রঙ নাম্বার
রীনাদি ফোনটা ধরো ,বেজেই যাচ্ছে।
আরে খুশীর খবর দেবো সোনা।
না এই নম্বরটা তো কাজ করছে না।এত চেষ্টা করছি।
ও মনে পড়েছে !রীনাদি তো আমাকে একটা নম্বর দিয়েছিল।বলেছিল এখন থেকে এই নম্বরে ফোন করিস।
কি করে যে ভুলে গেলাম রীনাদির নম্বরটা সেভ করে যে রাখব!
এই তো ব্যাগে এখনো আছে।
৯৮৩১৪৪০৪
হ্যাঁ হ্যাঁ বাজছে।
বাবা রীনাদির রিংটোনে গান
কি গান দিয়েছে রে বাবা
“গলেমালে গলেমালে পীড়িত করো না”।
বাবা রীনাদি এতক্ষণে ফোন ধরলে।তোমার বৃন্দা জার্নালিজমে ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছে গো।আচ্ছা শোনোএখন পার্টি চেয়ো না।
ফেসবুকে মেসেঞ্জারে কথা হবে।শোনো রীনাদি ফেসবুকে বৃন্দা বলে আছি।নুতন খুলেছি।এতদিন পড়াশোনা করেছি,এখন কদিন ফেসবুক নিয়ে রিল্যাক্স করব।
আরে আমি একা বকেই যাচ্ছি।আচ্ছা তুমি অভিনন্দন জানালে না।
কুছ তো বোলো রীনাদি??
নমস্কার আমি রীনাদি নয়?
তাহলে অরুনদা?
কে অরুণদা?
মজা করছেন !!!
ঐ আমার একমাত্র মাসতুতো দিদি তার সাত পাকে বাঁধা বর।
যতই গলায় খ্যাকানি দাও জিজু
তোমার শালী ঠিক বুঝতে পেরেছে।
এক্সকিউস মি,আমি কারর জিজু নয়।
আমার বিয়ে হয়নি।বয়স উনত্রিশ।এম টেক করে ক্যাপজেমিনিতে চাকরি করি।
ও তাই নাকি।খুব ভালো।
আপনি রীনাদিকে একটু ডাকবেন???
দিদি তো ঘুমাচ্ছেন।ঘুম থেকে উঠুন বলে দেব।
এখন ডাকুন না।বুঝতেই পারছেন খুব দরকার।
না দিদির তো ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে।ডাকা যাবে না।
কি বলছেন আপনি?
আমার রীনাদির ব্রেন স্ট্রোক !!!
আপনি এত স্বাভাবিক গলায় আপনার বায়োডাটা শোনাচ্ছেন।
কবে হয়েছে?
পরশু তো কথা হলো।
এক মাস হয়েছে।
আচ্ছা আপনি ইয়ার্কি মারছেন।দাঁড়ান রীনাদিকে দেখতে আসছি।
ওলায় চড়ে রীনাদির বাড়ি এলাম।
ক্রিং ক্রিং
আরে কেউ তো দরজা খোলো।
ঐ বায়োডাটা ছেলেটাতো জানে,আসছি।
সেও তো খুলে দিতে পারে।
ঐ কেউ দরজা খুলছে।
ও বৃন্দাদি তুমি এসেছ?
বাবু আর দিদিমনি বাড়িতে নেই।ডাক্তার দেখিয়ে চলে আসবে।আসবার সময় হয়ে গেছে।
তারপর জিজ্ঞেস করি চা খেতে খেতে দিদির তো শরীর খারাপ,ডাক্তার বাড়িতে আসতে পারত??
কাজের মাসী বলে ঐ দিদিমনিরা এসেছে।
ওমা তুই?কতক্ষণ এলি?
রীনাদির এদিকে নাকি স্ট্রোক ,বেশ কথা বলছেতো।
তোমাকে দুপুরে ফোন করেছিলাম।একটা ছেলে বলল তোমার স্ট্রোক হয়েছে।কিন্তু আমার ফোন আমার কাছেই।তুই কাকে করেছিলি।
ঐ তুমি যে নম্বর দিয়েছিলে।
এই তো কাগজটা ব্যাগে আছে।
৯৮৩১৪৪০৮বলেছি ,তুই শেষটা ৪লিখেছিস সোনা।
*আবার ও একদিন* রীনাদিকে ফোন করতে গিয়ে চার ও আটে কি যে গুলিয়ে গেল।আবার ঐ ছেলেটি ধরে।
আরে আপনি এলেন না।আসবেন বললেন।
আপনার দিদির নাম রীনা।কিন্তু আমার রীনাদি অন্য।জানেন আমি বৃন্দা মজুমদার।রঙ নাম্বার করে ফেলি বার বার।
আমি তারপর ঘটনাটা বলি।
তারপর রোজ শুরু হয় কথা।বেশ বন্ধু হয়ে যায়।
ফেসবুকে ওর ছবিও নেই আমার ও নেই।
বৃন্দা ও সুগতর বন্ধুত্ব এগিয়ে যায়।
দুজনের রাতে মেসেঞ্জারে অনেক কথা হয়।
এর মধ্যেই শুনলাম ওর ঐ রীনাদি মারা গেছেন।কাজের দিন নিমন্ত্রণ করল।যেতে অনুনয় ও করল।সুগত থাকে যাদবপুর আমি থাকি কসবা।কিন্তু এত গল্প হয় আমি আমার বাড়ি বালিতে বলেছি।।যদিও পৈতৃক ভিটে বালিতে।বাবা ব্যাঙ্গালোর বদলি হয়েছে তাই মা ও বাবার কাছে থাকে।আমি আমাদের কসবার ফ্ল্যাটে একা থাকি। মাসতুতো দিদি রীনাদি থাকে হাজরাতে।ঘুনাক্ষরে বলি নি আমি সুগতর কাছাকাছি থাকি।
ওর দিদির শ্রাদ্ধে যায়।যাকে দেখি সুগত মনে হয়।হঠাৎ আমায় অপরিচিত দেখে সুগত এগিয়ে আসে।
হাই আমি সুগত।
খুব সুন্দর দেখতে তো আপনি।
আরে আপনিতো বেশ মিষ্টি।
তারপর দুজনেই বলি আমরা চ্যাট করার সময় তুমি লিখি।
কিছুক্ষণ পর সুগতর জামাইবাবু এসে বলে সুগত তুই কি ব্যস্ত?
না ব্যস্ত নয়,কি বলছ?
আমার বন্ধুরা প্যান্ডেলে আছে,একটু দেখ না।
হ্যাঁ তোর বান্ধবীকে নিয়ে যা।
জামাইবাবু বলেন আমাকে–আচ্ছা তোমাকে কোথায় দেখেছি বলতো???
আমি বলি মনে পড়ছে না তো।
প্যান্ডেলে গিয়ে দেখি রীনাদি,জিজু।
আরে বৃন্দা তুই এখানে?
ঐ ভুল নম্বর বন্ধু।
ও আচ্ছা আচ্ছা।তার মানে আমার স্ট্রোক,ঐ শ্রাদ্ধ আমার হওয়া উচিত।সবাই ঘটনা শুনে তাজ্জব।
সুগত বলে বালি যাবে?তাড়াতাড়ি তুমি বেড়িয়ে যাও।
আমি বলি এখন কসবাতে আছি।
এবার রাজপুত্র রাজকন্যার প্রেমপর্ব শুরু হয়।
আমার চাকরি উপলক্ষে ছোট করি পার্টি চলে।সুগত ও আসে।এরপর মাখমাখ প্রেম,বিবাহ,অন্নপ্রাশন,ছেলের উপনয়ন চলতেই থাকে।
এখন সুগত ও বৃন্দার ব্যস্তময় জীবন।