শূদ্রের মাঝে জাগিছে রুদ্র (প্রলয়শিখা)
শূদ্রের মাঝে জাগিছে রুদ্র
ব্যথা-অনিদ্র দেবতা।
শুনি নির্জিত কোটি দীন-মুখে
বজ্র-ঘোষ বারতা।
এ কী মহা দীন রূপ ধরি ফের
পথে পথে ভাঙা কুটিরে,
সবারে অন্ন বিলায়ে আপনি
মাগিছ ভিক্ষা-মুঠিরে॥
কৃষক হইয়া কর্ষিছ ভূমি
জলে ভিজে রোদে পুড়িয়া,
পরবাসে তুলি হরের লক্ষ্মী
আঁধারে মরিছ ঝুরিয়া।
শ্রমিক হইয়া খুঁড়িতেছ মাটি,
হীরক মানিক আহরি
রাজার ভাঁড়ার করিছ পূর্ণ
নিজে নিরন্ন বিহরি।
আপনার গায়ে লাগাইয়া ধূলি
নির্মল রাখ ধরণি,
সকলের বোঝা বহিবার লাগি
মুটে কুলি হলে আপনি।
সকলের তরে রচিয়া প্রাসাদ,
নগর বসায়ে কাননে,
রাজমিস্ত্রির রূপে ফের সাঁঝে
চুন-বালি মাখা আননে।
কুটিরে তোমার জলে না প্রদীপ,
কাঁদে নিরন্ন পরিজন,
সকলের তরে রচি শুচি-বাস
নিজে হলে তাঁতি বিবসন।
আপনি হইয়া অশুচি মেথর
রাখিতেছ শুচি ভুবনে,
না হতে প্রভাত রাজপথ-ধূলি
মার্জনা কর গোপনে!
সকল রুচি ও শুচিতা তেয়াগি
আবিলতা কাঁধে বহিয়া,
ফিরিছ দেবতা হাড়ি ডোম হয়ে
সকলের ঘৃণা সহিয়া।
দ্বারবান হয়ে রক্ষিছ দ্বার,
সেব পদ হয়ে সেবাদাস,
দেবতা হইয়া মানুষের সেবা
করিতেছ তুমি বারো মাস।
ভেবেছিলে বুঝি, ছলের ঠাকুর,
মর্ত্যের অধিবাসী সব
তোমারে চিনিয়া এই রূপে রূপে
পূজিয়া করিবে পরাভব।
যত সেবা দাও, তত করে ঘৃণা,
দেখিতে দেখিতে চারি কাল।
হইল অন্ত, ধূর্জটি তাই
খেপিয়ে উঠেছে জটাজাল?
ছিলে শূদ্রের শ্মশানে-মশানে
রুদ্ররূপী হে মহাকাল,
খুলিয়া পড়েছে রাজার পুরীতে
নাগ-বন্ধন বাঘছাল!
যমের বাহন মহিষ, তোমার
বাহন বৃষভ লইয়া
প্রমথের দল ছিল এতদিন
শান্ত কৃষক হইয়া;
তব ইঙ্গিতে খেপিয়া উঠেছে
আজি কি সকলে নিখিলে?
তোমার ললাট-অগ্নি দিয়া কি
রাজার শাস্তি লিখিলে?
নমো নমো নমঃ শূদ্ররূপী হে
রুদ্র ভীষণ ভৈরব!
পূর্ণ করো গো পাপ ধরণির,
মহাপ্রলয়ের উৎসব।
সৃষ্টির কথা তুমি জান, দেব!
এ ভীষণ পাপ-ধরাতে
পারি না বাঁচিতে; এর চেয়ে ঢের
ভালো তব হাতে মরাতে।