মেয়েলি আড্ডার হালচাল : 11
কিন্তু মে গিয়ে জুন এল, জুন গিয়ে জুলাইও যায় যায়। আকাশের স্টকে যত জল ছিল আকাশ সব ঢালল, কলকাতা এবং তার প্রান্তিক অঞ্চলে যত আবর্জনা ছিল সব পচলো, যত ধুলো ছিল সব কাদার দঁক সৃষ্টি করল, যেখানে যত পড়ে-থাকা জমি ছিল সব বন হয়ে গেল। জমা জলে লাইভ-ওয়্যার পড়ে, জমে যাওয়া আবর্জনার পাহাড় ধসে পড়ে, আন্ত্রিকে, নৌকাডুবিতে, আরও কত কী-তে কলকাতার জনসংখ্যা কমল, পাশের রাজ্য থেকে দেশোয়ালি ভাইরা দলে দলে এসে সে ঘাটতি পূরণ করে দিল, মন্ত্রীরা সব আহিস্তা আহিস্তা হাওয়ালামুক্ত হয়ে যেতে থাকলেন। অন্য মন্ত্রীদের নামে চার্জশীট বেরোতে থাকল, হাওড়া কোর্টে পানীয় জল না থাকায় কোর্টে স্ট্রাইক হয়ে গেল, হাওড়া গার্লস কলেজে পানীয় জল না থাকায়, জলের বোতলের বিক্রি বেড়ে গেল, হকারমুক্ত গড়িয়াহাট শ্যামবাজারে ফ্যাশনেবল মহিলারা কাটা ঘুড়ির মতো দিক দিশাহীন উদ্দেশ্যহীন ঘুরতে লাগলেন, কোকা-কোলা পেপসির বিজ্ঞাপন যুদ্ধ জমে উঠল, মিইয়ে গেল আবার জমে উঠল, বাজার থেকে মাছ উধাও হয়ে যেতে লাগল, র্যাশনপ্রথা উঠে যেতে থাকল— সুমিতার খবর নেই। শুধু সুমিতা কেন? মালবিকাদিরও খবর নেই।
‘কি রে কাজলা মালবিকাদির মহিলাসমিতি তো তোর নাকের ডগায়! খোঁজ নিতে পারিস না! ফোন না হয় না-ই করলি, গঙ্গাদার পয়সা চাট্টি বাঁচাতে!’
‘গঙ্গাদার পয়সা? গঙ্গাদা যমুনাদা বলে কাউকে আমি চিনি না তো, আঁ তুই আমার বরের কথা বলছিস? তোর গঙ্গাপ্রসাদবাবু আবার গঙ্গাদা হল কবে থেকে? অ্যাঁ?’
আমি অপ্রস্তুত হয়ে বলি— ‘মড়াকান্না জুড়বি মনে হচ্ছে? দশ বারো দিন এক বাড়িতে বাস করলুম দাদা বললে দোষ হল! গম্ভীর-গাম্ভার মানুষ, কোনওদিন তো এত কাছ থেকে দেখিনি!’
‘কত কাছ থেকে দেখেছিস? দূর থেকে ভুন্ডিল মুনি দেখতিস, কাছে আসতেই ঋষ্যশৃঙ্গ হয়ে গেল? বা বা বা! “তপস্বী ও তরঙ্গিণী”র সবটাই প্লে করলি বোধ হয়!’
‘বড় বাড়াবাড়ি করছিস কাজলা।’
‘বাড়াবাড়ি? আমি কোথায় তোকে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত আছি। সিরিয়াস টাইপের মেয়ে। তোর এই কীর্তি? তাই সে শান্তিনিকেতন থেকে ফিরতে চাইছে না। স্মৃতির মাটি আঁকড়ে আছে বোধ হয়।’
‘কেন, তুই যে বলিস বর না থাকলে তোর বাড়িও শান্তিনিকেতন থাকে!’
‘কখনও তা বলিনি, আমি বলেছি সে-ও শান্তিনিকেতনে আমিও শান্তিনিকেতনে।’
‘দুটো তো একই হল।’
‘এই না কি তুই লেখিকা? সামান্য দুটো উক্তির তফাত ধরতে পারিস না? ছ্যাঃ ছ্যাঃ। তাকে গিয়ে সাতখানা করে লাগিয়েছিস বোধ হয়। এইটাই ছিল তোর প্রথম চাল।’
‘ভাল হচ্ছে না কাজলা, সাতখানা আটখানা ছেড়ে আধখানা সিকিখানাও লাগাইনি। আমি ও সব লাগানি-ভাঙানি করি না। যা বলার লেখার মধ্যে দিয়ে বলি। পেন ইজ মাইটিয়ার দ্যান টাং।’
‘থ্রেট করছিস?’ বলে কাজলা একটা অদ্ভুত কাণ্ড করল ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল।
আমি তাড়াতাড়ি ফোন রেখে শেফালিকে বললাম—‘শেফালি আমি একটু আসছি।’
‘কোথায় আবার চললে এই দুকুরবেলায়?’
‘দুপুর তো কী? দরকার আছে, কাজলের বাড়ি যাচ্ছি। ফিরতে দেরি হলে দাদাকে বলিস, শান্তকে বলিস।’
‘আবার দেরিও হবে? উপন্যাসখানা কে শেষ করবে শুনি? বিধুভূষণবাবু যে সেদিন তাগাদা করে গেল!’
বুঝুন ব্যাপার, আমার কাজের মেয়ে শেফালি আমাকে লেখার গাফিলতির জন্যে ধমকাচ্ছে।
আমি রেগে-মেগে বললুম— ‘কাগজ রইল, কলম রইল, তোর যখন অত চিন্তা তুই-ই শেষ কর উপন্যাসখানা।’
‘জানি জানি আমি ঝি। আমি মুখ্যু। লেখাজোকার কথা মুখে আনাও আমার …’ গলায় অভিমানের গাঢ় মেঘ। আমি এখন ঘর সামলাই না বার সামলাই?
‘ঝি মানে কী জানিস তো? মেয়ে। “ঝিকে মেরে বউকে শেখানো” শুনেছিস তো?’
‘সে আমি জানি গো বউদি। শাউড়ি তো আগে বউকে মারে না, আগে বাড়ির ঝির গায়ে খানকতক বসিয়ে দেয়।’
‘উফ্ফ্ফ—’
‘ঝিউড়ি মেয়ে, শুনেছিস?’ বলতে বলতে আমি মরিয়ার মতো চটিতে পা গলাতে থাকি। কাজলকে আমি আজ অবধি কোনওদিন কাঁদতে দেখিনি।
টুনটুনি পাখির মতো কাজল তুর তুর করে হাঁটত, হাঁটা না ছোটা বোঝা যেত না। রামরতন বোসের লেনে কাজলরেখার বাপের বাড়ি। আমরা থাকতুম ঠিক ওর পাশের বাড়ি। সারা শীতকাল আমরা পুতুল খেলতাম। কাজলদের দোতলায় একটা আধখানা ছাত ছিল। সেইখানে সারা শীত ইঁট-সাজিয়ে তৈরি পুতুলের বাড়িতে দোতলার বারান্দায় কাজলের সবচেয়ে ফেভারিট পুতুল-বউ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। রাস্তা দেখছে, যেমন আমাদের মা মাসি কাকি বউদিরা দেখেন। কাজলের উদ্ভাবনী প্রতিভা দেখে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যেতুম। নিজেই পুতুলের সংসারের ধোপা হয়ে পুতুলের কাপড়ের রং জোরজার করে উঠিয়ে বা গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে নিজেই আবার পুতুল-গিন্নি হয়ে নিজেকে বকত। কাজলের পুতুল মরে গেলে তার দাহকার্য হত। পুতুলের বিয়ে হলে লুচি, বেগুনভাজা খাওয়া হত, ওর পুতুলের বাড়িতে চুরি-ডাকাতি হত। বলা বাহুল্য কাজল নিজেই সেই চোর, সেই ডাকাত, এবং সেই চোর ডাকাত ধরা পুলিশ। মিলিটারি ইউনিফর্ম পরা একটা কাচ কড়ার পুতুল কাজলের ছিল। সে-ই দরকার মতো পুলিশ, দরকার মতো সেপাই আবার দরকার মতো সেনাপতি-টতি হত। এক বার আমার পুতুল-ছেলের সঙ্গে কাজলার পুতুল-মেয়ের বিয়ে হল, বিয়ের রাতেই আমার ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো কাচের পুতুল-ছেলে পড়ে গিয়ে ভেঙে গেল। কাজল তার পুতুল-মেয়েকে বিধবা সাজাল। সে কী আনন্দ কাজলার পুতুল-মেয়ে বিধবা হতে। নতুন কিছু করা গেল তো! থানকাপড় জোগাড় করা বাবার ধুতি কেটে, পাথরের ছোট ছোট থালা বাসন কেনা পুতুল হবিষ্যি করবে বলে। তখন আমরা কাচের পুতুল মাটির পুতুলের মাথায় আঠা লাগিয়ে তাতে কালোসুতোর গোছা এঁটে চুল তৈরি করতাম। কাজল তার নয়নের মণি পুতুল-মেয়ের মাথার সেই গোছা-চুল ঘ্যাঁচ করে কেটে দিল। অবিকল ওর ঠাকুমার মতো করে। সে মেয়ে রাত্তিরে সকড়ি জিনিস খেত না, একাদশী, পূর্ণিমা, অমাবস্যায় উপোস করত। কিছুদিন এভাবে চলবার পর অবশ্য এক দিন গিয়ে শুনলাম পুতুল-মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই বলে সেটা বিধবা-বিবাহ নয় মোটেই। আসলে সেই পুতুল-মেয়ে আগে ছিল প্রতিমা, এখন হয়েছে ঝর্ণা, তার আইডেনটিটি বদলে গেছে। মাথায় আবার চুলের গোছা। মাঝসিঁথিতে বেশ করে আবির লেপা। পরনে এমব্রয়ডারি করা ঘাঘরা, ওড়না, মডার্ন মেয়ে শাড়ি-টাড়ি পরে না।
সেই কাজল ভ্যাঁ?
আমরা সে সময়ে দেশবন্ধু পার্কের সংলগ্ন লেডিজ পার্কে খেলতে যেতাম। কলকে ফুলের মধু খাওয়া এবং কলকে ফুলের মালা, মুকুট ইত্যাদি তৈরি করে পরা, পরস্পরকে পরানো আমাদের অবশ্য করণীয় ছিল। নানা ধরনের মেয়ে যেত লেডিজ পার্কে। আমাদের খেলুড়ি কিছু কুচো ছেলেও দারোয়ানের চোখ এড়িয়ে ঢুকে যেত। বুড়ি-বসন্তী খেলা নিয়ে খুব মন-কষাকষি হত। এই খেলায় লিডার তার দলের খেলুড়িদের একটা করে নাম দেয়। ফুল ঠিক হলে ফুল, ফল ঠিক হলে ফল। অপর পার্টির খেলুড়ির চোখ টিপে ধরে তাকে বলতে হবে, ‘আয় তো আমার জবা’— জবা গোপন নামধারী মেয়েটি এসে চোখ টিপে থাকা মেয়েটির মাথায় টুক করে মেরে যাবে। এবার চোখ-টেপা মেয়েকে বলতে হবে কে মেরেছে, কে সেই জবা। কাজল তার সহ-খেলুড়িদের নানা কৌশল করে এই নামটি জানিয়ে দিত। ফলে চোট্টামির জন্য তার অনেক খোয়ার হত। এদের মধ্যে একটা ছিল ‘যা যা কেলে ভূত, তোর বিয়ে হবে না।’ তখন কাজল কোমরে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করে বলত— ‘হবে না তো হবে না, ভালই তো। বিয়ে না হলে বিধবাও হব না। তোরা যখন একাদশী করবি আমি তখন পার্শে মাছ ভাজা, পার্শে মাছের ঝাল, পার্শে মাছের ডিম তারিয়ে তারিয়ে খাব।’
সেই সব প্রাগৈতিহাসিক কাহিনী মনে করে আমার খুব মন খারাপ হয়ে যায়।
ইয়ার্কি বাজ, ফাজিল, ফক্কড় হলে কী হবে, আমার ‘গঙ্গাদা’ থেকে কাজল কিছু একটা ভেবে নিয়েছে। কী সেনসিটিভ মেয়ে দেখো!
গিয়ে দেখি, দরজা খোলা, বৈঠকখানা ঘরে অনীক-তীর্ণা-গোপাল সব আড্ডা মারছে। আমাকে দেখে বলল— ‘তোমার জন্যে দরজা খুলে রেখেছি মাসি। মা ওপরে। শিগগির যাও।’
আমি রাগ করে বলি—‘বাবা, বাবা, তোদের আড্ডায় অংশ নেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। দেখলেই যাও যাও, যাচ্ছেতাই একেবারে।’
অনীক হেসে বলে— ‘বেশি ডায়ালগ মচাচ্ছো কেন মাসি, পাশের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আমাদের পেরাইভেট হাপিশ করে কে?’
গোপাল বললে— ‘মাসি বেশি পানকৌড়ি কোরো না! ডুবে যাবে, ডুবে যাবে।’
তীর্ণা বলে— ‘না গো মাসি, মা বলে দিল নীচে এসে দরজা খুলে বসে থাকতে। তুমি এলেই যেন সত্বর ওপরে পাঠিয়ে দিই।’
‘তাই বলে তোর দাদা আর তার বন্ধু আমাকে এমন অপমান করবে?’
‘অকমান? অকমান কই মাসি?’ গোপলা দু হাতে নিজের দু কান ধরল, বলল— ‘তোমাকে একটু স্যাম্পেল দিলুম আর কি। আর ঘাপটি মারতে হবে না!’
‘স্যাম্পেল তো চিজ মানে ‘মাল’কে বলে?’
‘রোজ কত ইউসেজ ফুটে ঝোপড় হয়ে যাচ্ছে, কত নামছে তুমি তার কী জানো মাসি। যাও যাও শিগগির যাও, দেরি দেখলেই কাজলামাসি ডিঙি মেরে নীচে নেমে আসবে। বাস, আমাদের আড্ডা ফুটকড়াই।’
আমি ধীরে ধীরে ওপরে উঠি। যদি আর কিছু কানে আসে। দোতলায় উঠে কাজলদের দালান। একদিকটা গ্রিল দিয়ে ঘেরা। বাকি তিনদিক ঘর। কোণের ঘরটা কাজলার। কোনও সাড়া শব্দ নেই।
ঢুকেই আমি স্থির হয়ে গেছি। কাজলা বিছানায় শোওয়া, মাথাটা একদিকে হেলে পড়েছে। খোলা চুল বালিশময় ছড়ানো। হলুদ রঙের শাড়ির আঁচল মেঝেতে লুটোচ্ছে। পাশে একটা খালি শিশি, একটা খালি গেলাস।
খানিকটা মাথার দিক থেকে দেখি, খানিকটা পায়ের দিক থেকে দেখি, তারপর আচ্ছা করে কাতুকুতু দিই।
—‘অ্যাই অ্যাই কী হচ্ছে? কী হচ্ছে?’ — বলে কিলবিল করতে করতে কাজল খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আঁচল গোছায়।
দুজনের হাসি-কাশি সব থামলে পর কাজল বলল—‘নাকের নীচে হাত দিয়ে দেখছিলি কেন বোকা? ঘুমের ওষুধ খেলে কি তক্ষুনি-তক্ষুনি মরে যায় না কি। নিশ্বাসও বয়, বুক ওঠা-পড়াও করে।’
‘সেই জন্যেই তো শিওর হওয়ার জন্যে কাতুকুতু দিলুম।’
‘আমি ভেবেছিলুম জল দিবি। জলের কুঁজোটা ঘর থেকে সরিয়ে রেখেছি তবুও শিটিয়ে ছিলুম।’
আমি বললুম—‘এবার বল টেলিফোনে ভ্যাঁ করলি কেন?’
‘তোর পাপ মন তাই অ্যাঁকে ভ্যাঁ শুনিস।’
‘ফোঁৎ ফোঁৎ-ও শুনেছি। ডিসটিংট ফোঁপানির আওয়াজ।’
‘হাসি। হাসি। হাসি চাপার প্রয়াস, গঙ্গাদা আমি জীবনে শুনিনি। এরপর যদি কেউ নীলিমাদা, প্রতিমাদা, মানসীদা বলতে আরম্ভ করে?’
‘করতেই পারে, রমাপ্রসাদ, রমণীরঞ্জন, সুনীতিকুমার—এঁদের লোকে কী বলে ডাকবে বল—রমাদা, রমণীদা, সুনীতিদা ছাড়া। এ তো তবু ভাল। জানিস বাণী বলে আমার এক বন্ধু আছে তার কাছে প্রায়ই বাণীবাবু বলে চিঠি আসে। ফোন করে লোকে বাণীদাকে চায়। ব্রত নয়, কুমার নয়, শুধু বাণী—তারই এই দশা।’
‘তোর বন্ধুকে দুঃখু করতে বারণ করিস। নীচে যে ওই গোপাল দেখলি না। এক নম্বরের বিচ্ছু ছেলে। আমাকে কাজল মেসোমশাই বলে আড়ালে। আমার ছেলে-মেয়েও সে সব সহ্য করে। তা সে যাই হোক গে রঞ্জু, আজ একটা নাটক করলুম বটে, কিন্তু এ রকম আমি সত্যিও করতে পারি।’
‘এই যে বললি, ফোনে হাসছিলি?’
‘ফোনের সঙ্গে এই সিনের কী সম্পর্ক? কোনও সম্পর্ক নেই। আমি শুধু তোকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি, ভুণ্ডিল মুনি হোক শুণ্ডিলমুনি হোক লোকটা একমাত্তর একা আমার। তা ছাড়া রসের জালা লোকটা, আমার জানা আছে।’
‘সুরঞ্জনা। আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছো—টাছো খুব ভাল আবৃত্তি করে। তুই ও সব শুনবি না।’
‘বা রে বা। তোমার বর হতে পারে, তা বলে তার আবৃত্তি আমার শোনা বারণ? বেশ আবদার তো! সুমিতার নালিশগুলো তো তা হলে দেখছি ঠিক?’
‘আহা, অন্য সব শুনবি, ‘সুরঞ্জনা’টা নিয়েই আমার ভয়। কবিতার আড়ালে যদি সত্যি-সত্যি তোকে প্রেম-নিবেদন করে বোঝা যাবে না তো!’
‘সুরঞ্জনা মোটেই প্রেমের কবিতা নয় কাজল?’
“মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়’টা কোথায় আছে বাছা?” শালবনের ছায়ায় ছায়ায় সন্ধের ঝুঁঝকো আঁধারে যদি এটা তোকে বলে থেকে থাকে!’
আমি ভেতরে ভেতরে চমকে উঠেছি।
‘তোর ভয় নেই’। নিজেকে সামলে নিয়ে আমি বলি, ‘তোর ভুণ্ডিল তোরই থাক, আর আমার ভণ্ডুল আমার, শুধু প্রিয়া রেস্তোরাঁর বিলগুলো রাখ।’
‘আর একটা টেবিলে বাবা জেনকিন্স এবং মা-তীর্ণাও পরোটা-মাংস খাচ্ছিলেন, কাজেই জীবনানন্দ কোট করার তেমন সুযোগ তোর ভুণ্ডিল পায়নি।’
‘আরে তুই তো কামাল করে দিয়েছিস রে রঞ্জু, এক টেবিলে তুই আর গঙ্গাপ্রসাদ?—জীবনে কোনওদিন কোনও দূর-শালীর সঙ্গেও গঙ্গাপ্রসাদ এক টেবিলে বসে ভাত খায়নি। ভীষণ ছুঁৎ-মার্গ। বেশি ছুঁচিবাই মানে আবার ভেতরে ভেতরে ছোঁক ছোঁক বুঝিস তো?’
আমি বললুম ‘কাজলা, অসভ্যতা করিস না, ছিঃ।’