এরমধ্যে প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। কলকাতার চারিদিকে গাছ ভেঙ্গে পড়ে জলে বিভিন্ন জায়গার রাস্তা আটকে যায়। অন্যন্যা তৃণা বুঝতে পারে না এবার ওরা কি করবে? এই ঝড় বৃষ্টিতে কোনো ক্যাব ও ওরা পাচ্ছে না। অন্যন্যার বাড়ি থেকে বিকাশ বাবু ফোন করছে তৃণার বাড়ি থেকে ও ফোন আসছে বার বার। ওদের কাজ হয়ে গেছে তাও বেশকিছুক্ষণ হয়ে গেছে কিন্তু ওরা পরিস্থিতির কারণে আটকে আছে ওখানেই। সময় যত বাড়ছে ততো যেনো বৃষ্টির দাপট বেড়ে যাচ্ছে সাথে ঝড়।

ওদিকে কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার ফোনে কিছুতেই না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। ঝড় বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পরে গাড়ি নিয়ে। আর লইয়ার সান্যালকে একটা ফোন করে জিজ্ঞাসা করে যে, অন্যন্যা ওখানে আছে নাকি। যদি থাকে এই ঝড় বৃষ্টিতে ও যেনো কোথাও না বেরোয় ও আসছে সেখানে।। সান্যাল অন্যন্যাকে বলে: ম্যাডাম আর চিন্তা নেই কৃষ্ণেন্দু ফোন করলো ও নিজে আছে আপনাদের নিয়ে যেতে। আর টেনশন করবেন না। তৃণা অন্যন্যার মুখের দিকে তাঁকায়, আর আসতে করে অন্যন্যাকে বলে: এরপরে ও তুই বলবি অন্যন্যা লোকটা ভালো না? অন্যন্যা চুপ করে থাকে কোনো উত্তর করে না। এদিকে তৃণা আর অন্যন্যার বাড়ি থেকে বার বার ফোন আসতে থাকে অন্যন্যা বাড়িতে বলে তোমরা চিন্তা করো না কৃষ্ণেন্দু আসছেন কোনো অসুবিধা হবে না। রাস্তাঘাটের কারণে কৃষ্ণেন্দুর ও পৌঁছতে প্রায় রাত পৌনে দশটা। গাড়ির আওয়াজ শুনে সান্যাল বলে : আর চিন্তা করবেন না ম্যাডাম কৃষ্ণেন্দু চলে এসেছে। কৃষ্ণেন্দু ভিতরে ঢুকে বলে থ্যাংস তোকে অনেক। সান্যাল কৃষ্ণেন্দুকে বলে: আরে থ্যাংস কিসের রে? বাইরের পরিস্থিতি খুব খারাপ। তোরাই বা কিভাবে যাবি সেটাই ভাবছি আমি। কৃষ্ণেন্দু বললো: হুমম অনেক রাস্তাই তো সব বন্ধ করে দিয়েছে তাই জন্য আমার আসতে ও অনেক দেরী হয়ে গেলো।দেখছি রে এদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে পারলে আমাকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

তারপর ওরা একসাথে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। দুটো ছাতা বের করে একটা নিজে নেয় আর একটা ছাতা অন্যন্যা আর তৃনাকে দেয়। তারপর ওরা গাড়িতে উঠে বসে। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বলে তুমি সামনে বসো নাহলে মনে হবে আমি তোমাদের ড্রাইভার। অন্যন্যা ও কোনো কথা না বাড়িয়ে সামনে বসে পড়ে। গাড়ি স্টার্ট করে কৃষ্ণেন্দু বলে: ম্যাডাম আপনাকে কোথায় ছাড়তে হবে? তৃণা বললো আমাকে এমন একটা জায়গাতে নামিয়ে দিন যাতে আমি একটা ক্যাব পেয়ে যেতে পারি। কৃষ্ণেন্দু বলে: আরে না না আমি সেটা বলতে চাইনি ম্যাডাম। আমি বলতে চাইলাম যে আপনার বাড়ি কোথায় আমি আপনাকে আপনার বাড়িতেই নামিয়ে দেবো। এই অবস্থায় আপনি কোথায় নামবেন। আমি পৌঁছে দেবো আপনাকে। তারপর অন্যন্যাকে বলে আপনাকে ও কি কোথাও একটা নামিয়ে দিলেই হবে? অন্যন্যা গম্ভীর হয়ে তাঁকায় কৃষ্ণেন্দুর দিকে। তৃণা পিছনে বসে ওদের দিকে তাঁকিয়ে হাঁসতে থাকে। প্রায় অনেক ঘুরে তারপর তৃনাকে নামিয়ে দেয় ওর বাড়ির সামনে। তৃণা গাড়ি থেকে নামার সময় কৃষ্ণেন্দুকে বলে: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আজকে আপনি না থাকলে অনেক অসুবিধায় পড়তে হতো আমাদের। আপনার সাথে একদিন জমিয়ে বসে আড্ডা মারবো কিন্তু । আজকে তো ভালো করে আলাপ করা হলো না। কৃষ্ণেন্দু হেঁসে উত্তর দেয় আলওয়েজ ওয়েলকাম ম্যাডাম। তারপর ওরা বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress