Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লোহার বিস্কুট – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 3

লোহার বিস্কুট – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

শনিবার সকালবেলা কমলবাবুর বাসা থেকে পুলিসের পাহারা তুলে নেওয়া হল।
কমলবাবু ভুটোকে একটা কেনেলে রেখে এলেন। পুলিস ছাড়াও অন্য একটি পক্ষ বাসার ওপর নজর রেখেছিল, তারা সব লক্ষ্য করল।
বিকেলবেলা কমলবাবু তাঁর স্ত্রী মেয়ে এবং পোঁটলা-পুঁটলি নিয়ে বাসায় চাবি দিয়ে চলে গেলেন, যাবার পথে থানায় রাখালবাবুকে চাবি দিয়ে বলে গেলেন, ‘খিড়কির দোর ভেজিয়ে রেখে এসেছি। এখন আমার বরাত আর আপনাদের হাতযশ।’
সারা দিন বাড়িটা শূন্য পড়ে রইল।
রাত্রি আন্দাজ সাড়ে আটটার সময় ব্যোমকেশকে নিয়ে রাখালবাবু কমলবাবুর বাসার দিকে গেলেন। দু’জনের পকেটেই পিস্তল এবং বৈদ্যুতিক টর্চ।
সরজমিন আগে থাকতেই দেখা ছিল, পাশের বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে দু’জনে কমলবাবুর খিড়কি দিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন, খিড়কির দরজা বন্ধ করে দিয়ে পা টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠলেন। কান পেতে শুনলেন, বাড়ি নিস্তব্ধ।
রাখালবাবু পলকের জন্য দোরের মাথায় টর্চের আলো ফেলে দেখলেন, ঘোড়ার ক্ষুর যথাস্থানে আছে। তিনি তখন ফিসফিস করে বললেন, ‘চলুন, ছাদে দিয়ে অপেক্ষা করলেই বোধহয় ভাল হবে।’
ব্যোমকেশ তাঁর কানে কানে বলল, ‘না। আমি ছাদে যাচ্ছি, তুমি এই ঘরে লুকিয়ে থাকো। দু’জনেই ছাদে গেলে ছাদের দোর এদিক থেকে বন্ধ করা যাবে না, আসামীর সন্দেহ হবে।’
‘বেশ, আপনি ছাদে গিয়ে লুকিয়ে থাকুন, আমি দোর বন্ধ করে দিচ্ছি।’
ব্যোমকেশ ছাদে উঠে গেল, রাখালবাবু দরজার হুড়কো লাগিয়ে নেমে এলেন। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে ঠিক নেই, এমন কি আসামী আজ নাও আসতে পারে। তিনি দোতলার ঘরের ভিতর ঢুকে দোরের পাশে লুকিয়ে রইলেন।
ছাদের ওপর ব্যোমকেশ এদিক ওদিক ঘুরে জলের চৌবাচ্চা থেকে দূরের একটা আল্‌সের পাশে গিয়ে বসল। আকাশে চাঁদ নেই, কেবল তারাগুলো ঝিকমিক করছে। ব্যোমকেশ অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
দীর্ঘ প্রতীক্ষা। বনের মধ্যে ছাগল বা বাছুর বেঁধে মাচার ওপর বসে বাঘের প্রতীক্ষা করার মত। রাত্রি দুটো বাজতে যখন আর দেরি নেই, তখন রাখালবাবুর মন বদ্ধ ঘরের মধ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল : আজ আর শিকার আসবে না। ঠিক এই সময় তিনি দোরের বাইরে মৃদু শব্দ শুনতে পেলেন; মুহূর্তে তাঁর স্নায়ুপেশী শক্ত হয়ে উঠল। তিনি নিঃশব্দে পকেট থেকে পিস্তল বার করলেন।
যে মানুষটি নিঃসাড়ে বাড়িতে প্রবেশ করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এসেছিল, তার বাঁ হাতে ছিল একটি ক্যাম্বিসের থলি, আর ডান হাতে ছিল লোহা-বাঁধানো একটি ছড়ি। ছড়ির গায়ে তিনি হাত লম্বা মুগার সুতো জড়ানো, মাছ-ধরা ছিপের গায়ে যেমন সুতো জড়ানো থাকে সেই রকম।
লোকটি দোরের মাথার দিকে লাঠি বাড়িয়ে ঘোড়ার ক্ষুরটি নামিয়ে আনল, তারপর মুগার সুতোর ডগায় সেটি বেঁধে নিয়ে তেতলার সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে গেল। দু’টি মানুষ যে বাড়ির দু’ জায়গায় ওৎ পেতে আছে, তা সে জানতে পারল না।
ছাদের দরজায় একটু শব্দ শুনে ব্যোমকেশ সতর্ক হয়ে বসল। নক্ষত্র আলোয় একটি ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এল, সোজা ট্যাঙ্কের কাছে গিয়ে আল্‌সের ওপর উঠে ট্যাঙ্কের মাথায় চড়ল। ধাতব শব্দ শোনা গেল। সে ট্যাঙ্কের ঢাকনি খুলে সরিয়ে রাখল, তারপর লাঠির আগায় সুতো-বাঁধা ঘোড়ার নাল জলের মধ্যে ডুবিয়ে দিল।
লোকটা যেন আবছা অন্ধকারে বসে ছিপ ফেলে চুনো মাছ ধরছে। ছিপ ডোবাচ্ছে আর তুলছে। মাছগুলি ব্যাগের মধ্যে পিরে আবার ছিপ ফেলছে।
কুড়ি মিনিট পরে লোকটি মাছ ধরা শেষ করে ট্যাঙ্ক থেকে নামল। এক হাতে ব্যাগ অন্য হাতে ছিপ নিয়ে যেই পা বাড়িয়েছে, অমনি তার মুখের উপর দপ করে টর্চ জ্বলে উঠল, ব্যোমকেশের ব্যঙ্গ-স্বর শোনা গেল, ‘অক্ষয় মণ্ডল, কেমন মাছ ধরলে?’
অক্ষয় মণ্ডলের পরনে খালি প্যান্ট ও হাফ-সার্ট, কালো মুস্কো চেহারা। সে বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে আস্তে আস্তে থলিটি নামিয়ে রেখে ক্ষিপ্রবেগে পকেটে হাত দিল। সঙ্গে সঙ্গে ব্যোমকেশের টর্চ গদার মত তার চোয়ালে লাগল, অক্ষয় মণ্ডল ছাদের ওপর চিতিয়ে পড়ল।
রাখালবাবু নীচে থেকে উঠে এসেছিলেন, তিনি অক্ষয় মণ্ডলের বুকের ওপর বসে বললেন, ‘ব্যোমকেশদা, এর পকেটে পিস্তল আছে, বের করে নিন।’
ব্যোমকেশ অক্ষয় মণ্ডলের পকেট থেকে পিস্তল বার করে নিজের পকেটে রাখল। রাখালবাবু আসামীর হাতে হাতকড়া পরিয়ে বললেন, ‘অক্ষয় মণ্ডল, হরিহর সিংকে খুন করার অপরাধে তোমাকে গ্রেপ্তার করলাম।’
ব্যোমকেশ অক্ষয় মণ্ডলের থলি থেকে কয়েকটা ভিজে লোহার প্যাকেট বার করে তার ওপর টর্চের আলো ফেলল। ‘বাঃ! এই যে, যা ভেবেছিলাম তাই। লোহার মোড়কের মধ্যে চকচকে বিদেশী সোনার বিস্কুট।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress