সবুজ চোখ
বাড়ির অন্দরের ভৌতিক কাণ্ড দেখে মালিক ভীত। ভিডিও ক্যামেরায় চোখ রেখে দেখা গিয়েছে ভুতের তাণ্ডব। সারমেয়রা জানলার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করেই যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে জ্বলজ্বলে একজোড়া সবুজ চোখ ছাড়া আর কেউই নেই। ক্যামেরায় দেখা গেল ঘরের ভিতরের সোফায় শুয়ে আছে কোন লোক। শুয়ে থাকা লোকটার গায়ের চাদর আপনা আপনি খুলে যাচ্ছে।আবার চাদরটি নিজেই লোকটাকে ঢেকে দিচ্ছে।মালিক গিন্নীকে ডেকে দেখায় ভুতুড়ে ব্যাপারখানা।লোকটা কে? সেখানে এলো কিভাবে এই নিয়ে চিন্তিত গিন্নী।
জানলার দিকে তাকিয়ে ঠিক যখন চিৎকার করতে ব্যস্ত পোষ্যরা ঠিক তখনই সোফায় শুয়ে থাকা লোকটার চাদর কোনও রকম স্পর্শ ছাড়াই সরে যেতে দেখল গিন্নী। এটা শুধু ক্যামেরায় দেখতে পাচ্ছিল। চাদরের একটি কোণ বারবার উঠছে যেন কেউ নিঃশ্বাস নিচ্ছেন অথবা যেন অদৃশ্য কেউ সেটি সরাচ্ছে। এই ভিডিও দেখেই আঁতকে ওঠেন মালিকের গিন্নী।অথচ ঘরে কর্তা গিন্নী দুজনেই আছে ওই সোফায় বসে। গিন্নীর প্রশ্ন ক্যামেরায় এইরকম দৃশ্য বন্দী হল কিভাবে।
আধুনিক প্রযুক্তিতে এখন সব কাজই হয়ে উঠেছে সহজ। তাই বাড়িতে পোষ্য কিংবা যে কোনও কিছুর ওপর নজর রাখতে ক্যামেরাই এখন অস্ত্র। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখা সম্ভব নয় তাই বাড়ির মালিক শরণাপন্ন হয়েছেন প্রযুক্তির। ঘরের অন্দরেই লাগিয়েছেন ক্যামেরা।
সারাদিনের কার্যকলাপকে নজরবন্দি করে রাখতে এই ক্যামেরার ওপর নির্ভরশীল মালিক। বাড়ির ভিতরেই খেলে বেড়ানো কুকুরগুলির সব গতিবিধি পর্যবেক্ষনও সহজ হয়ে উঠেছে। তবে ক্যামেরায় তাদের গতিবিধি নজর রাখতে গিয়েই ধরা পড়ল নানা অদ্ভুত এইসব কাণ্ড।
এবার গিন্নী দেখল দেওয়ালে টাঙানো ফ্রেম বন্দী আয়াসোফিয়া মিউজিয়ামের গ্লি আর সেই ছবিতে নেই।সেই ধূসর রঙের শরীর ও সবুজ জ্বলজ্বলে চোখের গ্লি নামের বিড়ালটা সারা ঘরময় মিউমিউ স্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে সোফার কাছে যেতেই একটা আলোর স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল আর চাদরটা পাক খেতে খেতে আপনি উঠে গেল। সোফায় সাদা পোশাকে এক রমণী এসে বসতেই গ্লি তার পাশে গিয়ে বসল।রমণী বিড়ালটিকে আদর করছে আর বলছে তোমার কোন চিন্তা নেই।ইস্তাম্বুলের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে মিউজিয়াম আবার মসজিদে রূপান্তরিত হলেও গ্লি নামের বিড়াল যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।তার সাথে অন্যান্য বিড়ালেরাও যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।গ্লি খুশি হয়ে রমণীর হাত চাটতে লাগল। রমণী বলল আয়াসোফিয়ার প্রধান আকর্ষণ ছিলে তো গ্লি তুমি। তোমার টানেই সেখানে ভিড় উপচে পড়ত। তোমাকেই তো সবাই দেখতে আসত।তোমার ওই জ্বলজ্বলে সবুজ চোখে সবাই মুগ্ধ। বিড়ালটা যেন ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হাসল।
তারপর ওই রমণীর দিকে তাকিয়ে বসেছিল। সে যেন জানতে চাইছিল মিউজিয়ামটি কেন আইনসিদ্ধ ছিল না? কেনই বা তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মিউজিয়ামকে মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেন? আবার সেখানে ৮৬ বছর পর কেন জুম্মার নামজ অনুষ্ঠিত হয়?
এ সব তোমার আমার জানার দরকার নেই গ্লি।এইসব স্থাপত্যের ইতিহাস জানাই যথেষ্ট।তুমি হয়তো জান না গ্লি।১০০ বছর ধরে আয়াসোফিয়া খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন ক্যাথিড্রাল চার্চ ছিল। এরপর অটোমনরা এ অঞ্চল দখল করে একে মসজিদে রূপান্তর করে।১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এটি মসজিদ ছিল। এটাই আশ্চর্যের কথা কেন মসজিদ মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছিল আর তখন থেকেই তুমি সেখানে। যাক তোমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন দেখে পত্র পত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যম খুব খুশি। তুমি ৮৬ বছর এই মিউজিয়ামকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিলে।তোমাকে ওরা মসজিদে রেখে দেবে অন্যান্য বিড়ালের সাথে। শোনা যাচ্ছে আজানের সুর। যাই এবার বলল রমণী।সে মুসলমান পুরুষ রূপ ধরে নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেল। সোফার চাদর উধাও। গিন্নি অবাক,জানলায় এক জোড়া জ্বলজ্বলে সবুজ চোখ কোথায় গেল? গিন্নী দেওয়ালে তাকিয়ে দেখল জ্বলজ্বলে সবুজ চোখে গ্লি ফোটফ্রেমে বন্দী হয়ে আছে।