Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যাজিক মুনশি (২০১০) || Humayun Ahmed » Page 4

ম্যাজিক মুনশি (২০১০) || Humayun Ahmed

ম্যাজিকের জন্যে কেবিনঘর খুব উপযুক্ত

ম্যাজিকের জন্যে কেবিনঘর খুব উপযুক্ত। আলো কম। দুটি মোমবাতি, একটি হারিকেন। বাতাস আটকানোর জন্যে কেবিনের জানালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দর্শক আমি একা। সর্পরাজ ভেতরে আসতে চাচ্ছিল। আমি দেই নি। ম্যাজিক মুনশির গায়ের অদ্ভুত চা-পাতা গন্ধওয়ালা আতরের স্নিগ্ধ গন্ধ নষ্ট হোক তা চাই নি। সর্পরাজ ঢুকবে জর্দার কড়া গন্ধ নিয়ে। তার এই স্পেশাল জর্দা নাকি ইন্ডিয়া থেকে আসে। জর্দার নাম গোপাল জর্দা।

আমি প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে বললাম, ভাই দেখন একটা ম্যাজিক।

স্যার, আপনার সিগারেটটা টেবিলে শুইয়ে রাখুন।

আমি তাই করলাম। সিগারেট গড়াতে গড়াতে আমার দিকে আসতে শুরু করল। যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি সিগারেট ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসছে। ম্যাজিক মুনশি শীতল চোখে তাকিয়ে আছে সিগারেটের দিকে।

চমকে ওঠার মতো কোনো ম্যাজিক না। এর কৌশল অত্যন্ত সহজ। সিগারেটে মুখ দিয়ে ফুঁ দিতে হয়। ফুটা এমনভাবে দিতে হয় যেন দর্শক দেখতে না পারে। নিচের ঠোঁট খানিকটা ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে ফুঁ দেওয়া নিয়ম। এইসময় মাথা খানিকটা ঝুঁকে থাকবে যেন দর্শক স্পষ্টভাবে ঠোঁট দেখতে পারেন। একই পদ্ধতিতে বই হাতে নিয়ে ফুঁ দিলে আপনাআপনি বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকে। যারা ম্যাজিকের ভেতরের কৌশল জানেন না তারা ঘটনা দেখে চমৎকৃত হন। সমস্যা হচ্ছে আমি কৌশলটা জানি।

কৌশল জানার পরেও ম্যাজিকের শেষ পর্যায়ে এসে চমকাতে হলো। সিগারেটটা আমার খুব কাছাকাছি এসে শোয়া অবস্থা থেকে দাড়িয়ে পড়ল। ফিল্টারটা নিচে, সাদা অংশ উপরে।

ফুঁ দেওয়ার কোনো বিশেষ টেকনিকে এটা কি করা সম্ভব? আমি জানি না। সিগারেটের মাথায় অদৃশ্য সুতা লাগিয়ে এটা করা যাবে। অদৃশ্য সুতা বিদেশের ম্যাজিক স্টোরে পাওয়া যাবে। ম্যাজিক মুনশি এই অদৃশ্য সুতা কোথায় পাবে! বিদেশ থেকে তার কোনো আত্মীয়স্বজন কি পাঠিয়েছে?

ধরে নিলাম পাঠিয়েছে। সুতার একটা মাথা সিগারেটের মাথায় লাগাতে হবে। ম্যাজিক মুনশি সেই সুযোগ তো পায় নি। সিগারেট সবসময় আমার হাতে ছিল।

আমি বললাম, আপনার ম্যাজিক দেখে ধাক্কার মতো খেয়েছি। এত সুন্দর ম্যাজিক কোথায় শিখেছেন?

মুনশি বলল, স্যার! কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না। আপনার কাছে। তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আপনি কি এই সিগারেটট শূন্যে ভাসিয়ে রাখতে পারবেন?

না। তবে আমি নিজে কিছুক্ষণ শূন্যে ভেসে থাকতে পারি।

কতক্ষণ?

এক মিনিট।

মাটি থেকে কতদূর উপরে ভাসতে পারেন?

ছয় সাত ইঞ্চি, এর বেশি না।

শূন্যে ভাসার ম্যাজিককে বলে Levitation। এক দেড় মিনিট অনেক ম্যাজিশিয়ানই শূন্যে ভাসতে প ন। কৌশলটা আমার জানা আছে, তবে নিজে কখনো করি নি। শূন্যে ভাসার একটা Optical illuston করা হয়। চক্ষুবিভ্রমের জন্যে দরকার একজোড়া সাধারণ কাপড়ের জুতা।

ডেভিড ব্রেইন নামের আর রিকান স্ট্রিট ম্যাজিশিয়ান এই খেলা পথেঘাটে দেখান।

আমি বললাম, শূন্যে ভাসার ম্যাজিকটা দেখানোর সময় কি আপনার পায়ে জুতা থাকে?

ম্যাজিক মুনশি বললেন, জি-না স্যার।

পায়ে খড়ম থাকে?

না। তবে খড়ম থাকলেও কোনো সমস্যা নাই।

তাহলে তো পায়ে জুতা থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।

জি-না স্যার।

আমি পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করে বললাম, আমি আপনাকে একটা ম্যাজিক দেখাব। দেখি আপনি কৌশলটা ধরতে পারেন কি না।

ম্যাজিক মুনশি শিশুসুলভ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল। আমি মুদ্রাটা ডান হাত থেকে বাঁ হাতে নিলাম। বাঁ হাতের মুঠি বন্ধ করলাম। সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে মুঠিবদ্ধ হাতের কাছে নিয়ে বললাম, খ সিগারেট খা। পাঁচ টাকার কয়েন খা।

হাতের মুঠি খুললাম। কয়েন নেই। সিগারেটে কয়েকবার ঝাকি দিতেই কয়েন বের হলো! যেন কয়েনটা সিগারেটের ভেতর ছিল। কঁকি দেওয়ায় বের হয়েছে।

ম্যাজিক মুনশি মুগ্ধ গলায় বলল, অদ্ভুত! সোবাহানাল্লাহ!

আমি চিন্তায় পড়লাম। এই খেলাকে অদ্ভুত বলার কিছু নেই। পামিং-এর অতি সাধারণ কৌশল। পামিং ম্যাজিকের ভাষা। এর অর্থ হাতের তালুতে কোনো বস্তু লুকিয়ে রাখা। সব ম্যাজিশিয়ানকেই অল্পবিস্তর পামিং জানতে হয়। এই পামিং শিখতে বৎসরের পর বৎসর লাগে। তবে বর্তমানের আধুনিক ম্যাজিকে পামিং লাগে না। নতুন প্রযুক্তি জাদুকরকে পামিং শেখার দীর্ঘ ক্লান্তিকর শিক্ষানবিশীর কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে।

আমি ম্যাজিক মুনশির চোখমুখ দেখে পরিষ্কার বুঝতে পারছি তিনি পামিং বিষয়টা জানেন না। আমি বললাম, আপনি কি সিগারেটের পয়সা গিলে ফেলার কৌশলটা শিখতে চান? আপনি শিখতে চাইলে আমি শিখাতে পারি।

জনাব আপনার মেহেরবানি।

এই দেখুন মুদ্রাটা আমি ডান হাতের তালুতে নিলাম। ডান হাত থেকে বাম হাতের তালুতে দেখেছেন?

জি।

আমি কিন্তু বাম হাতের তালুতে মুদ্রাটা নেই নি। ডান হাতের তালুতে লুকিয়ে রেখেছিলাম। একে বলে পামিং। বাংলায় বলে হাতসাফাই। হাতসাফাই শব্দটি শুনেছেন না?

শুনেছি।

আপনি হাতসাফাই জানেন না?

জি-না। স্যার আরেকটা ম্যাজিক দেখান।

আমি একটা কাগজ নিয়ে তাকে না দেখিয়ে লিখলাম—গোলাপ। কাগজটা বলের মতো বানিয়ে ম্যাজিক মুনশির হাতে দিয়ে বললাম, একটা ফুলের নাম বলুন।

তিনি বললেন, গোলাপ।

আমি কাগজের বল খুলে গোলাপ লেখাটি তাকে দেখিয়ে বললাম, আপনি যে গোলাপ বলবেন আমি আগেই সেটা জানতাম।

ম্যাজিক মুনশি বলল, স্যার অবাক মানলাম।

আমি বললাম, অবাক মানার কিছু নেই। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে কোনো একটা ফুলের নাম বলতে বলা হলে সে বলবে গোলাপ। কাজেই আমি কাগজে গোলাপ লিখে আপনার হাতে দিয়েছি। আমি ধরেই নিয়েছি আপনি শতকরা ৮০ ভাগের মধ্যে পড়বেন।

যদি গোলাপ না বলে অন্য কোনো ফুলের নাম বলতাম?

তাহলে ম্যাজিকটা করতে পারতাম না। আমি যে গোলাপ লিখে তার হাতে দিয়েছি তা জানতাম না। কাগজের গোল্লাটা দিয়ে অন্য কিছু করার চেষ্টা করতাম। আচ্ছা মুনশি সাহেব, আপনি ম্যাজিক দেখান কেন?

পুলাপানরা আনন্দ পায় এইজনো দেখাই। বড়দের দেখাই না।

বড়রা আনন্দ পায় না?

জি-না। আনন্দ পাওয়ার জন্যে অবাক হতে হয়। বড়রা অবাক হয় না। তারা বলে, এইগুলান কিছু না, যন্ত্র।

আমি বললাম, মন্ত্র কি আছে?

ম্যাজিক মুনশি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, স্যার আপনার এই প্রশ্নের জবাব দিব না। বেয়াদবির জন্য ক্ষমা চাই। স্যার, যদি আপনি আমাকে আধঘণ্টা সময় দেন তাহলে এশার নামাজটা পড়ায়ে আবার আসব।

নামাজ পড়িয়ে আসুন। আমরা রাতের খাবার একসঙ্গে খাব। আপনার অনেক মেহেরবানি।

ম্যাজিক মুনশি চলে যাওয়ার পর লক্ষ করলাম আমার সিগারেটের প্যাকেটের উপর একটা গোলাপ ফুল। এই ফুল আগে ছিল না। আমি গোলাপ ফুলের নাম নিয়েছি বলেই কি সিগারেটের প্যাকেটের উপর গোলাপ? বিস্ময়ে অভিভূত হওয়া ছাড়া আমার পথ রইল না।।

এই লোকটির ম্যাজিক কোন পর্যায়ের? প্রাচীন ম্যাজিক দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছিল। একটিকে বলা হতো আসল ম্যাজিক। অন্যটিকে বলা হতো ভোজবাজি বা নকল ম্যাজিক।

ভোজবাজি শব্দটা এসেছে মালব দেশের রাজা ভোজরাজার কাছ থেকে। তিনি হাতসাফাই-এর খেলায় একজন গ্র্যান্ডমাস্টার ছিলেন। ভোজরাজ মাসে একবার প্রজাদের আনন্দ দেওয়ার জন্যে জাদুর খেলা দেখাতেন। রাজার একমাত্র মেয়ে ভানুমতি খেলা দেখানোয় বাবাকে সাহায্য করতেন। এই কারণেই জাদুবিদ্যার আরেক নাম ভানুমতির খেলা। আমাদের দেশের বেদিনীরা ভানুমতির খেলা নাম দিয়েই ম্যাজিক দেখায়।

ভারতের রোপ ট্রিককে আসল ম্যাজিকের পর্যায়ে ফেলা হয়। এই ম্যাজিকে জাদুকর তার সন্তান এবং এক গাছ দড়ি হাতে নিয়ে উপস্থিত হন।

ম্যাজিক শুরু হওয়ার পর দড়ি আপনাআপনি শূন্যে উঠে স্থির হয়ে যায়। তখন জাদুকরপুত্র দড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। অনেকদূর উঠে সে অদৃশ্য হয়ে যায়। তারপর ম্যাজিশিয়ান ধারালো তলোয়ার কামড়ে ধরে দড়ি বেয়ে উঠে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর জাদুকরপুত্রের আর্তনাদ শোনা যায়। তার শরীরের কাটা অংশ একে একে শূন্য থেকে নিচে পড়তে থাকে। দর্শকরা আতংকে অস্থির হয়ে পড়েন। তখন জাদুকর দড়ি বেয়ে নেমে আসেন। পুত্রের শরীরের খণ্ড খণ্ড অংশগুলি ঝুড়িতে ভরে, ঝুড়ি চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। জাদুকরপুত্র চাদর সরিয়ে বের হয়ে আসে। এই দড়ির ম্যাজিকের অনেক ভেরিয়েশন আছে, তবে মূলটা এক।।

মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এই খেলা দেখেছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনামায় তার চমৎকার বর্ণনা লিখে গেছেন। সম্রাট বানিয়ে বানিয়ে জাদুকরের খেলা নিয়ে লিখবেন তা মনে হয় না।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজসভায় (সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ) ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত Sir Tomas Roe নিজেও ছিলেন। তিনিও তার আত্মজীবনীতে বোপ ট্রিকের কথা লিখে গেছেন। তাঁর লেখায় একটি মজার তথ্য আছে। যে সাতজন জাদুকর সেদিন রাজসভায় অদ্ভুত সব জাদু দেখিয়েছিলেন তারা সবাই ছিলেন বাঙালি। Sir Jomas Roe-র ভাষায় Seven Bengali jugglers।

সম্প্রতি আমার হাতে একটি বই এসেছে (জাদুবিদ্যার মাধ্যমে আপনাআপনি আসে নি, আমি নিউইয়র্ক থেকে কিনেছি), নাম The Rise of the Indian Rope Trick. লেখকের নাম Peter Lamort।

লেখক ২৫০ পৃষ্ঠার বই লিখে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন রোপ ট্রিক নামের কোনো কৌশল ভারতবর্ষে ছিল না। পুরো বিষয়টি কল্পনাবিলাসী ব্রিটিশদের বানানো।

আমি বইটির যুক্তির সঙ্গে একমত হব কি না বুঝতে পারছি না। অকারণে অদ্ভুত এক জাদু নিয়ে মিথ তৈরি হয় না।

জুয়েল আইচের সঙ্গে এই বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। তিনিও Peter Lamon এর সঙ্গে একমত। তারও ধারণা এটা মিথ। সাধারণ মানুষ মিথ তৈরি করতে ভালোবাসে বলেই মিথ তৈরি হয়। জাদুকর পি সি সরকারকে নিয়েও

এরকম একটা মিথ আছে। মিথটা এরকম—

হলভর্তি দর্শক। সাতটার সময় শো শুরু হওয়ার কথা। পি সি সরকার আসছেন না। তিনি এক ঘণ্টা পর রাত আটটায় উপস্থিত হলেন।

দর্শকরা চেঁচাচ্ছে, এক ঘণ্টা লেট। এক ঘণ্টা লেট।

পি সি সরকার বললেন, লেট হব কেন? আপনারা ঘড়ি দেখুন। সবাই দেখল, তাদের প্রত্যেকের ঘড়িতে সাতটা বাজে।

বলা হয়ে থাকে ঘড়ির এই মিথ ছড়ানোর পেছনে পি সি সরকারের নিজের ভূমিকা আছে। এই মিথ ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে তার উপর চড়াও হয়েছিল। গল্পটা বলা যেতে পারে।

পি সি সরকার রঙ্গমঞ্চে জাদু দেখাচ্ছেন। হলভর্তি মানুষ। হঠাৎ দর্শকদের একজন বলল, আমরা ঘড়ির ম্যাজিকটা দেখতে চাই।

পি সি সরকার ভান করলেন যেন শুনতে পান নি। তিনি তাঁর জাদু দেখিয়ে যাচ্ছেন। দর্শকদের গুঞ্জন শুরু হলো। এক পর্যায়ে সব দর্শকই বলল, আমরা ঘড়ির জাদু দেখব। অন্য জাদু না।।

পি সি সরকারকে জাদু প্রদর্শনী বন্ধ করতে হলো।

মিথ হিসেবে পরিচিত ইন্ডিয়ান রোপ ট্রিকে ফিরে যাই। লাসভেগাসের এক জাদু অনুষ্ঠানে আমি ইন্ডিয়ান রোপ ট্রিক দেখেছি। জাদুকরের নাম মনে নেই। চমৎকার llusion। স্টেজে জাদু দেখানো আর পথেঘাটে জাদু দেখানো সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। ইন্ডিয়ান রোপ ট্রিক পথেঘাটে দেখানো হতো।

আমার দাদাজান মৌলানা আজিমুদ্দিন আহমেদ দাবি করেন দড়ির জাদুর এই খেলা তিনি শম্ভুগঞ্জের হাটের দিন অনেকের সঙ্গে দেখেছেন। দাদাজান মাদ্রাসার শিক্ষক, কঠিন মৌলানা। মিথ্যা কথা তিনি বলবেন তা কখনো হবে না। তারপরও আমার ধারণা তিনি মিথ্যা বলেছেন। এই ধারণার পিছনে কারণ ব্যাখা করি।

দাদাজান গল্প করেছেন আমার সঙ্গে। আমার বয়স তখন পাট কিংবা ছয়। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বানিয়ে গল্প বলা যেতে পারে। তিনি আমার সঙ্গে একদিন মৎস্যকন্যা দেখার গল্পও করলেন। জেলেদের জালে এক মৎস্যকন্যা ধরা পড়ল। তার কোনো হাত নেই। গাত্রবর্ণ নীল। সে শুশুকের মতো ভোঁস ভোস শব্দ করছিল। মৎস্যকন্যা বলে কিছু নেই। কাজেই মৎস্যকন্যার গল্পটি বানানো। যিনি একটি বানানো গল্প করতে পারেন তিনি আরও বানানো গল্প করতে পারেন।

বাকি থাকল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী। এই সম্রাট ডুবে থাকতেন মদ, আফিং এবং চরসের নেশায়। নেশাগ্রস্ত একজন মানুষ কী দেখতে কী দেখেছেন কে জানে!

প্রাচীন ভারত ছিল জাদুবিদ্যারই দেশ। বেদেরা জাদু দেখাত, সাধুসন্ন্যাসীরা জাদু দেখাতেন। জাদুর দেশ কামরূপ কামাক্ষা নিয়ে গল্পগাঁথা এখনো চালু।

যেসব বিদেশী পর্যটক ভারতবর্ষে এসেছিলেন, মার্কোপোলো (Marco Polo} তাঁদের একজন। তিনি কাশ্মিরের এক জাদুকরের কথা লিখেছেন, যিনি আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারতেন। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনকে অন্ধকার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন, যা মার্কোপোলো নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন। (মার্কোপোলো তাঁর ভ্রমণকাহিনীতে অনেক আজগুবি কথা লিখে গেছেন। তাঁর বক্তব্য বিশ্বাস করা কঠিন। তাঁর আজগুবি কাহিনীর উদাহরণ : আন্দামানে তিনি একদল মানুষ দেখেছেন, যাদের মুখ কুকুরের মতো। আচার-আচরণও কুকুরের মতো। তার প্রকাশ্যে যৌনক্রীড়া করে।

আবহাওয়া পরিবর্তনকারী জাদুকর এই বাংলাদেশে কিন্তু এখনো আছে। শিলাবৃষ্টির হাত থেকে ফসল রক্ষায় তাদের ব্যবহার করা হয়। তারা ফকির নামে পরিচিত। এমন একজনের সঙ্গে আমার দেখাও হয়েছে। তিনি কিছু মন্ত্র বলেছেন, যা আমি ডায়েরিতে লিখে রেখেছি। আমার স্মৃতিশক্তি মোটামুটি ভালো হলেও বৃতিশক্তি একেবারেই নেই। ডায়েরি হারিয়ে ফেলেছি। মন্ত্রের প্রথম দুটি লাইন মনে আছে—আলী কালী লালী ত্রিভুবন খালি। মন্ত্রের আলী কি হযরত আলী (রঃ)? কালী কি হিন্দু দেবী? আমি জানি না। লালী কি খালির সঙ্গে মিল দেওয়ার জন্য?

মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনীতে ভারতীয় জাদুকরদের অদ্ভুত সব জাদুর কথা আছে। শূন্যে ভেসে থাকা তার একটি। ইবনে বতুতা একবার জাদু দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছিলেন এই তথ্যও উল্লেখ আছে।

আমারও একবার ম্যাজিক দেখে জ্ঞান হারাবার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছিল। শৈশবের গল্প। থাকি সিলেটের মীরাবাজারে। সুযোগ পেলেই একা একা শহরে হেঁটে বেড়াই। মূল আকর্ষণ সিনেমা হলের পোস্টার। একদিন দিলশাদ সিনেমা হলের সামনে গিয়ে দেখি ম্যাজিক দেখানো হচ্ছে। অদ্ভুত ম্যাজিক। কাঠের এক তার সঙ্গে গা লাগিয়ে দুহাত যীশুখ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ ভঙ্গিতে তুলে এক মায়াকাড়া চেহারার বালিকা দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরীটির দশ-বার ফুট দূরত্বে চোখ বাঁধা অবস্থায় ম্যাজিশিয়ান দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর হাতভর্তি চুরি।

তিনি বালিকাটির দিকে প্রচণ্ড গতিতে ছুরি ছুড়ে মারছেন। ছুরি বালিকার গা ঘেঁষে বিধে যাচ্ছে, বালিকাটির গায়ে লাগছেন না। তাকে ঘিরে ছুরির বলয় তৈরি হলো। সে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর ম্যাজিক।

সেদিনই আমি প্রথম ম্যাজিকের প্রেমে পড়ি। ছুরি ছুড়ে মারার এই ম্যাজিকের কৌশল খুব সাধারণ। সব ছুরি কাঠের তক্তার পেছনে স্প্রিং দিয়ে লাগানো। ছুরিগুলি পেছন থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। দেখে মনে হয় ম্যাজিশিয়ানের হাতের ছুরি কাঠে বিধছে। আসলে তা-না। দর্শকদের দৃষ্টি মেয়েটির দিকে থাকে বলেই ম্যাজিশিয়ান তার হাতের ছুরি কীভাবে সরাচ্ছেন তা কেউ দেখেন না।

বাবার কাছে গণপতি নামের এক বাঙালি জাদুকরের অদ্ভুত ম্যাজিকের কথা শুনেছি। বাবা তার জাদু দেখেছেন কমলা সার্কাসে। বাবার ভাষ্যমতে, গণপতির জাদু যে না দেখেছে তার জীবন বৃথা। পিসি সরকারের অবস্থান গণপতি বাবুর হাঁটুর নিচে।

জাদুকর গণপতি সম্পর্কে আমি তেমন কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারি নি। তিনি জমিদারপুত্র ছিলেন এই তথ্য পেয়েছি। শখের বসে জাদু শিখেছেন। অসম্ভব খেয়ালি মানুষ ছিলেন। কারও সঙ্গেই তার বনত না।

স্যারের অবস্থা কী? একা বসা। মুনশি গেল কই?

গোপাল জর্দার প্রবল গন্ধ নিয়ে আরজু ঢুকল।

আমি বললাম, মুনশি এশার নামাজ পড়াতে গিয়েছেন। নামাজ শেষ করে আসবেন। তিনি আমাকে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে গেছেন। গোলাপ ফুলে কোনো গন্ধ পাচ্ছি না। তুমি গন্ধ পাও কি না দেখো তো।

সর্পরাজ নানান ভঙ্গিমায় গোলাপ শুকতে লাগল। জর্দার কড়া গন্ধ ছাপিয়ে গোলাপের হালকা সৌরভ তার নাকে যাওয়ার কথা না। তবু সে চেষ্টার ত্রুটি করছে না।

ইউরোপ-আমেরিকার চাষের গোলাপে কোনো গন্ধ থাকে না। দেখতে অপূর্ব সুন্দর কিন্তু গন্ধহীন।

সর্পরাজের হাতের গোলাপটা তা-ই। গন্ধহীন। গ্রামের গোলাপ গাছের গোলাপে গন্ধ থাকতেই হবে। গন্ধ নেই কেন?

গোলাপ নিয়ে আমি একবার এক জাদু দেখিয়ে জনৈক দর্শকের মাথা নষ্ট করে দেওয়ার জোগাড় করেছিলাম। দর্শক ভারতীয়। কোনো এক লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত। নিজেও কবিতা লিখেন। বাংলাদেশে এসেছেন জাতীয় কবিতা উৎসবে কবিতা পাঠ করার জন্যে। আমার কিছু উপন্যাস তিনি দেশ পত্রিকার পূজা সংখ্যায় পড়েছেন। আমার কাছে আসার উদ্দেশ্য সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করা। আমার অতি অপছন্দের বিষয় সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। ওল্ড ফুলস ক্লাব নামে আমাদের যে আডড্রার ক্লাব আছে সেখানে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

দুজন মুখোমুখি বসেছি। আমি যথেষ্টই বিরক্ত। ভদ্রলোকের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে না তিনি সহজে উঠবেন। কাঁধের ঝুলি থেকে চটি এক কবিতার বই বের করে বললেন, দাদা, আমার নিজের লেখা কাব্যগ্রন্থ। নাম দিয়েছি শিশিরভেজী বিষের শিশি। নামটা কেমন হয়েছে?

আমি বললাম, খুব সুন্দর হয়েছে। মনে মনে বললাম, ছাগল কোথাকার!

কবি বললেন, নামের শুরু হয়েছে শিশি দিয়ে, শেষও হয়েছে শিশিতে।

আমি বললাম, অদ্ভুত। মনে মনে বললাম, বাচ্চাদের পিসাবকে শিশি বলে। তুই শুরু করেছিস পিসাব দিয়ে শেষও করেছিস পিসাব দিয়ে।

কবি বললেন, বিষের শিশিতে শিশির মাখিয়ে আমি এক ধরনের কোমলতা আরোপ করেছি।

আমি বললাম, খুব ভালো করেছেন। কঠিন পৃথিবীতে কোমলতার প্রয়োজন আছে।

কবি বললেন, দশ কপি বই নিয়ে এসেছিলাম। কাড়াকাড়ি করে সবাই নিয়ে গেছে। এটা লাস্ট কপি বলে আপনাকে দিতে পারছি না। তবে দাদা, আমি সবগুলি কবিতা আপনাকে পড়ে শোনাচ্ছি।

আমি মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কবি এবং কবিতার হাত থেকে বাঁচার ব্যবস্থা আমি করেই রেখেছিলাম। সেই পথে অগ্রসর হলাম। আমি বললাম, আপনার সব কবিতা আমি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে শুনব। প্রথমে যে-কোনো একটা ফুলের নাম বলুন।

কবি বললেন, গোলাপ।

আপনার কবিতার বইটির দিকে তাকান তো।

ভদ্রলোক চমকে তাকালেন এবং দেখলেন তার কবিতার বইয়ের উপর একটা টকটকে লাল গোলাপ।

হতভম্ব কবি বললেন, দাদা! কীভাবে করলেন?

আমি বললাম, আবার তাকান। ভদ্রলোক তাকালেন এবং দেখলেন লাল গোলাপ না, কালো গোলাপ।

দাদা! এটা কীভাবে করলেন? হিপনোটিজম নাকি মেসমেরিজম?

আমি বললাম, আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে আপনি বরং কবিতার বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকুন।

ভদ্রলোক তাকালেন এবং দেখলেন বইয়ে কোনো গোলাপ নেই। তিনি বিড়বিড় করে বললেন, হে ভগবান।

আমি বললাম, আমি পাঁচ মিনিটের বেশি কারও সঙ্গেই কথা বলি না। পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে। আপনি চলে যান।

গোলাপ ফুল কোথায় গেল?

আমি বললাম, লাল এবং কালো গোলাপ দুটি গোলাপই আপনার কাপড়ের ব্যাগে থাকার কথা।

ভদ্রলোক ব্যাগ খুলে দুটা গোলাপ পেয়ে গেলেন। আমার দিকে কিছুক্ষণ ভীত চোখে তাকিয়ে অতি দ্রুত বিদায় নিলেন। তিনি শেষ কপি শিশিরভেজা বিষের শিশি সঙ্গে নিতে ভুলে গেলেন।

অতি জটিল এই জাদু কীভাবে দেখানো হলো তা এখন ব্যাখ্যা করি। প্রিয় পাঠক! দীর্ঘ দিনের প্র্যাকটিস ছাড়া এই জাদু দেখাতে যাবেন না। ধরা খাবেন এবং অপমানিত হবেন। সেধে বাড়িতে অপমান নিয়ে যাওয়া কোনো কাজের কথা না।

জাদুবিদ্যার অতি সাধারণ একটি কৌশল এই জাদুতে ব্যবহার করা হয়েছে। কৌশলটার নাম মিসডিরেকশন (Misdirection}, এর কোনো বাংলা নেই। দৃষ্টিভ্রান্তি বলা যেতে পারে।

একজন জাদুকর যখন জাদু দেখান দর্শক তার চোখ এবং হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন। জাদুকর যদি ছাদের দিকে তাকান, দর্শকরা ছাদের দিকে তাকাবেন। এর অন্যথা হবে না। দর্শকরা ছাদের দিকে তাকানো মাত্র misdirection তৈরি হলো। এই সময় জাদুকর তার হাত দিয়ে যা করেন দর্শক দেখবে না। জাদুকর দর্শকদের misdirection পথে চালনা করলেন।

আমি কবি সাহেবকে ম্যাজিক দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েই বসেছিলাম। আমার পেছনে ছিল একটা লাল গোলাপ এবং একটা কালো গোলাপ। কবির সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি বা দিকের দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালাম। কবিও তাকালেন। এই ফাঁকে আমি তার কবিতার বইয়ের উপর লাল গোলাপ রেখে দিলাম। ম্যাজিকের বাকি অংশ এখন নিশ্চয়ই আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। সবই মিসডিরেকশনের খেলা।

সাধারণত দেখা যায় অতি রহস্যময় ম্যাজিকের কৌশল খুবই সাধারণ। অকৃবর লেখা জাদুকাহিনী থেকে উদাহরণ দিচ্ছি।

জনৈক খ্রিষ্টান পাদ্রি সন্ধ্যাবেলা ইভিনিং ওয়াকে বের হতেন। বয়সের কারণে তাঁর সঙ্গে থাকত লাঠি (walking stick}, তিনি ছিলেন অঞ্চলের সবার অতিপ্রিয় শ্রদ্ধাভাজন মানুষ। তিনি মাঝে মধ্যেই কোনো এক বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বলতেন, পাত্রে তেল গরম করো। তেল যখন টগবগ করে ফুটত, তখন তিনি তার হাতের লাঠিটা তেলে ছোঁয়াতেন। সঙ্গে সঙ্গে পাত্রে একটা ডিমপোচ কিংবা অমলেট তৈরি হতো। মানুষের বিস্ময়ের সীমা থাকত না।

এই ম্যাজিকের মূল কৌশল লাঠির মাথায়। লাঠির মাথা ফাঁপা। সেখানে অমলেট বা ডিমপোচ করার জন্যে খোসা ছড়ানো ডিম ভরা থাকত। লাঠির মাথা থাকত মোম দিয়ে আটকানো।

গরম তেলে লাঠির মাথা রাখা মাত্র মোম গলে ডিম বের হয়ে আসত। তৈরি হতো অলৌকিক ডিমের অমলেট বা ডিমপোচ।

ওল্ড ফুলস ক্লাবেরু এক ম্যাজিক আসরের কথা বলি। ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন গোলাম মুরশিদ সাহেব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন কালো বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক শফি আহমেদ (গাত্রবর্ণের কারণে তাকে আমরা কালো বুদ্ধিজীবী বলি। তাঁকে ছোট করার জন্য না। শ্রীকৃষ্ণকেও কালো কৃষ্ণ বলা হয়। প্রকাশক আলমগীর রহমান আছেন। সুইডেনের লম্বু মাসুদ আছে। আমি আছি। কালো বুদ্ধিজীবী এবং গোলাম মুরশিদ সাহেব কঠিন সাহিত্য আলাপ শুরু করলেন। সাহিত্যের হাত থেকে বাঁচার জন্য বললাম, আসুন আপনাদের একটা ম্যাজিক দেখাই। কাগজ কলম হাতে নিন।

গোলাম মুরশিদ কাগজ কলম হাতে নিলেন।

তিন ডিজিটের যে-কোনো একটা সংখ্যা লিখুন।

গোলাম মুরশিদ লিখলেন ৬৪১।

আমি বললাম, এটাকে উল্টে লিখুন (Reverse).

গোলাম মুরশিদ লিখলেন ১৪৬।

আমি বললাম, দুটোর বিয়োগফল বের করুন। বড়সংখ্যা থেকে ছোটটি বাদ দিন।

বাদ দিলেন। পাওয়া গেল ৪৯৫।

আমি বললাম, এই সংখ্যাটি আবার Reverse করুন। এবং এই দুটি সংখ্যা যোগ করুন।

৪৯৫+৫৯৪=১০৮৯

আমি বললাম, আপনার সঙ্গে যে বইটি আছে (Minority Report) তার ১০৮ পৃষ্ঠা বের করুন। কারণ আপনার যোগফলের প্রথম তিনটি ডিজিট হলো ১০৮। তিনি তা-ই করলেন। আমি বললাম, আপনার পরের সংখ্যাটি ৯। কাজেই ১০৮ পৃষ্ঠার নবম লাইনটি বের করুন। নবম লাইন শুরু হয়েছে Head শব্দটি দিয়ে। পরীক্ষা করুন।

উপস্থিত সবাই চমকৃত হলেন। চমৎকৃত হওয়ারই কথা। কৌশলটা এবার ব্যাখা করি। অংকের নিয়ম অনুযায়ী যে যোগ-বিয়োগ করা হলো তার শেষ উত্তর সবসময় হবে ১০৮৯। যে-কোনো তিন সংখ্যা নিয়ে করলেই একই উত্তর (তিনটি সংখ্যা আলাদা আলাদা হতে হবে)।

কোনো এক ফাঁকে বইটির ১০৮ পৃষ্ঠার ৯ম লাইন দেখে রাখা মোটেই কঠিন কর্ম না।

অতি বিস্ময়কর একটি জাদুর কথা এখন বলি।

প্রাচীন বইপত্রে পাওয়া যায়—মিশরের জাদুকর Dedi একটি বিশেষ খেলা দেখিয়ে ফেরাউনদের বোকা বানিয়েছিলেন। তিনি দুটা হাঁস নিয়ে খেলাটা দেখাতেন। একটি ছিল ধবধবে সাদা, অন্যটি কুচকুচে কালো। জাদুকর দেদি মন্ত্র পাঠ করা মাত্র সাদা হাঁসটির মাথা চলে যেত কালো হাসে। কালো হাঁসটির মাথা যেত সাদা হাঁসে। হাজার হাজার বৎসর এই জাদুর কৌশল অজ্ঞাত ছিল।

১৯৩৫ সনে আমেরিকান জাদুকর নিজের চেষ্টায় জাদুর কৌশল বের করে ফেলেন। নিউইয়র্কের রঙ্গমঞ্চে জাদুটা দেখানো হয়। জাদুকরের নাম ডেভিড। তিনি ছদ্মনাম Fu Manchu ব্যবহার করতেন। তাঁর সাজপোশাক ছিল চীনাদের মতো।

Fu Manchuকে বিশ্বের সেরা জাদুকরদের একজন ধরা হয়। হাঁসের মাথা বদলের জাদুর কৌশলটা আমার জানা আছে। কৌশল ব্যাখ্যা করলে বিস্ময়বোধ নষ্ট কন্যা হবে। তা ঠিক না।

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress