রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – মন্দোদরীর পরিচয় দান ও চিরায়ত্বের ব্যবস্থা
সংসারে অসীমা, যাঁহার মহিমা,
শুনেছ ময়দানব।
যাঁর মহাশেলে, ত্রিভুবন টলে,
লক্ষ্মণের পরাভব।।
তাঁহার নন্দিনী, রাবণ-ঘরণী,
নাম মম মন্দোদরী।
এলেম চরণ, করিতে দর্শন,
ত্যজিয়া যে অন্তঃপুরী।।
শুন মহাশয়, জানিনু নিশ্চয়,
তুমি গোলোকের নাথ।
লঙ্কার ঈশ্বরী, নাম মন্দোদরী,
কহি যোড় করি হাত।।
দেবের ঈশ্বর, দেব পুরন্দর,
তারে যে বান্ধিয়া আনি।
যেই ইন্দ্রজিৎ, দেবে মানে ভীত,
আমি যে তার জননী।।
জন্মায়তী করি, বর দিলে হরি,
এ বচন নহে আন।
স্বামী এই মৃত, আমার আয়ত,
কিরূপে কর বিধান।।
তুমি সত্যবাদী, ওহে গুণনিধি,
মিথ্যা নহে তব বাণী।
দারুণ প্রহারে, মারিয়ে পতিরে,
কি কথা কহ আপনি।।
সূর্য্য-বংশ-জাত, প্রভু রঘুনাথ,
কহেন হয়ে লজ্জিত।
সত্য মোর কথা, রাবণের চিতা,
জ্বালিয়ে রাখ আয়ত।।
শুন মন্দোদরী, যাহ নিজ পুরী,
মনে না কর বিলাপ।
মোর হাতে মরে, গেল স্বর্গপুরে,
খণ্ডিল সকল পাপ।।
শুন মোর বাণী, গৃহে যাও রাণী,
দুঃখ না ভাবিহ চিতে।
রাবণের চিতা, রহিবে সর্ব্বথা,
চিরকাল রবে আয়তে।।
রহিবেক চিতা, মিথ্যা নহে কথা,
শুন মন্দোদরী রাণী।
আয়ত স্বভাবে, সর্ব্বকাল রবে,
মিথ্যা না হইবে বাণী।।
রামের বচনে, সুখী হয়ে মনে,
গৃহে যায় ততক্ষণ।
লঙ্কাকাণ্ডে গীত, ভাষা সুললিত,
কৃত্তিবাস বিরচন।।