রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – ইন্দ্রজিতের নিকুম্ভিলা-যজ্ঞ ভঙ্গ
শ্রীরাম বলেন, শুন মিত্র বিভীষণ।
কেমনে সঙ্কটে আমি পাঠাই লক্ষ্মণ।।
একে ইন্দ্রজিৎ সেই দুষ্ট নিশাচর।
তাহাতে সঙ্কট-পুরী লঙ্কার ভিতর।।
বালক লক্ষ্মণ হয় সহজে কাতর।
মনোদুঃখে ফলাহারে শীর্ণ কলেবর।।
কষ্ট পেয়ে বলহীন ভাবি তাই মনে।
কিরূপে করিবে যুদ্ধ ইন্দ্রজিৎ সনে।।
বিভীষণ বলে গোঁসাই ভাব কি কারণ।
শত ইন্দ্রজিৎ-বল ধরেন লক্ষ্মণ।।
তাহাতে সপক্ষ আছে সব কপিগণ।
মুর্হূর্ত্তেকে ইন্দ্রজিৎ হইবে নিধন।।
লক্ষ্মণের শক্তি আমি জানি ভালমতে।
যখন রাবণ শেল মারিল বুকেতে।।
রণস্থলে পড়িলেন ঠাকুর লক্ষ্মণ।
কুড়ি হাতে না পারিল নাড়িতে রাবণ।।
লক্ষ্মণের যত শক্তি আমি তাহা জানি।
যুদ্ধেতে লক্ষ্মণ বীরে পাঠাও আপনি।।
মরেছে সকল বীর ওই বেটা আছে।
ইন্দ্রজিতে মারিয়া রাবণে মারি পিছে।।
একজনে দুই জনে মারা হবে ভার।
দুজনে দুজনা মার এই যুক্তি সার।।
ইন্দ্রজিতে মারিলে রাবণ রাজা জিনি।
সাগর তরিলে যেন গোষ্পদের পানি।।
অষ্ট বানর সঙ্গে দেহ বলে বিভীষণ।
হনুমান আর গবাক্ষাদি শ্রীগন্ধমাদন।।
মহেন্দ্র দেবেন্দ্র দেহ বানর সম্পাতি।
নল নীল চলুক প্রধান সেনাপতি।।
গড় মধ্যে পাঠাইতে শঙ্কা হয় মনে।
বিভীষণ-হাতে সমর্পিলেন লক্ষ্মণে।।
বিভীষণ বলে গোঁসাই শুন দিয়া মন।
লক্ষ্মণের ভার মম লাগে অনুক্ষণ।।
শ্রীরাম বলেন ভাই দাণ্ডাও মম আগে।
বিভীষণের ভাল মন্দ তোমারে যে লাগে।।
শ্রীরামের চরণ বন্দি বানরগণ সঙ্গে।
বিভীষণ সহ তবে চলিলেন রঙ্গে।।
গড়ের নিকটে উপনীত মহাবল।
ভাঙ্গিয়া গড়ের দ্বার প্রবেশে সকল।।
রাক্ষসেতে দ্বার রাখে ধনুতে দিয়া চাড়া।
হনু দাণ্ডাইল লয়ে পর্ব্বতের চূড়া।।
ঘরপোড়া দেখিয়া রাক্ষসে ভঙ্গ পড়ে।
ধাইয়া বানর সব রাক্ষসের বেড়ে।।
পলায় রাক্ষসগণ হইয়া ফাঁফর।
লক্ষ্মণের সৈন্য ঢোকে গড়ের ভিতর।।
বাণ বরিষণ করে ঠাকুর লক্ষ্মণ।
বানরেতে গাছ পাথর করে বরিষণ।।
বানর তাড়নেতে রাক্ষসগণ ভাগে।
হনুমান উত্তরিল ইন্দ্রজিৎ আগে।।
ইন্দ্রজিতে দেখিয়া হনুর কোপ বাড়ে।
এক লাফে পড়ে গিয়া যজ্ঞকুণ্ড পাড়ে।।
সম্মুখে দাণ্ডায়ে বীর পরম সন্ধানী।
বৃক্ষবাড়ি মারি নিভায় যজ্ঞের আগুনি।।
হনুমান বীর যেন সিংহের প্রতাপ।
যজ্ঞকুণ্ড ভরি তায় করিল প্রস্রাব।।
যজ্ঞকুণ্ড উপরেতে হনুমান মূতে।
ফলমূল যজ্ঞের ভাসিয়া যায় স্রোতে।।
যজ্ঞদ্রব্য ছড়াইয়া ফেলে চারিভিত।
দেখি ক্রোধে সংগ্রামে সাজিল ইন্দ্রজিৎ।।
মেঘবর্ণ অঙ্গ, তাম্রবর্ণ দু-লোচন।
হনুর উপরে করে বাণ বরিষণ।।
জাঠি ও ঝকড়া শেল ফেলে মহাকোপে।
লাফে লাফে হনুমান সব অস্ত্র লোফে।।
হনুমান বলে বেটা তোর রণ চুরি।
দেখাদেখি আজি তোরে দিব যমপুরী।।
না জানি ধরিতে অস্ত্র বানরের জাতি।
এ কারণে এতদিন তোর অব্যাহতি।।
মল্লযুদ্ধ কর বেটা, ফেল ধনুর্ব্বাণ।
একটা চাপড়ে তোর বধিব পরাণ।।
বিভীষণ কহিলেন ঠাকুর লক্ষ্মণে।
ঐ দেখ ইন্দ্রজিৎ বিন্ধে হনুমানে।।
মেঘবর্ণ বসে আছে বট-বৃক্ষতলে।
যজ্ঞ করে ইন্দ্রজিৎ নাম নিকুম্ভিলে।।
যজ্ঞসাঙ্গে অগ্নির নিকটে লবে-বর।
আছুক অন্যের কাজ জিনে পুরন্দর।।
রয়েছে আশ্রয় করে বট-বৃক্ষতলা।
যজ্ঞস্থলে উহারে মারহ এই বেলা।।