রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – হনুমানের গন্ধমাদন পর্ব্বতে ঔষধ আনয়নার্থ গমন
শ্রীরাম সুষেণে কন যোড়হাত করি।
লক্ষ্মণে বাঁচাও আগে শোক পরিহরি।।
আমার লক্ষ্মণ বিনা আর নাহি গতি।
জীয়াও লক্ষ্মণে যদি তবে অব্যাহতি।।
সুষেণ বলেন প্রভু না হও কাতর।
বাঁচিবেন অবশ্য লক্ষ্মণ ধনুর্দ্ধর।।
হস্ত পদে রক্ত আছে প্রসন্ন বদন।
নাসিকায় শ্বাস বহে, প্রফুল্ল লোচন।।
হেন জন নাহি মরে সবাকার জ্ঞানে।
আনিবারে ঔষধ পাঠাও হনুমানে।।
শ্রীরাম বলেন শোকে মম হিয়া শোষে।
আপনি পাঠাও তারে ঔষধ উদ্দেশে।।
সুষেণ বলেন, শুন পবন-নন্দন।
ঔষধি আনিতে যাহ সে গন্ধমাদন।।
গিরি গন্ধমাদন সে সর্ব্বলোকে জানি।
তাহাতে ঔষধ আছে বিশল্যকরণী।।
ছয় শৃঙ্গ ধরে তার অদ্ভুত নির্ম্মাণ।
প্রথম শৃঙ্গেতে তার মহাদেবের স্থান।।
আর শৃঙ্গে উদয় করয়ে শশধর।
আর শৃঙ্গে তিন কোটি গন্ধর্ব্বের ঘর।।
আর শৃঙ্গে বৃক্ষ আছে শাল ও পিয়াল।
আর শৃঙ্গে সিংহ ব্যাঘ্র চরে পালে পাল।।
আর শৃঙ্গে আছে তার খরতলা নদী।
নদীর দুকূলে আছে বিস্তর ঔষধি।।
নীলবর্ণ ফল ফুল পিঙ্গলবর্ণ পাতা।
রক্তবর্ণ ডাটা তার স্বর্ণবর্ণ লতা।।
আনহ ঔষধ হেন বিশল্যকরণী।
রাত্রি মধ্যে আনহ যাবৎ আছে প্রাণী।।
রাত্রিতে ঔষধ আন বাঁচাব সহজে।
রজনী প্রভাতে প্রাণ যাবে সূর্য্যতেজে।।
বিলম্ব না কর বীর যাও এইক্ষণ।
তোমার প্রসাদে জীবে ঠাকুর লক্ষ্মণ।।
আছয়ে গন্ধর্ব্ব সব মায়ার নিধান।
সময়েতে হনুমান হইও সাবধান।।
ত্রিশ কোটি গন্ধর্ব্ব যে হাহা হুহু আছে।
বাদ বিসম্বাদ কর তার সঙ্গে পাছে।।
শ্রীরাম বলেন পথ আঠার মাসের।
কেমনে আসিবে ফিরে রাত্রের ভিতর।।
এত দূর পথ যাবে আসিবেক রাতি।
লক্ষ্মণের না দেখি এবার অব্যাহতি।।
কেন বা সুষেণ বৈদ্য আমারে প্রবোধে।
আজি লক্ষ্মণ মরিলে কি করিবে ঔষধে।।
হাসিয়া বলেন তবে পবন-নন্দন।
এ রাত্রে ঔষধ আনি জীয়াব লক্ষ্মণ।।
মনে কিছু রঘুনাথ না কর বিস্ময়।
ঔষধ আনিব রাত্রে শুন মহাশয়।।
শ্রীরাম সুগ্রীব কাছে মাগিয়া মেলানি।
ঔষধ আনিব রাত্রে শুন মহাশয়।।
শ্রীরাম সুগ্রীব কাছে মাগিয়া মেলানি।
ঔষধ আনিতে বীর করিল উঠানি।।
উভলেজ করিয়া সারিল দুই কাণ।
এক লাফে আকাশে উঠিল হনুমান।।
মহাশব্দে চলিল শূন্যেতে করি ভার।
লাঙ্গুলের টানে উড়ে বৃক্ষ ও পাথর।।
দশ যোজন হৈল বীর আড়ে পরিসর।
বিশ যোজন দীর্ঘেতে হইল কলেবর।।
লেজ কৈল দীর্ঘাকার যোজন পঞ্চাশ।
উঠিবামাত্রেতে লেজ ঠেকিল আকাশ।।
মহাশব্দ করি যায়, শুনিতে গভীর।
দেখিয়া মনেতে প্রীতি পায় রঘুবীর।।