Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যাজিক মুনশি (২০১০) || Humayun Ahmed » Page 2

ম্যাজিক মুনশি (২০১০) || Humayun Ahmed

লঞ্চের নাম এম এল কুশিয়ারা

লঞ্চের নাম এম এল কুশিয়ারা। সাধারণত জলযানের নামের আগে এম এল কিংবা এম ভি থাকে। এম এল-এর অর্থ মোটর লঞ্চ। বড় লঞ্চগুলি হয় এম ভি, এর অর্থ মোটর ভেহিকেল।

ছোট্ট একতলা লঞ্চ। ছাদে সোফা পেতে আমার বসার ব্যবস্থা। নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সামরিক আইন জারি করেছে—ছাদে কেউ থাকবে না। শুধু স্যার।

আকাশ মেঘলা বলে মাথার উপর শামিয়ানার প্রয়োজন নেই। তারপরেও শামিয়ানা খাটানো আছে।

লঞ্চ ছাড়ার পর মন বেশ খারাপ হলো।

নিষাদ থাকলে আনন্দে ছোটাছুটি করতে পারত। শাওন বেড়াতে পছন্দ করে। হাওর আগে দেখে নি। সে মুগ্ধ হতো। পৃথিবীর সমস্ত স্বামীদের মতো আমিও স্ত্রীর মুগ্ধ চোখ দেখতে পছন্দ করি। এই মুগ্ধতার জন্যে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। প্রকৃতি ব্যবস্থা করে রেখেছে।

লঞ্চ ছেড়েছে ভোরবেলায়, আমরা দুপুরের মধ্যে পৌছে যাব। আমাকে লোকেশনে নিয়ে যেতে সিলেট থেকে এসেছে নাট্যকর্মী আরজু। আমি তাকে ডাকি সর্পারাজ। কারণ একসময় তার মাথায় বাণিজ্যিকভাবে সাপ চাষের আইডিয়া এসেছিল। প্রকল্প অনেকদূর এগুনোর পর পরিত্যক্ত হয়। একটা দুষ্ট গোখরো সাপ তাকে তাড়া করেছিল। নিজের পোষা সাপের এই ব্যবহারে আরজু মর্মাহত হয়েই প্রকল্প ত্যাগ করল। তবে তার টাইটেল ত্যাগ করল না। সে টেলিফোন করলে আমি হ্যালো বলার আগেই বলে, স্যার আমি সর্পরাজ আরজু।

সর্পরাজ আডডাবাজ রসিক মানুষ। পান খেতে খেতে কঠিন মুখে রসিকতা করে। শুনতে ভালো লাগে। তার মুখ থেকে লাল পানের রস গড়িয়ে ধবধবে সাদা শার্ট পড়ে, সেটাও দেখতে ভালো লাগে।

আমার সামনে টি-পট ভর্তি চা। চা খেতে খেতে এগোচ্ছি। দুঘণ্টার মধ্যে হাওরে পড়লাম। যারা হাওর দেখেন নি তাদের হাওরের সৌন্দর্য বুঝানো যাবে না। চোখের দৃষ্টি কোথাও আটকাচ্ছে না। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি! সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ঢেউ উঠছে। পানি কাচের মতো স্বচ্ছ। স্বচ্ছ পানিকে কাকের চোখের সঙ্গে তুলনা করা হয়। বলা হয় কাকচক্ষু জল। হাওরের পানি তারচেয়েও স্বচ্ছ। প্রচুর পদ্ম ফুটেছে। পদ্মগুলি নাকি দুপুর বারোটার মধ্যে নিজেদের গুটিয়ে নেবে।

শীতের সময় হাওরের পানি নেমে যাবে। ধান চাষ হবে। পানির সমুদ্র থেকে হাওর হবে সবুজের সমুদ্র।

আমি সর্পরাজকে বললাম, হাওরের জমি নিশ্চয় কারোর একার না। অনেকের জমি এখানে আছে।

সর্পরাজ বলল, জি স্যার।

পানি শুকিয়ে গেলে কীভাবে বোঝা যাবে কার জমি কোনটা?

পানি শুকিয়ে গেলে জমির আল দেখা যায়। আল দেখে সীমানা নির্ধারণ হয়। সমস্যা হলে সালিশে মীমাংসা হয়। স্যার কি একটা পান খাবেন? ভালো খাসিয়া পান ছিল।

চা খাচ্ছি। পান খাব কীভাবে?

এক গালে পান রাখবেন, অন্য গালে চা। এর মজা অন্য। আমি তো এইভাবেই চা খাই।

তুমি খাও, আমি খাব না। এখন করছ কী? নতুন কোনো প্রকল্প?

কুমির চাষের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কুমির চাষ করব। বিদেশে রপ্তানি করব।

কুমির কে কিনবে?

সর্পরাজ বলল, কুমিরের মাংস অনেকেই খায়। বিরাট ডিমান্ড। কুমিরের চামড়ার ডিমান্ড।

সর্পরাজ মহা উৎসাহে কুমির চাষের নানান দিক ব্যাখ্যা করে যাচ্ছে। আমি কিছু শুনছি, বেশির ভাগই শুনছি না। চোখের পাতা থাকার কারণে চোখ বন্ধ করা যায়। কান বন্ধ করার কোনো সিস্টেম না থাকলেও আমি কান বন্ধ করতে পারি। যে হড়বড় করে কথা বলছে তার মনে হবে আমি গভীর আগ্রহে শুনছি। আসলে ভা-না।

লঞ্চের একতলায় মহা উৎসব শুরু হয়ে গেছে। গানবাজনার আসর বসেছে। ঢোলের প্রবল বাড়িতে গানের কথা বোঝা যাচ্ছে না। গায়কের লম্বা টান শুনে মনে হচ্ছে বিচ্ছেদ সঙ্গীত।

নিচ থেকে আসছে গানের শব্দ, ডেকে সর্পরাজ এখন কুমিরের ডিম নিয়ে কী যেন বলছে। গান এবং কুমিরের ডিমে একাকার হয়ে গেছে। আমার ঝিমুনির মতো এসেছে। ঝিমাতে ঝিমাতে ছোট্ট স্বপ্নও দেখে ফেললাম। স্বপ্নে পুত্র নিষাদ বলছে, বাবা, আমার জন্যে একটা চকলেট রেলগাড়ি আনবে।

হঠাৎ করেই স্বপ্ন ভঙ্গ হলো, লঞ্চ প্রবলভাবে দুলে উঠল। টেবিলে রাখা টিপট ছিটকে পায়ের কাছে পড়ল।

যখন যাত্রা শুরু করেছি তখন আকাশে হালকা মেঘ ছিল। এখন দেখি আকাশে ঘন কালো মেঘ। এই মেঘ ঝড়ের রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি নেই। শুধুই প্রচণ্ড বাতাস। বাতাস একদিক থেকে আসছে না, ক্ষণে ক্ষণে দিক পরিবর্তন করছে।

আমি সর্পরাজকে নিয়ে লঞ্চের সারেং-এর ঘরে ঢুকলাম। ঝড়ের গতিপ্রকৃতি সে-ই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে।

লঞ্চের সারেং-এর সঙ্গে ল্যাব এইডের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বরেনের মিল আছে। চেহারায় না, কথায়। ডা. বরেন হাসিমুখে রোগীকে দুঃসংবাদ দিতে পছন্দ করেন। লঞ্চের সারেংও তাই। সে হাসিমুখে আমাকে বলল, স্যার লঞ্চ তো ডুবতে ধরছে। খেলনার মতো ছোট লঞ্চ। না ডুইবা উপায় কী?

আমি আঁতকে উঠে বললাম, বলেন কী?

সারেং বলল, বাতাসের নমুনা খুবই খারাপ। ঘূর্ণি বাতাস। বিনা নোটিশে লঞ্চ ডুবব। আপনি কি টাইটানিক ছবিটা দেখেছেন?

আমি প্রচণ্ড ঝড়ে সিনেমা নিয়ে আলাপে উৎসাহ পেলাম না, চুপ করে রইলাম।

সারেং নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, এত বড় জাহাজ ডুবে গেল, আর এইটা তো পুলাপানের খেলনা।

শাওন এবং নিষাদ সঙ্গে না থাকার প্রবল দুঃখবোধ হঠাৎ আনন্দে রূপান্তরিত হলো। লঞ্চের সঙ্গে আমি একা তলিয়ে যাব। ওরা যাবে না। এরচেয়ে আনন্দময় সংবাদ আর কিছুই হতে পারে না।

সর্পরাজ বলল, স্যার ভয় পাবেন না। হাওরে পানির গভীরতা কম। দশ বারো ফুটের বেশি হবে না।

আমি বললাম, ডুবে মরার জন্য দশ ফুট পানি যা দশ হাজার ফুট পানিও ত।

আপনি সাঁতার জানেন তো?

আমি বললাম, সাঁতার জানি। সাঁতরে ব্রজেন দাশের পক্ষে হয়তো হাওর পাড়ি দেওয়া সম্ভব। আমার পক্ষে না।

সর্পরাজ বলল, কিছু ধরে ভেসে থাকতে পারবেন না?

কী ধরে ভেসে থাকব?

দেখি কিছু পাওয়া যায় কি না।

সর্পরাজ অনেক কষ্টে নিচে নেমে গেল। ঝড়ের গতি ক্রমেই দেখি বাড়ছে। দুএক ফোটা করে বৃষ্টি পড়ছে। সমুদ্রঝড় আমি কখনো দেখি নি। শুনেছি তখন ঢেউ ফুলে ফেঁপে পাহাড়ের মতো হয়। এখানেও তাই হচ্ছে। প্রকাণ্ড ঢেউ লঞ্চের গায়ে আছড়ে পড়ছে। লঞ্চ ঢেউয়ের উপর উঠে যাচ্ছে না। ঢেউ লঞ্চের একতলায় ঢুকে যাচ্ছে। একতলা পানিতে ভর্তি হলে লঞ্চ ডুববে, এটাই স্বাভাবিক।

সারেং মনে হয় সব আশা ছেড়ে দিয়েছে। এতক্ষণ হুইল ধরে ছিল, এখন হুইল ছেড়ে সিগারেট ধরিয়ে বলল, আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দিলাম।

সাৱেং-এর চেহারা দেখে মনে হলো না সে খুব দুশ্চিন্তায় আছে। সিগারেট সে বেশ আয়েশ করে টানছে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ এভাবে সিগারেট টানে না।

সারেং বলল, হাওরের এই জায়গায় প্রায়ই ঝড় উঠে। আকাশে মেঘের ছিটাফোটা নাই, তারপরেও ঝড়। অনেক নৌকা ডুবেছে। দুই বছর আগে একটা একতলা লঞ্চ ডুবেছে। এগারোজন মানুষ মারা গেছে।

আমি বললাম, এই জায়গাতেই ঝড় কেন উঠে?

এই পথে জ্বিনের বাদশার যাতায়াত, তার কারণে ঝড় উঠে।

লঞ্চের একতলা থেকে সমবেত কণ্ঠে আযানের আওয়াজ আসছে। আমি সারেংকে বললাম, আযান কেন দিচ্ছে, জ্বিনের বাদশা তাড়াবার জন্যে?

সারেং বলল, মহা দুর্যোগে আযান দেওয়ার বিধান আছে।

আমি বললাম, আযান হচ্ছে নামাজের জন্যে আহ্বান। দুর্যোগ কেটে গেলে সবাই কি নামাজ পড়বে?

সারেং বলল, দুর্যোগ কেটে গেলে কাউরে নামাজ পড়তে দেখি না। আপনি জটিল কথা বলেছেন।

ছোটবেলার ঝড়ের এক স্মৃতি আমার আছে। নানার বাড়িতে আছি। হঠাৎ বিকেলে কালবৈশাখী ঝড় উঠল। এমন অবস্থা যে-কোনো মুহূর্তে বাড়িঘর ভেঙে পড়বে। ছোটদের সব চুকানো হয়েছে খাটের নিচে। মাথার উপর বাড়ি ভেঙে পড়লেও যেন জীবন রক্ষা হয়। পুরুষরা সবাই আযান দিচ্ছেন। উঠানে শিলপাটা ছুড়ে ফেলা হলো। শিলপাটা দেখে ঝড় নাকি তার রাগ সামলে অন্য বাড়ির দিকে যায়। আমার নানিজান জলচৌকিতে দাড়িয়ে যেদিক থেকে বাতাস আসছে সেদিকে আঙুল দেখিয়ে সূরা পাঠ করছেন। ঝড়ের দিকপরিবর্তনের সঙ্গে তার আঙুলের দিকও পাল্টাচ্ছে। নানার বাড়ির সেই ভয়াবহ ঝড় হঠাৎ করেই থেমে গেল। ছোটরা দৌড়ে গেলাম আমবাগানের দিকে।

এই ঝড়ও কি হঠাৎ থামবে?

ফোটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছিল, এখন প্রবল বর্ষণ শুরু হলো। সারেং বলল, আর ভয় নাই বৃষ্টি নামছে।

বৃষ্টি নামলে ভয় নাই কেন?

জ্বিনের বাদশা আগুনে তৈয়ার। জ্বিন জাতি বৃষ্টির মধ্যে থাকতে পারে না। তার উপর ঘূর্ণি বন্ধ হয়েছে। দক্ষিণা বাতাস ছাড়ছে।

আমি বললাম, আপনার কাছে কম্পাস আছে?

না।

লঞ্চ যেভাবে ঘুরপাক খেয়েছে কম্পাস ছাড়া দিক বুঝবেন কীভাবে? যতদূর চোখ যায় পানি ছাড়া কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না। সূর্যও মেঘে ঢাকা।

সারেং বলল, আপনি আরেকটা জটিল কথা বলেছেন।

সারেং অমির জটিল কথায় মুগ্ধ। আমি হাওরের ঝড় এবং বৃষ্টি দেখে মুগ্ধ। ঝড়ের প্রকোপ মোটেই কমে নি, কিন্তু আমার ভয় কমে গেছে। মানুষ বেশিক্ষণ আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় থাকতে পারে না। প্রকৃতি ব্যবস্থা রেখেছে। আতঙ্কিত মানুষের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে প্রচুর এনড্রেলিন নামের জারক রস বের হয়। আতঙ্কিত মানুষের ভয় কেটে যায়।

লেখকদের একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। তারা যে-কোনো সময় তাদের নিজেদের ভুবনে ঢুকে যেতে পারেন। আমি সেই প্রস্তুতি নিলাম। চোখের সামনে হিমুকে দেখলাম। সে লঞ্চে যাচ্ছিল। ঝড়ের মধ্যে লঞ্চ পড়েছে। হিমু তার স্বভাব অনুযায়ী বিচিত্র কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। এই বিষয়ে উপন্যাসটি আমি লিখতে শুরু করেছি। নাম দিয়েছি হিমুর আছে জল।

জলযানে চমৎকার ঝড়ের বর্ণনা কোনো লেখকের লেখায় আমি তেমনভাবে পাই নি। তবে শরৎচন্দ্রের লেখায় সমুদ্রঝড়ের চমক্কার বর্ণনা আছে। শ্রীকান্ত দ্বিতীয় খণ্ডে শ্রীকান্ত সমুদ্রঝড়ে পড়েছিল।

শরৎচন্দ্র থাকতেন বার্মায়। বার্মা থেকে বঙ্গদেশে জাহাজে ফেরার পথে বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের মুখে পড়েছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতাই তিনি শ্রীকান্তের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন। কয়েক লাইন উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না–

ছোটবেলায় অন্ধকার রাত্রে ঠাকুমার বুকের ভিতর ঢুকিয়া সেই যে গল্প শুনিতাম, কোনো এক রাজপুত্র এক ডুবে পুকুরের ভিতর হইতে রূপার কৌটা তুলিয়া সাতশ রাক্ষসীর প্রাণ সোনার ভোমর হতে পিষিয়া মারিয়াছিল এবং সেই সাতশ রাক্ষসী মৃত্যুযন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে পদভরে সমস্ত পৃথিবী মাড়াইয়া গুড়াইয়া ছুটিয়া আসিয়াছিল, এও যেন তেমনি কোথায় কী একটা বিপ্লব বাঁধিয়াছে; তবে রাক্ষসী সাতশ নয়, সাতকোটি, উন্মুক্ত কোলাহল এদিকেই ছুটিয়া আসিতেছে। আসিয়াও পড়িল। রাক্ষসী নয়—ঝড়। তবে এরচেয়ে বোধ করি তাহাদের আসাই ঢের ভালো ছিল। এই দুর্জয় বায়ুশক্তির বর্ণনা করাও ঢের দূরের কথা, সমগ্র চেতনা দিয়া অনুভব করাও যেন মানুষের সামর্থ্যের বাহিরে।

ঝড়ের প্রকোপ কিছুটা কমেছিল, হঠাৎ আবার বাড়ল। লঞ্চ ডানদিকে কাত হয়ে গেল। আতঙ্কজনক অবস্থা। এর মধ্যে দেখি সর্পরাজ এবং ম্যানেজার বিশাল এক পিতলের ডেগ নিয়ে অনেক কষ্টে আসছে। আমি বললাম, ডেগ দিয়ে কী হবে?

ম্যানেজার বলল, স্যার আপনি ডেগের ভেতর বসে থাকবেন। ডেগ পানিতে ভাসবে।

সর্পরাজ বলল, ডেগের ভিতর একটা লোটা দিয়ে দিয়েছি। বৃষ্টির পানি জমলে পানি সেঁচবেন।

ম্যানেজার বলল, নিচে বিরাট এক ঝামেলা হয়েছে স্যার। আমি বললাম, ঝড়ের ঝামেলা তো চলছেই। আর কী ঝামেলা?

সোনালি মেয়েটা ভয়ে ফিট পড়েছে। দাঁতে দাঁত লেগে গেছে। ছোটানো যাচ্ছে না।

সে যাচ্ছে নাকি?

মেয়েটার হাতে টাকা নাই পয়সা নাই, শুরু করেছে এমন কান্দা।

সর্পরাজ বলল, ছবিতে ছোটখাটো একটা রোল তারে দিয়ে দিয়েন। মেয়েটা নাচও জানে। নিচে যখন গানবাজনা হচ্ছিল তখন তালে তালে নাচল। সবাই ভালো বলেছে।

আমি ভালো যন্ত্রণায় পড়লাম। ঝড়-তুফান চলছে, এর মধ্যে ফিল্মে ঢোকার সুপারিশ।

ম্যানেজার বলল, সোনালি বলেছে একটা পাসিং শট পেলেও নাকি তার জীবন ধন্য।

যেসব পাঠক পাসিং শট বুঝতে পারছেন না তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি— পাসিং শট হচ্ছে মূল অভিনেতা অভিনেত্রী কথা বলছে, দূর দিয়ে কেউ হেঁটে চলে গেল। দূর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়াটাই শট।

নাটকে অভিনয় করার তীব্র আগ্রহ আমি মেয়েদের মধ্যেই বেশি দেখেছি। তারা যে-কোনো মূল্যে অভিনয় করতে চায়। মূল্যটা যে কত বড় তা জেনেও না-জানার ভান করে।

আমি একবার এক বিয়েতে গিয়েছিলাম। বিয়ের কনে আমাকে দেখে আবেগজর্জরিত গলায় বলল, আঙ্কেল, আমার সারা জীবনের স্বপ্ন অভিনয় করা।

আমি বললাম, স্বপ্ন পূরণের সুযোগ তো পেয়ে গেছ। বিয়ে হয়ে গেল, বাকি জীবন কাটবে স্বামীর সঙ্গে অভিনয় করে।

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress