রামায়ণ : আদিকাণ্ড – ব্রহ্মা কর্ত্তৃক রত্নাকরের বাল্মীকি নামকরণ ও রামায়ণ রচনা করণে বরদান
ব্রহ্মা বলেন শুন নারদ তপোধন।
যে কহিল মিথ্যা নহে শিবের বচন।।
রাম নাম ব্রহ্মা স্থানে পেয়ে রত্নাকর।
সেই নাম জপে ষাটি হাজার বৎসর।।
এক নাম জপে এক স্থানে একাসনে।
সর্ব্বাঙ্গ খাইল বল্মীকের কীটগণে।।
মাংস খেয়ে পিণ্ড তার, করিল সোসর।
হইল কণ্টক কুশ তাহার উপর।।
খাইল সকল মাংস অস্থিমাত্র থাকে।
বল্মীকের মধ্যে মুনি রামনাম ডাকে।।
ব্রহ্মার মুহূর্ত্তে ষাটি হাজার বৎসর।
পুনঃ আইলেন ব্রহ্মা যথা মুনিবর।।
সেখানে আসিয়া ব্রহ্মা চতুর্দ্দিকে চায়।
মনুষ্য নাহিক কিন্তু রামনাম হয়।।
রামনাম শুনে মাত্র পিণ্ডের ভিতর।
জানিল ইহার মধ্যে আছে মুনিবর।।
আজ্ঞা করিলেন ব্রহ্মা ডাকি পুরন্দরে ।
সাত দিন বৃষ্টি কর পিণ্ডের উপরে।।
বৃষ্টিতে মৃত্তিকা গেল গলিয়া সকল।
কেবল দেখিল অস্থি আছে অবিকল।।
সৃষ্টিকর্ত্তা করিলেন তাহারে আহ্বান।
পাইয়া চৈতন্য মুনি উঠিয়া দাঁড়ান।।
ব্রহ্মারে কহিল মুনি করিয়া প্রণাম।
মোরে মুক্ত কৈলে তুমি দিয়া রামনাম।।
ব্রহ্মা বলে তব নাম রত্নাকর ছিল।
আজি হৈতে তব নাম কাল্মীকি হইল।।
বল্মীকেতে ছিলা যেই তেঁই এ বিধান।
সাতকাণ্ড কর গিয়া রামের পুরাণ।।
যেই রামনাম হৈতে হইলা পবিত্র।
সেই গ্রন্থ রচ গিয়া রামের চরিত্র।।
যোড়হাতে বলে মুনি ব্রহ্মা বিদ্যমান।
কেমন হইবে গ্রন্থ কেমন পুরাণ।।
কেমন কবিতা ছন্দ আমি নাহি জানি।
শুনিয়া বিধাতা তারে কহেন আপনি।।
সরস্বতী রহিলেন তোমার জিহ্বাতে।
হইবে কবিতা রাশি তোমার মুখেতে।।
শ্লোক ছন্দে তুমি যেবা করিবে পুরাণ।
জন্মিয়া সে সব কর্ম্ম করিবেন রাম।।
এত বলি ব্রহ্মা গেল আপন ভুবন।
আদিকাণ্ড গান কৃত্তিবাস বিচক্ষণ।।