লাভ ইউ ঠাম্মা
” এ ভাই একবার ওই দুতলার বারান্দায় তাকা,ওই দেখ তোর প্রিয় ঠাম্মা দাঁড়িয়ে তোকে দেখবে বলে অধীর অপেক্ষায়”,বলে বিট্টুর মাথা ওপরে ঘোরালো ঝি পুণ্যি। দত্ত বাড়িতে সে ছোট্ট থেকে কাজ করে,অনেক নুন খেয়েছে এবাড়ির।মন খারাপ লাগে,ভালো মানুষ মা ঠাকরুন কিনা বৃদ্ধাশ্রমে দাদা বৌদি পাঠিয়ে এসেছে! ঝুপড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ি,স্বামী- সন্তানের আদরে থাকা পুণ্যি বুঝে পায় না বড়লোক গুলোর রকম সকম। সব থেকেও মন গুলো যেন অশান্তির গোডাউন।শুধু নেই নেই অভাবহীন বাজে স্বভাবের আস্তাকুঁড়।
” দেখ বিট্টু,ঠাম্মা নেমে আসছে, চিনতে পারছিস”-বলতেই আদরের নাতি খুশিতে লাফিয়ে দৌড়,জড়িয়ে ধরেছে ঠাম্মার হাত।
দাদা-বৌদি জানতে পারলে কপালে দুঃখ আছে পুণ্যির ,হয়তো কাজটাও তার চলে যাবে বোঝে অশিক্ষিত মেয়েটা।তবুও সাহস করে বিকালে পার্ক যাবার সময় বৃদ্ধাশ্রমের পাশ দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। ঠাম্মা কে যে সে কথা দিয়েছিল লুকিয়ে আদরের নাতি কে দেখা করিয়ে নিয়ে যাবে।আজ দুই আত্মিক টানের নাতি,ঠাম্মা কে পরস্পরের সাথে দেখা করিয়ে দিতে পেরে ভীষন খুশি পুণ্যি। কাজ যদি যায় তো যাক,একদম এসব নিয়ে ভাববে না সে।স্নেহের দুই বন্ধনকে ক্ষনিকের মিলিয়ে দেওয়া যে কি পবিত্র অনুভূতির জন্ম দে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা সেটা জানেন।”আয় রে বিট্টু,এবার নেমে আয় বাবু জলদি, সন্ধ্যা নামলে মা বাবা বকা দেবে তো সোনা”-হাঁক পারলো পুণ্যি।
‘বাবা,বৃদ্ধাশ্রমে কি হয়, আমিও থাকবো ওখানে ‘- ছেলের প্রশ্নবাণে যারপরনাই অস্বস্তিতে সমর।স্বামী স্ত্রীতে দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে! আবার প্রশ্ন বিট্টুর ‘মা বয়স হলে তুমিও ওখানে থাকবে?’- শুনে রেগে অস্থির রোহিনী।ছেলের বেয়াদপি আচরনের পিছনে যে পুণ্যি আছে নিমেষেই বুঝে যায় দুজনে।’কাল আসুক একবার কাজে ‘-স্ত্রী বলতেই সমর চাপা স্বরে বোঝালো ,’এখনই কিছু করো না বিট্টুর মনে চাপ পড়বে’।
তবুও রেগে গজগজ করছে রোহিনী,’ এভাবে আমাদেরকে সন্তানের সামনে অপদস্ত করা কেনো’!! বড়দের কথা বুঝতে না পেরে বিট্টু পাশের ঘরে ছলছল চোখে পুরনো অ্যালবাম বের করে ,ঠাম্মা র ছবি দেখতে বসলো।