Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে ম্যানহান্ট || Sujan Dasgupta » Page 4

ম্যানহাটানে ম্যানহান্ট || Sujan Dasgupta

অশোক অরুণ কারও চেহারাই টিপিক্যাল ভারতীয় নয়। এঁদের মধ্যে অশোকের রঙ একটু চাপা। অরুণকে অন্য কোথাও দেখলে আমি নির্ঘাত ইটালিয়ান আমেরিকান বলে ভুল করে বসতাম! শুধু চেহারা নয়, ওঁদের হাবভাবটাও বেশ সাহেবি। আসলে ওঁরা সিন্ধি। তবে কোলকাতায় বড় হয়েছেন বলে দু’জনেই খুব ভালো বাংলা জানেন। কথোপকথন তাই বাংলাতেই হল। প্রাইভেসির জন্য হলঘরে দাঁড়িয়ে না থেকে, একটা ক্লাসরুম খোলা দেখে সেখানে সবাই ঢুকলাম। ক্লাসরুমটা নিশ্চয় কিন্ডারগার্ডেনের বাচ্চাদের। ঘরের একপাশে বাক্সভর্তি খেলনা, দেয়াল জুড়ে কাঁচা হাতে আঁকা অজস্র ছবি, আর চেয়ারগুলোরও যা সাইজ, তাতে আমরা কেন, টিঙটিঙে একেনবাবুও আঁটবেন কিনা সন্দেহ!

“বসে পড় সবাই,” বেন্টুমাসি আমাদের ওপর হুকুম জারি করে নিজে অবশ্য টিচারের চেয়ারটা দখল করলেন।

“এগুলোতে আবার বসা যায় নাকি, এত ছোটো!” বিড়বিড় করে এরকম কিছু বলে প্রমথ আবার একটা কমপ্লেন পেশ করার চেষ্টা করেছিল। বেন্টুমাসি পুরোপুরি সেটা উপেক্ষা করলেন।

কী আর করা, অগত্যা অনেক কসরত করে বাচ্চা চেয়ারগুলোতেই কোনোমতে সবাই বসলাম। বলা বাহুল্য, সমস্ত ব্যাপারটাতে বেন্টুমাসির উৎসাহই সবচেয়ে বেশি। অশোক বা অরুণ কেউই মনে হল না আলোচনায় খুব একটা উৎসুক। তাতে অবশ্য তারা নিস্তার পেল না। বেন্টুমাসি অর্ডার করলেন, “অশোক, একেনকে বিস্তারিত বল, তোমাদের গেস্ট কবে এসেছিলেন, কী করে মারা গেলেন, কখন তোমাদের সন্দেহ হল, যা যা মনে আছে। কোনো কিছু বাদ দিও না। ডিটেকটিভদের সব কিছু জানা দরকার।”

অশোক বেচারা আমতা আমতা করে বলল, “তা বলছি আন্টি। তবে কিনা এটা একেবারেই পিওর সন্দেহ। মানে বলতে চাইছি, হয়তো পুরোপুরি ভুল সন্দেহই।”

সাক্ষী প্রথমেই বিগড়োচ্ছে দেখে বেন্টুমাসি ধমক দিলেন, “আঃ, সন্দেহ ভুল না ঠিক, সেটা তো একেন বিচার করবে। তুমি শুধু বলে যাও কী কী ঘটেছিল!”

অশোক আমাদের দিকে একটু অসহায় ভাবে তাকিয়ে শুরু করলেন, “দিন দশেক আগে শ্যাম আঙ্কল, মানে মিস্টার মিরচন্দানি, আমাদের বাড়ি আসেন। সঙ্গে ওঁর পার্সোনাল অ্যাটেনডেন্ট।”

“মিস্টার মিরচন্দানি কি স্যার আপনার কাকা হন?”

“না, না, আমরা ওঁকে আঙ্কল বলে ডাকি, কারণ উনি আমার কাকার পরিচিত বলে। নো রিলেশন।”

“মিরচন্দানি কোথায় থাকতেন একেনকে বলো।” বেন্টুমাসি অশোককে বললেন। “ও হ্যাঁ, সান ফ্রানসিস্কোতে।”

“আরেকটু বিশদ করে বলো। একা, না ফ্যামিলি নিয়ে? ছেলেপুলে ক’টা? এসব ডিটেলস না বললে চলবে কেন!”

“রাইট আন্টি।” অশোক সসম্ভ্রমে বলল। “হ্যাঁ মিস্টার সেন, মানে উনি একাই থাকতেন। ওঁর স্ত্রী মারা যান শুনেছি প্রায় আট বছর আগে, নিঃসন্তান অবস্থায়। এখানে ওঁর আপনজন বলতে শুধু বন্ধুবান্ধব।”

“ওঁর এই পার্সোনাল অ্যাটেনডেন্টটি কোথাকার স্যার?” এবার একেনবাবুর প্রশ্ন।

“উনি শ্যাম আঙ্কলের গ্রামের লোক। বছর পাঁচেক আগে শ্যাম আঙ্কল খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওঁকে দেশ থেকে আনিয়ে নেন। হেল্পার কাম সঙ্গী হিসেবে কাজ করার জন্য।”

“আপনারা এই হেল্পারটিকে আগে চিনতেন?”

প্রশ্নটাতে অশোক একটু হতচকিত হয়ে বললেন, “মানে হ্যাঁ, গোভিন্দ আঙ্কলকেও আমরা চিনতাম। আমাদের দেশের বাড়ি ছিল ওঁর পাশের গ্রামে।”

“তারপর স্যার?”

“শ্যাম আঙ্কল নিউ ইয়র্কে আসার আগে আমাদের ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দু’জনের স্ত্রীই দেশে বেড়াতে গেছেন শুনে, প্রথমে আমাদের বাড়িতে এসে উঠতে চাননি। আমরাই জোরজার করে আসতে রাজি করাই।”

“এই দেখো, উনি এসেছিলেন কী করতে, সেটাই তো বলছ না!” মনে হল বেন্টুমাসির উত্তরটা জানা। তবু আমাদের খাতিরেই যেন অশোককে প্রশ্ন করলেন, “উনি কি বেড়াতে এসেছিলেন?”

“নো, ইট ওয়াজ এ বিজনেস ট্রিপ।”

“তা কী ধরনের বিজনেস সেটা না বললে একেন বুঝবে কী করে!” বেন্টুমাসির সদা সতর্ক দৃষ্টি, অশোক সূক্ষ্ম কোনো পয়েন্ট যাতে না মিস করে!

“মানে, আসলে আই অ্যাম নট শিওর। উনি এসব নিয়ে খুব একটা কথা বলতেন না। তবে আমার ধারণা প্ৰেশাস স্টোনের ব্যাবসা।”

“মানে হিরে-জহরতের কারবার! পাছে একেনবাবু প্ৰেশাস স্টোন কথাটার মানে ধরতে না পারেন, তাই বেন্টুমাসি বিশদ করে দিলেন!“

“এবার ওঁর মারা যাবার ব্যাপারটা বল।” বেন্টুমাসির নেক্সট হুকুম।

“ওয়েল, আজ থেকে ঠিক ছ’দিন আগে ম্যানহাটানে একটা কাজ সেরে ফিরেই উনি হঠাৎ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমাদের বাড়ির একদম কাছেই আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের অফিস। অরুণ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ডেকে আনে। ইট ওয়াজ এ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। ডাক্তার আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই উনি মারা যান।”

“এসব যখন ঘটছে স্যার, তখন মিস্টার জসনানি কোথায়?”

“উনি বাইরে ছিলেন। শ্যাম আঙ্কল ম্যানহাটান থেকে ফিরেই ওঁকে একটা প্যাকেজ কাউকে ডেলিভারি করতে পাঠান।”

“কাকে পাঠান জানেন স্যার?”

“তা তো বলতে পারব না।”

“কখন ফেরেন উনি?”

“টাইমটা বলতে পারব না। আমরা দুজনেই তখন অ্যাট এ স্টেট অফ ডেইজ! আমাদের মানসিক অবস্থা দেখে ডক্টর রাসেল, মানে আমাদের ফিজিশিয়ান, ডেথ সার্টিফিকেট লিখে, সিটি অথরিটির পারমিশন নিয়ে একটা ফিউনারেল হোমের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন ক্রিমেশনের ব্যবস্থা করতে। আমরা যখন শ্যাম আঙ্কলের পরিচিত এখানে যাঁরা আছেন, তাঁদের ফোন করার চেষ্টা করছি, তখন গোভিন্দ আঙ্কল বাড়িতে ঢোকেন।”

“উনি কীভাবে রিয়্যাক্ট করেছিলেন স্যার?” উনিও কি আপনাদের মতই শকড হয়েছিলেন?

“আমার তো তাই মনে হয়েছিল। অ্যাট লিস্ট দ্যাটস হোয়াট উই ফেল্ট। উনি শ্যাম আঙ্কলের বিছানায় বসে ভীষণ কাঁদছিলেন! “

“তারপর?”

“আমি আর অরুণ ওঁকে একা রেখে, লিভিংরুমে বসে ফোন-টোনগুলো করতে থাকি। কিছুক্ষণ বাদে গোভিন্দ আঙ্কল লিভিংরুমে আমাদের কাছে এসে বসেন। ইতিমধ্যেই উনি অনেকটা সামলে উঠেছেন। আমাদের বলেন যে, উনি সান ফ্রানসিস্কোতে কতগুলো লং ডিস্টেন্স কল করতে চান। আমাদের কোনো অসুবিধা আছে নাকি। এটা আবার কোনো কথা হল! আমি বলি, নিশ্চয়। তারপর আমরা দু’জনে ওঁকে লিভিং রুমে রেখে, আমাদের অন্য ফোনটা ব্যবহার করার জন্য ওপরে যাই।”

“কখন আপনার খেয়াল হল স্যার যে, মিস্টার জসনানি অদৃশ্য হয়েছেন?”

“যখন খবর পেয়ে লোকজন আসতে শুরু করে তখন। অরুণই প্রথম নোটিস করে।”

“দ্যাট্‌স কারেক্ট,” অরুণ সায় দিল। আমার খেয়াল হয় এই কারণে যে, শ্যাম আঙ্কলের পায়ের কাছে একটা স্যামসোনাইট ব্রিফকেস ছিল। ইন ফ্যাক্ট ম্যানহাটানে যাবার সময় ওই ব্রিফকেসটা উনি আমার কাছ থেকেই চেয়ে নিয়েছিলেন। ব্রিফকেসটা খুলে শ্যাম আঙ্কল যখন গোভিন্দ আঙ্কলকে প্যাকেজটা দিচ্ছিলেন, তখন আমার চোখে পড়ে ব্রিফকেসটা ক্যাশ টাকায় ভর্তি। তাই লোকজন আসার আগে আমি ভাবলাম ব্রিফকেসটা সরিয়ে একটা সেফ জায়গায় রেখে দেব। কিন্তু তাকিয়ে দেখলাম ব্রিফকেসটা পায়ের কাছে নেই। আমি ভাবলাম গোভিন্দ আঙ্কল বোধহয় বুদ্ধি করে ওটা সরিয়ে রেখেছেন। কিন্তু গোভিন্দ আঙ্কলকেও কোথাও খুঁজে পেলাম না। তখনও আমি বুঝিনি যে হি লেফট ফর গুড। কারণ ওঁর সুটকেস, জামাকাপড় সব কিছুই ওঁর ঘরে যেমন ছিল তেমনই রয়েছে!”

“কত টাকা ওই ব্রিফকেসে ছিল বলে তোমার মনে হয় অরুণ?” বেন্টুমাসির প্রশ্ন।

“ঠিক বলতে পারব না মাসিমা। আমি শুধু কয়েক পলকের জন্যই দেখেছিলাম। তবে মনে হয়েছিল যে একশো ডলারের নোটে ভর্তি ওটা। ইন ফ্যাক্ট আমি শ্যাম আঙ্কলকে বলেছিলাম যে, হি শুড নেভার ক্যারি সো মাচ ক্যাশ ইন ম্যানহাটান।”

“একেই বলে ভবিতব্য!” বেন্টুমাসি মন্তব্য করলেন, “ম্যানহাটানে সাত গুণ্ডা কিছু করতে পারল না। মরলি তুই ঘরের শত্রু বিভীষণের হাতে!”

অশোক কাঁচুমাচু মুখে বলল, “ওঁর ডেথটা কিন্তু নর্মাল হার্ট অ্যাটাকে মাসিমা।”

“সেটা বাপু তোমাদের ভালোমানুষের বিচার! একেনের ওপর ভার ছেড়ে দাও। দেখবে কেমন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোয়!”

“ভালো কথা স্যার, একেনবাবুর অরুণকে প্রশ্ন করলেন, “উনি আপনার ব্রিফকেসটা নিতে গেলেন কেন?”

“সেদিন সকালেই ওঁর ব্রিফকেসের হিঞ্জটা ভেঙে গিয়েছিল। গোভিন্দ আঙ্কল দোকানে গিয়েছিলেন একটা নতুন ব্রিফকেস কিনতে। কিন্তু ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে, আমারটা নিয়েই উনি চলে যান।”

“আরেকটা কথা স্যার, মিস্টার জসনানির আত্মীয়স্বজন এদেশে কেউ আছেন কি?”

“নট দ্যাট আই নো অফ। তবে লং আইল্যান্ডে ওঁর এক দূর সম্পর্কের ভাই থাকেন। তাঁর কাছে খোঁজ করা হয়েছিল। তিনি কিছুই জানেন না।”

“ওঁর ফোন নম্বর-টম্বরগুলো একেনকে দিয়ে দিও।” বেন্টুমাসি অশোককে বললেন।

“এক্ষুণি তো আমার কাছে নেই মাসিমা। আপনার ফোন নম্বটা দিন মিস্টার সেন, আমি ফোন করে পরে আপনাকে জানিয়ে দেব।”

“ফোনের কোনো দরকার নেই স্যার। বরং আমিই একসময় আসব। সেই সময় ওঁর সুটকেস টুটকেসগুলোও একটু ঘেঁটে দেখব, যদি কোনো ক্ল পাওয়া যায়।”

“শিওর, এনি টাইম।” অশোক বললেন।

“এনি টাইমের আবার দরকার কী বাপু, আজই যাও না!” বেন্টুমাসি একেনবাবুকে বললেন।

“আজ একটু অসুবিধা আছে মাসিমা। আমরা এখান থেকে কানেক্টিকাটে এক বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি। কাল সকালে আসুন না,” একেনবাবুকে বললেন অরুণ।

“ঠিক আছে স্যার, কালই আসব।” কথাটা বলে একেনবাবু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী স্যার, কোনো অসুবিধা আছে?”

“নট অ্যাট অল।” আমি উত্তর দিলাম।

ইতিমধ্যে শ্যামলদা ঘরে ঢুকেছেন। অরুণ শ্যামলদাকে দেখে বললেন, “শ্যামলভাই, কিংস সুপারমার্কেটে গোয়িং আউট অফ বিজনেস সেল চলছে। ফ্যান্টাস্টিক বার্গেন। খুব ভাল শাকসবজি পাওয়া যায় ওখানে। অজস্র ভ্যারাইটি। কিন্তু আজকেই লাস্ট দিন।”

“তাই নাকি, তাহলে তো যেতে হয়!”

আমি শ্যামলদার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে। শ্যামলদা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী রে, যাবি আমার সঙ্গে?”

আমি তো এক পায়ে খাড়া, এনি প্লেস অ্যাওয়ে ফ্রম বেন্টুমাসি! প্রমথ আর একেনবাবুও দেখলাম গুটিগুটি সঙ্গ নিয়েছেন!

কিংস সুপারমার্কেট স্কুল বিল্ডিং থেকে মাত্র এক ব্লক দূরে। চকচকে ঝকঝকে বিশাল মার্কেট। এরকম একটা বিজনেস কী করে ফেল করে কে জানে! অবশ্য এদেশে যা কম্পিটিশান! দোকানটা লোকে গিজগিজ করছে, কী ভিড়, কী ভীড়! হবে নাই বা কেন। থার্টি টু ফর্টি পার্সেন্ট অফ নর্মাল প্রাইসে সব কিছু বিক্রি হচ্ছে! শ্যামলদা তো প্রায় আড়াইশো ডলারের ফ্রোজেন ফুডই কিনলেন। তারপর আমাকে বললেন, “দেখলি এক চালেই ফ্রিজারের দাম অনেকটাই তুলে নিলাম। এগুলোর নর্মাল প্রাইস অন্তত চারশো ডলার, ঠিক কিনা?”

নাঃ, সাহানি ব্রাদার্স খুব একটা ভুল বলেনি! আমার অ্যাপার্টমেন্টটা আরেকটু বড় হলে, আমিও একটা বড় দেখে ফ্রিজার কিনতাম!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *