Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 74

রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

রাবণ মরিবে কবে ভাবে কপিগণ।
হেনকালে শ্রীরামেরে বলেন লক্ষ্মণ।।
কহিবার শক্তি নাই কন ধীরে ধীরে।
এখন রাবণ আছে জীবিত শরীরে।।
রাবণে মারিয়া দুঃখ ঘুচাও অন্তরে।
না কর বিলম্ব আর উঠহ সত্বরে।।
বিক্রম করেন রাম লক্ষ্মণের বোলে।
টলমল করে লঙ্কা কটকের রোলে।।
কোলাহল শুনি ভাবে রাজা দশানন।
মরিয়ে মানুষ বেটা পাইল জীবন।।
মরিয়ে না মরে একি বিপরীত বৈরী।
জানিলাম মজিল কনক-লঙ্কাপুরী।।
মরিল সকল বীর শূণ্য হৈল লঙ্কা।
আপনি যুঝিব ত্যজি মরণের শঙ্কা।।
বন্ধু বান্ধবাদি কোথা কেবা আছে আর।
মনে মনে চিন্তা করে দেখি একবার।।
স্বর্গে ছিল বীরবাহু মরিল আসিয়া।
কারে পাঠাইব যুদ্ধে না পাই ভাবিয়া।।
ইন্দ্রজিৎ নাহি রণে যাবে কোন্ জনে।
অশ্রুধারা বহিতেছে বিংশতি লোচনে।।
অভিমানে শীর্ণ অঙ্গ মলিন বদন।
ক্ষণে উঠে ক্ষণে বৈসে রাজা দশানন।।
ক্ষণে ক্ষণে মূর্চ্ছা হয়ে ভূমিতলে পড়ে।
এত দিনে পার্ব্বতী শঙ্কর বুঝি ছাড়ে।।
রাবণের মাতা সে নিকষা নাম ধরে।
কান্দিতে কান্দিতে গেল রাবণ-গোচরে।।
সন্তানের স্নেহবশে দুঃখিতা অন্তরে।
রাবণে বুঝায় বুড়ী অশেষ প্রকারে।।
তখন কহিনু বাপু না শুনিলে কাণে।
মজিল রাক্ষসকুল শ্রীরামের বাণে।।
বিভীষণ ভাই তোর ধর্ম্মশীল অতি।
এসেছিল বুঝাইতে তারে মার লাথি।।
সীতা দিতে কহিলাম অশেষ প্রকারে।
না শুনিলে বংশনাশ করিবার তরে।।
ভাগ্যেতে আছিল দুঃখ শুনহ রাবণ।
আপনা রাখিতে যুক্তি করহ এখন।।
এক যুক্তি আছে বাপু কহি যে তোমারে।
দিগ্বিজয়ে গেলে যবে পাতাল ভিতরে।।
ব্রহ্মার বরেতে পেলে সুন্দর নন্দন।
মহীতে জন্মিল নাম সে মহীরাবণ।।
পাতালেতে আছে পুত্র সর্ব্ব গুণবান।
তাহা হইতে হইবে দুঃখের অবসান।।
বিষাদে হরিষ হৈল নিকষার বোলে।
মনেতে পড়িল পুত্র আছয়ে পাতালে।।
পাতালে আছয়ে পুত্র সে মহীরাবণ।
মহাতেজ ধরে পুত্র জিনে ত্রিভুবন।।
হেন পুত্র থাকিতে মজিল লঙ্কপুরী।
তাহার সম্মুখে যুঝিবেক কোন্ বৈরী।।
কালিকা পূজিয়া সে পাইল বরদান।
অব্যাহত মায়া জানে সর্ব্ব ঠাঁই যান।।
আছয়ে দুর্জ্জয় পুত্র পাতাল ভিতরে।
মারিতে দুর্জ্জয় বৈরী সেইজন পারে।।
পূর্ব্বকথা আছে তাহা হইল স্মরণ।
বিপত্তে স্মরণ করো আসিব তখন।।
একমনে চিন্তে তারে রাজা লঙ্কেশ্বর।
টনক পড়িল তার কপাল উপর।।
পাতিলেক অঙ্ক মহী খড়ি লয়ে হাতে।
একে একে ত্রিভুবন লাগিল গণিতে।।
সকল পাতালপুরী চিন্তে একে একে।
আকাশ পাতাল গণে কিছু নাহি দেখে।।
পৃথিবী গণিয়ে স্থির নাহি হয় চিত্তে।
কোন্ জন স্মরে মোরে পড়িয়ে বিপত্তে।।
সাগরের উপরে কনক-লঙ্কাপুরী।
তাহাতে আছয়ে পিতা রাজ্য-অধিকারী।।
অসময়ে পিতার জানিল সে কারণ।
তাহার কারণে পিতা করিল স্মরণ।।
এতেক ভাবিয়া তবে স্থির করি মন।
ত্বরায় ভেটিতে যায় পিতা দশানন।।
শনিবারে শব যেন সঙ্গে সঙ্গী চায়।
ইন্দ্রজিতার দোসর হৈতে মহী যায়।।
দৈবের নির্ব্বন্ধ কেহ খণ্ডাইতে নারে।
আপনি মরিতে দেখ যম আনে ধরে।।
যাত্রা সিদ্ধি করি মন্ত্র পড়িল ত্বরিতে।
ঊর্দ্ধপথে সুড়ঙ্গ হইল আচম্বিতে।।
অবিলম্বে উপনীত লঙ্কার ভিতর।
সিংহাসনে বসি কান্দে রাজা লঙ্কেশ্বর।।
মহী দেখি মহারাজ ত্যজে সিংহাসন।
আলিঙ্গন দিয়া কোলে লইল নন্দন।।
কোলেতে করিয়া শিরে করিল চুম্বন।
মহী কৈল রাবণের চরণ বন্দন।।
সিংহাসনে দুজনে বসিল একাসনে।
করযোড় করি মহী বলে পিতৃস্থানে।।
কোন্ কার্য্যে পিতা মোরে করিলে স্মরণ।
আজ্ঞা কর উদ্ধারিব কোন্ প্রয়োজন।।
কান্দিয়া রাবণ রাজার চক্ষে পড়ে জল।
লঙ্কার দুর্গতি যত কহিল সকল।।
রাবণ বলে শুন বাপু দুঃখের কাহিনী।
সূর্পণখা তব পিসী আমার ভগিনী।।
হইয়া মানুষ বেটা কাটে নাক কাণ।
কেমনে সহিত প্রাণে এত অপমান।।
মহী বলে কহ পিতা শুনি বিবরণ।
আচম্বিতে নাক কাণ কাটে কি কারণ।।
রাবণ বলে সূর্পণখা ভগিনী কনিষ্ঠা।
পাইয়া বৈধব্য দশা সদাচারে নিষ্ঠা।।
লঙ্কার ঐশ্বর্য্যসুখ পরিত্যাগ করি।
পঞ্চবটী বনে ছিল হয়ে ব্রহ্মচারী।।
চৌদ্দ হাজার নিশাচর খর ও দূষণ।
দিয়াছিনু সূর্পণখায় করিতে রক্ষণ।।
গিয়াছিল সূর্পণখা পুষ্প-অন্বেষণে।
এতেক প্রমাদ হবে আগেতে না জানে।।
দশরথ নামে রাজা জন্ম সূর্য্যবংশে।
শ্রীরাম লক্ষ্মণেরে পাঠায় বনবাসে।।
সঙ্গেতে বনিতা তার সীতা নামে নারী।
সূর্পণখার সঙ্গে কহে বাক্য দুই চারি।।
পুষ্প লাগি রসাভাষ নারী দুইজনে।
কোপ করি নাক কাণ কাটিল লক্ষ্মণে।।
এই অপমান কহে সে খর দূষণে।
সৈন্য লয়ে গিয়া যুদ্ধ করিল দুজনে।।
করিয়া তুমুল যুদ্ধ দুজনার সনে।
রাক্ষস হাজার চৌদ্দ পড়ে রাম-বাণে।।
লঙ্কাতে আসিয়া ভগ্নী কান্দে মনোদুঃখে।
সর্ব্ব অঙ্গ জ্বলে গেল কাটা নাক দেখে।।
জিজ্ঞাসিলাম এ দুর্গতি করিলেক কেটা।
সূর্পণখা বলে দাদা নয় এক বেটা।।
দুই ভাই আসিয়াছে পঞ্চবটী বনে।
পরামাসুন্দরী এক নারী তার সনে।।
সূপর্ণখা-মুখে শুনে এ সকল কথা।
কোপে হরে আনিয়াছি রামের বনিতা।।
বনের বানর সব সহায় করিয়া।
সাগর বান্ধিল রাম গাছ পাথর দিয়া।।
সাগর বান্ধিয়া রাম লঙ্কাপুরী বেড়ে।
ইন্দ্রজিৎ বীরবাহু সবে রণে পড়ে।।
সৈন্য ও সামন্ত মেরে দর্প কৈল চূর্ণ।
রণে মৈল সহোদর ভাই কুম্ভকর্ণ।।
দুর্জ্জয় লক্ষ্মণ রামে জিনিতে না পারি।
সঙ্কটে পড়িয়া বাপু তোমারে যে স্মরি।।
রাবণ কহিল যদি এতেক কাহিনী।
সে মহীরাবণ কহে করি যোড়পাণি।।
স্বর্ণপুরী লণ্ডভণ্ড হৈল তব দোষে।
পশ্চাৎ ডাকিলে সব করিয়া বিনাশে।।
সাগরের পারে যবে শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
তখন আমারে কেন না কৈলে স্মরণ।।
মম ডরে দেব দানব সবে করে শঙ্কা।
আমি বিদ্যমানে মজে স্বর্ণপুরী লঙ্কা।।
আমার বাণের টান না সহে সংসারে।
নর-বানরেতে এত অপমান করে।।
মোর ডরে দেবগণ যায় স্বর্গ ছাড়ি।
বেন্ধে আনি দেবগণে গলে দিয়ে দড়ি।।
ত্রিভুবনে হেন কথা কোথাও না শুনি।
যারে খাই, সেই কায় অপূর্ব্ব কাহিনী।।
কটাক্ষে মারিব যারে তার সঙ্গে রণ।
হেন মায়া করিব না জানে কোন জন।।
ইন্দ্র শচী থাকে যদি এক সিংহাসনে।
শচীরে আনিতে পারি ইন্দ্র নাহি জানে।।
নর-বানর ভুলাইব কত বড় কাজ।
আর দুঃখ না ভাবিহ শুন মহারাজ।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ তব বৈরী দুইজনে।
নরবলি দিব লয়ে পাতাল ভুবনে।।
রাম লক্ষ্মনেরে আর নাহি তব শঙ্কা।
সীতা লয়ে ভোগ কর স্বর্ণপুরী লঙ্কা।।
মহী যদি করিলেক এতেক আশ্বাস।
হাত বাড়াইয়া যেন পাইল আকাশ।।
রাবণ বলে পুত্র তুমি প্রাণের সমান।
তোমা হৈতে আমার হইবে পরিত্রাণ।।
বুঝিলাম তোমা হৈতে বৈরী হবে ক্ষয়।
তোমার গুণেতে মোর সর্ব্বত্রেতে জয়।।
মহী বলে শুন পিতা লঙ্কা-অধিকারী।
স্থির হয়ে বৈস তুমি আমি মারি বৈরী।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress