Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

শ্রীলংকান তামিল ছাত্র

০৫.

নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে Ph.D, করতে গিয়ে একজন শ্রীলংকান তামিল ছাত্রের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। সেও Ph.D. করতে এসেছে। তার নাম রত্ন সভাপতি সুরিয়া কুমারণ। আমেরিকানরা এই নাম ছোট করে ডাকে সুরি। আমিও ডাকি সুরি।

সুরি অতি ভদ্ৰ অতি লাজুক ছেলে। ভাত না খেলে তার পেট ভরে না বলে আমার এখানে মাঝে মাঝে ভাত খেতে আসে।

আমি তাকে বললাম, বিয়ে করে বউ নিয়ে আসো। প্রবাস জীবন তখন সহনীয় হবে। সে বলল, আমার পক্ষে বিয়ে করা এখন কঠিন। আমার বাবা-মা দরিদ্র। বিয়ে করলে তাদের ছেড়ে আমাকে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে হবে। আমার রোজগারের টাকা শ্বশুর-শাশুড়ির হাতে তুলে দিতে হবে।

আমি বললাম, সব ছেলেকেই কি বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে হয়।

সুরি বলল, হ্যাঁ। এটাই আমাদের দেশের নিয়ম।

আমি বললাম, বাংলাদেশেও যে কিছু ছেলে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠে না, তা-না। তাদেরকে বলা হয় ঘরজামাই। ঘরজামাইদের আমরা ছোট চোখে দেখি। তাদেরকে অমেরুদণ্ডী প্রাণী ভাবা হয়।

শ্রীলংকার অনেক পারিবারিক গল্প আমি সুরির কাছে শুনেছি। এখন মনে পড়ছে না।

আমেরিকার প্রবাস জীবনে আমি একটা উপন্যাস শুরু করি। উপন্যাসটি প্রকাশ করি দেশে ফিরে। নাম– সবাই গেছে বনে। এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করা হয় রত্ন সভাপতি সুরিয়া কুমারণের নামে।

শ্রীলংকায় যাওয়ার পর থেকেই আমার এই বন্ধুটির কথা মনে পড়ছিল। শাওনকে বলতেই সে ইন্টারনেট খুলে বসে গেল। ফেসবুক থেকে বের করে ফেলবে। বের করতে পারল না।

সুরি বলেছিল, আমার রূপবতী একটি মেয়ে বিয়ে করার শখ, কিন্তু আমাদের দেশে রূপবতী মেয়ে নেই।

সুরির কথা সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে যেসব তরুণী দেখছি তাদের চেহারায় আকর্ষণীয় কিছু নেই। এরা কেউ সাজগোজও মনে হয় করে না। ঝলমলে পোশাকের বদলে মলিন পোশাক পরে বের হয়েছে। সবাই কেমন মন খারাপ করে হাঁটছে। কিংবা কে জানে এদের মুখের গঠনই বিষণ্ণ!

শ্রীলংকার প্রিয় বাহন মোটরসাইকেল। ওরা বলে ভটভটিয়া। ছেলেমেয়ে সবাই ভটভটিয়া চালায়।

রাস্তায় পাশের বাড়িঘরের বাগানে যেসব ফল হয় তা টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়, কেউ যদি কেনে। প্রতিটি বাড়ির সামনেই একটা টেবিল। ফলের মধ্যে আছে–কলা, তামা রঙের ডাব এবং আম। আমের গন্ধ চমৎকার, তবে আমাদের দেশের আমের মতো মিষ্টি না।

টেবিলে ছোট ছোট কাপড়ের পুঁটলি পেতে অনেককেই বসে থাকতে দেখেছি। পুঁটলিতে আছে আধা কেজি করে লাল চাল। দরিদ্র মানুষ ঘরে ফেরার সময় এক পুঁটলি চাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

গ্রাম্য কিছু বাজার দেখলাম। আমাদের দেশের গ্রামের বাজারের মতোই। তবে প্রচুর শুঁটকি মাছের দোকান দেখলাম। লোকজন কিছু কিনুক না-কিনুক শুঁটকি মাছ কিনছে।

নারকেল শ্রীলংকানদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। নারকেল তেল ছাড়া তারা কোনো খাবার রান্না করে না। কারিতে নারকেল তেল ছাড়াও গুঁড়া শুঁটকি মাছ ব্যবহার করা হয়। এই গুঁড়া শুঁটকিকে তারা মসলার অংশ হিসেবে দেখে। আরব্য রজনীতে নারকেল তেলে রান্না করা খাবারের বর্ণনা আছে। যেখানে এইসব খাবার কুৎসিত এবং অপকারী বলা হয়েছে।

শ্রীলংকান পদ্ধতিতে নারকেল তেলে রান্না করা ভাজি এবং ডিমের কারি খেয়েছি। আমার কাছে যথেষ্টই সুস্বাদু মনে হয়েছে। তবে এরা রান্নায় প্রচুর গরম মসলা এবং লাল মরিচ ব্যবহার করে। গরম মসলার দেশে এই মসলা বেশি ব্যবহার হবেই। গরম মসলা এবং মরিচ আরও কম হলে আমাদের রুচির সঙ্গে মিলত। শ্রীলংকার ডিমের কারির একটি রেসিপি দিয়ে দিলাম। রান্নাবান্নায় আগ্রহী পাঠক-পাঠিকারা রান্না করে খেয়ে দেখতে পারেন।

শ্রীলংকায় যেসব গরম মসলার চাষ হয় তার একটা তালিকা দিচ্ছি। চায়ের পরেই শ্রীলংকার রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নাম গরম মসলা। পর্যটক ফা হিয়েন, মার্কোপোলো এবং ইবনে বতুতা সবাই জাহাজ ভর্তি করে শ্রীলংকার মসলা পৃথিবীর নানা দেশে রপ্তানির উল্লেখ করেছেন।

গরম মসলা

সেফরন (জাফরান), গ্যাম্বুজ, কিউমিন সিড (জিরা), দিলসিড, কার্ডামন (এলাচি), গোলমরিচ, ফিনেল সীড, সরিষা, দারুচিনি, কোরিয়েভার (ধনিয়া), লবঙ্গ, নিটমেগ।

আমার প্রকাশক বন্ধু আলমগীর রহমানের জন্যে উপহার হিসেবে শ্রীলংকার সব মসলার একটি করে প্যাকেট নিয়ে এসেছিলাম। তিনি রান্নাবান্নায় উৎসাহী। তাঁর প্রকাশনা থেকে চমৎকার কিছু রান্নার বইও বের হয়েছে। আমার ধারণা ছিল উপহার পেয়ে তিনি খুশি হবেন, উল্টা বিরক্ত হয়ে বললেন, সব মসলা বাংলাদেশে পাওয়া যায়। আপনি শ্রীলংকা থেকে আনবেন মুখোশ, গরম মসলা কেন!

মসলার সব প্যাকেট আমার ঘরে পড়ে আছে। তিনি ফেরত দিয়ে গেছেন।

ডিমের সালুন
(Bittara Vanjanaya)

এই রান্না ডিমের কারি খেয়ে বাবুর্চির কাছ থেকে রেসিপি নিয়েছি।

উপকরণঃ

ছয়টি ভালোমতো সিদ্ধ করা ডিম।
দু’চামচ মাখন।
একটি কাঁচামরিচ, ছোট ছোট করে কাটা।
তিনটি ছোট পাতাওয়ালা পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কাটা।
তিনটি রসুনের কোয়া, কুচি কুচি করে কাটা।
এক ইঞ্চি লম্বা দারুচিনি।
দুই টেবিল-চামচ বাটা রসুন
এক টেবিল-চামচ গুঁড়া ব্ল্যাক পিপার।
এক টেবিল-চামচ লালমরিচের গুড়া।
কয়েকটি কারি লিফ।
এক চা-চামচ হলুদ গুঁড়া।
দেড় কাপ ঘন নারকেলের দুধ।
দেড় কাপ সয়া দুধ (না পাওয়া গেলে পানি)।
এক টেবিল-চামচ লেবুর রস।

রন্ধন প্রণালিঃ

মাটির হাঁড়িতে মাখন গলাতে হবে। সয়াসস, লেবুর রস এবং নারকেলের দুধ ছাড়া বাকি সব উপকরণ দুই মিনিট Stir Fry করতে হবে। নারকেলের দুধ, সয়াসস এবং লেবুর রস দিয়ে বলক বের না হওয়া পর্যন্ত জ্বাল দিতে হবে। এর মধ্যে সিদ্ধ ডিম দিয়ে দিলেই রান্না শেষ।

প্রিয় পাঠক, শ্রীলংকার Cuisine বিশ্বসভায় স্থান করে নিতে পারে নি। দেশি পদ্ধতিতে নতুন আলু দিয়ে আমাদের ডিমের ঝোল অমৃত।

পুনশ্চ

এই অধ্যায়ে প্রিয় নাজমা ভাবি বিষয়ে কিছু লেখা হয় নি বলে অধ্যায়টা অসম্পূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কাজেই তাঁর খাদ্যাভাস বিষয়ে দুটি কথা। আমরা সাত দিন শ্রীলংকায় থেকেছি। সাত দিনে চৌদ্দটি মেজর মিল খাওয়া হয়েছে। প্রতিবারই তিনি নিজের জন্যে চিকেন কারি অর্ডার দিয়েছেন। এটা বিশেষ কোনো ব্যাপার না। ফার্মের স্বাস্থ্যবান চিকেন কারও পছন্দের খাবার হতেই পারে। বিশেষ ব্যাপারটা হচ্ছে প্রতিবারই তিনি বলেছেন, আপনারা সবাই ভালো ভালো খাবার খাচ্ছেন আর আমার জন্যে চিকেন কারি।

শাওন মনে করিয়ে দিল যে প্রত্যেকেই তার নিজের খাবার নিজে অর্ডার করেছে।

ভাবি বিরক্ত হয়ে বললেন, এটা কোনো কথা না। পরেরবার আমি চিংড়ি মাছ খাব।

পরেরবারও তিনি চিকেন কারি অর্ডার দিলেন। বাটিভর্তি মাংস দেখে ক্ষুব্ধ গলায় বললেন, আবার চিকেন কারি? আপনারা কি আমাকে মানুষ বলে গণ্য করেন না!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress