তরুণ লেখকদের জন্য
“আমার দেখা প্রত্যেক লেখকের, লেখার সময় সমস্যায় পড়তে হয়।”
— জোসেফ হেলার।
লেখালেখি ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয় , প্রয়োজন হয় অধ্যাবসায়ের। না হলে লেখার মান বজায় থাকে না। আর সেই মানহীন লেখা-সমূহ নামী-অনামী প্রকাশনী থেকে অর্থ খরচ করে পুস্তক আকারে প্রকাশ করেন কেউ কেউ। তা বই আকারে বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, যা পড়ে পাঠক হতাশ ও বিব্রান্ত হন।
এর থেকে উত্তরণের জন্য নতুন লেখক/লেখিকাদেরদের যা করণীয় তা হল –
(১) .
“আপনি যদি লেখক হতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই অন্যদের চেয়ে দুটি কাজ বেশী করতে হবে: প্রচুর পড়ুন এবং প্রচুর লিখুন।”
— রাজা স্টিফেন।
সাহিত্যে চর্চায় নিজেকে নিযুক্ত করতে হলে প্রথমেই আপনাকে সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পূর্বসূরী লেখকদের বইয়ের মধ্যেই তা খুঁজে পাবেন। তাই বেশি বেশি করে তাদের বই পড়তে হবে মনোযোগ দিয়ে। বুঝতে চেষ্টা করতে হবে শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকা গোপন ভাবকে ,শিখতে হব শব্দ প্রয়োগের সতন্ত্র নিজস্ব কৌশলকে।
“আপনার কাছে যদি পড়ার সময় না থাকে তবে আপনার কাছে লেখার সময়ও নেই। সোজা হিসেব।”
— রাজা স্টিফেন।
“জীবনের প্রতিটি দিন লেখালেখি করুন , প্রচুর পড়ুন, তারপর দেখুন কি হয়।”
— রে ব্র্যাডবেরি।
(২)
“লেখক হিসাবে আপনার তিনটি জিনিস থাকতে হবে। পরিচালনা, শৃঙ্খলা এবং ইচ্ছা। যদি আপনি এই তিনটির মধ্যে কোনও একটি হারিয়ে ফেলেন, আপনার কাছে বিশ্বের সমস্ত প্রতিভা থাকলে পরেও কোন কিছু করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
— নোরা রবার্টস।
কল্পনাশক্ত একজন লেখকের প্রধান সম্পদ, যার কল্পনাশক্তি যত বেশি, প্রকাশ ক্ষমতা সচ্ছল আর স্বাভাবিক তার লেখনি তত দক্ষতা অর্জন করে। কল্পনাশক্তি বাড়াতে হবে। ভাবনার জগৎ প্রথমেই সমৃদ্ধ করে নিতে হবে,কেননা সাহিত্য অনেকাংশ-ই কল্পনা নির্ভর। কল্পনাশক্তি বাড়াবার জন্য একাকীত্ব খুব দরকার। জনাকীর্ণ ও কোলাহলপূর্ণ স্থানে কল্পনা শক্তি বাধা পায়।
মন থেকে সব বিচ্ছিন্ন চিন্তা-ভাবনা দূর করতে হবে। অন্ধকারে চোখ বুজে কিছুক্ষণ বসুন (মনকে যথাসম্ভব শান্ত রাখতে), নিজের নিশ্বাসের শব্দ শোনার চেষ্টা করুন।
এবার চোখ বুজে নিজের হৃদস্পন্দন গোনার চেষ্টা করুন,গুনতে থাকুন প্রতিটি স্পন্দন।
ভাবতে থাকুন হৃদপিণ্ডটি আপনার চোখের সামনে স্পন্দিত হচ্ছে, দেখতে থাকুন এই স্পন্দিত দৃশ্য।
এবার আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা মনে করার চেষ্টা করুন, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে করুন। এবার চোখের সামনে সেই ঘটনার স্থির ও সচল চিত্র নিয়ে আসুন,খুঁজে দেখুন ঘটনার সুন্দর ও অসুন্দর দিকগুলি,তাদের চিহ্নিত করুন। এবার দৃশ্যগুলো কল্পনায় আনুন, কিছু অসুন্দর দৃশ্য কেটে সুন্দর দৃশ্যে পরিণত করুন কিংবা তা নাও করতে পারেন, যদি তা মনে করেন আপনি।
চাইলে ঘটনাটি আপনার মনের মতো সাজিয়ে নিন, এবার সব দৃশ্য একত্রিত করে কল্পনায় দেখুন। দেখুন একটা নিখুঁত চলচিত্র হয়ে গেছে কিনা।
এভাবে প্রত্যহ কল্পনায় বিভিন্ন ঘটনা ও দৃশ্যকে কাটাছেঁড়া করুন, কল্পনাশক্তি এতে অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে।
“একজন লেখক যখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে তখনও সে লেখে।”
— বার্টন রাসকো।
৩.
“আপনি যদি লেখার জন্য অনুপ্রেরণা পাওয়ার অপেক্ষা করেন, তাহলে আপনি লেখক নন, আপনি হলেন ওয়েটার।”
— ড্যান পোয়েন্টার।
উপযুক্ত শব্দ নির্বাচন করতে শিখুন। শব্দ হচ্ছে সাহিত্যের প্রাণ,আর উপযুক্ত ও শ্রুতিমধুর শব্দ লেখার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা অলঙ্কার। উপযুক্ত শব্দ নির্বাচনের কারণে লেখার মান/মাধুর্য/সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা বৃদ্ধিপায়, আর তাতে ব্যর্থ হলেই তা খর্ব হয়, ফলে পাঠকের কাছে আকর্ষণ হারায়। বহুল ব্যবহৃত শব্দ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
“আমি প্রতিদিন কিছু টা সময় লেখালেখি করার চেষ্টা করি, সপ্তাহে পাঁচ দিন।”
— হারমান ওয়াউক।
লেখাকে আকর্ষণীয় করতে →
১, বিভিন্ন লেখা থেকে আকর্ষনীয় শব্দ সংগ্রহ করুন।
২, প্রতিটি লেখা পড়ে অজানা শব্দগুলো নোট করুন।
৩, প্রতিশব্দ অধ্যয়ন করুন বেশি বেশি।
৪, সমর্থক শব্দ অধ্যয়ন করুন অধিক পরিমাণে।
যথাসম্ভব শ্রুতিমধুর সমার্থক শব্দ বেশি ব্যবহার করুণ।
উদাহরণ স্বরূপ → নিচে কিছু সমার্থক শব্দ দেওয়া হল।
অগ্নি→অনল, পাবক, আগুন, দহন, সর্বভূক, শিখা, হুতাশন, বহ্নি, বৈশ্বানর, কৃশানু, বিভাবসু, সর্বশুচি।
অন্ধকার →আঁধার, তমঃ, তমিস্রা, তিমির, আন্ধার, তমস্র, তম।
আকাশ→ আসমান, অম্বর, গগন, নভোঃ, নভোমণ্ডল, খগ, ব্যোম, অন্তরীক্ষ।
আলোক→ আলো, জ্যোতি, কিরণ, দীপ্তি, প্রভা।
ইচ্ছা→আকাঙ্ক্ষা, অভিলাষ, অভিরুচি, অভিপ্রায়, আগ্রহ, স্পৃহা, কামনা, বাসনা, বাঞ্চা, ঈপ্সা, ঈহা।
কপাল→ ললাট, ভাল, ভাগ্য, অদৃষ্ট, নিয়তি, অলিক।
কোকিল→ পরভৃত, পিক, বসন্তদূত।
কন্যা→ মেয়ে, দুহিতা, দুলালী, আত্মজা, নন্দিনী, পুত্রী, সূতা, তনয়া।
গরু→ গো, গাভী, ধেনু।
ঘোড়া→ অশ্ব, ঘোটক, তুরগ, বাজি, হয়, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম।
ঘর→ গৃহ, আলয়, নিবাস, আবাস, আশ্রয়, নিলয়, নিকেতন, ভবন, সদন, বাড়ি, বাটী, বাসস্থান।
চোখ→ চক্ষু, আঁখি, অক্ষি, লোচন, নেত্র, নয়ন,
দর্শনেন্দ্রিয়।ম
চাঁদ→ চন্দ্র, চন্দ্রমা, শশী, শশধর, শশাঙ্ক, শুধাংশু, হিমাংশু, সুধাকর, সুধাংশু, হিমাংশু, সোম, বিধু, ইন্দু, নিশাকর, নিশাকান্ত, মৃগাঙ্ক, রজনীকান্ত।
চুল→ চিকুর, কুন্তল, কেশ, অলক।
(৪)
“একজন পেশাদার লেখক এমন একজন কর্মি যিনি কখনোই থামেন না।”
— রিচার্ড বাচ।
শব্দের নিপুণ প্রয়োগ শিখুন → শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে লেখার মূল আকর্ষণ, লেখাকে নান্দনিক করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কৌশল।
তাই প্রতিটি বাক্য গঠনে শব্দের প্রয়োগে অধিক যত্নবান হন যাতে লেখায় বৈচিত্র আসে এবং লেখাকে নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করা যায়।
নির্দেশনা → প্রথমেই আপনাকে বহুল প্রচলিত শব্দগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। অপেক্ষাকৃত শ্রুতিমধুর শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন ও বাক্যের সৌন্দর্য বাড়াতে হবে।
উদাহরণ → ” চাঁদ ছাড়া এই রাতের আঁধারের পর্দা ছিঁড়ে দেয় তোর জ্বলজ্বল চোখ” ← এই বাক্যের কিছু শব্দ পাল্টে দেওয়া হল→ ” শশীহীন নিশিবেলায় আঁধারের অবগুণ্ঠন চূর্ণ করে তোর উজ্জ্বল দৃষ্টি।
দেখুন অর্থগত কোন পরিবর্তন না হলেও বাক্য অধিক শ্রুতিমধুর হয়েছে কিনা।
(৫).
“একজন পেশাদার লেখক এমন একজন কর্মি যিনি কখনোই থামেন না।”
— রিচার্ড বাচ।
আকর্ষণীয় বাক্য গঠন ও প্রয়োগ →
এই পর্যায়ে উপযুক্ত শব্দ নির্বাচন করে নিয়ে বাক্য গঠন ও প্রয়োগ শিখতে হবে।
নির্দেশনা → বাক্যকে যথাযথভাবে অলঙ্কৃত করার জন্য উপযুক্ত শব্দকে উপর্যুপরি নিয়মের অধিনে আনতে হবে।
এজন্য প্রথমে আপনি একটি সরল বাক্য লিখে ফেলুন কিছু প্রচলিত শব্দে।
যেমন – “দুচোখের সামনে সব সময় ঝুলে থাকে হতাশা ক্লান্তির সাদা মেঘ”।
এবার এটাকে নান্দনিক সমার্থক শব্দ ব্যবহার করে দেখুন বাক্যের সৌন্দর্য বাড়ে কিনা।
লাইনকে এইভাবে লিখে দেখুন→ ” নেত্রদ্বয়ের সম্মুখ দ্বারে নিরন্তর ঝুলে থাকে হতাশাচ্ছন্ন ক্লান্তির শুভ্র মেঘ”
(৬).
