রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – মন্দোদরীর রোদন
একবার বদন তুলে ফিরে চাও হে,
উঠ উঠ লঙ্কা-অধিকারী।
আমার শূন্য হলো লঙ্কাপুরী।।
ওহে ত্যজে শয্যা মনোহর।
কেন ধূলায় ধূসর কলেবর।। ধ্রু।।
অন্তঃপুরে জানাইল পড়িল রাবণ।
রণস্থলে ছুটে যায় হয়ে অচেতন।।
রাবণে বেড়িয়া কান্দে চৌদ্দ হাজার নারী।
শশধরে যেন তারাগণ আছে ঘেরি।।
সোণার কোমল অঙ্গ ধূলাতে মগন।
মন্দোদরী কান্দে ধরি স্বামীর চরণ।।
আমার ছাড়িয়া প্রভু যাহ কোন্ স্থানে।
কেমনে ধরিব প্রাণ তোমার মরণে।।
কেন বা আনিলে সীতা এ কালসাপিনী।
স্বর্ণ-লঙ্কাপুরে না রহিল এক প্রাণী।।
কি কাজ করিল তব শঙ্কর শঙ্করী।
রাম লক্ষ্মণ সংহারিল স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।।
আপদ পড়িলে দেখ কেহ কারো নয়।
সীতার কারণে হলো এতেক প্রলয়।।
শমন হইল তব সূর্পণখা ভগ্নী।
তার বাক্যে আনি সীতা হারালে পরাণী।।
ভুবনের বীর প্রভু পড়ে তব বাণে।
প্রাণ হারাইলে নর বানরের রণে।।
কারে দিয়া গেলে এ কনক লঙ্কাপুরী।
কারে দিয়া যাহ প্রভু রাণী মন্দোদরী।।
অতুল বৈভব তব গেল অকারণে।
সব ছারখার হৈল তোমার বিহনে।।
পতি পুত্র মরিল কেমনে প্রাণ ধরি।
ধরণী লোটায়ে কান্দে রাণী মন্দোদরী।।
বিভীষণ বলে শুন রাণী মন্দোদরী।
আর না বিলাপ কর চল অন্তঃপুরী।।
এত বলি বিভীষণ রাণী নমস্কারে।
আপনি সকল জ্ঞাত দৈবে যত করে।।
সীতা দিতে কহিলাম করিয়া মিনতি।
সভা বিদ্যমানে মোরে মারিলেন লাথি।।
পদাঘাতে হইলাম জলনিধি পার।
সকল বৃত্তান্ত তুমি জানহ আমার।।
এতেক বচন যদি কহে বিভীষণ।
বাড়িল সে মন্দোদরীর দ্বিগুণ ক্রন্দন।।