রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – রাম রাবণের প্রথম যুদ্ধ
রাবণ বসিয়া আছে আপনার রথে।
সংগ্রামেতে যান রাম ধনুর্ব্বাণ হাতে।।
রাবণে মারিতে যান পূরিয়া সন্ধান।
হেনকালে যোড়হাতে বলে হনুমান।।
রথে চড়ে যুঝে রাবণ শ্রম নাহি জানে।
ভূমিতে থাকিয়া তুমি যুঝিবে কেমনে।।
মোর পৃষ্ঠে রঘুনাথ কর আরোহণ।
আমার পৃষ্ঠেতে চড়ি মারহ রাবণ।।
হনুমানের পৃষ্ঠেতে চড়েন রঘুবর।
ঐরাবতে বার যেন দিলা পুরন্দর।।
রাবণে বলেন রাম উপজিয়া ক্রোধ।
যত দুঃখ দিলি আজি লব তার শোধ।।
দশ মুখ সাজায়েছ নানা অলঙ্কারে।
দশ মুণ্ড কাটিয়া বধিব আজি তোরে।।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর আর যত দেখি।
পড়েছে আমার হাতে কার সাধ্য রাখি।।
রামের বচনে রাবণ না করে উত্তর।
হনুমানে দেখিয়া কুপিল লঙ্কেশ্বর।।
অক্ষয়কুমারে মারে পোড়ায় লঙ্কাপুরী।
বদ্ধ আছে ঘরপোড়া, এই বেলা মারি।।
বন্দী হইয়াছে বেটা পৃষ্ঠে লয়ে রাম।
আজি দিব প্রতিফল করিয়া সংগ্রাম।।
নিজ বুদ্ধে বাঁধা গেছে আপনা আপনি।
নড়িতে চড়িতে নারে এই বেলা হানি।।
বাছিয়া বাছিয়া এড়ে চোখ চোখ শর।
বাণে বিন্ধি হনুমানে করিল জর্জ্জর।।
যুঝিতে না পারে হনু পৃষ্ঠেতে শ্রীরাম।
বাণ ফুটে হনুর ছুটিল কালঘাম।।
লক্ষ লক্ষ বাণ মারে হনুর বুকেতে।
ক্রোধে হনুমান বীর লাগিল ফুলিতে।।
দশ যোজন দেহ কৈল আড়ে পরিসর।
দীর্ঘে ত্রিশ যোজন হইল কলেবর।।
লেজ কৈল দীর্ঘাকার যোজন পঞ্চাশ।
হনুমানের লেজ গিয়া ঠেকিল আকাশ।।
হনুমানের লেজ দেখে রাবণের ভয়।
বালি রাজার মত পাছে লেজে বেন্ধে লয়।।
রঘুনাথ বাণ এড়ে জ্বলন্ত আগুনি।
সব বাণ কাটে রাবণ পরম সন্ধানী।।
শ্রীরাম ঐষিক বাণ যুড়েন ধনুকে।
সন্ধান পূরিয়া মারেন রাবণের বুকে।।
বাণ খেয়ে দশানন হৈল অচেতন।
ক্ষণেকে সম্বিত পায় রাজা ত রাবণ।।
ডাক দিয়া রাম বলেন শুনরে রাবণ।
মোর বাণ খেয়ে তুই হলি অচেতন।।
আজি না মারিয়া তোর ছিন্ন করি বেশ।
লৌকিকতা লইয়া যাহ যেমন সন্দেশ।।
রঘুবংশে জন্ম মোর রাম নাম ধরি।
এক দিনের রণে আমি বৈরী নাহি মারি।।
আজি তোরে মারিলে বিবাদ ঘুচে যাবে।
জ্ঞাতি বন্ধু আদি তোর অনেক বাঁচিবে।।
এক লক্ষ পুত্র তোর সওয়া লক্ষ নাতি।
একজন না রাখিব বংশে দিতে বাতি।।
শেষে তোরে বধিব করিয়া লণ্ডভণ্ড।
বিভীষণের উপরে ধরাব ছত্রদণ্ড।।
সভাখণ্ড সকলে রামের কথা শুনে।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণ রাম করেন সন্ধানে।।
বাণে দশদিকে আলো অগ্নি হেন ছুটে।
দশ মাথার মুকুট এক বাণে কাটে।।
কাটা গেল মুকুট খসিল দশ পাগ।
ভঙ্গ দিল দশানন না পাইয়া লাগ।।
সারথিরে আজ্ঞা দিল রাজা সে রাবণ।
লঙ্কাতে চালাহ রথ ত্বরিত গমন।।
রাবণের আজ্ঞা পেয়ে সত্বরে সারথি।
লঙ্কার ভিতরে রথ নিল শীঘ্রগতি।।
কাটা গেল মুকুট পলায় দশানন।
ধর ধর ডাক ছাড়ে যত কপিগণ।।
কৃত্তিবাসের কবিত্ব শুনিতে বড় রঙ্গ।।
লঙ্কাকাণ্ডে গান গীত রাবণের ভঙ্গ।।