রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – শ্রীরামচন্দ্র কর্ত্তৃক দেবীকে নিজ চক্ষু দিবার সঙ্কল্প ও দেবী কর্ত্তৃক নিবারণ
শ্রীরামে কাতর দেখি কহে হনুমান।
এরূপ ব্যাকুল কেন হলে ভগবান।।
সাধিব সকল কর্ম্ম আমি আপনার।
মারিয়া রাবণে সীতা করিব উদ্ধার।।
এইরূপে সকলেতে বুঝায় তখন।
না শুনে কাহারো কথা করেন রোদন।।
শিরে করাঘ্যত করি করেন হুতাস।
বলেন কেবল মোর সকলি নৈরাশ।।
ভাবিতে ভাবিতে রাম করিলেন মনে।
নীল-কমলাক্ষ মোরে বলে সর্ব্বজনে।।
যুগল নয়ন মোর ফুল্ল নীলোৎপল।
সঙ্কল্প করিব পূর্ণ বুঝিবে সকল।।
এক চক্ষু দিব আমি দেবীর চরণে।
এত বলি কহে রাম অনুজ লক্ষ্মণে।।
আর কিবা দেখ ভাই কি করি এখন।
না হৈল দুর্গার কৃপা বিফল জীবন।।
কমল-লোচন মোরে বলে সর্ব্বজনে।
এক চক্ষু দিব আমি সঙ্কল্প পূরণে।।
এত বলি তূণ হৈতে লইলেন বাণ।
উপাড়িতে যান চক্ষু করিতে প্রদান।।
কান্দিতে কান্দিতে রাম করেন স্তবন।
দেবীর হইল দয়া দেখিয়া রোদন।।
চক্ষু উপাড়িতে রাম বসিলা সাক্ষাতে।
হেনকালে কাত্যায়নী ধরিলেন হাতে।।
কি কর কি কর প্রভু জগৎ-গোঁসাই।
পূর্ণ হৈল, চক্ষু উপাড়িয়া কার্য্য নাই।।
কাতরে শ্রীরাম কন দেবীরে তখন।
অবিরত জলধারে ভাসিছে নয়ন।।
ভাল দুঃখ দিলে মাতা পেয়ে অসময়।
কিন্তু জননীর হেন করা ভাল নয়।।
পুত্র প্রতি মাতৃস্নেহ সর্ব্বশাস্ত্রে গায়।
মোর পক্ষে মীন ভুজঙ্গের মাতা প্রায়।।
ঠেকেছি বিষম দায়ে জানকী উদ্ধারে।
অনুমতি কর মাতা রাবণ সংহারে।।
যা করিলে সে ভাল, বারেক ফিরে চাও।
শবে অস্ত্রাঘাত, মিথ্যা আক্ষেপ বাড়াও।।
ভরসা তোমার তারা না কর নৈরাশ।
আশা আছে, আশ্বাসেতে দাও মা আশ্বাস।।
কালবিনাশিনী কালে কালের কামিনী।
প্রকৃতি পরমেশ্বরী পরম মোহিনী।।
অশন বিহনে তনু শীর্ণ আছে মোর।
কবিবর কহে মা দুঃখের নাহি ওর।।