রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – অতিকায়াদি চারি পুত্রের মৃত্যু শ্রবণে রাবণের রোদন
তবে ভগ্নদূত গিয়া দশানন-পাশে।
নিবেদন করিতেছে গদ গদ ভাষে।।
মহারাজ চারিজন তনয় তোমার।
রণে গিয়াছিল দুই জন ভ্রাতা আর।।
তার মধ্যে পঞ্চ জনে বানরে বধিল।
অতিকায় লক্ষ্মণের বাণেতে মরিল।।
দূতমুখে এই বাণী করিয়া শ্রবণ।
কিছুকাল স্তব্ধ হয়ে রহে দশানন।।
মুহূর্ত্তেক পরে পুনঃ পাইয়া চেতন।
কি কহিলে বলিয়া করয়ে জিজ্ঞাসন।।
পুনর্ব্বার দূত কৈল সব নিবেদন।
তাহা শুনি মূর্চ্ছিত হইল দশানন।।
কিছুকাল পরে পুনঃ সম্বিত পাইয়া।
সুদীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে হুঙ্কার করিয়া।।
হইয়াছে অতিশয় শোকতে মগন।
নাহি পারে করিবারে ধৈরয ধারণ।।
বিংশতি নয়নে ঘন অশ্রুধারা বয়।
মুক্তকণ্ঠ হয়ে রাজা ক্রন্দন করয়।।
কোথা গেল সহোদর ভাই মহাপাশ।
কোথা গেল চারি পুত্র করিয়া উদাস।।
পিতৃশ্রাদ্ধ করে পুত্র, সর্ব্বকালে শুনি।
পুত্রশ্রাদ্ধ করে পিতা, এ অদ্ভুত গণি।।
কি হইল হায় হায়, দুঃখ নাহি সহা যায়,
আর দেহে প্রাণ নাহি রহে।
শোকানল বিপরীত, হয়ে অতি প্রজ্বলিত,
নিরবধি প্রাণ মন দহে।।
পুড়ি মরিতেছি একে, কুম্ভকর্ণ ভ্রাতা-শোকে,
ক্ষণকাল স্থির নহে মন।
তদুপরি আরবার, এই বজ্র সম্প্রহার,
কি করিয়া ধরিব জীবন।।
ওরে অতিকায় পুত্র, সকল গুণের পাত্র,
কোন্ স্থানে করিলি গমন।
না দেখি তোমার মুখ, বিদরে আমার বুক,
ধৈর্য্য নাহি ধরে মোর মন।।
তোমা বিনা ঘর দ্বার, সব হৈল অন্ধকার,
শূন্য দেখি এ তিন ভুবন।
অন্ধ হৈল সব নেত্র, জ্বলিতেছে মোর গাত্র,
হৃদয় হতেছে উচাটন।।
ওরে ওর বাছা মোর, না দেখিব আর তোর,
সুধাংশু সমান সে বদন।
আর তোরে নিজ ক্রোড়ে, না বসাব ধরি করে,
না শুনিব সে মিষ্ট বচন।।
কে কহিবে মোর আর, হিত কথা শাস্ত্র-সার.
কে করিবে বিপদে মোচন।
কে করিবে শত্রু জয়, কে তুষিবে বন্ধুচয়,
সম্মানিবে কেবা মান্য জন।।
ওরে বাপ দেবান্তক, ত্রিশিরা রে নরান্তক,
ভ্রাতা মহাপাশ সহোদর।
তোরা সবে ছাড়ি মোরে, গেলি কোন্ দেশান্তরে,
না দেখিয়া পোড়য়ে অন্তর।।
যদি গেলি তোরা সবে, জীবনে কি কাজ তবে,
মরিব ডুবিয়া রত্নাকরে।
এক মাত্র রহি গেল, হৃদয়েতে খেদ-শেল,
জিনিতে নারিনু রঘুবরে।।