উপস্থাপন ও প্রয়োগ → উপস্থাপন ও প্রয়োগ লেখনির আরেকটি মূল্যবান উপাদান।
যথাযথ ও নির্ভুল উপস্থাপনা লেখার মান বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই।
আকর্ষণীয় উপস্থাপনের জন্যই একটি লেখা নান্দনিক, সর্বজনগ্রাহ্য,অনুপম ও অনবদ্য হয়ে ওঠে।
নির্দেশনা → সুন্দর উপস্থাপনার জন্য আপনাকে একটু মেধার ঘষামাজা করতে হবে।
এজন্য আপনাকে সম্মুখের কোন নিদৃষ্ট স্থানে অগ্রসর হওয়ার জন্য একটি পথের পরিবর্তে কয়েকটি পথ তৈরি করতে হবে ও সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথেই আপনাকে চলতে হবে ।
অর্থাৎ আকর্ষণীয় উপস্থাপনার জন্য আপনাকে মাঝে মাঝে সোজা পথে না হেটে বাঁকা পথে ঘুরে যেতে হবে। প্রয়োজনে সরল বাক্যকে যৌগিক করতে হবে কিংবা সহজ কিছু কথাকেও একটু ঘুরিয়ে প্রলেপ দিয়ে রহস্যময় করে তুলতে হবে।
উদাহরণ →
“আকাশটা ঘোলাটে হয়ে আঁধার হয়ে গেল,বিদ্যুৎ চমকানিতে ভুতুড়ে লাগে এ নগরী”← নান্দনিক উপস্থাপনার জন্য উপরোক্ত বাক্যকে ভেঙে বর্ধন করে কিছুটা ঘুরিয়ে বলতে পারেন ও আকর্ষণীয় করে বর্ণনা করতে পারেন।
যেমন –
” ক্রমবর্ধমান কাচের মত আকাশটা আরও বেশি ঘোলাটে হয়ে উঠে,আঁধারের আস্তরণ ঘন করে তুলেছে ক্রমশ।মেঘে মেঘে গভীর আলিঙ্গন, অতঃপর রাসায়নিক বিচ্ছুরণ! প্রবন্ধ (১৭৩). তরুণ লেখকদের জন্য
তরুণ লেখকদের জন্য
শংকর ব্রহ্ম
———————————-
“আমার দেখা প্রত্যেক লেখকের, লেখার সময় সমস্যায় পড়তে হয়।”
— জোসেফ হেলার।
লেখালেখি ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয় , প্রয়োজন হয় অধ্যাবসায়ের। না হলে লেখার মান বজায় থাকে না। আর সেই মানহীন লেখা-সমূহ নামী-অনামী প্রকাশনী থেকে অর্থ খরচ করে পুস্তক আকারে প্রকাশ করেন কেউ কেউ। তা বই আকারে বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, যা পড়ে পাঠক হতাশ ও বিব্রান্ত হন।
এর থেকে উত্তরণের জন্য নতুন লেখক/লেখিকাদেরদের যা করণীয় তা হল –
(১) .
“আপনি যদি লেখক হতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই অন্যদের চেয়ে দুটি কাজ বেশী করতে হবে: প্রচুর পড়ুন এবং প্রচুর লিখুন।”
— রাজা স্টিফেন।
সাহিত্যে চর্চায় নিজেকে নিযুক্ত করতে হলে প্রথমেই আপনাকে সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পূর্বসূরী লেখকদের বইয়ের মধ্যেই তা খুঁজে পাবেন। তাই বেশি বেশি করে তাদের বই পড়তে হবে মনোযোগ দিয়ে। বুঝতে চেষ্টা করতে হবে শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকা গোপন ভাবকে ,শিখতে হব শব্দ প্রয়োগের সতন্ত্র নিজস্ব কৌশলকে।
“আপনার কাছে যদি পড়ার সময় না থাকে তবে আপনার কাছে লেখার সময়ও নেই। সোজা হিসেব।”
— রাজা স্টিফেন।
“জীবনের প্রতিটি দিন লেখালেখি করুন , প্রচুর পড়ুন, তারপর দেখুন কি হয়।”
— রে ব্র্যাডবেরি।
(২)
“লেখক হিসাবে আপনার তিনটি জিনিস থাকতে হবে। পরিচালনা, শৃঙ্খলা এবং ইচ্ছা। যদি আপনি এই তিনটির মধ্যে কোনও একটি হারিয়ে ফেলেন, আপনার কাছে বিশ্বের সমস্ত প্রতিভা থাকলে পরেও কোন কিছু করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
— নোরা রবার্টস।
কল্পনাশক্ত একজন লেখকের প্রধান সম্পদ, যার কল্পনাশক্তি যত বেশি, প্রকাশ ক্ষমতা সচ্ছল আর স্বাভাবিক তার লেখনি তত দক্ষতা অর্জন করে। কল্পনাশক্তি বাড়াতে হবে। ভাবনার জগৎ প্রথমেই সমৃদ্ধ করে নিতে হবে,কেননা সাহিত্য অনেকাংশ-ই কল্পনা নির্ভর। কল্পনাশক্তি বাড়াবার জন্য একাকীত্ব খুব দরকার। জনাকীর্ণ ও কোলাহলপূর্ণ স্থানে কল্পনা শক্তি বাধা পায়।
মন থেকে সব বিচ্ছিন্ন চিন্তা-ভাবনা দূর করতে হবে। অন্ধকারে চোখ বুজে কিছুক্ষণ বসুন (মনকে যথাসম্ভব শান্ত রাখতে), নিজের নিশ্বাসের শব্দ শোনার চেষ্টা করুন।
এবার চোখ বুজে নিজের হৃদস্পন্দন গোনার চেষ্টা করুন,গুনতে থাকুন প্রতিটি স্পন্দন।
ভাবতে থাকুন হৃদপিণ্ডটি আপনার চোখের সামনে স্পন্দিত হচ্ছে, দেখতে থাকুন এই স্পন্দিত দৃশ্য।
এবার আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা মনে করার চেষ্টা করুন, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে করুন। এবার চোখের সামনে সেই ঘটনার স্থির ও সচল চিত্র নিয়ে আসুন,খুঁজে দেখুন ঘটনার সুন্দর ও অসুন্দর দিকগুলি,তাদের চিহ্নিত করুন। এবার দৃশ্যগুলো কল্পনায় আনুন, কিছু অসুন্দর দৃশ্য কেটে সুন্দর দৃশ্যে পরিণত করুন কিংবা তা নাও করতে পারেন, যদি তা মনে করেন আপনি।
চাইলে ঘটনাটি আপনার মনের মতো সাজিয়ে নিন, এবার সব দৃশ্য একত্রিত করে কল্পনায় দেখুন। দেখুন একটা নিখুঁত চলচিত্র হয়ে গেছে কিনা।
এভাবে প্রত্যহ কল্পনায় বিভিন্ন ঘটনা ও দৃশ্যকে কাটাছেঁড়া করুন, কল্পনাশক্তি এতে অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে।
“একজন লেখক যখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে তখনও সে লেখে।”
— বার্টন রাসকো।
৩.
“আপনি যদি লেখার জন্য অনুপ্রেরণা পাওয়ার অপেক্ষা করেন, তাহলে আপনি লেখক নন, আপনি হলেন ওয়েটার।”
— ড্যান পোয়েন্টার।
উপযুক্ত শব্দ নির্বাচন করতে শিখুন। শব্দ হচ্ছে সাহিত্যের প্রাণ,আর উপযুক্ত ও শ্রুতিমধুর শব্দ লেখার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা অলঙ্কার। উপযুক্ত শব্দ নির্বাচনের কারণে লেখার মান/মাধুর্য/সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা বৃদ্ধিপায়, আর তাতে ব্যর্থ হলেই তা খর্ব হয়, ফলে পাঠকের কাছে আকর্ষণ হারায়। বহুল ব্যবহৃত শব্দ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
“আমি প্রতিদিন কিছু টা সময় লেখালেখি করার চেষ্টা করি, সপ্তাহে পাঁচ দিন।”
— হারমান ওয়াউক।
লেখাকে আকর্ষণীয় করতে →
১, বিভিন্ন লেখা থেকে আকর্ষনীয় শব্দ সংগ্রহ করুন।
২, প্রতিটি লেখা পড়ে অজানা শব্দগুলো নোট করুন।
৩, প্রতিশব্দ অধ্যয়ন করুন বেশি বেশি।
৪, সমর্থক শব্দ অধ্যয়ন করুন অধিক পরিমাণে।
যথাসম্ভব শ্রুতিমধুর সমার্থক শব্দ বেশি ব্যবহার করুণ।
উদাহরণ স্বরূপ → নিচে কিছু সমার্থক শব্দ দেওয়া হল।
অগ্নি→অনল, পাবক, আগুন, দহন, সর্বভূক, শিখা, হুতাশন, বহ্নি, বৈশ্বানর, কৃশানু, বিভাবসু, সর্বশুচি।
অন্ধকার →আঁধার, তমঃ, তমিস্রা, তিমির, আন্ধার, তমস্র, তম।
আকাশ→ আসমান, অম্বর, গগন, নভোঃ, নভোমণ্ডল, খগ, ব্যোম, অন্তরীক্ষ।
আলোক→ আলো, জ্যোতি, কিরণ, দীপ্তি, প্রভা।
ইচ্ছা→আকাঙ্ক্ষা, অভিলাষ, অভিরুচি, অভিপ্রায়, আগ্রহ, স্পৃহা, কামনা, বাসনা, বাঞ্চা, ঈপ্সা, ঈহা।
কপাল→ ললাট, ভাল, ভাগ্য, অদৃষ্ট, নিয়তি, অলিক।
কোকিল→ পরভৃত, পিক, বসন্তদূত।
কন্যা→ মেয়ে, দুহিতা, দুলালী, আত্মজা, নন্দিনী, পুত্রী, সূতা, তনয়া।
গরু→ গো, গাভী, ধেনু।
ঘোড়া→ অশ্ব, ঘোটক, তুরগ, বাজি, হয়, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম।
ঘর→ গৃহ, আলয়, নিবাস, আবাস, আশ্রয়, নিলয়, নিকেতন, ভবন, সদন, বাড়ি, বাটী, বাসস্থান।
চোখ→ চক্ষু, আঁখি, অক্ষি, লোচন, নেত্র, নয়ন,
দর্শনেন্দ্রিয়।
চাঁদ→ চন্দ্র, চন্দ্রমা, শশী, শশধর, শশাঙ্ক, শুধাংশু, হিমাংশু, সুধাকর, সুধাংশু, হিমাংশু, সোম, বিধু, ইন্দু, নিশাকর, নিশাকান্ত, মৃগাঙ্ক, রজনীকান্ত।
চুল→ চিকুর, কুন্তল, কেশ, অলক।
(৪)
“একজন পেশাদার লেখক এমন একজন কর্মি যিনি কখনোই থামেন না।”
— রিচার্ড বাচ।
শব্দের নিপুণ প্রয়োগ শিখুন → শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে লেখার মূল আকর্ষণ, লেখাকে নান্দনিক করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কৌশল।
তাই প্রতিটি বাক্য গঠনে শব্দের প্রয়োগে অধিক যত্নবান হন যাতে লেখায় বৈচিত্র আসে এবং লেখাকে নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করা যায়।
নির্দেশনা → প্রথমেই আপনাকে বহুল প্রচলিত শব্দগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। অপেক্ষাকৃত শ্রুতিমধুর শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন ও বাক্যের সৌন্দর্য বাড়াতে হবে।
উদাহরণ → ” চাঁদ ছাড়া এই রাতের আঁধারের পর্দা ছিঁড়ে দেয় তোর জ্বলজ্বল চোখ” ← এই বাক্যের কিছু শব্দ পাল্টে দেওয়া হল→ ” শশীহীন নিশিবেলায় আঁধারের অবগুণ্ঠন চূর্ণ করে তোর উজ্জ্বল দৃষ্টি।
দেখুন অর্থগত কোন পরিবর্তন না হলেও বাক্য অধিক শ্রুতিমধুর হয়েছে কিনা।
(৫).
“একজন পেশাদার লেখক এমন একজন কর্মি যিনি কখনোই থামেন না।”
— রিচার্ড বাচ।
আকর্ষণীয় বাক্য গঠন ও প্রয়োগ →
এই পর্যায়ে উপযুক্ত শব্দ নির্বাচন করে নিয়ে বাক্য গঠন ও প্রয়োগ শিখতে হবে।
নির্দেশনা → বাক্যকে যথাযথভাবে অলঙ্কৃত করার জন্য উপযুক্ত শব্দকে উপর্যুপরি নিয়মের অধিনে আনতে হবে।
এজন্য প্রথমে আপনি একটি সরল বাক্য লিখে ফেলুন কিছু প্রচলিত শব্দে।
যেমন – “দুচোখের সামনে সব সময় ঝুলে থাকে হতাশা ক্লান্তির সাদা মেঘ”।
এবার এটাকে নান্দনিক সমার্থক শব্দ ব্যবহার করে দেখুন বাক্যের সৌন্দর্য বাড়ে কিনা।
লাইনকে এইভাবে লিখে দেখুন→ ” নেত্রদ্বয়ের সম্মুখ দ্বারে নিরন্তর ঝুলে থাকে হতাশাচ্ছন্ন ক্লান্তির শুভ্র মেঘ”
(৬).
উপস্থাপন ও প্রয়োগ → উপস্থাপন ও প্রয়োগ লেখনির আরেকটি মূল্যবান উপাদান।
যথাযথ ও নির্ভুল উপস্থাপনা লেখার মান বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই।
আকর্ষণীয় উপস্থাপনের জন্যই একটি লেখা নান্দনিক, সর্বজনগ্রাহ্য,অনুপম ও অনবদ্য হয়ে ওঠে।
নির্দেশনা → সুন্দর উপস্থাপনার জন্য আপনাকে একটু মেধার ঘষামাজা করতে হবে।
এজন্য আপনাকে সম্মুখের কোন নিদৃষ্ট স্থানে অগ্রসর হওয়ার জন্য একটি পথের পরিবর্তে কয়েকটি পথ তৈরি করতে হবে ও সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথেই আপনাকে চলতে হবে ।
অর্থাৎ আকর্ষণীয় উপস্থাপনার জন্য আপনাকে মাঝে মাঝে সোজা পথে না হেটে বাঁকা পথে ঘুরে যেতে হবে। প্রয়োজনে সরল বাক্যকে যৌগিক করতে হবে কিংবা সহজ কিছু কথাকেও একটু ঘুরিয়ে প্রলেপ দিয়ে রহস্যময় করে তুলতে হবে।
উদাহরণ →
“আকাশটা ঘোলাটে হয়ে আঁধার হয়ে গেল,বিদ্যুৎ চমকানিতে ভুতুড়ে লাগে এ নগরী”← নান্দনিক উপস্থাপনার জন্য উপরোক্ত বাক্যকে ভেঙে বর্ধন করে কিছুটা ঘুরিয়ে বলতে পারেন ও আকর্ষণীয় করে বর্ণনা করতে পারেন।
যেমন –
” ক্রমবর্ধমান কাচের মত আকাশটা আরও বেশি ঘোলাটে হয়ে উঠে,আঁধারের আস্তরণ ঘন করে তুলেছে ক্রমশ। মেঘে মেঘে গভীর আলিঙ্গন, অতঃপর রাসায়নিক বিচ্ছুরণ! বিদ্যুতের ঝলকানিতে ভুতুড়ে হয়ে ওঠে চিরচেনা পরিচিত এই নগরী “
কিংবা –
“জ্যোৎস্নায় ভিজে গেছে রাত” ← বাক্যটাকে একটু ঘুরিয়ে উপস্থাপন করা যায়।
যেমন → “জ্যোৎস্নার গুঁড়ায় একটি শুষ্ক রাতের শরীর ভিজে গেছে”।
“কীভাবে লিখতে হয় তার কোনও নিয়ম নেই। কখনও কখনও এটি সহজে এবং নিখুঁতভাবে আসে, কখনও কখনও এটিকে একটি শক্ত শিলার মতো মনেহয় ।”
— আর্নেস্ট হেমিংওয়ে।”
—————————————————————-
(কৃতজ্ঞতা ও ঋণস্বীকার :- শ্রাবন আহমেদ)