শরৎচন্দ্রের ধর্ম সংজ্ঞা
“যাহা ধর্ম সে ত বর্মের মতো, আঘাত সহিবার
জন্যই! সেই ত তার শেষ পরীক্ষা!”
এ উক্তি করেছেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গৃহদাহ উপন্যাসের “মহিম” চরিত্রের জবানীতে।
ধর্ম কোন এক ঠুনকো অলংকার নয়, যে কথায় কথায়, তা কালিমায় কলঙ্কিত হবে বা ভ্রষ্ট হবে। ধর্ম আমার পরিচয়, হ্যাঁ কতক্ষণ আমি ঈশ্বর সাধনা করি বা আচারনিষ্ঠা পালন করি, তা দিয়ে ধর্ম বিচার হয় নয়। জন্মসূত্রে একটি ধর্ম গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত হতে হয়, তারপর শিক্ষা, সংস্কৃতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থান, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রভাবে একান্ত ধর্ম জ্ঞান গড়ে ওঠে যা একেবারেই নিজস্ব।
ধর্ম আমাদের এক আইডেন্টিটি বা অভিজ্ঞান। যে কোন আবেদনপত্রে দেশের নাগরিকত্বের সাথে নথিভুক্ত করতে হয় “রিলিজিয়ন”।
রাসায়নিক শাস্ত্রে, মৌলিক, যৌগিক সব বস্তুর চরিত্র বোঝাতে ইংরেজীতে বলে –….
Property যা দুরকম -physical , chemical আসলে বাহ্যিক আর অন্তর্গত আর property এর বাংলা তর্জমা রসায়ন শাস্ত্রে হলো ” ধর্ম “
কম বেশি একশ বছর আগে শরৎচন্দ্রের বিতর্কিত উপন্যাস ” গৃহদাহ” ঝড় তুলেছিল সমাজে।
ভ্রষ্টা চরিত্র “অচলা”র সংস্পর্শে এক ব্রাহ্মণের ধর্ম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল নাকি, কি বলেছিলেন শরৎচন্দ্র ,মহিমের চিন্তাধারার মাধ্যমে—-
আচারনিষ্ঠ রামবাবু যখন জানতে পারলেন তিনি কুলটা অচলার হাতে অন্নজল গ্রহণ করেছেন, তিনি তার নিজ জাত ধর্ম রক্ষার জন্য কাশীতে প্রায়শ্চিত্ত করতে গেলেন। মহিম মনে মনে বলল ,
“….. অচলার অপরাধের বিচার না হয় পরে চিন্তা করিবে, কিন্ত এই আচার-পরায়ন ব্রাহ্মণের এই ধর্ম কোন্ সত্যকার ধর্ম, যাহা সামান্য একটা মেয়ের প্রতারণায় এক নিমেষে ধুলিসাৎ হইয়া গেল, যে ধর্ম অত্যাচারের আঘাত হইতে নিজেকে এবং অপরকে রক্ষা করিতে পারে না, বরঞ্চ তাহাকে মৃত্যু হইতে বাঁচাইতে সমস্ত শক্তি অহরহ উদ্যত রাখিতে হয়। সে কিসের ধর্ম এবং মানবজীবনে তাহার প্রয়োজনীয়তা কোন্ খানে ? যে ধর্ম স্নেহের মর্যাদা রাখিতে দিল না, নিঃসহায় আর্ত্ত নারীকে মৃত্যুর মুখে ফেলিয়া যাইতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করিল না, আঘাত খাইয়া যে ধর্ম এতবড় স্নেহশীল বৃদ্ধকে এমন চঞ্চল প্রতিহিংসায় এরূপ নিষ্ঠুর করিয়া দিল, সে কিসের ধর্ম? ইহাকে যে স্বীকার করিয়াছে, সে কোন্ সত্য বস্তু বহন করিতেছে? যাহা ধর্ম সে ত বর্মের মতো আঘাত সহিবার জন্যই! সেই ত তার শেষ পরীক্ষা!”
মনে হয় বর্তমান সমাজে এই ধর্ম ধারণা প্রতি নাগরিক (যে ধর্মাবলম্বীই হন)এরই স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন।