Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাজবাড়ির রহস্য || Sunil Gangopadhyay » Page 3

রাজবাড়ির রহস্য || Sunil Gangopadhyay

সন্তু দারুণ রাগারাগি করতে লাগল। এ-পর্যন্ত প্রত্যেকবার সে কাকাবাবুর সঙ্গে বাইরে গেছে। এবারে সে বাদ পড়ে যেতে কিছুতেই রাজি নয়।

কাকাবাবু এক কথা বলে দিয়েছেন, এবারে সন্তু তাঁর সঙ্গে যাবে না। আর মাত্র সাতদিন বাদে সন্তুর পরীক্ষা। তার পড়াশুনো নষ্ট করা চলবে না।

সন্তু মুখ গোঁজ করে বলল, ভারী তো পরীক্ষা! টিউটোরিয়াল টেস্ট, ওটা দিলেও এমন কিছু ক্ষতি হয় না!

কাকাবাবু মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, উঁহু, তোর ক্লাসের অন্য ছেলেরা যখন এই পরীক্ষা দেবে, তখন তোকেও দিতে হবে। তোর বন্ধু জোজো, অরিন্দম, এরা সব পরীক্ষা দেবে, আর তুই ফাঁকি মারবি, তা কি হয়? তা ছাড়া, এবার তো আমি কোনও রহস্যের সন্ধানে যাচ্ছি না, যাচ্ছি বিশ্রাম নিতে। তুই সেখানে গিয়ে কী করবি?

মা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ওঁদের কথা শুনছেন। কাকাবাবুর খোঁড়া পা নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে অসুবিধে হতে পারে বলেই প্রথম প্রথম সন্তুকে তাঁর সঙ্গে পাঠানো হত। এই প্রথম কাকাবাবু একা যেতে চাইছেন।

মা বললেন, রাজা, তুমি বলছ তো বিশ্রাম নিতে যাচ্ছ। কিন্তু তোমার কথায় কি বিশ্বাস আছে? ওখানে গিয়ে আবার কী একটা ঝাট পাকিয়ে বসবে! সেই যে কথায় আছে না, তুমি যাও বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে।

কাকাবাবু হাসতে-হাসতে বললেন, বঙ্গে তো যাচ্ছি না। যাচ্ছি ওড়িশায়। খুব নিরিবিলি জায়গা। দিন-পনেরো থেকে ফিরে আসব!

মা বললেন, পড়াশুনো ফেলে সন্তুটাকে এবার তোমার সঙ্গে জোর করে পাঠাতেও পারছি না! রাজা, তুমি কিন্তু সত্যি এবারে সাবধানে থেকো। সেবারে আফ্রিকাতেও তো তুমি বিশ্রামের নাম করে গিয়েছিলে। তারপর সে কী সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড, প্রাণে বেঁচে গেছ নেহাত ভাগ্যের জোরে?

কাকাবাবু বললেন, ভাগ্য নয় বউদি, মনের জোর। তোমার ছেলেরও খুব মনের জোর। যাই হোক, এবারে সন্তু যাচ্ছে না, এবারে কোনও বিপদের ঝুঁকিই নেব না আমি। সন্তু সঙ্গে না থাকলে সত্যি আমার অসুবিধে হয়। এবারে সেইজন্যে শুধু খাব-দাব আর বই পড়ব। দেখছ না, কুড়িখানা বই নিয়ে যাচ্ছি।

সন্তু বলল, কাকাবাবু, তুমি সঙ্গে ওই পুঁচকে মেয়েটাকে নিয়ে যাচ্ছ, দেখো, ওই মেয়েটাই তোমাকে কোনও গণ্ডগোলে ফেলবে।

কাকাবাবু বললেন, পুঁচকে মেয়ে বলছিস কী? দেবলীনার পনেরো বছর বয়েস হল! ওর খুব বুদ্ধি!

বুদ্ধি মানে শুধু দুষ্টু বুদ্ধি! আমি না থাকলে তুমি ওকে সামলাতেই পারবে না!

একটা কাজের কথা শোন্, সন্তু। আমাকে যারা উপহার পাঠিয়েছিল, তারা আরও হয়তো ওই রকম কিছু পাঠাবার চেষ্টা করবে। ওই রকম প্যাকেট-ট্যাকেট এলে নিবি না। ফিরিয়ে দিবি। যদি পোস্টে আসে কিংবা কেউ বাড়ির দরজার কাছে রেখে চলে যায়, না-খুলে এক বালতি জলের মধ্যে ড়ুবিয়ে দিবি।

মা বললেন, ওই রকম প্যাকেট আবার কেউ নিয়ে এলেই আমি তাকে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেব।

কাকাবাবু বললেন, মাঝে-মাঝে বুকপোস্টে আমার বইপত্র আসে বিদেশ থেকে। তা বলে তুমি আবার পোস্টম্যানদের পুলিশে ধরিয়ে দিও না, বউদি। স, বইয়ের প্যাকেট এলে তুই যেন সেটাকেও জলে ড়ুবিয়ে দিস না! সন্তু বলল, বইয়ের প্যাকেট দেখে আমি ঠিকই চিনতে পারব। মা কাকাবাবুর বাক্স গুছোতে বসে গেলেন। শৈবাল গাড়ির ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কাকাবাবুর ট্রেনে যাবার ইচ্ছে। কাউকে তো আর তাড়া করে যাওয়া হচ্ছে না, বেড়াবার পক্ষে ট্রেনই ভাল। আজকাল সহজে ট্রেনের টিকিট জোগাড় করা যায় না, কাকাবাবুর নাম করে ভি. আই. পি. কোটা থেকে চেয়ার কার-এ দুখানা টিকিট পাওয়া গেল।

জানলার ধারে মুখখামুখি দুখানা সিট। এখন সকাল দশটা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। দেবলীনাকে আজ দারুণ খুশি দেখাচ্ছে। তার ফ্রকটা সোনালি রঙের, মাথায় একটা ওই রঙের রিবন। সেও সঙ্গে অনেকগুলো বই এনেছে।

দুতিনটে স্টেশন যাবার পরেই কাকাবাবু একটি বাদামওয়ালাকে ডেকে দুঠোঙা বাদাম কিনলেন। দেবলীনাকে একটা ঠোঙা দিয়ে বললেন, ট্রেনে যাবার সময় আমার কিছু-না-কিছু খেতে ইচ্ছে করে। কতদিন বাদে এরকম নিশ্চিন্ত মনে ট্রেনে করে বেড়াতে যাচ্ছি।

দেবলীনা বলল, আমার ঝাল-নুনটা বেশি ভাল লাগে। আর-একটু ঝাল-নুন চেয়ে নাও না, কাকাবাবু!

বাদাম ভাঙতে-ভাঙতে কাকাবাবু বললেন, ঝাল-নুনে আর সেরকম ঝাল থাকে না আজকাল! আগে একটুখানি মুখে দিলেই উঃ আঃ করতে হত।

কাকাবাবুর পাশের সিটে একজন কাঁচা-পাকা দাড়িওয়ালা তোক বসে আছে। লোকটির বয়েস খুব বেশি মনে হয় না। তার গায়ের জামাটি বিচিত্র, অনেকগুলি নানা রঙের টুকরো-টুকরো ছিটকাপড় সেলাই করে জোড়া। মাথায় বাবরি চুল। সেই লোকটি কাকাবাবুর কথা শুনে বলল, ঠিক বলেছেন! আজকাল কাঁচালঙ্কাতেও সেরকম ঝাল নেই। আমরা ছেলেবেলায় যেসব ধানিলঙ্কা খেয়েছি, সেরকম তো আর দেখাই যায় না।

নতুন লোকের সঙ্গে ভাব জমাবার ইচ্ছে নেই কাকাবাবুর, তাই তিনি লোকটির কথায় কোনও উত্তর দিলেন না। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন।

একটু বাদে দেবলীনা জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, তারের ওপর ওই যে কালোকালো পাখি দেখছি, মাঝে-মাঝে, ল্যাজটা মাছের মতন, ওগুলো কী পাখি?

কাকাবাবু বললেন, ওইগুলো হচ্ছে ফিঙে। মজার ব্যাপার কী জানিস, আমি তো অনেক বনে-জঙ্গলে ঘুরেছি, কোথাও ফিঙে দেখিনি। শুধু রেললাইনের ধারে টেলিগ্রাফের তারের ওপরেই এই পাখিগুলো দেখা যায়!

পাশের দাড়িওয়ালা লোকটা বলল, অনেকটা ঠিক বলেছেন। তবে আর কোথায় ফিঙে দেখা যায় জানেন? গণ্ডারের শিঙে। গণ্ডারের সঙ্গে এই পাখিগুলোর খুব ভাব। ইচ্ছে করলে পদ্য বানানো যায় :

গণ্ডারের শিঙে
নাচছে একটা ফিঙে।
গণ্ডারের সর্দি হল,
ফিঙে কোথায় উড়ে গেল!

দেবলীনা হেসে ফেলল ফিক করে।

কাকাবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, মশায়ের তো অনেক কিছু জানা আছে। দেখছি। গণ্ডারের সর্দি পর্যন্ত দেখে ফেলেছেন?

লোকটি খুব অবাক হয়ে বলল, অবশ্যই দেখেছি। আপনি দ্যাখেননি? এই যে বললেন বনে-জঙ্গলে ঘুরেছেন? গণ্ডারের সর্দি অতি আশ্চর্য ব্যাপার। গণ্ডারের কাতুকুতুর কথা জানেন তো? কাতুকুতুতে গণ্ডারের খুব সুড়সুড়ি লাগে। আজ আপনি কাতুকুতু দিলে গণ্ডার সাত দিন পরে হাসবে। সর্দির ব্যাপারটাও তাই। গণ্ডার যদি জুন মাসে খুব বৃষ্টিতে ভেজে, সর্দি হবে সেপ্টেম্বর মাসে।

কাকাবাবু স্বীকার করলেন, গণ্ডার সম্পর্কে তাঁর এত জ্ঞান নেই।

দাড়িওয়ালা লোকটি বলল, গণ্ডার আমার খুব ফেভারিট প্রাণী। ইচ্ছে আছে, বাড়িতে একটা গণ্ডার পুষব।

দেবলীনার পাশে একজন বৃদ্ধ চোখের সামনে খবরের কাগজ মেলে বসে আছেন। তিনি কাগজটা নামিয়ে দাড়িওয়ালা লোকটাকে চশমার ওপর দিয়ে একবার দেখে নিয়ে আবার কাগজ পড়তে লাগলেন।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আপনি গণ্ডার এত স্টাডি করলেন কোথায়?

ওড়িশায়। বাড়ি থেকে প্রায়ই তো জঙ্গলে যাই।

ওড়িশার জঙ্গলে গণ্ডার আছে নাকি?

কেন থাকবে না? আসামে থাকতে পারে, বেঙ্গলে থাকতে পারে, তবে ওড়িশা কী দোষ করল? আপনি সিমলিপাল ফরেস্ট দেখেছেন?

তা দেখিনি বটে, কিন্তু সেখানে গণ্ডার আছে, এমন কখনও শুনিনি।

লোকে অনেক কিছু জানে না। ইন্ডিয়ার কোথায় জিরাফ আছে জানেন? শোনেননি নিশ্চয়ই! ওই সিমলিপাল ফরেস্টেই আছে। তাই নিয়েও পদ্য আছে আমার :

সিমলিপালের জিরাফ
লম্বা গলায় টানছে শুধু সিরাপ!

কাকাবাবু বললেন, বাঃ, আপনি তো বেশ পদ্য বানাতে পারেন দেখছি। ওড়িশায় থাকেন কোথায়?

লোকটি হঠাৎ একগাল হেসে মাথা দোলাতে দোলাতে বলল, জিজ্ঞেস তো করলেন কথাটা! এখন আমি কোথায় থাকি, সে-জায়গাটার নাম বললে আপনি চিনতে পারবেন? আমি থাকি কিচিংয়ে। কিচিং কোথায় জানেন, নাম শুনেছেন? মুখ দেখেই বুঝতে পারছি শোনেননি। তা বলে কিচিং বলে কি কোনও জায়গা নেই? এককালে ময়ূরভঞ্জের রাজাদের রাজধানী ছিল এই কিচিং!

কাকাবাবুও হেসে ফেলে বললেন, হ্যাঁ, প্রথমে নামটা শুনে বুঝতে পারিনি। কিচিং শুনে মনে হচ্ছিল আপনি ঠাট্টা করছেন। এখন মনে পড়ছে, কিচিং নামে একটা জায়গা আছে ওড়িশায়। অনেক ভাঙা-চোরা মন্দির আছে। সেখনে, তাই না ?

লোকটি মাথা নেড়ে বলল, হুঁ। তবে আমি অবশ্য ওখানে বিশেষ থাকি না। কাজের জন্য সব সময় নানা জায়গায় দৌড়োদৗড়ি করতে হয়। একবার বাংলা, একবার বিহার, কখনও কখনও রাজস্থান। পাঞ্জাব থেকেও ডাক আসে।

কী কাজ করেন আপনি?

আমার কাজ..আমার কাজ..ইয়ে…সেটা ঠিক যেখানে সেখানে বলা যায় না! তবে আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, আপনাকে বলা যেতে পারে। কিন্তু কানে কানে বলতে হবে।

লোকটি কাকাবাবুর কানের কাছে নিজের মুখখানা আনবার চেষ্টা করতেই কাকাবাবু তাড়াতাড়ি মাথাটা সরিয়ে নিয়ে বিব্রতভাবে বললেন, না, না, গোপন কথা যদি কিছু হয়, আমি শুনতে চাই না?

লোকটি তবু কাকাবাবুর কাঁধ চেপে ধরে বলল, আরে না, না, শুনুন, আমার গুরুর নিষেধ আছে বলেই কানে-কানে ছাড়া বলতে পারি না!

কানে কানে বলা মানে কিন্তু আস্তে বলা নয়। লোকটি কাকাবাবুর কানের কাছে মুখ এনে পাঁচজনকে শুনিয়ে বলল, আমার কাজ হচ্ছে ভূত ধরা। বুঝলেন?

কাকাবাবু নিজের মাথাটাকে মুক্ত করে নিয়ে বললেন, হ্যাঁ, বুঝলুম। বাঃ, ভাল কাজই তো করেন আপনি!

দেবলীনার পাশের বুড়ো লোকটি এবারে খবরের কাগজ নামিয়ে বললেন, ভূত ধরেন মানে, আপনি কি ওঝা? ভুতুড়ে বাড়ি থেকে আপনি ভূত তাড়াতে পারেন?

লোকটি বলল, আজ্ঞে হ্যাঁ। সেটাই আমার পেশা।

বুড়ো লোকটি উৎসাহিত হয়ে বললেন, তা হলে…তা হলে…আপনাকে তো আমার খুবই দরকার। চন্দননগরের গঙ্গার ধারে আমার একটা বাড়ি আছে, বুঝলেন। মাঝে-মাঝে এক-একটা রাত্তিরে সেখানে একটা অদ্ভুত খারাপ গন্ধ বেরোয়। সে যে কী বিশ্রী পচা গন্ধ, কী বলব! সে-গন্ধের চোটে কিছুতেই টেকা যায় না। লোকে বলে, ওটা নাকি ভূতের গায়ের গন্ধ! বাড়িটা খালি রাখতে হয়েছে।

লোকটি বলল, হ্যাঁ, হয়, এরকম হয়। ওরা আছে এক জাতের ওই রকম গন্ধওয়ালা! গন্ধটা অনেকটা পচা তেঁতুলের মতন না!

বৃদ্ধটি বললেন, অ্যা, মানে, পচা তেঁতুলের গন্ধ কী রকম হয় ঠিক জানি। তবে খুবই খারাপ গন্ধ। আপনি পারবেন ব্যবস্থা করে দিতে? তা হলে খুবই উপকার হয়।

পারব না কেন, এইসবই তো আমার কাজ। আমি গ্যারান্টি দিয়ে কাজ করি, তারপর পয়সা নিই।

তা হলে কবে আসবেন বলুন! আপনার যা ফি লাগে আমি দেব!

লোকটি এবার দাড়ি চুলকোতে চুলকোতে বলল, কবে? সেই তো মুশকিল। আমি এখন হেভিলি বুড। অন্তত এগারোটা কেস হাতে আছে। প্রত্যেকটা কেসে যদি পাঁচদিন করে লাগে, তা হলে পাঁচ-এগারোং সাতাত্তর দিন লাগবে…

কাকাবাবু একটু গলাখাঁকারি দিয়ে বললেন, পাঁচ-এগারোং পঞ্চান্ন হয় বোধহয়…

লোকটি বলল, ওই একই হল। মোট কথা, দুতিন মাস আমি ব্যস্ত। তারপর আপনার কেসটা নিতে পারি। আপনার নাম-ঠিকানা দিন, আমি পরে জানিয়ে দেব।

বৃদ্ধ লোকটি পকেট থেকে কাগজ বার করে ঠিকানা লিখতে লাগলেন।

দেবলীনা এতক্ষণ সব শুনছিল। এবারে সে লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, ভূত কীরকম দেখতে হয়?

লোকটি একগাল হেসে বলল, ভূত তো দেখাই যায় না। তার আবার কীরকম সেরকম নাকি? গন্ধ শুঁকে, আওয়াজ শুনে বুঝতে হয়!

দেবলীনা আবার জিজ্ঞেস করল, ভূত কখনও মানুষ সেজে আসে না?

লোকটি বলল, ওইটি একদম বাজে কথা! গাঁজাখুরি গল্প যতসব! যারা ওইসব রটায়, তারা সব বুজরুক, বুঝলে মামণি? আমি ওই সব নকল ভূতের কারবার করি না?

কাকাবাবু এবারে লোকটির পিঠ চাপড়ে বললেন, আপনি খুব গুণী লোক দেখছি। আপনার নামটা জানতে পারি? আমার নাম রাজা রায়চৌধুরী।

লোকটি ভুরু কুঁচকে বলল, রাজা রায়চৌধুরী! নামটা কেমন যেন শোনা-শোনা মনে হচ্ছে। কোথায় শুনেছি বলুন তো?

কাকাবাবু বললেন, খুব কমন নাম। আরও অনেকের হতে পারে। অন্য কোথাও শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই।

তা হতে পারে। আমার নাম দারুকের ওঝা। আসল পদবি কিন্তু উপাধ্যায়। যেমন চতুর্বেদী এখন হয়ে গেছে চৌবে, সেইরকম উপাধ্যায় থেকে ওঝা! আমার নাম আপনি আগে শুনেছেন কখনও?

আপনি খুব বিখ্যাত লোক বুঝি?

আমার লাইনে আমি অল ইন্ডিয়া ফেমাস। যদিও খবরের কাগজে নাম ছাপা হয় না। গুরুর নিষেধ আছে।

এদিকে কতদূর যাচ্ছেন? নিজের বাড়ি ফিরছেন?

না, মশাই, বাড়ি যাবার টাইমই পাই না। এখন যেতে হচ্ছে কেনঝড়, ওখানে একটা কেস আছে। খুব শক্ত কেস।

জায়গাটার নাম শুনে কাকাবাবুর সঙ্গে দেবলীনার চোখাচোখি হল। জ্বলজ্বল করে উঠল দেবলীনার চোখ।

কাকাবাবু বললেন, বাঃ, তা হলে তো ভালই হল। আমরাও ওখানে বেড়াতে যাচ্ছি। আপনার সঙ্গে থেকে আপনার কাজের পদ্ধতিটা দেখার সুযোগ পেতে পারি কি?

দেবলীনা বলল, আমি দেখব, আমি দেখব।

দারুকেশ্বর বলল, তা যদি ভয়-টয় না পাও, তা হলে দেখাব তোমাকে, মামণি!

কাকাবাবু বললেন, আপনার সঙ্গে আলাপ করে খুব খুশি হলুম, দারুকেশ্বরবাবু। আপনি ভূত-প্রেত ধরার কাজ করেন, আবার বনে-জঙ্গলেও প্রায়ই যান বললেন। আপনার দেখছি অনেক দিকে উৎসাহ।

দারুকেশ্বর বলল, বনে-জঙ্গলে আমাকে যেতে হয়, নানারকম শিকড়বাকড়ের সন্ধানে। আমার কাজের জন্য লাগে। আমি জন্তু-জানোয়ারও খুব ভালবাসি। ওদের স্টাডি করি। ওদের নিয়ে ছড়া বাঁধি। আর-একটা শুনবেন?

শোনান।

মুখখানা কালো ল্যাজের বাহার
ওর নাম কী?
গন্ধমাদন কাঁধে তুলেছিল
হনুমাঙ্কি!

বাঃ বাঃ! হনুমাঙ্কি! এই শব্দটা আপনার নিজস্ব?

এরকম কত শব্দ আমি বানিয়েছি! একটা আশ্চর্য ব্যাপার কী জানেন মশাই, গন্ধমাদন পাহাড়ে গেলে এখনও দেখবেন, সেখানে অনেক হনুমান ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা সেই আসল হনুমানের বংশধর।

কাকাবাবু সত্যিই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, গন্ধমাদন পাহাড়? সেটা আবার কোথায়? সেরকম কোনও পাহাড় আছে নাকি?

দারুকের ভুরু তুলে বলল, সে কী মশাই, আপনি কেনঝড় যাচ্ছেন, আর গন্ধমাদন পাহাড়ের কথা জানেন না? কেনঝড় টাউন থেকে মাইল দশেক দূরেই তো এই পাহাড়। রাম-লক্ষ্মণের চিকিৎসার জন্য অরিজিনাল হনুমান এই গোটা পাহাড়টা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। ওষুধ পত্তরের খোঁজ করতে আমাকে ওই পাহাড়ে প্রায়ই যেতে হয়।

কাকাবাবুর চোখে অবিশ্বাসের ভাব ফুটে উঠতে দেখে দেবলীনার পাশের বুড়ো ভদ্রলোক মাথা নেড়ে বললেন, আছে, আছে, ওড়িশায় গন্ধমাদন পাহাড় আছে।

কাকাবাবু বললেন, বাঃ, অনেক কিছু শেখা যাচ্ছে। আচ্ছা দারুকেশ্বরবাবু, আপনি জন্তু-জানোয়ারের নামে ছড়া বানান, ভূতদের নিয়ে কোনও ছড়া বানাননি?

দারুকের এবার চোখ কুঁচকে রহস্যময় হাসি হেসে বলল, আছে, আছে। অনেক আছে। কিন্তু সেসব শুধু ওদের জন্য। ওগুলোই তো আমার মন্ত্র। আপনারা সেগুলো শুনলে কিসে কী হয় বলা যায় না! এ তো ছেলেখেলার ব্যাপার নয়?

দারুকেশ্বরের সঙ্গে গল্প করতে করতে চমৎকার সময় কেটে গেল। লোকটার কোন্ কথাটা যে সত্যি আর কোল্টা গুল, তা বোঝা শক্ত, কিন্তু গল্প করতে পারে বেশ জমিয়ে। দেবলীনারও বই পড়া হল না, সে আগ্রহের সঙ্গে শুনতে লাগল দারুকেশ্বরের কথা।

মাঝখানে যখন দুপুরের খাবার দিয়ে গেল, তখন দারুকেশ্বর তার খাবারের প্লেটটা কোলের ওপর নিয়ে পকেট থেকে একটা ছোট্ট শিশি বার করল, তার মধ্যে জলের মতন কী যেন রয়েছে। শিশির ছিপি খুলে সেই জল খানিকটা ছড়িয়ে দিল তার খাবারের ওপর।

কাকাবাবু কৌতূহলের সঙ্গে তাকালেন সে-দিকে, কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।

দারুকেশ্বর নিজেই বলল, এটা কী জানেন? এটা হল বরেহিপানি জলপ্রপাতের মন্ত্রঃপূত জল। এটা ছিটিয়ে নিলে খাবারের সব দোষ কেটে যায়। আমার শত্রুর তো অভাব নেই, কে কখন খাবার নষ্ট করে দেয় বলা তো যায় না।

শিশিটা কাকাবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আপনি নেবেন একটু?

কাকাবাবু বললেন, না, না, আমার দরকার নেই। আমার তো শত্রু নেই কেউ।

দারুকেশ্বর বলল, আমার শত্রুদের আবার চোখে দেখা যায় না। এখন এই ট্রেনের কামরার মধ্যেও দুএকটা ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। আচ্ছা ওরা, কেউ আছে কি না একটু পরীক্ষা করে দেখা যাক।

অন্য পকেটে হাত দিয়ে দারুকের একটা শুকনো হরীতকী বার করল। সেটা দুআঙুলে ধরে অন্যদের দেখিয়ে বলল, এই যে দেখছেন, এটা কী? একটা হর্তুকি, এটা ওই অশরীরীদের খুব প্রিয় খাদ্য। আমি এটা ছুঁড়ে দিচ্ছি, যদি অদৃশ্য হয়ে যায়, তা হলে বুঝবেন, এক ব্যাটা রয়েছে এখানে।

আশপাশ থেকে আরও কয়েকজন দারুকেশ্বরের কাণ্ডকারখানা দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। দারুকের হাতটা একবার মুঠো করে ওপরে ছুঁড়ে দিয়েই আবার মুঠো খুলল। হাতে কিছু নেই, হরীতকীটা অদৃশ্য হয়ে গেছে।

দারুকেশ্বর বলল, দেখলেন? আছে এখানে এক ব্যাটা। তবে খুব নিরীহ আর হ্যাংলা। যারা ট্রেনে কাটা পড়ে মরে, তারা অনেক সময় চলন্ত ট্রেনের। কামরায় ঘুরঘুর করে। তবে কারও ক্ষতি করে না। এই, যা, যা, তোকে খেতে তো দিয়েছি, এবার যা! নইলে কিন্তু বেঁধে ফেলব?

ভূত থাক বা না থাক, কাকাবাবু বুঝলেন, দারুকেশ্বর হরীতকীটা নিয়ে যা করল, সেটা একটা সরল ম্যাজিক। একসময় তিনিও কিছু শখের ম্যাজিক শিখেছিলেন। ছোটখাটো জিনিস অদৃশ্য কার খেলা তিনিও দেখাতে পারেন। একবার ভাবলেন, পকেট থেকে একটা টাকা বার করে তিনিও সেটাকে অদৃশ্য করে দেবেন অন্যদের সামনে।

তারপর ভাবলেন, না থাক। দারুকেশ্বরের খেলা দেখে অন্যরা বেশ মুগ্ধ হয়েছে। কী দরকার সেটা ভাঙার! লোকটিকে তাঁর বেশ পছন্দই হয়েছে। আর যাই হোক, লোকটা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতন নয়!

যাজপুর-কেওনঝড় রোড রেল স্টেশনে ট্রেনটা পৌঁছল সন্ধের সময়। এখান। থেকে কেওনঝড় শহর একশো কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দূর। বাসে প্রচণ্ড ভিড়, তাতে কাকাবাবু উঠতে পারবেন না। শৈবাল বলে দিয়েছিলেন, স্টেশনেই জিপ বা ট্যাক্সি পাওয়া যাবে।

একটা গাড়ি ভাড়া করার পর কাকাবাবু দারুকেশ্বরকে বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে যাবেন নাকি? আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি।

দারুকেশ্বর বলল, তা হলে তো ভালই হয়। আমাকে স্টেশনে নিতে আসার কথা ছিল। কই, তাদের তো দেখছি না। হয়তো আরও তিনঘন্টা পরে আসবে। এখানকার লোকেরা ভাবে কী জানেন, সব ট্রেনই তিন-চার ঘন্টা লেট করে।

গাড়িটা চলতে শুরু করার পর দারুকের জিজ্ঞেস করল, আপনারা কেনঝড়ে কোথায় উঠবেন? সার্কিট হাউসে?

কাকাবাবু বললেন, না, আমাদের জন্য একটা বাড়ি ঠিক করা আছে। শস্ত্র থেকে খানিকটা দূরে, মোনাসিকা পাহাড়ের দিকে। আগেকার রাজাদের আমলের বাড়ি।

দারুকের চমকে উঠে বলল, আগেকার রাজাদের আমলের বাড়ি? স্বর্ণমঞ্জিলে?

দেবলীনা বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, বাড়িটার নাম স্বর্ণ-মঞ্জিল। গেটের সামনে যেখানে নামটা লেখা, সেখানে ম-টা উঠে গেছে, স্বর্ণ-ঞ্জিল হয়ে আছে।

দারুকেশ্বর বলল, আজ রাতে আপনারা সেই হানাবাড়িতে গিয়ে থাকবেন?

কাকাবাবু বললেন, হানাবাড়ি কেন হবে? ওখানে তো লোকজন থাকে! পাহারাদার আছে।

ওবাড়ির কাছে দিনের বেলাই তো ভয়ে অনেকে যেতে পারে না।

সে কী? এই দেবলীনাই তো কয়েকদিন আগে ওখানে থেকে গেছে!

সত্যি? মামণি, তুমি ওখানে কোনও খারাপ গন্ধ পাওনি?

দেবলীনা মাথা নেড়ে বলল, কই, না তো!

দারুকেশ্বর বলল, গন্ধ পাওনি? তা হলে বিচ্ছিরি শব্দ শুনেছ নিশ্চয়ই?

দেবলীনা বলল,না, সেরকম কোনও শব্দও শুনিনি।

হায়নার কান্নার মতন শব্দ শোনোনি রাত্তিরের দিকে?

হায়নার কান্না কীরকম, তা তো আমি জানি না!

কাকাবাবু বললেন, আমি হায়নার হাসির কথা জানি, হায়নার কান্নার কথা আমিও কখনও শুনিনি!

দারুকেশ্বর প্রায় ধমক দিয়ে বলল, যে হাসতে পারে, সে কি কখনও কাঁদে না? হায়নারা শুধু সারাজীবন হেসেই যাবে? যত হাসি তত কান্না, বলে গেছে রাম শর্মা। হায়নারা আলবাত কাঁদে।

দেবলীনা বলল, আমি কোনও কান্নার আওয়াজই শুনিনি!

দারুকেশ্বর বলল, হায়নার কান্না হচ্ছে কলাগাছের সঙ্গে কলাগাছের ঘষা লাগার শব্দের মতন। এই শব্দটা চিনতে হয়, সহজে বোঝা যায় না।

কাকাবাবু কয়েক মুহূর্ত ভেবে দেখলেন, কলাগাছ কি দোলে যে ঘষা লাগবে? কে জানে!

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ওই বাড়িটার কথা শুনে চমকে উঠলেন কেন দারুকেশ্বরবাবু? ওই বাড়িটা সম্পর্কে আপনি কিছু শুনছেন?

দারুকেশ্বর বলল, শুনেছি মানে, ওবাড়ি সম্পর্কে কত গল্প আছে, তা এদিককার কে না জানে? ওবাড়িতে অশরীরীরা গিসগিস করছে।

বাঃ, তা হলে তো আপনার পোয়া বারো! আপনি টপাটপ তাদের ধরে ফেলবেন।

আমি কেন ধরতে যাব! ও বাড়ির মালিক কি আমাকে কল্ দিয়েছেন? আমাকে কাজের জন্য কল্ না দিলে আমি ওদের ডিসটার্ব করি না। আপনাদের পক্ষে ওবাড়িতে রাত কাটানো উচিত হবে না। আপনারা সার্কিট হাউসে থাকুন। ওখানে জায়গা না পান, হোটেল আছে।

দেবলীনা বলল, না, আমরা ওখানেই থাকব। খুব ভাল বাড়ি। হোটেল-টোটেলে থাকতে আমার পচা লাগে!

কাকাবাবু বললেন, হায়নার কান্না কিংবা কলাগাছের হাসি তো দেবলীনা…

দারুকেশ্বর বলল, কলাগাছের হাসির কথা আমি বলিনি, দুই কলাগাছের ঘর্ষণ..

হ্যাঁ, ওরকম কোনও শব্দই তো দেবলীনা শুনতে পায়নি। আমি চেষ্টা করে দেখি শোনা যায় কি না। যদি ওরা কেউ আসে, রামনাম করার বদলে আপনার নাম করব। আপনাকে নিশ্চয়ই ওরা সবাই চেনে!

তা চিনবে না কেন? তবে আপনারা যদি থাকতেই চান ওখানে, তা হলে দোতলার দক্ষিণ কোণে একটা ঘর আছে, সেটাতে অন্তত রাত্তিরে ঢুকবেন না। ও-ঘরটা খুবই খারাপ?

কেন, কী হয়েছে সে-ঘরে? সেখানে কিছু আছে?

সেকথা আজ রাত্তিরে আপনাদের বলতে চাই না। পরে তো আবার দেখা হবেই, তখন সব খুলে বলব।

শহরে ঢুকে দারুকের নেমে গেল একটা পেট্রোল পাম্পের কাছে। সেখানে দুতিনটে হোটেল আছে। সাড়ে আটটা বাজে, এর মধ্যেই রাস্তায় মানুষজন অনেক কম। রাস্তায় আলো নেই, তবে আকাশে কিছুটা জ্যোৎস্না আছে।

গাড়িতে পেট্রোল নিতে হবে, তাই খানিকটা দেরি হল। তারপর ড্রাইভারটি কাকাবাবুর সঙ্গে একটা ঝগড়া বাধাবার চেষ্টা করল। স্বর্ণ-মঞ্জিল আরও অনেক দূর, সেখানে যাবার জন্য তাকে আরও বেশি টাকা দিতে হবে। ফেরার সময় তাকে একা আসতে হবে, এই রাস্তায় ডাকাতের ভয় আছে।

কাকাবাবু বললেন, ঠিক আছে, তোমাকে আরও পঞ্চাশ টাকা বেশি দেব, তা হলেই ডাকাতের ভয় কমে যাবে। এবার চলো।

শহর ছাড়াবার পরই পাতলা-পাতলা জঙ্গল, তার মধ্য দিয়ে রাস্তা। বড় রাস্তা ছেড়ে আর-একটি সরু রাস্তায় ঢুকল গাড়িটা। এদিকে আর একটাও গাড়ি নেই। এখানে ডাকাতি করতে গেলেও খুব ধৈর্য ধরে বসে থাকতে হবে ডাকাতদের। কখন একটা গাড়ি আসবে তার ঠিক নেই, হয়তো সারা সন্ধেতে একটা গাড়িও এল না।

একসময় দেবলীনা বলে উঠল, ওই যে।

বাড়ি তো নয় একটা প্রাসাদ। এই আধো-অন্ধকারে সেটাকে দেখাচ্ছে একটা ছোটখাটো পাহাড়ের মতন। সে বাড়ির কোথাও এক বিন্দু আলো নেই।

গেটের খুব কাছ পর্যন্ত গাড়িটা যাবে না, বেশ কিছু আগাছা জন্মে গেছে। সেখানে। গাড়িটা থামবার পরই দেবলীনা ছুটে গেল গেটের কাছে। কাকাবাবু মালপত্র নামাতে লাগলেন, ড্রাইভারটি ব্যস্তভাবে বলল, আমায় ছেড়ে দিন, স্যার। এই রাস্তায় একলা ফিরতে হবে… দেরি হলে খুব মুশকিলে পড়ে যাব..

কাকাবাবু তাকে টাকা দিয়ে দিলেন। গাড়িটা চলে যেতেই পুরো জায়গাটা একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress