Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ল্যাটিন সাহিত্যে নিকানোর পাররার কবিতা || Sankar Brahma » Page 2

ল্যাটিন সাহিত্যে নিকানোর পাররার কবিতা || Sankar Brahma

ল্যাটিন সাহিত্যে নিকানোর পাররার কবিতা -2

১).
Ejercicios respiratorios (শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম)

যেহেতু আমার স্বাস্থ্য দুর্বল,
যেহেতু বুদ্ধিগত কাজকম্মোগুলোর কঠোরতা এড়াতে পারি না,
যেহেতু আমার ভাবনাচিন্তা অস্থিরীকৃত এবং যেহেতু অন্ততঃ
আমার ভুল হয় বিজ্ঞানের সত্যতা ও শিল্পের ইন্দ্রজাল বিষয়ে
উচ্চ ধারণা পোষণ করায়,
যেহেতু নিজের সম্পর্কে আমি উদাসীন,
যেহেতু রোজ রোজ চান করি না,
আর যেহেতু আমার চুল ও নখ যেমন খুশি বাড়তে থাকে,
যেহেতু আমার সম্পত্তি উড়িয়ে দিয়েছি তাদের জন্য যারা
আত্মার দিক থেকে গরীব,
যেহেতু অসুস্থদের জন্য যা এক্কেবারে ঠিকঠাক ও প্রয়োজনীয় তার চেয়েও
বেশী কিছু করেছি,
যেহেতু একটা লম্বা সময় কাটিয়েছি আমি সমাধিস্থলগুলোয়
চাষাভুষো পাগানদের মত মৃতের প্রতি পবিত্র নীরবতা ও
একাকীত্বকে আমি উপভোগ করি,
যেহেতু হতাশা ও গর্বের মুহূর্তে
উপাস্যদের মুখে থুতু ছিটিয়ে থাকি,
যেহেতু আমি মদ খেয়ে মন্দিরে যাই আর চৌমাথার বা
ট্রামের বেঞ্চিগুলোয় পড়ে পড়ে ঘুমোই,
এবং যেহেতু যৌবন বয়সটা বেকার ঘোরাঘুরি আর অদরকারী
পড়াশোনায় খরচ করেছি।
(Poemas Y Antipoemas বই থেকে)

২).

SOLILOQUIO DEL INDIVIDUO (একক মানুষের স্বগতকথন)

আমি একজন একক মানুষ।
প্রথমে আমি পাহাড়ের ওপর থেকেছি
(সেখানে কিছু ছবি তুলে রেখেছি)।
আমি একজন একক মানুষ।
আমাকে প্রথমে খাবারের ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হয়েছিল
মাছ, পাখী এসব খোঁজা, কাঠ খোঁজা,
(বাকী ব্যাপারগুলো নিয়েও আমি উৎকণ্ঠায় থাকতাম)।
কুটো জড় করে আগুন জ্বালানো,
কাঠ কাঠ, কোথায় একটুকরো কাঠ পাই,
কুটো জ্বালাতে কিছু কাঠ লাগবে,
আমি একজন একক মানুষ।
সেই সময়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছি,
আমি ছিলাম বাতাস ভরা একটা নরক বিশেষ,
একটি কন্ঠ আমায় উত্তর দিয়েছিলঃ
আমি একজন একক মানুষ।
তারপর নিজেকে অন্য পাহাড়ে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম,
সেখানেও কিছু ছবি তুলে রাখলাম,
একটা নদী, মোষ,
সাপের ছবিও তুললাম
আমি একজন একক মানুষ।
কিন্তু না। যেসব কাজ করছিলাম সেসব একঘেয়ে লাগল আমার,
আগুন দেখলে বিরক্ত লাগত,
আমি আরো কিছু দেখতে চাইতাম,
আমি একজন একক মানুষ।
একটা নদী ধোয়া উপত্যকায় নেমে এলাম আমি,
সেখানেই দেখা পেলাম যা যা জিনিষ প্রয়োজন সেগুলোর,
একটা বন্য জনপদের দেখা পেলাম,
একটা উপজাতি,
আমি একজন একক মানুষ।
দেখলাম সেখানে ওরা কিছু কাজ করছিল,
পাহাড়ে ওরা ছবিগুলো তুলছিল।
আগুন জ্বালাচ্ছিল। ওরা আগুনও জ্বালাচ্ছিল!
আমি একজন একক মানুষ।
আমায় জিজ্ঞেস করল কোথা থেকে এসেছি,
উত্তর দিলাম আমার কোন স্থির পরিকল্পনা নেই এ ব্যাপারে,
বললাম না, সেখান থেকে আগে এগোব
বেশ।
নদীতে একটা পাথরের টুকরো দেখতে পেয়ে কুড়িয়ে নিলাম
আর অন্য একটা পাথর নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম
ওটা পালিশ করতে শুরু করলাম,
সেখানে থেকেই আমার জীবনের একটা অংশ করলাম।
কিন্তু এটা বড্ড বেশীই দীর্ঘ।
জলে ভাসবার জন্য কটা গাছ কাটলাম,
মাছ খুঁজতে লাগলাম,
অন্যান্য বিভিন্ন জিনিষ খুঁজতাম
(আমি একজন একক মানুষ)।
যতক্ষণ না নতুন করে আবার আমার একঘেয়ে লাগতে শুরু করল।
আমার একঘেয়ে লাগত ঝড়েদের,
বাজগুলোকে, বিদ্যুতের চমকানিগুলোকে,
আমি একজন একক মানুষ।
বেশ। একটু ভাবতে বসলাম,
মাথার মধ্যে বোকা বোকা প্রশ্ন আসতে লাগল।
নকল সব সমস্যারা।
তখন উদ্দেশ্যহীন কোন জঙ্গলে ঘুরতে শুরু করলাম।
একটা গাছের কাছ থেকে আর একটা গাছে;
একটা ঝরনার কাছে পৌঁছলাম,
একটা গর্তের কাছে এসে দেখলাম কতগুলো ইঁদুরকেঃ
এইখানে এসেছি আমি, তখন বললাম,
এখানে কোন উপজাতি দেখেছেন আপনারা?
কোন বুনো জনপদ যারা আগুন জ্বালায়?
এভাবে অন্য প্রাণীদের সঙ্গে সঙ্গে
আমি পশ্চিমদিকে সরে গেলাম,
কিংবা আরো ভাল করে বললে একাই।
এটা দেখবার জন্য বিশ্বাস করা জরুরী, ওরা আমায় বলত,
আমি একজন একক মানুষ।
অস্পষ্টতায় যে সব মূর্তিগুলো দেখতাম,
হয়ত মেঘ হতে পারে তারা,
হয়ত মেঘ দেখতাম, বিদ্যুৎ চমক দেখতাম,
বহুদিন ধরে এসব কিছুই চলেছিল,
আমার মনে হত মরে যাই,
কিছু মেশিন আবিষ্কার করে ফেললাম,
ঘড়িগুলো বানালাম,
অস্ত্রশস্ত্র, গাড়িঘোড়া,
আমি একজন একক মানুষ।
আমার মৃতদেহগুলোকে কবর দেবার মত সময়ও ছিল না,
বীজ রোপন করবার সময়ও ছিল না,
আমি একজন একক মানুষ।
অনেক বছর পরে ক’টা ব্যাপার আয়ত্বে এসেছিল
কিছু মূর্তি,
সীমারেখা পার হয়ে গেছিলাম
আর কুলুঙ্গির ভেতরে পাকাপাকি ঘাঁটি গাড়লাম,
ওটা একটা জাহাজ ছিল চল্লিশ দিন ধরে যে ভেসেছিল,
চল্লিশ রাত,
আমি একজন একক মানুষ।
তারপর এল কিছু খরা,
কিছু যুদ্ধও এল,
উপত্যকায় বিভিন্ন ধরনের রঙ এল,
কিন্তু আমাকে এগিয়ে যেতেই হত,
উৎপাদন করতেই হত।
বিজ্ঞান উৎপন্ন করলাম, অপরিবর্তনীয় সবুজ,
তানাগ্রা* উৎপন্ন করলাম,
লক্ষ পাতাওয়ালা বইয়ের জন্ম দিলাম,
আমার মুখ ফুলে গেছিল।
গ্রামোফোন তৈরী করলাম,
সেলাই যন্তর,
প্রথম দিককার গাড়িগুলো তৈরী হতে শুরু করল,
আমি একজন একক মানুষ।
গ্রহগুলোকে কেউ আলাদা করে রাখল,
আলাদা আলাদা গাছেরা!
তবে আমি আলাদা করলাম যন্ত্রপাতিগুলোকে,
আসবাবপত্র, লেখার জিনিষপত্তর,
আমি একজন একক মানুষ।
একটা তালার দিকে চাইলাম।
হ্যাঁ, দেখলাম, বললাম কি, আমি দেখলাম,
আমার সন্দেহ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চাইলাম,
কিছু পর্দার পেছন থেকে চাইলাম,
আমি একজন একক মানুষ।
বেশ।
ভাল হয়, হয়ত সেই উপত্যকায় ফিরে আসা,
সেই পাহাড়টায় যেটা আমায় ঘর দিয়েছিল,
আর নতুন করে ছবি তুলে রাখতে শুরু করলে হয়,
সেখান থেকে এগিয়ে যাবার জন্য ছবি তোলা
দুনিয়াটাকে উল্টোতে যাওয়া
কিন্তু না। জীবনটার কোন অর্থ নেই।
(Poemas y artefactos বই থেকে)

(তানাগ্রা* – গ্রীক টেরাকোটা মূর্তি)

(৩).

” আমার বলা কথাগুলো আমি ফিরিয়ে নিতে চাই
চলে যাবার আগে
আমার একটি প্রত্যাশা পূরণের বাসনা আছে।
শ্রদ্ধেয় পাঠক
আমার বইগুলো পুড়িয়ে ফেলুন।
আমি যা বলতে চেয়েছিলাম এতে মোটেও তা নেই
যদিও এসব রক্ত দিয়েই লেখা হয়েছিল,
কিন্তু এগুলো তা নয়
যা আমি বলতে চেয়েছিলাম।
এরা কেউই আমার চেয়ে বেশী বিষাদ বহন করতে পারে না,
কিন্তু আমি আমার ছায়ার কাছেই হেরে গেছি :
আমার শব্দরা আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে
ক্ষমা করুন পাঠক, প্রিয় পাঠক
যদি আমি আপনাকে
উষ্ণ আলিঙ্গনে বিদায় জানাতে না পারি,
যদি আমি একটি বিষণ্ণ হাসি রেখে
জোর করে বিদায় নিতে চাই।

হয়ত এই লেখাগুলোর সবটাই আমি
তবু আমার শেষ কথাটুকু শুনুন :
আমি ফিরিয়ে নিতে চাই আমার কথাগুলো।
এক পৃথিবী বিষাদ নিয়ে বলা
আমার কথাগুলো আমি ফিরিয়ে নিতে চাই।

৪).

nicanor_parra
ক্রনোস (সময়)

চিলির সান্তিয়াগোয়
দিবস
গুলো
সীমাহীন
সুদীর্ঘ

এক একটি দিনে যেন একাধিক অনন্তকাল

সাগর-শৈবালের ফেরিওয়ালাদের মত
আমরা ঘুরে ফিরি খচ্চরের পিঠে
হাই ওঠে। ফের হাই ওঠে।

তথাপি সপ্তাহগুলো খুব সংক্ষিপ্ত
মাসগুলো অতি দ্রুত অতিবাহিত
আরবছরগুলোযেনস্রেফউড়েচলেযায়।

Cronos

En Santiago de Chile
Los
días
son
interminablemente
largos:

Varias eternidades en un día

Nos desplazamos a lomo de mula
Como los vendedores de cochayuyo:
Se bosteza. Se vuelve a bostezar.

Sin embargo las semanas son más cortas
Los meses pasan a toda carrera
Ylosañosparecequevolaran.

টীকা –
“সাগর-শৈবাল” – কোচায়ুইয়ো এক প্রকার সামুদ্রিক উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম Durvillaea antarctica। চিলির ট্র্যাডিশনাল রান্নাবান্নায় প্রায়শ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৫).

মমি

একটি মমি তুষারের ওপর হাঁটে
আরেকটি মমি বরফের ওপর হাঁটে
আরেকটি মমি বালির ওপর হাঁটে।

একটি মমি তৃণভূমিতে হাঁটে
দ্বিতীয়টি তার প্রিয়ার সঙ্গে যায়
একটি মমি ফোনে কথা বলে
নারী মমি আরশিতে মুখ দেখে।

একটি মমি (নারী) গুলি ছোড়ে
সকল মমি জায়গা বদল করে
প্রায় সকল মমিই সটকে পড়ে।

গুটিকয়েক টেবিল ঘেঁষে বসে
কতেক মমি বিড়ি-সিগারেট সাধে
একটি মমি নাচের ভঙ্গি তোলে।

একটি মমি, বাকিদের চেয়ে বুড়ি,
তার বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়ায়।

৬).

“কবিতা ও বিরুদ্ধ কবিতা”

” আমার বলা কথাগুলো আমি ফিরিয়ে নিতে চাই
চলে যাবার আগে
আমার একটি প্রত্যাশা পূরণের বাসনা আছে।
শ্রদ্ধেয় পাঠক
আমার বইগুলো পুড়িয়ে ফেলুন।
আমি যা বলতে চেয়েছিলাম এতে মোটেও তা নেই
যদিও এসব রক্ত দিয়েই লেখা হয়েছিল,
কিন্তু এগুলো তা নয়
যা আমি বলতে চেয়েছিলাম।
এরা কেউই আমার চেয়ে বেশী বিষাদ বহন করতে পারে না,
কিন্তু আমি আমার ছায়ার কাছেই হেরে গেছি :
আমার শব্দরা আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে
ক্ষমা করুন পাঠক, প্রিয় পাঠক
যদি আমি আপনাকে
উষ্ণ আলিঙ্গনে বিদায় জানাতে না পারি,
যদি আমি একটি বিষণ্ণ হাসি রেখে
জোর করে বিদায় নিতে চাই।

হয়ত এই লেখাগুলোর সবটাই আমি
তবু আমার শেষ কথাটুকু শুনুন :
আমি ফিরিয়ে নিতে চাই আমার কথাগুলো।
এক পৃথিবী বিষাদ নিয়ে বলা
আমার কথাগুলো আমি ফিরিয়ে নিতে চাই।

৭).

নির্দেশনামা
প্রার্থনা চলবে না। হাঁচি মারা,
থুতু ফেলা, তারিফ করা, হাঁটু গেড়ে বসা,
পূজা করা, গর্জন-তর্জন, কাশ ফেলা, নাক ঝাড়া
সব নিষিদ্ধ এখানে।
ঘুমানো চলবে না এই চত্বরে।
টিকা দেয়া, ফুসুরফুসুর, কাউকে বাতিল করা,
একসঙ্গে সুর ভাঁজা, পালানো, ধরাধরি
সব বন্ধ এইখানে।
দৌঁড়ানো তো একেবারেই হারাম।
ধূমপান নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ চোদাচুদি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মুক্তি যেখানে মূর্তি হয়ে থাকে।

পাররার সতর্ক-বার্তা কবিতায়
(পিনোশের শাসনামলের) বিভীষিকা ফুটে উঠেছে:

প্রার্থনা করা যাবে না; নাক ডাকা যাবে না
থুতু ফেলা যাবে না; প্রশংসা করা যাবে না, হাঁটু গেড়ে বসা যাবে না
উপাসনা না, চিৎকার না, কাশি না
এই চৌহদ্দিতে ঘুমনো নিষেধ
রোগের চিকিৎসা না; কথা বলা না; যোগাযোগ না
স্বরসঙ্গতি না, পালানো যাবে না, ধরা যাবে না
দৌড়ানো একেবারেই নিষিদ্ধ
সিগারেট টানা যাবে না; যৌনসঙ্গম না।

৮).

পয়সাপাত্তি বেশি হলে কী করব?
প্রথমেই আমার স্বাস্থ্য
দ্বিতীয়ত হাতির দাঁতের একটা ভবন বানাব
ভূমিকম্প হলে ধূলিস্মাৎ হয়ে যাবে

আমার ইনকাম ট্যাক্সের কথাও ভাবব

প্রয়োজনে একটা হুইল চেয়ার…

আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ
এই ভাবনাটা দারুণ
তত্ত্বের জন্যে কাজ করব
কথাবার্তা বলাটা বিরক্তিকর
কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল
বেশি বললে কেউ হাততালি দেবে না
বক্তাও নিজেকে খচ্চর মনে করতে পারেন।

৯).

টয়লেট
আমি কবি আর আমার নাম প্লেতো
যুক্তিটুক্তি যা-ই বল উন্মাদনাই আমার যুক্তি
শুধু চাই ছোট্ট একটা গির্জার যাজক হতে

বেশি বেশি সম্মান মানে বেশি বেশি বর্জ্য
আমি চিন্তা করি আর যেভাবে কথা বলি সেভাবেই লিখি
সাহিত্যের চুলকানির ওপর থুতু ফেলি

সবটাই শূন্য
সবকিছুই শূন্যতায় সংকুচিত করা হয়েছে
সামান্য কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই
আসেন দোয়াদরুদ পড়ি।

ভুলটা হল আমরা ভাবি পৃথিবীটা আমাদের
অথচ আসল সত্যটা হল
আমরা
এই
পৃথিবীরই অংশ।

১০).

চিলির মানচিত্র

ছেলেবেলায় বাড়ির কাছের এক কবরখানার ভিতরে খেলতেন ভাইবোনদের সঙ্গে। মেধা ছিল পাররার। গণিত ও জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তারপর অক্সফোর্ড উচ্চতর গবেষনার জন্য অক্সফোর্ড । সেখানেই ইংরেজ কবি জন ডান-এর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং আমৃত্যু কবিতায় নিমজ্জিত হওয়ার সংকল্প করেন।

কবি জন ডান; লিখেছিলেন ‘Death be not proud …’

তারপর দেশে ফিরে সান্তিয়াগোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন।

সান্তিয়াগোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
১৯৩৭ সালে বেরয় পাররার প্রথম কবিতার বই: ‘নামশূন্য গানের খাতা’। ১৭ বছর পরে দ্বিতীয় বই। ‘কবিতা ও প্রতিকবিতা।’
এ লেখার প্রথমে দেখেছি কেমন বেপরোয়া পাররা। তাঁর কবিতাও তেমনি। খোলামেলা। কথ্য। বিস্তর গালাগালি করেন কবিতায়।

১১).

জয়তু স্টালিন

ঐ খানকির ছেলেরা
আমাকে ওভারকোট নেওয়ার সময় পর্যন্ত দিল না।
কোনও রকম হুঁশিয়ারি ছাড়াই
ওরা আমায় ধরে টেনে হিঁচড়ে ফেলে দিল
রাইফেলের বাট ঠেকাল একজন আমার বুকে
আরেক কুত্তার বাচ্চা থুতু দিল
আমি অবশ্য ধৈর্য্য হারাইনি
তারপর তারা আমাকে পেট্রলকারে তুলল
একটি পরিত্যক্ত রাস্তায়
রেলস্টেশনের কাছে
গাড়িটি থামিয়ে ওরা বলল; ঠিক আছে। তুমি মুক্ত, তুমি যেতে পার।
এর মানে আমি জানি।
খুনিরা! বলে আমি চিৎকার করতে পারতাম
তার বদলে মৃত্যুর আগে চিৎকার করে বললাম-
‘ভিভা স্টালিন!’

পাররার সতর্ক-বার্তা কবিতায় পিনোশের শাসনামলের বিভীষিকা ফুটে উঠেছে:

‘প্রার্থনা করা যাবে না; নাক ডাকা যাবে না
থুতু ফেলা যাবে না; প্রশংসা করা যাবে না, হাঁটু গেড়ে বসা যাবে না
উপাসনা না, চিৎকার না, কাশি না
এই চৌহদ্দিতে ঘুমনো নিষেধ
রোগের চিকিৎসা না; কথা বলা না; যোগাযোগ না
স্বরসঙ্গতি না, পালানো যাবে না, ধরা যাবে না
দৌড়ানো একেবারেই নিষিদ্ধ
সিগারেট টানা যাবে না; যৌনসঙ্গমও না।


(মলয় রায়চৌধুরীর অনুবাদে নীচে দেওয়া হলো
নিকানোর পাররার কিছু কবিতা ।)

১২).

ম্যানিফেস্টো

মহোদয়া ও মহাশয়গণ
এটা আমাদের শেষ কথা ।
–আমাদের প্রথম ও শেষকথা —
কবিরা অলিমপাস থেকে নেমে এসেছেন ।

আমাদের বুড়োবুড়িদের জন্য
কবিতা ছিল বিলাসের জিনিস
কিন্তু আমাদের জন্য
এটা একটা বনিয়াদ প্রয়োজন :
আমরা কবিতা ছাড়া বাঁচতে পারি না ।

আমাদের বুড়োবুড়ির থেকে আলাদা
–আর আমি বেশ শ্রদ্ধা সহকারেই বলছি —
আমরা মনে করি
একজন কবি রাসায়নিক নন
একজন কবি অন্য যে কোনো মানুষের মতন
একজন রাজমিস্ত্রি যে দেয়াল গাঁথে :
যে দরোজা আর জানালা তৈরি করে

আমরা কথা বলি
প্রতিদিনের ভাষায়
আমরা গুপ্ত চিহ্ণে বিশ্বাস করি না
তাছাড়া, আরেকটা ব্যাপার :
একজন কবি বেঁচে থাকেন

যাতে গাছটাতে এঁটে ভাবে না বড়ো হয় ।
এ হলো আমাদের বার্তা ।

আমরা সৃষ্টিকর্তা কবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করি
সস্তা কবি
গ্রন্হাগারের ইঁদুর কবি ।
এই সব বাবুদের
–আর আমি তা শ্রদ্ধা সহকারেই বলছি —
অভিযুক্ত ও বিচার করা দরকার
হাওয়ায় দুর্গ খাড়া করার জন্য
জায়গা আর সময় নষ্ট করার জন্য
যাহোক-তাহোক শব্দ জড়ো করার জন্য
প্যারিসের সাম্প্রতিক ফ্যাশান অনুযায়ী ।

আমাদের জন্য নয় :
ভাবনাচিন্তা মুখের ভেতরে জন্মায় না
তা হৃদয়ের হৃদয়ে জন্মায়
আমরা অগ্রাহ্য করি
রোদচশমা কবিতা
তরোয়াল আর ফতুয়া কবিতা
বড়ো ডানা কবিতার ছায়াকে
পরিবর্তে, আমরা পছন্দ করি
খোলা চোখের জন্য কবিতা
ঢাকা না-দেয়া বুকের কবিতা
নগ্ন মাথার কবিতা
আমরা মায়াপরী আর শুশুক-দেবতায় বিশ্বাস করি না ।

কবিতাকে এরকম হতে হবে :
ঝর্ণায় ঘেরা এক যুবতী
কিংবা কোনো কিছুই হবে না ।

সুতরাং এখন, রাজনীতির এলাকায়
ওনারা, আমাদের দাদুদিদারা,
আমদের ভালো দাদুদিদারা !

প্রতিসরিত আর ছড়িয়ে-পড়া
যখন তাঁরা কাচের স্ফটিকের ভেতর দিয়ে গেলেন
তাঁদের কয়েকজন সাম্যবাদী হয়ে গেলেন ।
আমি জানি না তাঁরা সত্যই তা ছিলেন কিনা।

ভেবে নেয়া যাক তাঁরা সাম্যবাদী ছিলেন
আমি একটা ব্যাপার জানি :
তাঁরা ঘাসভূমির কবি ছিলেন না,
তাঁরা ছিলেন শ্রদ্ধেয় বুর্জোয়া কবি ।
তাঁরা কেমন ছিলেন তা বলা জরুরি :

সময়ে সময়ে
তাঁরা জানতেন কেমন করে জনগণের হৃদয়ে প্রবেশ করতে হয় ।
প্রতিবার তাঁরা যদি পারতেন
তাঁরা শব্দ আর কাজের মাধ্যমে নিজেদের ঘোষণা করতেন
পথনির্দেশিত কবিতার বিরুদ্ধে
বর্তমানকালের কবিতার বিরুদ্ধে
শ্রমিকশ্রেনীর কবিতার বিরুদ্ধে ।

মেনে নেয়া যাক তাঁরা সাম্যবাদী ছিলেন ।
কিন্তু কবিতা হয়ে উঠেছিল দুর্বিপাক
সেকেণ্ডহ্যাণ্ড পরাবাস্তববাদ
থার্ডহ্যাণ্ড ডেকাডেন্টিজম,
সমুদ্রের ফেরত-পাঠানো পুরোনো কাঠের পাটাতন ।

বিশেষণ কবিতা
নাকিসুর আর কুলকুচির কবিতা
স্বেচ্ছাচারী কবিতা
বই থেকে জড়ো করা কবিতা
বিপ্লব শব্দের ওপর
নির্ভর করা কবিতা
পরিস্হিতি অনুযায়ী তা হওয়া উচিত ছিল
বিপ্লবের ধারণায় নির্ভর
কবিতার বজ্জাত গোষ্ঠীচক্র
আধডজন নির্বাচিতদের
“আত্মপ্রকাশের চরম স্বাধীনতা”
এখন আমরা নিজেদের জেরাই করে জানতে চাই
এসব তাঁরা কিসের জন্য লিখেছিলেন,
পাতিবুর্জোয়াদের ভয় দেখাবার জন্য ?
ফালতু সময় নষ্ট !

পাতিবুর্জোয়ারা প্রতিক্রিয়া জানায় না
যদি না তা তাদের পেটের ব্যাপার হয় ।
তারা কবিতার ফলে আঁৎকে উঠবে !
এটাই অবস্হা দাঁড়িয়েছে :
তারা যখন সমর্থন করেছিল
এক গোধূলীর কবিতা
এক রাতের কবিতা
আমরা সমর্থন করেছিলুম
এক ভোরের কবিতা ।

এটাই আমাদের বার্তা, কবিতা ঔজ্বল্য
সকলের কাছে পৌঁছোনো দরকার, সমানভাবে
কবিতা সকলের জন্য যথেষ্ট ।

আর কিছু নয়, সহকর্মীবৃন্দ
আমরা অগ্রাহ্য করি
— আর আমি তা শ্রদ্ধা সহকারে বলছি —
ছোটো-দেবতা কবিতা
পবিত্র গরু কবিতা
ক্ষ্যাপা ষাঁড় কবিতা
আমরা বিরোধিতা করি
মেঘের কবিতা
শক্তমাটি কবিতা
–ঠাণ্ডা মাথা, উষ্ণ হৃদয় —
আমরা নিশ্চিতভাবে শক্তমাটির
কফি কবিতার বিরুদ্ধে — প্রকৃতির কবিতা
বৈঠকখানা কবিতার বিরুদ্ধে — রাস্তার মোড়ের কবিতা
সামাজিক প্রতিবাদের কবিতা ।
কবিরা অলিম্পাস থেকে নেমে এসেছেন ।
সেইরকমই কিছু
পাররা হাসেন যেন তাঁকে নরকে নির্বাসিত করা হয়েছে
কিন্তু কবেই বা কবিরা হাসেননি ?
তিনি অন্তত ঘোষণা করছেন যে তিনি হাসছেন
তারা যেতে দেয় বছরগুলোকে যেতে দেয়
বছরগুলো
অন্তত মনে হব তারা যাচ্ছে
প্রকল্পের আমি ভান করি না
সবকিছু চলে যায় যেন চলে যাচ্ছে
এখন উনি কাঁদতে আরম্ভ করেন
ভুলে যান যে উনি একজন অ্যান্টি-পোয়েট

১৩).

মাথা ঘামানো থামান

আজকাল কেউই কবিতা পড়ে না
তা ভালো না খারাপ তাতে কিছুই আসে-যায় না

১৪).

চারটে খুঁত যার কারণে আমার ওফেলিয়া আমাকে ক্ষমা করবে না :
বুড়ো
নীচুস্তরের জীবন
সাম্যবাদী
আর জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার

আমার পরিবার হয়তো আপনাকে ক্ষমা করতে পারেন
প্রথম তিনটির কারণে
কিন্তু শেষটির জন্য একেবারেই নয়

১৫).

আমার শব আর আমি

ভালোভাবে নিজেদের বুঝতে পারি

আমার শব আমাকে জিগ্যেস করে :
তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো ?

আমি জোর গলায় বলি না

আমার শব জিগ্যেস করে ।
তুমি সরকারকে বিশ্বাস করো ?

আমি কাস্তে আর হাতুড়ি দেখিয়ে জবাব দিই

আমার শব জিগ্যেস করে ।
তুমি পুলিশকে বিশ্বাস করো ?

আমি ওর মুখে ঘুষি মেরে জবাব দিই

তারপর ও কফিন থেকে উঠে বেরিয়ে আসে
আর আমরা বাহুতে বাহু গলিয়ে বেদিতে যাই

১৬).

দর্শনের আসল সমস্যা হল
যে থালাগুলো কে ধোবে
কিছুই অন্য জগতের নয়

ঈশ্বর
সত্য
সময়ের চলে যাওয়া
চরম

কিন্তু প্রথম, থালাগুলো কে ধোবে
যে কেউই করতে চাক না কেন, যাও করো
পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে, কুমির
আর আমরা আবার পরস্পরের শত্রু হয়ে গেছি

১৭).

হোমওয়র্কের কাজ

একটি সনেট লিখো
যা এই লাইনের ছন্দে লিখতে হবে :

আমি তোমার আগে মরে যেতে চাই

আর শেষ হবে এই লাইন দিয়ে

আমি চাইবো তুমি প্রথমে মারা যাও :

১৮).

তুমি জানো কী ঘটেছে

যখন আমি হাঁটু মুড়ে বসেছিলুম
ক্রসের সামনে
ওনার আঘাতের দিকে তাকিয়ে ?

উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন আর চোখ মারলেন !

আমি ভাবার আগেই যে উনি কখনও হাসেননি

কিন্তু এখন হ্যাঁ আমি মনে করি সত্যি

১৯).

একটা জরাজীর্ণ বুড়ো লোক

ওর প্রিয় মায়ের কফিনে
লাল কারনেশন ফুল ছোঁড়ে
আপনারা কি শুনছেন মহোদয়া এবং মহাশয়গণ :

এক বুড়ো বেহেড মাতাল

তার মায়ের সমাধিতে বোমা ফেলছে
ফিতে বাঁধা আর লাল কারনেশানসহ

২০).

ধর্মের খাতিরে আমি খেলাধুলো ছেড়েছিলুম
( প্রতি রবিবার গির্জায় যেতুম )
আমি ধর্মকে বর্জন করলুম শিল্পের খাতিরে
গণিতবিজ্ঞানের শিল্পের খাতিরে
যখন শেষে ঔজ্বল্য আক্রমণ করলো

আর এখন আমি একজন যে কেবল ছলেই চলেছে
যার সমগ্রতে আর অংশতে কোনো বিশ্বাস নেই
কোনো রাষ্টপতির মূর্তি পার পায় না
ওই অব্যর্থ পায়রাগুলো থেকে

ক্লারা সানদোভাল আমাদের বলতেন :
ওই পায়রাগুলো জানে ওরা ঠিক কোন কাজ করছে
হুঁশিয়ারি
আগুন লাগলে
লিফ্ট ব্যবহার করবেন না
সিঁড়ি দিয়ে যাবেন
যদি না অন্য কোনো নির্দেশ থাকে
সিগারেট ফুঁকবেন না
কাগজ ছড়াবেন না
হাগবেন না
রেডিও বাজাবেন না
যদি না অন্য কোনো নির্দেশ থাকে
পায়খানায় জল ঢালবেন
প্রতিবার ব্যবহার করার পর
কেবল যখন স্টেশানে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে তখন নয়

ভাবনাচিন্তা করবেন
পরবর্তী যাত্রীর জন্য
খ্রিস্টধর্মী সেনারা এগোও
দুনিয়ার শ্রমিক এক হও
আমাদের কিছুই হারাবার নেই

পিতার প্রতি আমাদের জীবন গৌরব ছাড়া
এবং পুত্রের প্রতি ও ঈশ্বরের তৃতীয়রূপ ছাড়া
যদি না অন্যরকম নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে
আচ্ছা যা বলছিলুম
আমরা এই সত্যগুলোকে স্বসমর্থিত বলে মনে করি
যে সমস্ত মানুষের সৃষ্টি হয়েছে
তাদের ওপরে বর্তেছে
তাদের সৃষ্টিকর্তার দ্বারা
কিছু অপসারণের অসাধ্য অধিকার
তাদের মধ্যে হলো : জীবন
মুক্তি ও আনন্দের প্রয়াস করা
এবং শেষটি যদিও তা ক্ষুদ্রতম নয়
যে ২ + ২ যোগ করলে ৪ হয়
যদি না অন্যরকম নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে

২১).

ফাঁদ
সেই সময়ে যখন আমি পরিস্হিতিগুলো থেকে নিজেকে
সরিয়ে রাখতুম যা অত্যন্ত রহস্যময়
ঠিক যেমন পেটরোগা লোকেরা বেশি খানাপিনা এড়িয়ে যায়
আমি বাড়িতে থাকা পছন্দ করতুম বিশেষকিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে
মাকড়সাদের বংশবৃদ্ধি সংক্রান্ত
বাগানের কোন কোনায় আমি নিজেকে আড়াল করে রাখবো
আর রাত না হওয়া পর্যন্ত জনগণের সামনে বেরোবো না ;

কিংবা, পুরোহাতা শার্ট পরে, অবজ্ঞায়,
চাঁদের দিকে রাগি চাউনি ছুঁড়ে দেবো,
ওই সমস্ত খিটখিটে কল্পনা থেকে মুক্ত হবার জন্য
যা মানুষের আত্মায় এঁটুলির মতন আঁকড়ে থাকে

যখন একলা ছিলুম তখন আমি একেবারে আত্মঅধিকারে থাকতুম,
নিজের কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এগোতুম আর পেছোতুম
কিংবা নিচুতলার মদের ঘরে পাটাতনের ওপরে হাত-পা ছড়িয়ে শুতুম
আর স্বপ্ন দেখতুম, উপায় খোঁজার কথা ভাবতুম,
ছোটোখাটো জরুরি সমস্যা সমাধান করতুম।
ঠিক সেই সময়েই আমি স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার
আমার বিখ্যাত প্রক্রিয়কে কাজে লাগানো আরম্ভ করলুম
যা হলো নিজের প্রতি হিংস্রতা আর চিন্তা করা যে অন্য লোকে কি চাইবে,

দৃশ্য গড়তে চাইবে
যা আমি আগেই অন্যজগতের ক্ষমতা থেকে আদায় করে রেখেছি ।
এই উপায়ে আমি অসামান্য তথ্য যোগাড় করতে পেরেছি
আমাদের অস্তিত্বকে যে উদ্বেগ কাঁপিয়ে দেয় সেসব সম্পর্কে :
বিদেশ ভ্রমণ, যৌন বিকৃতি, ধার্মিক জটিলতা ।
কিন্তু সব সতর্কতাই ছিল অপর্যাপ্ত,
কেননা, কারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন বলে,
আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢালু পাটাতনে পিছলে যেতে লাগলুম ।

আমার আত্মা ফুটো বেলুনের মতন দ্রাঘিমা হারিয়ে ফেললো,
আত্মসংরক্ষণের প্রবৃত্তি কাজ করা বন্ধ করে দিলো
আর, আমার জরুরি পক্ষপাত থেকে বঞ্চিত,
আমি অপরিহার্যভাবে টেলিফোনের ফাঁদে পড়লুম
যা তার চারিপাশের সবকিছুকে শুষে নেয়, ভ্যাকুয়ামের মতন,
আর কাঁপতে-থাকা হাতে অভিশপ্ত নম্বরে ডায়াল করলুম
যা আমি এখনও ঘুমের মধ্যে আপনা থেকে বারবার করি ।

পরের মুহূর্তগুলো ভরে উঠলো অনিশ্চয়তা আর দুর্দশায়,
যখন কিনা আমি, নরকের ওই টেবিলের সামনে কঙ্কালের মতন দাঁড়িয়ে
হলদে সুতি-কাপড়ে ঢাকা,
পৃথিবীর অন্য পার থেকে উত্তরের জন্য অপেক্যা করতে লাগলুম,
আমার অ্স্তিত্বের বাকি অর্ধাংশ, আকটা গর্তে কারারুদ্ধ ছিল ।

টেলিফোনের ওই স্পন্দিত আওয়াজ
আমার ওপরে ডেন্টিস্টের ছ্যাঁদা করার মতন কাজ করতে লাগলো,
আকাশ থেকে ছোঁড়া ছুঁচের মতন তারা আমার আত্মায় ঢুকে গেলো
যতক্ষণ না, মুহূর্ত নিজেই এসে আবির্ভুত হলো,
আমি রোগির মতন ঘামতে আর তোতলাতে লাগলুম
আমার জিভ বাছুর-ছানার মাংসের মতন
যে যুবতী শুনছিল আর আমার মাঝে ঝুলে রইলো,
সেই কালো পর্দার মতন যা আমাদের থেকে মৃতদের আলাদা করে।
আমি অমন অতি-অন্তরঙ্গ বার্তালাপ করতে চাইনি
যার উৎস আমিই ছিলুম, যাই হোক না কেন, আমার বোকামিতে,
আমার কন্ঠস্বর আবেগে ঘন, আর বিদ্যুৎপ্রবাহ সঞ্চারিত ।
আমার ডাকনামে আহ্বান শুনে
তা কি জোর করে জাগানো পরিচয়ের সুর
আমাকে অস্পষ্ট অস্বস্তিতে ফেললো,
স্হানিক গোলমালের মানসিক পীড়াসহ যা আমি থামাবার প্যাঁচ কষছিলুম
প্রশ্ন আর উত্তরের দ্রুতি-প্রণালীসহ
যা যুবতীটির মধ্যে নকল-যৌনতায় ফেনায়িত হয়ে উঠলো
যা শেষ পর্যন্ত আমাকেও প্রভাবিত করল
সর্বনাশের অনুভূতি টের পেলুম ।

তারপরে নিজেকে হাসালুম আর তার দরুন মানসিকভাবে সটান শুয়ে পড়লুম
এই মজাদার ক্ষুদে আলাপগুলো কয়েক ঘণ্টা চললো
যতক্ষণ না যুবতীটি যিনি পেনশন প্রকল্প সামলান পর্দার পেছনে দেখা দিলেন
আমাদের বোকা-বোকা কাব্যি আচমকা বন্ধ করলেন ।
স্বর্গের দরোজায় একজন দরখাস্তকারীর ওইসব প্রবল মোচড়
আর ওই পরিণতি যা আমার তেজকে দমিয়ে ফেললো
তখনও সম্পূর্ণ থামেনি যখন টেলিফোন রেখে দিলুম
কেননা আমরা নির্ণয় নিলুম
পরের দিন সোডা ফাউন্টেনে দেখা করব
কিংবা এক গির্জার দরোজায় যার নাম আমি ভুলে যেতে চাই ।

২২).

কাল্পনিক মানুষ

কাল্পনিক মানুষটা
এক কাল্পনিক প্রাসাদে থাকে
কাল্পনিক গাছে ঘেরা
কাল্পনিক নদীর তীরে
কাল্পনিক দেয়ালগুলোতে
কাল্পনিক পুরোনো তৈলচিত্র ঝোলে

সারাবার অসাধ্য কাল্পনিক ফাটল
যা কাল্পনিক ঘটনাবলীর কথা বলে
যা কাল্পনিক জগতে ঘটেছে
কাল্পনিক সময়ে আর জায়গায়
প্রতি দুপুরে এক কাল্পনিক দুপুর
ও কাল্পনিক সিঁড়ি চড়ে
আর কাল্পনিক বারান্দায় হেলান দেয়
কাল্পনিক দৃশ্য দেখার জন্য

যেখানে রয়েছে এক কাল্পনিক পাহাড়তলি
কাল্পনিক পাহাড়া ঘেরা
কাল্পনিক ছায়ায়
সোজা চলে গেছে কাল্পনিক পথ
কাল্পনিক গান গাইছে
কাল্পনিক সূর্যের মৃত্যুর জন্য
আর কাল্পনিক চাঁদনি চাঁদের রাতে
ও কাল্পনিক যুবতীটির স্বপ্ন দেখে
যা ওকে দিয়েছিল কাল্পনিক ভালোবাসা
আরেকবার পুরোনো ব্যথা অনুভব করে
সেই কাল্পনিক আনন্দ
আর কাল্পনিক মানুষের হৃদয়
আরেকবার স্পন্দিত
আমি যা-কিছু বলেছি সব ফিরিয়ে নিচ্ছি
যাবার আগে
আমার একটা শেষ ইচ্ছা প্রাপ্য মনে করা হয়

২৩).

দয়ালু পাঠক

এই বইটা পুড়িয়ে ফেলুন
আমি যা বলতে চেয়েছিলুম তা এটা মোটেই নয়
যদিও এটা রক্ত দিয়ে লেখা
আমি যা বলতে চেয়েছিলুম তা এটা নয়
আমার চেয়ে দুঃখী আর কেউ হতে পারে না
আমি আমার ছায়ার কাছে পরাজিত হয়েছিলুম :
আমার শব্দেরা আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিলো ।

ক্ষমা করে দিন, পাঠক, প্রিয় পাঠক
যদি আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে না পারি
উষ্ণ আলিঙ্গন দিয়ে, আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছে
জোর করে আর দুঃখী হাসি হেসে ।
হতে পারে যে আমি কেবল এইটুকুই
কিন্তু আমার শেষ কথাটা শুনুন :
আমি যা বলেছি তা সমস্ত ফিরিয়ে নিচ্ছি :
জগতের সমস্ত তিক্ততা নিয়ে
আমি যা বলেছি তার সব কিছু ফিরিয়ে নিচ্ছি ।

————————————————————
সংগৃহীত ও সম্পাদিত – কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকার
————————————————————
[ ১). কবি মলয় রায়চৌধুরী।
২). শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩). সুবিনয় মুস্তফী।
৪). মাসুদুজ্জাম।
৫). আকিব শিকদার।
৬). জাহেদ সরওয়ার।
৭). আজফার হোসেন।
৮). জয়া চৌধুরী। ]

Pages: 1 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *