সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

নাম : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
জন্ম : ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
পিতা-মাতা : রজনীনাথ দত্ত, মহামায়া দেবী
ছদ্মনাম : নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর
পেশা : কবি
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি : ফুলের ফসল (১৯১১), কুহু ও কেকা (১৯১২)
মৃত্যু : ২৫ জুন ১৯২২ (৪১ বছর)
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (জন্ম: ফেব্রুয়ারি ১১, ১৮৮২ – মৃত্যু: জুন ২৫, ১৯২২) বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় কবি ও ছড়াকার। রবীন্দ্রযুগের খ্যাতনামা “ছন্দোরাজ” কবি। তার কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ছন্দের যাদুকর নামে আখ্যায়িত করেন। মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী।
প্রারম্ভিক জীবন
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান এর চুপী গ্রামে। পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, মাতা মহামায়া দেবী। পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।
কর্মজীবন
কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নবকুমার কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতার বিষয়বস্তু। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। তার অপর কৃতিত্ব বিদেশী কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি-ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন। কবিতায় ছন্দের সমৃদ্ধতার জন্য তিনি ছন্দের রাজা ও ছন্দের যাদুকর বলে খ্যাত।
কাব্যগ্রন্থ
• সবিতা (১৯০০)
• সন্ধিক্ষণ (১৯০৫)
• বেণু ও বীণা (১৯০৬)
• হোমশিখা (১৯০৭)
• ফুলের ফসল (১৯১১)
• কুহু ও কেকা (১৯১২)
• তুলির লিখন (১৯১৪)
• মনিমঞ্জুষা (১৯১৫)
• অভ্র-আবীর (১৯১৬)
• হসন্তিকা (১৯১৭)
• বেলা শেষের গান (১৯২৩)
• বিদায় আরতি (১৯২৪)
দেহাবসান
মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন তারিখে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরলোকগমন করেন। সত্যেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন –
“ তুমি বঙ্গভারতীর তন্ত্রী-‘পরে একটি অপূর্ব তন্ত্র এসেছিলে পরাবার তরে এ শুধু প্রিয়জনের প্রশংসা নয়, এ এক ঐতিহাসিক সত্য।”
Source : wikipedia