Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ফেলুদার একজন চাৰ্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মক্কেল ছিল, নাম ধরণী মুখার্জি। ফেলুদা টেলিফোনে তার সঙ্গেই যোগাযোগ করল। ভদ্রলোক বললেন, রঞ্জন মজুমদারকে খুব ভাল করে চেনেন, কারণ দুজনেই স্যাটার্ডে ক্লাবের মেম্বার। রঞ্জনবাবু কীরকম লোক জিজ্ঞেস করাতে ধরণীবাবু বললেন যে, তিনি একটু চাপা ধরনের লোক, বিশেষ মিশুকে নন, বেশিরভাগ সময় ক্লাবে চুপচাপ একা বসে থাকেন। ড্রিংক করেন—তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। রঞ্জনবাবু যে ছেলেবেলায় কিছুকাল বিলেতে ছিলেন সে কথাও ধারণীবাবু জানেন, কিন্তু তার বাইরে আর কিছুই বিশেষ জানেন না।

১৯৫২-তে সেন্ট জেভিয়ার্সে ইন্টারমিডিয়েটে কে কে ছাত্র ছিল তার হদিস পেতে ফেলুদার বিশেষ বেগ পেতে হল না। সেই ছাত্রদের তালিকায় খুব ভাল করে চোখ বুলিয়ে ফেলুদা বলল, এর মধ্যে একজনের নাম চেনা চেনা মনে হচ্ছে। যদ্দুর মনে হয়। ভদ্রলোক হোমিওপ্যাথি করেন। বাড়ি ফিরে এসে বলল, তোপ্‌সে, ডাক্তার হীরেন বসাকের নামটা ডিরেক্টরিতে বার করে ভদ্রলোকের টেলিফোন নাম্বারটা আমায় দে তো।

আমি দু মিনিটে কাজটা সেরে দিলাম। ফেলুদা সেই নম্বরে ফোন করে একটা অ্যাপায়েন্টমেন্ট চাইল। ডাক্তার ফেলুদার নাম শুনেই হয়তো পরদিন সকালেই সময় দিয়ে দিলেন–সাড়ে এগারোটা।

কেস কেমন যাচ্ছে খবর নিতে পরদিন সকালে লালমোহনবাবু এসেছিলেন। আমরা তাঁর গাড়িতেই ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম।

ওয়েইটিং রুমে ভিড় দেখেই বোঝা যায় ডাক্তারের পসার ভাল। ডাক্তারের সহকারী আসুন, আসুন বলে ফেলুদাকে একেবারে আসল ঘরে নিয়ে গিয়ে ঢোকাল; পিছন পিছন অবশ্য আমরা দুজনও ঢুকলাম।

ডাক্তার বসাক ফেলুদাকে দেখে হাসিমুখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।

কী ব্যাপার? আপনার তো বড় একটা ব্যারাম-ট্যারাম হয় না।

ব্যারাম না, ফেলুদা হেসে বলল। একটা তদন্তের ব্যাপারে আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে এসেছি।

কী প্রশ্ন।

আপনি কি সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র ছিলেন?

হ্যাঁ, তা ছিলাম।

আমার আসল প্রশ্নটা হল—এই দুটি ছেলেকে কি চিনতে পারছেন?

ফেলুদা পকেট থেকে সেলোফেনে মোড়া ছবিটা বার করে ডাক্তার বসাকের হাতে দিল। এক দিনের মধ্যেই ছবিটার কপি করিয়ে নিয়ে আসল ছবিটা ফেলুদ রঞ্জনবাবুকে ফেরত দিয়ে এসেছে। ডাক্তার ভুরু কুঁচকে ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন, এদের মধ্যে একজন তো মনে হয় আমাদের সঙ্গে পড়ত। রঞ্জন। হ্যাঁ, রঞ্জনই তো নাম।

আমি বিশেষ করে অন্যজনের সম্বন্ধে জানতে চাইছি।

ডাক্তার ছবিটা ফেরত দিয়ে মাথা নেড়ে বললেন, অন্যটিকে কস্মিনকালেও দেখিনি আমি।

আপনাদের সঙ্গে সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়ত না?

ডেফিনিটলি না।

ফেলুদা ছবিটা আবার সেলোফেনে মুড়ে পকেটে রেখে দিল।

আপনি তা হলে বলছেন আপনার ক্লাসের অন্য ছেলেদের জিজ্ঞেস করেও খুব একটা লাভ নেই?

আমার তো মনে হয় বৃথা সময় নষ্ট।

তাও, আপনি একটা কাজ করে দিলে আমি খুব উপকৃত হব।

কী?

ফেলুদা পকেট থেকে সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্রদের তালিকাটা বার করে ডাক্তার বসাককে দেখাল।

এর মধ্যে কারুর বর্তমান খবর জানেন?

আমি বুঝলাম ফেলুদা সহজে ছাড়ছে না।

ডাক্তার তালিকাটার উপর চোখ বুলিয়ে বললেন, একজনের খবর জানি। জ্যোতির্ময় সেন। ইনিও ডাক্তার, তবে অ্যালোপ্যাথ।

কোথায় থাকেন বলতে পারেন?

হেস্টিংস। ঠিকানাটাও আপনি টেলিফোনের বইয়েতেই পেয়ে যাবেন।

থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।

গাড়িতে উঠে লালমোহনবাবু বললেন, স্কুল-কলেজের বাইরেও তো বন্ধু হয় মশাই। অ্যাট প্রেজেন্ট আমার যে কজন বন্ধু আছে তাদের কেউই আমার সহপাঠী ছিল না।

এটা ঠিকই বলেছেন, বলল ফেলুদা। আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত খবরের কাগজে ছবি দিয়ে এনকোয়ারি করতে হবে। তবে আগে এই হেস্টিংসের ডাক্তারকে একটু বাজিয়ে দেখা যাক।

জ্যোতির্ময় সেন আমাদের অ্যাপিয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন তিন দিন পরে, সকাল সাড়ে নটায়। ফেলুদার নাম শুনেছেন, যথেষ্ট সম্রামের সঙ্গে কথা বললেন, আর বললেন উনি দশটায় চেম্বারে যান, তার আগেই আমাদের সঙ্গে কাজটা সেরে নিতে চান। ফেলুদা বলল, আর এটাও জানিয়ে রাখি যে এর সঙ্গে ব্যারামের কোনও সম্পর্ক নেই; ব্যাপারটা আমার একটা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

লালমোহনবাবুও অ্যাপয়েন্টমেন্টের কথাটা জেনে নিয়েছিলেন; তাঁর গাড়িতেই আমরা শুক্রবার সকালে ঠিক সাড়ে নটায় হেস্টিংসে জ্যোতির্ময় সেনের বাড়ি পৌঁছে গেলাম।

এঁর পসার যে ভাল সেটা বাড়ি দেখেই বোঝা যায়। বেয়ারা এসে সেলাম ঠুকে আমাদের বসবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে বলল, ডাক্তারবাবু পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসবেন।

লালমোহনবাবু গলা নামিয়ে ফেলুদাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কার বিষয় জানতে চাইবেন— রঞ্জন মজুমদার, না ছবির অন্য ছেলেটি?

ফেলুদা বলল, রঞ্জন মজুমদার লোকটাকে একটু ভাল করে জানা দরকার। এখন পর্যন্ত খুবই সামান্য জানি। তাঁর বন্ধুর বিষয় এই ডাক্তার কিছু বলতে পারবেন বলে মনে হয় না।

ফেলুদার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই জ্যোতির্ময়বাবু এসে গেলেন।

আপনি তো প্রদোষ মিত্র, বললেন ভদ্রলোক সোফায় বসে। অবিশ্যি ফেলুদা নামেই বেশি। প্ৰসিদ্ধ। ইনি তো তোপ্‌সে, বুঝতেই পারছি, আর ইনি নিশ্চয়ই জটায়ু। আপনার তদন্তের সব কাহিনী আমার বাড়ির ছেলে বুড়ো সবাই পড়ে, তাই আপনাকে একরকম আত্মীয় বলেই মনে হয়। বলুন, কী প্রয়োজন আপনার।

এই ছবির দুজনের একজনকেও চেনেন?

এ তো দেখছি রঞ্জন মজুমদার। পরিষ্কার মনে পড়ছে। এ চেহারা। এই দ্বিতীয় ছেলেটাকে চিনলাম না।

কলেজে আপনাদের ক্লাসে ছিল না?

উঁহু–তা হলে মনে থাকত।

তা হলে এই রঞ্জন মজুমদার সম্বন্ধে দু-একটা প্রশ্ন করব।

কলেজে রঞ্জন আমার ইন্টিমেট বন্ধু ছিল। আমরা দুজনে এক বেঞ্চে বসতাম, একসঙ্গে সিনেমা দেখতাম। ও আমার হয়ে প্রক্সি দিত, আমি ওর হয়ে দিতাম। অবিশ্যি এখন আর কোনও যোগাযোগ নেই।

কীরকম ছেলে ছিলেন তিনি? অর্থাৎ, মানুষ হিসেবে কীরকম?

জ্যোতির্ময় সেন ভুরু কুঁচকে একটু ভাবলেন। তারপর বললেন, একটু খ্যাপাটে গোছের। অবিশ্যি সেটা আমি মাইন্ড করতাম না।

খ্যাপাটে কেন বলছেন?

কারণ ওই বয়সে অতি স্ট্রং ন্যাশনালিস্ট ফিলিং আমি কারুর মধ্যে দেখিনি! এটা মনে হয় ওর ঠাকুরদাদার কাছ থেকে পাওয়া। রঘুনাথ মজুমদার। ইয়াং বয়সে টেররিস্ট দলে ছিলেন, বোমা-টেমা তৈরি করতেন। রঞ্জনের বাবার মধ্যেও বোধহয় এ জিনিসটা ছিল। বিলোতে ডাক্তারি করতেন। কোন এক সাহেবের সঙ্গে বনেনি বলে আবার দেশে ফিরে আসেন।

বিলেতে থাকার সময় রঞ্জনবাবু তো ওখানকার স্কুলে পড়তেন।

তা পড়ত হয়তো, কিন্তু সে সম্বন্ধে ও নিজে কিছুই বলেনি। ওর তো ওখানে একটা বিশ্ৰী অ্যাক্সিডোন্ট হয়–সে বিষয় জানেন বোধহয়?

হ্যাঁ। উনি নিজেই বলেছিলেন।

তার ফলে ও পাঁচ-সাত বছরের ঘটনা একদম ভুলে যায়। অর্থাৎ বিলেতের সব ঘটনাই ওর মন থেকে লোপ পেয়ে যায়।

তা হলে ওখানে কার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল না-হয়েছিল সেটাও জানবার কোনও উপায় নেই?

না। যদি না ঘটনাচক্ৰে স্মৃতি আবার ফিরে আসে। তবে এটা বলে রাখি-রঞ্জন খুব সাধারণ ছেলে ছিল না। অসুখে ওর কী ক্ষতি করেছিল জানি না-বা ইংল্যান্ডের ছাত্র অবস্থা ওর কীরকমভাবে কেটেছে জানি না, কিন্তু ওর মধ্যে একটা ব্যক্তিত্ব ছিল যেটা ওই বয়সেও বোঝা যেত।

পরদিন সকালে টেলিফোনে আপয়েন্টমেন্ট করে আমি আর ফেলুদ রঞ্জন মজুমদারের বাড়ি গেলাম। কদ্দূর এগোলেন? ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।

এই ছেলেটি যে কলকাতায় আপনার সহপাঠী ছিল না সেটা জানতে পেরেছি। এবার একটা স্টেপ নেব ভাবছি। যেটা নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই এবং আপনার অনুমতি চাই।

কী স্টেপ?

এই ছবি থেকে অচেনা ছেলের ছবিটা খবরের কাগজে ছাপতে চাই—একটা বিজ্ঞাপনে। কলকাতা আর দিল্লির কাগজে দিলেই হবে।

ভদ্রলোক একটু ভেবে বললেন, আমার নামের কোনও উল্লেখ থাকবে না তো?

মোটেই না, বলল ফেলুদা। আমি শুধু জানতে চাই এই ছেলের পরিচয় কেউ জানে কি না। যদি জানে তা হলে আমার সঙ্গে যেন যোগাযোগ করে! আমার নাম-ঠিকানা থাকবে।

ঠিক আছে। আপনার ইনভেস্টিগেশনের জন্য যা যা করার দরকার সে তো আপনাকে করতেই হবে! আমার কোনও আপত্তি নেই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress