Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আদম’স পিক

০৯.

বেনটোটা থেকে আমরা যাব নিগাম্বু। কলম্বো হয়ে যেতে হবে। কলম্বোর কাছেই রত্নপুরা। রত্নাপুরাতে আছে রত্নগিরি বা রত্নের পাহাড়। পাহাড় খুঁড়লেই মণিমুক্তা। কলম্বো যাওয়ার পর রত্নপাহাড় দেখা যায়। এই রত্নগিরিই বিখ্যাত আদম’স পিক। অনেক উঁচু পাহাড়। উপরে ওঠা অসম্ভব ব্যাপার। পাহাড়ের নিচে ঘুরাফিরা করে নিগাম্বু চলে যাওয়া। সঙ্গে গাড়ি আছে, সমস্যা কিছু নেই।

আদম’স পিক সম্পর্কে কিছু বলা যাক। সাত হাজার তিন শ’ আটান্ন ফুট উঁচু পাহাড়। এর চূড়ায় একটি পদচিহ্ন।

মুসলমানরা দাবি করেন এই পদচিহ্ন হযরত আদমের। বেহেশত থেকে নির্বাসিত হয়ে তিনি এসেছেন শ্রীলংকায়।

খ্রিষ্টানদেরও এই দাবি। তাদের মতে শ্রীলংকাই হলো স্বর্গভূমি (Eden)। খ্রিষ্টানদের একটি দল অবশ্য বলে এটি সেইন্ট পিটারের পায়ের ছাপ।

বৌদ্ধদের দাবি এটি গৌতম বুদ্ধের বাঁ পায়ের ছাপ। তিনি পৃথিবী থেকে শেষবারের মতো চলে যাওয়ার সময় বাঁ পা রাখেন এখানে, ডান পা রাখেন ব্যাংককের সারাবুড়ি প্রদেশে। সেখানে পাথরের ওপর ডান পায়ের একটি ছাপ আছে।

হিন্দুদের দাবি এই পায়ের ছাপ শিবের। পাহাড়ের নিচে একটি প্রাচীন শিবমন্দিরও আছে।

প্রধান ধর্মগুলির মধ্যে ইহুদি ছাড়া বাকি সবাই পদচিহ্নের দাবিদার। ইহুদিরা যদি বলত এটি মোসেসের (মুসা আলায়েস সালাম) পায়ের ছাপ, তাহলে সর্বকলা সম্পন্ন হতো।

আমার নিজের ধারণা, এটা কোনো মানুষের পায়ের ছাপই না। প্রাকৃতিক কারণে শিলা ক্ষয়ে পায়ের পাতার আকৃতি নিয়েছে। কিংবা মানুষই পাথর খুদে এই জিনিস বানিয়েছে।

আমার এই ধারণার কারণ পায়ের পাতা পাঁচ ফুট লম্বা। দৈত্যের পায়ের পাতা এত বড় হতে পারে, মানুষের না।

ধার্মিক সেহেরি বলল, আদি মানুষ ৬০ ফুট লম্বা ছিল। তাদের পায়ের পাতা তো পাঁচ ফুট লম্বা হবেই।

আমার যুক্তি, এক মিলিয়ন বছর আগে মানুষের দৈর্ঘ্য আমাদের মতোই ছিল। গুহাচিত্রে আঁকা ছবিগুলিই তার প্রমাণ। গুহাচিত্রে শিকারি মানুষ বাইসন, হাতি, হরিণ তাড়া করছে। ছবিতে আঁকা হাতি বা বাইসনের দৈর্ঘ্য এবং মানুষের দৈর্ঘ্যের অনুপাত এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত করে।

বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি প্রাচীন মানুষ ছিল ক্ষীণায়ু এবং খর্বাকৃতির। পুষ্টির অভাব, চিকিৎসার অভাব, যুদ্ধ, মহামারী–সব মিলিয়ে মানুষের গড় আয়ু ছিল পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে।

বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ দীর্ঘায়ু। লম্বাতেও মানুষ বাড়ছে। চীন এবং জাপান হলো উজ্জ্বল উদাহরণ। চীনের যুবকরা তো লম্বায় এখন আমেরিকানদের ধরে ফেলছে।

.

কলম্বোর দিকে যাত্রা শুরুর আগে আগে আমি বললাম, শ্রীলংকায় এসে ট্রেনে চড়া হয় নি। বেনটোটা থেকে ট্রেনে কলম্বো গেলে কেমন হয়? দিগায়ু গাড়ি নিয়ে আগে আগে চলে গেল।

সেহেরি বাদ সাধল। সে বলল, ট্রেন প্লাটফরম থেকে উঁচুতে থাকে। ট্রেনের সিঁড়ি সরু। তোমার ভাবি উঠতে পারবে না।

আমি বললাম, দুজন ভাবিকে নিচ থেকে ঠেলবে, আমি তাকে উপর থেকে টানব। টানা এবং ঠেলা খেয়ে সিঁড়ি বাওয়া তো ভাবির অভ্যাস আছেই।

নাজমা ভাবি বললেন, আপনার সব কথা আমি শুনব। শুধু যদি আপনি হাতি দেখাবার ব্যবস্থা করে দেন।

শাওন বলল, ভাবি, ওকে এসব কিছু বলে লাভ নেই। ট্যুর প্রোগ্রাম আমি করেছি। নিগাম্বু থেকে আমরা যাব পিনাওয়ালায়। সেখানে আছে হাতির বাচ্চার এতিমখানা। যে সব হাতির বাচ্চার মা মারা গেছে কিংবা হারিয়ে গেছে তাদের এই হস্তী এতিমখানায় রাখা হয়। তাদের খাওয়ার দৃশ্য, স্নানের দৃশ্য অসাধারণ।

নাজমা ভাবির চোখ চকচক করছে। মনে হয় তিনি কল্পনায় হস্তীস্নান দৃশ্য দেখছেন।

চার কামরার ছোট্ট ট্রেন। কামরাগুলির অবস্থা শোচনীয়। মন খারাপ করে ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন চলতে শুরু করামাত্র মন ভালো হয়ে গেল। সমুদ্র ঘেঁসে ট্রেনের লাইন। শান্ত নীল সমুদ্র, সমুদ্রের পাড়ে জেলেপল্লী। দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। সমুদ্র বদলাচ্ছে না। অনেকদিন ট্রেনে এমন আনন্দভ্রমণ হয় নি।

একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ট্রেনের টিকিট ব্রিটিশ আমলের ট্রেনের টিকিটের মতো। এক ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি হার্ডবোর্ডে ছাপানো। টিকিটের রঙ বলে দিচ্ছে কোন ক্লাস। হলুদ রঙ হলে থার্ড ক্লাস, নীল হলে সেকেন্ড ক্লাস। আমি কলেজে পড়া পর্যন্ত এই টিকিটের চল আমাদের দেশে দেখেছি।

চমৎকার রেলস্টেশনের ছবি দেখে পাঠক বিভ্রান্ত হবেন না। শ্রীলংকার স্টেশনগুলির দীন দশা। এই স্টেশন হোটেল সেরেনডিয়া তাদের প্রচারের জন্যে করে দিয়েছে।

কলম্বোয় পৌঁছে টিম লিডার শাওন ম্যাডাম আমাদের এক ঘণ্টা সময় দিলেন। এই এক ঘণ্টার মধ্যে দুপুরের খাওয়া শেষ করতে হবে। কারোর কেনাকাটার কিছু থাকলে এর মধ্যেই সারতে হবে। আমি কলম্বোর একটা বইয়ের দোকানে ঢুকলাম। বইয়ের সংগ্রহ ভালো। বেছে বেছে বই কিনতে হয়। বই বাছাবাছি করতে অনেক সময় চলে গেল। এখন আদম’স পিকের দিকে রওনা হলে হোটেলে পৌঁছতে রাত দুটা বেজে যাবে। কাজেই আদম’স পিক বাদ দিয়ে হোটেলের দিকে রওনা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

নাজমা ভাবি বললেন, এটা হুমায়ুন ভাইয়ের একটা সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। আমরা যাতে বাবা আদমের কাছে যেতে না পারি তার জন্যে বইয়ের দোকানে দেরি করেছেন। বিরাট সোয়াব থেকে বঞ্চিত হলাম।

আমি মৌনভাব ধারণ করলাম। গৌতম বুদ্ধের দেশে ঘনঘন মৌনভাব ধারণ করতে হয়।

আমাদের হোটেলের নাম ক্লাব ডলফিন হোটেল। ফাইভস্টার হোটেল। নিগাম্বুতে এটিই সবচেয়ে সুন্দর হোটেল। এদের মতো বড় সুইমিং পুল সার্কভুক্ত কোনো দেশে নেই। রাত আটটায় হোটেলে পৌঁছলাম। হোটেলের লবি দেখে মন ভালো হয়ে গেল। ছেলেমানুষের মতো হাততালি দিয়ে বলতে ইচ্ছা করল, কী সুন্দর! কী সুন্দর!

হোটেলে রুম না নিয়ে আমরা একটা ভিলা নিয়েছি। ভিলায় সবাই থাকব। সমুদ্র দেখব। আলাদা কিছু খেতে ইচ্ছা করলে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা। প্রতিটি ভিলার জন্যে আলাদা অ্যাটেনডেন্ট।

জিনিসপত্র সব নামানো হয়েছে। শাওন গিয়েছে চেক ইন কাউন্টারে। সেখানে তাকে বলা হলো, তোমার নামে কোনো বুকিং নেই।

শাওন বলল, নিশ্চয়ই তোমাদের কোনো ভুল হয়েছে।

মাডাম, ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

শাওন বলল, এই হোটেলের ম্যানেজমেন্ট অফিস কলম্বোয়। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তার নাম জোসেফ। তার মাধ্যমে আমরা একটা ভিলা নিয়েছি।

ম্যাডাম, আপনার কথা ঠিক আছে। আমাদের হেড অফিস কলম্বো এবং জোসেফ হেড অফিসেই কাজ করেন। কিন্তু ক্রিসমাসের কারণে আজ আমরা ওভার বুকড।

শাওন বলল, আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব বড় একজন লেখক আছেন। আপনারা তার কথা বিবেচনা করবেন না?

হোটেল ম্যানেজমেন্টের সবাই একসঙ্গে সেহেরির দিকে তাকাল। সেহেরি উদাস ভঙ্গিতে মেহেদি রঞ্জিত দাড়িতে আঙুল বুলাচ্ছে। তাকে দেখাচ্ছে বেঁটে টলস্টয়ের মতো।

বেটে টলস্টয় দেখিয়েও লাভ হলো না। জিনিসপত্র তুলে আমরা অন্য হোটেলের সন্ধানে বের হলাম। শুরু হলো ক্লান্তিকর অনুসন্ধান পর্ব।

বিভিন্ন হোটেলের সামনে গাড়ি থামছে। আমরা গাড়িতে বসে আছি। ড্রাইভার দিগায়ুর সঙ্গে চিন্তিত মুখে শাওন নামছে। আর চিন্তিত মুখ করে ফিরছে।

এ রকম চলতেই থাকল, আমরা হোটেলের পর হোটেল দেখতেই থাকলাম। ক্রিসমাস সিজন। সব হোটেল ওভার বুকড। নাজমা ভাবি বললেন, হুমায়ূন ভাই, যদি হোটেল না পাওয়া যায় তখন কী হবে?

আমি বললাম, গাড়ি তো আছে। আমরা গাড়িতে থাকব।

বাথরুম করব কোথায়?

গাড়িতেই করবেন। তারপর নাকে রুমাল চাপা দিয়ে রাতটা পার করবেন।

নাজমা ভাবি বললেন, আপনার সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলাই উচিত না।

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, কথা সত্য।

রাত বারোটায় প্যারাডাইস বিচ হোটেলের লবি থেকে শাওন ছুটতে ছুটতে গাড়ির কাছে এসে বলল, “পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে?” সে যখন আর্কিটেকচারে ব্যাচেলর ডিগ্রি পেয়েছিল তখনো মনে হয় এত অনিন্দিত হয় নি।

হোটেলে রুম পাওয়ার পেছনে ইউরোপের প্রবল তুষারপাতের বড় ভূমিকা আছে। সুইডিস এক পরিবার চারটি রুম বুক করেছিলেল। তুষারপাতের কারণে তাদের ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তারা হোটেল বুকিং ক্যানসেল করেছে। ঘটনা ঘটেছে শাওনের হোটেল লবিতে পা দেওয়ার পাঁচ মিনিট আগে। হোটেলের লবি ম্যানেজার শাওনকে বলল, তুমি অত্যন্ত ভাগ্যবতী মেয়ে। সুইডিস পরিবার বুকিং ক্যানসেল না করলে তুমি কোথাও থাকার জায়গা পেতে না।

শাওন হাসতে হাসতে বলল, আমি না, আমার স্বামী ভাগাৰান। সে কখনো কোথাও কোনো বিপদে পড়ে না।

অন্যদের কথা জানি না। আমি এই হোটেলে খুবই আনন্দে ছিলাম। দু’দিন দু’রাত কাটিয়েছি–দুটি বই পড়ে শেষ করেছি। একটি জনাথন লাইওনস-এর লেখা The House of Wisdom, অন্যটার নাম Between Eternities, লেখক Ashuin Desai. দুটিই চমৎকার বই।

নিগাম্বু এলাকাটা কক্সবাজারের মতো। অসংখ্য স্যুভেনিয়ারের দোকান। দাম নিয়ে মুলামুলি জায়েজ। গায়ে গা লাগা ভিড়।

আমার শ্রীলংকা ভ্রমণ এই হোটেলেই ইতি। এখান থেকে ঢাকার দিকে রওনা হব। বিদেশ যাত্রা শেষে দেশে ফেরার সময় সবসময় আমি আনন্দিত থাকি। আমার মনে হয়, দেশ মা আমাকে অনেক দিন না দেখে মন খারাপ করে আছে। অভিমানী মার মন খারাপ ভাব দূর করতে হবে। তাড়াতাড়ি দেশের মাটিতে পা দিতে হবে।

আমার জন্যে শ্রীলংকা ভ্রমণ ছিল আনন্দময় অভিজ্ঞতী। ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যে শাওনকে ধন্যবাদ। নাজমা ভাবির নানান কর্মকাণ্ডে আনন্দ পেয়েছি। তাকেও ধন্যবাদ। তিনি অবশ্যি শেষ পর্যন্ত হাতির বাচ্চাদের স্নান দেখতে পান নি। আমি তাঁকে কথা দিয়েছি, আরেকবার তাঁকে নিয়ে শুধুমাত্র হাতি দেখার জন্যেই আসব। যেখানেই হাতি সেখানেই আমরা।

ধলবাদ শ্রীলংকার সহজ-সরল মানুষদের। প্রকৃতিকে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। প্রকৃতি মানুষের ধন্যবাদের ধার ধারে না। তারপরেও পৃথিবীতেই যিনি স্বর্গচারণ বানিয়েছেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মহান লেখক আর্থার সি ক্লার্ক কেন নিজ দেশ ফেলে সারা জীবন শ্রীলংকায় কাটিয়েছেন–তা এই দেশে পা না দিলে বুঝতে পারতাম না।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটি মুড়াল
কেন যে নটে মুড়ালি ….
ইত্যাদি।

পুনশ্চ

শ্রীলংকার একটি লোককাহিনী দিয়ে দিলাম। অনুবাদ করেছেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া। প্রকাশ করেছে সাহিত্য প্রকাশ।

বোকা রাজার গল্প

রাস্তা দিয়ে চলেছে বোকা রাজা, পেছনে পেছনে ঘোড়াটা। ভারি সুন্দর সাদা ঘোড়া। যেমন পছন্দ করত তেমনি ভালোও বাসত রাজা সেই ঘোড়াটাকে। রাজার ছিল এক বন্ধু। ভারি পণ্ডিত সেই বন্ধুটি, আর তেমনি বুদ্ধিমান। রাজ্যের যত লোক সবাই পণ্ডিতের কথা শুনত, তাকে ভালোবাসত ও সমীহ করত। আর এ জন্যই রাজার যত রাগ। রাজা চায় রাজ্যের সবাই তার কথা শুনুক। সে রাজা। কিন্তু প্রজারা শোনে কি না পণ্ডিতের কথা, পণ্ডিতের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ। হাটেঘাটে সবখানে শুধু পণ্ডিতের গুণগান।

রাজা এবার তেতে উঠল। অনেক খেটেখুটে মাথা থেকে একটু বুদ্ধি বের করল।

রাজা হুকুম দিল, পণ্ডিত, সবাই বলে তুমি খুব বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত। তা মানলাম। এবার আমার সাদা ঘোড়াটাকে কথা বলা শেখাও। তবেই বুঝব তুমি কত বড় পণ্ডিত। যদি পার তো মিলবে বকশিশ, না পার তো হয়ে যাবে হাপিস। ধড় থেকে মাথা একেবারে আলাদা।

পণ্ডিত বাড়ি ফিরল। মাথা নুয়ে পড়েছে, মন খারাপ, মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই।

দেখে মেয়ে শুধোয়, বাবা। মন খারাপ কেন? কী হয়েছে?

পণ্ডিত বলল, উপায় আর কী, রাজা যা বলেছে, সারা জীবনেও তা আমি করে উঠতে পারব না। শুধু এই জীবনে কেন, সাত জীবনেও কেউ তা পারবে না।

মেয়ে আবার শুধোয়, কী করতে বলেছে তোমায়?

পণ্ডিত তখন মেয়েকে সব কথা বলল। বলে নিঃশ্বাস ছাড়ল লম্বা।

শুনে মেয়ে বলল, দুকখু করো না বাবা। কালই যাও রাজার কাছে। গিয়ে বলো, হ্যাঁ, আপনার ঘোড়াকে কথা বলা শেখাতে তো পারি। কিন্তু ঘোড়া তো মানুষ নয়, তাই সময় লাগবে অনেক দিন। অন্তত সাত বছরের জন্য ঘোড়াটা আমাকে দিন। তাহলে তাকে কথা বলা শেখাতে শুরু করতে পারি।

কী বলছিস তুই মা! সাত বছরেই বা কী করে শেখাব? সাত বছর পর রাজা আমাকে মেরে শেষ করে দেবে।

বাবা, সাত বছর দীর্ঘ সময়। আর কেই বা বলতে পারে এরই মধ্যে কী ঘটে যাবে! হয়তো রাজার সিংহাসনও উলতে যেতে পারে! নয়তো রাজাই যেতে পারে এই পৃথিবী ছেড়ে!

মেয়ের কথা পছন্দ হলো পণ্ডিতের। খেল দেল। ভালো ঘুম হলো রাতে। সকালে উঠে আস্তে আস্তে চলল রাজবাড়ির দিকে। পথের পাশে ফোটা ভুঁইচাঁপা ফুল দেখে তার ভালো লাগল। তার পাশ দিয়ে একটা খঞ্জনা পাখি ছুটে গেল লেজ দুলিয়ে। তাকেও ভালো লাগল। তারপর পণ্ডিত রাজবাড়িতে গিয়ে পৌঁছাল। দরবার তখনো বসে নি। পণ্ডিত অপেক্ষা করতে থাকল।

রাজা এল রাজদরবারে। মন্ত্রী, সেনাপতি, কোটাল সবাই উঠে রাজার নামে জয়ধ্বনি দিল। শুকপাখি বলে উঠল, পণ্ডিত এসেছে।

পণ্ডিত বলল, হ্যাঁ, আমি এসেছি মহারাজ। আমি আপনার ঘোড়াকে কথা বলা শেখাতে রাজি। কিন্তু এজন্য আমাকে সাত বছর সময় দিতে হবে।

রাজা হাসতে হাসতে বলল, দিলাম। নিয়ে যাও ঘোড়া। মনে রেখ, নয়তো যাবে গর্দান।

পণ্ডিত ঘোড়াটিকে নানা কাজে খাটায়। ঘোড়ার কল্যাণে তার অবস্থা ভালো হয়ে গেল। আর পণ্ডিতের বুদ্ধিমতী মেয়ের কথাই ঠিক। সাত বছর শেষ না হতেই বোকা রাজার সিংহাসন গেল উলটে। আর ঘোড়াটাও মরার আগ পর্যন্ত পণ্ডিতের কাছে ছিল, পণ্ডিতকে ধনী করে না দিলেও খাওয়া-পরার অভাব রাখে নি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 9 of 9 ): « পূর্ববর্তী1 ... 78 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress