মেঘলা দিন (Meghla Din)
সামান্য মেঘ করলেই ফকির চক্রবর্তী লেনে ঘোর বর্ষার আবহাওয়া চলে আসে। দু’পাশে আনপ্ল্যানড তিন-চারতলা বাড়ি, তেমনি সরু গলি। এখানেই এক শরিকি বাড়ির দোতলায় অলীকরা থাকে। আজ রবিবার। দুপুরে ঘুমিয়ে চোখেমুখে একটু নরম ভাব আনার ইচ্ছে থাকলেও পারেনি অলীক। বিছানায় শুয়ে জানলার বাইরের ওয়েদার দেখে ভীষণ টেনশন হচ্ছে, সত্যি যদি বৃষ্টি নামে। এতদিনের সমস্ত প্রচেষ্টা আক্ষরিক অর্থে জলে যাবে। আজকের প্ল্যানটা সে অনেক বুদ্ধি করে সাজিয়েছিল। আবার একবার দেওয়াল-ঘড়ি দেখে অলীক, তিনটে। আর একটু নিশ্চিত হয়ে নিতে বিছানা থেকে একটু উঠে টেবিলে রাখা হাতঘড়িটাও দেখে নেয়, একই সময়। আকাশ বেগড়বাঁই করলেও ঘড়িদুটো পায়ে পা মিলিয়ে চলছে। আর ঠিক একঘণ্টা পরে কোম্পানিবাগানের মাঠের সামনে এসে দাঁড়াবে দেবপ্রিয়া। ‘দাঁড়াবে’ না বলে ‘দাঁড়াতে পারে’ বলাই বোধহয় ভাল। বৃষ্টি এলে সে চান্সও নেই। দেবপ্রিয়ার মতো রাজমহিষী টাইপের মেয়ে ছাতা মাথায় বৃষ্টিভেজা প্যাচপ্যাচে বিকেলে কারও কথা রাখতে বেরিয়েছে, এ দৃশ্য কষ্ট-কল্পনাতেও আনা যায় না। ফার্স্ট ডেটিং-এর আমন্ত্রণ একতরফা অলীক করেছে। অনায়াসে তা অগ্রাহ্য করতে পারে দেবপ্রিয়া।
সে যাই হোক অলীককে তো গিয়ে দাঁড়াতে হবে। শেভ করে নেওয়া যাক। ভেবেছিল বেরোনোর দশ মিনিট আগে দাড়িটা কামাবে, বেশ একটা শাইন থাকে গালে। কিন্তু আকাশের আলোই যেখানে ম্লান, এসব খুঁটিনাটি ভেবে আর লাভ নেই। আয়নার সামনে শেভিং সেট নিয়ে বসে অলীক। ঘরের আলো বেশ কমে গেছে। লাইট জ্বালিয়ে নেয়। আয়না দিয়েই দেখা যায় সোফার উপর সার দিয়ে রাখা ড্রেস-সেটগুলো ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। জিন্স, শার্ট, টি-শার্ট, কটন ট্রাউজার, এমনকী পাজামা-পাঞ্জাবি পর্যন্ত। কোনটা পরে দেখা করতে যাবে, এখনও ডিসিশন নেওয়া হয়নি। আজ দুপুরেই লন্ড্রি থেকে এনে রেখেছে এসব। মায়ের খটকা লেগেছিল। জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী ব্যাপার রে, নিজে থেকে জামা-প্যান্ট কাচাচ্ছিস, ইস্ত্রি করাচ্ছিস! তোর হঠাৎ এত পরিবর্তন?
উত্তরে অলীক বলেছিল, কেন মা, আমি হস্টেলে থাকলে তো প্যান্ট-জামা নিজেই কাচি।
নির্জলা মিথ্যে কথা। কলেজ-হস্টেলে লোক ফিট করা আছে। অলীক ইংলিশে মাস্টার্স করছে যাদবপুরে। পড়াশোনার সুবিধে হবে বলে হস্টেলে এক বন্ধুর গেস্ট হয়ে আছে। বউবাজারের ছেলে হয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির হস্টেলে অ্যাকোমোডেশন পাওয়া মুখের কথা নয়, অনেক কষ্টে পেয়েছে। কিন্তু গত চারমাস হল সেই যে বাড়ি ফিরেছে, আর হস্টেলে
ফেরার নাম নেই। ক্লাস অবশ্য রেগুলার করছে। বাবা একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, হস্টেল ছেড়ে দিলে নাকি? বাড়ি থেকেই যাতায়াত করছ!
না, দিইনি। রুমটা রেনোভেট হচ্ছে। সংক্ষিপ্ত জবাবে প্রসঙ্গ চাপা দিয়েছিল অলীক। মা একবারও জানতে চাননি, কেন হস্টেলে থাকছিস না?
মায়ের কোনওদিনই ইচ্ছে ছিল না, ছেলে বাড়ির বাইরে থেকে পড়াশোনা করুক। একমাত্র সন্তান, কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপারে অলীকের সিরিয়াসনেস আর মার্কস দেখে বাধাও দিতে পারেননি।
বাড়ি, আত্মীয়-স্বজন, ক্লাসমেটদের কাছে এক কথায় ‘গুডবয়’ তকমা পাওয়া অলীক ফেঁসেছে এক মহা ঝামেলায়। দেবপ্রিয়ার জন্য তার কেরিয়ার ক্যান্টার হয়ে যাওয়ার জোগাড়। ওরকম একটা নাক-উঁচু মেয়ে তাকে যে এভাবে পেড়ে ফেলবে, অলীক নিজেও ভাবতে পারেনি। কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে মেয়ে সে কম দেখেনি। তাদের মধ্যে অনেকেই যথেষ্ট সুন্দরী এবং ব্যক্তিত্বময়ী। কিন্তু কেন জানি, কারও ব্যাপারে তেমন আগ্রহ জাগে না অলীকের। মেয়েবন্ধুরা বলে, তুই যা দেখতে তার চেয়ে একটু বেশি ভাবিস তো, সেই জন্যই এই অবস্থা। ছেলেবন্ধুরা বলে, তোর মানসকন্যার দেখা তুই কোনওদিনও পাবি না। বাড়ির কাছেই কুমোরটুলি, সত্বর সেখানে যোগাযোগ কর।
আর কী আশ্চর্য, কুমোরটুলিতেই দেখা হয়ে গিয়েছিল দেবপ্রিয়ার সঙ্গে। গত সরস্বতী পুজোর আগের দিন। অলীক গিয়েছিল নিজের বাড়ির ঠাকুর কিনতে। সার সার মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বাছছে মনের মতো প্রতিমা। হঠাৎ পিছন থেকে ছোটমাসির গলা, অ্যাই অলীক, একটু এদিকে আয়। আমাদের ঠাকুর পছন্দ করে দে। কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না চারটের মধ্যে কোনটা নেব।
ঘাড় ঘুরিয়ে অলীক তখন পুরোপুরি আউট। ছোটমাসির সঙ্গে তিনটে সদ্য স্কুল-গণ্ডিপেরোনো টাইপের মেয়ে। তার মধ্যে লম্বা মেয়েটি সত্যিই যেন কোনও কবির মানসকন্যা। এত অপরূপ দেখতে মেয়ে কল্পনাতেও আঁকতে পারবে না অলীক। পাশের দুটি মেয়েও দেখতে বেশ সুন্দর, কিন্তু কিছুতেই যেন থই পাচ্ছে না ওই অপরূপার কাছে।
কী রে হাঁদার মতো দাঁড়িয়ে রইলি কেন? আয় না এদিকে, বলেছিলেন ছোটমাসি। দ্রুত নিজের মুগ্ধতা গোপন করে ছোটমাসিদের বাছাই করা চারটে প্রতিমার সামনে গিয়েছিল অলীক। এবং বুঝতে পেরেছিল কেন ছোটমাসি ঠাকুর পছন্দ করতে পারছেন না। এরকম রূপসিকে নিয়ে ঠাকুর কিনতে এলে মুশকিলে পড়তে হবে বই কী। অলীকও খুব একটা বাছাবাছিতে না গিয়ে বলেছিল, এই নীল শাড়ি পরাটাই নাও। ভীষণ লাইভ।
ছোটমাসি তক্ষুনি পাশের মেয়ে তিনটেকে বলেছিলেন, দেখলে তো, বলেছিলাম এটাই ভাল। অলীকের যখন পছন্দ হয়েছে, এ নিয়ে আর চিন্তা করার কিছু নেই। ও বিশ্ব-খুঁতখুঁতে। ঠাকুর কেনার ঝোঁকে ছোটমাসি ভুলেই গেলেন মেয়েগুলোর সঙ্গে আলাপ করাতে।
মেয়ে তিনজন প্রতিমার ব্যাপারে আর অমত করেনি। মুটে ডেকে প্রতিমা ঝাঁকায় চাপাতে চাপাতে মাসি বললেন, আয় না কালকে একবার। তোর পছন্দ করা ঠাকুরই তো পুজো হবে।
ওরা চলে যাওয়ার সময় দুটি মেয়ে অলীকের দিকে চেয়ে সৌজন্যের সঙ্গে সামান্য দুষ্টুমি মিশিয়ে হাসলেও রাজেন্দ্রাণী ফিরেও তাকাননি।
অলীক বাড়ির ছোট্ট ঠাকুরটা বুকে নিয়ে বিষণ্নমনে বাড়ি ফেরে।
সেদিন রাতেই ওর বিবেক মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সত্যি মাসি একই পাড়াতে থাকেন, ছাদে উঠলে মাসির বাড়ির চিলেকোঠা দেখা যায়। অথচ বিজয়া দশমী ছাড়া যাওয়াই হয় না। কাল একবার যেতে হবে। সেই সুযোগে একবার দেখেও নেওয়া যাবে মেয়েটাকে। প্রথম দেখায় চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল।
পরের দিন সকালে নিজেদের বাড়ির পুজো হয়ে যাওয়ার পর মাসির বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছিল অলীক। মেয়ে তিনটে নিশ্চয়ই মাসির নতুন পেয়িং গেস্ট। নিঃসন্তান মাসি-মেসো নিজেদের বিশাল বাড়িটা ভরাট করতে কলেজ-গার্লদের পেয়িং গেস্ট রাখেন। সন্তানস্নেহে তাদের দেখাশোনাও করেন। মেয়েরাও তার অ্যাডভান্টেজটা ভালভাবেই নেয়।
মাসির বাড়ির দরজা খোলাই ছিল। ভিতরে ঢুকে অলীক দেখে বারান্দায় ঠাকুর সাজানো, পুজোর জোগাড় সব রেডি। দালান-জোড়া আলপনার সামনে বসে একটা মেয়ে আঁকা শেষ করছে। সম্ভবত সেই মেয়েটাই। কাছে গিয়ে অলীক বলে, ছোটমাসি কোথায়?
ভিজে চুল ঝাঁকিয়ে ঘুরে তাকায় মেয়েটি। পিছন থেকে অলীক ঠিকই চিনেছিল। আলপনার প্রেক্ষাপটে সেই ডাগর চোখের স্নিগ্ধ মুখ, যেন পাহাড়তলির ভোর।
কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টি বিনিময়ের পর দেবপ্রিয়াই সুর কাটে। হাসিতে বিদ্রূপ মিশিয়ে বলে, জানতাম আপনি আসবেন।
কথাটা শোনার পর থেকেই কান-মাথা ঝাঁ-ঝাঁ করতে থাকে অলীকের। মেয়েটা তাকে ঘুরিয়ে হ্যাংলা বলল। ঠিক তখনই সদর দিয়ে ঢুকেছিলেন ছোটমাসি। সঙ্গে বাকি দুটো মেয়ে। অলীককে দেখে মাসি বলেন, ও, তুই এসেছিস তা হলে! দেখ না কী ঝামেলায় পড়েছি। সদয় পুরোহিত বলেছিল সাতটার মধ্যে আসবে। ন’টা বাজতে চলল, এখনও পাত্তা নেই। গিয়েছিলাম খুঁজতে।
অলীক তখন একদম মুডে নেই। একটু আগে সে ভীষণভাবে হেনস্থা হয়েছে। তক্ষুনি স্থান পরিবর্তন করতে পারলে সে বাঁচে। সেই লক্ষ্যে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে সে বলেছিল, ঠিক আছে, আমি দেখছি। যদি আশেপাশে পাই, পাঠিয়ে দিচ্ছি সদয়দাকে।
ও তুই পাবি না। এলাকার অনেক বাড়ি ঘোরা হয়ে গেছে আমার। ওর বাড়িতেও গিয়েছিলাম, বলে কিনা, ভোর চারটেয় বেরিয়েছে। একটু থেমে মাসি বললেন, আধঘণ্টা দেখব, তারপর তোর মেসোকেই বসিয়ে দেব পুজো করতে। কতক্ষণ আর পুঁচকে মেয়েগুলো উপোস করে থাকবে? আর
হ্যাঁ, সেই ভাল টাইপের হেসে অলীক বলেছিল, আমি এখন তা হলে আসি, একটা কাজ আছে পরে আসব আবার।
দাঁড়া না, যাচ্ছিস কোথায়? কাল তো হুড়োহুড়িতে এদের সঙ্গে আলাপ করানো হয়নি। বলে মাসি একে একে তিনটে মেয়ের নাম, কলেজ, সাবজেক্ট, ইয়ার সব জানালেন।
দেবপ্রিয়া, ঈষিতা, লহরী। ইকনমিক্স অনার্স, প্রেসিডেন্সি, ফার্স্ট ইয়ার। তারপর ছোটমাসি
শুরু করলেন অলীকের অঢেল প্রশংসা।’ কত ভাল রেজাল্ট করা সত্ত্বেও আর্টস নিয়ে পড়েছে। ভীষণ রিজ়ার্ভড ছেলে। পাড়ার কেউ কোনওদিন ওর নামে একটা বদনাম… মেয়ে তিনটের হাসি হাসি মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, মাসির কোনও কথাই ওরা বিশ্বাস করছে না। অলীকের ওখানে যাওয়ার আসল উদ্দেশ্য ওরা ধরে ফেলেছে। ভিজে চুল, শাড়ি পরা উপোসী মেয়েগুলো মোটেই মাসির কথামতো পুঁচকে নয়। যথেষ্ট পাকা। মাসিকে অনেক কষ্টে নিরস্ত করে পালিয়ে এসেছিল অলীক। আর কখনও ও-বাড়িতে যায়নি। কিন্তু হস্টেলে ফিরে গিয়েও মন টিকল না। বারেবারে চোখে ভেসে উঠত দেবপ্রিয়ার মুখ। ওর হাঁটা, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানো, সর্বোপরি সেই অপমানটা কিছুতেই ভুলতে পারছিল না অলীক। যদিও বা এতদিন পরে একটি মেয়েকে তার ভাল লাগল, হোঁচট খেতে হল গোড়াতেই। মেয়েটার মন জয় না করা অবধি অলীকের শান্তি হবে না। হস্টেল ছেড়ে চলে এল অলীক।
জোর করে কিছু আদায় করা অলীকের ধাতে নেই। প্রেমের ক্ষেত্রেও তার একই অ্যাটিটিউড। তা ছাড়া ভালছেলে মার্কা ইমেজটাও তার একটা বড় বাধা।
অতঃপর সে আর কী করে? দেবপ্রিয়ারা যখন কলেজে যায় অথবা কম্পিউটার ক্লাসে, মিনার্ভা হলের পাশে ফটিকদার চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অলীক। গত চার মাস ধরে এমনটাই চলছে। এর থেকে এক স্টেপ বেশি এগোতে পারেনি। শুধু তাই নয়, অলীকের এক্সপ্রেশন এতটাই সাবধানী, সম্ভবত এখনও বোঝাতে পারেনি, সে ওই তিনজনের মধ্যে কার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। কেননা, যাওয়ার পথে তিনটে মেয়েই পর্যায়ক্রমে, কখনও বা একই সঙ্গে, অলীকের দিকে তাকায় এবং নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে। তবে দেবপ্রিয়া বাকি দু’জনের তুলনায় সিরিয়াস।
আজ সকালে অলীক ওর সীমিত সাহসে ভর করে একটা সাংঘাতিক কাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রস্তুতি চলছিল ক’দিন ধরেই। রবিবারটাই বেছে নিল। সকাল ন’টা নাগাদ দেবপ্রিয়ারা কম্পিউটার ক্লাসে যায়। তার আধঘণ্টা আগে চায়ের দোকানে গিয়ে ফটিকদার কাজের ছেলে কৈলাসকে ফিট করে ফেলল। কৈলাসের বয়স দশ অথবা বারো। ভীষণ চটপটে, চৌকস। দশ টাকা আর একটা চিরকুট দিয়ে অলীক বলেছিল, গলি থেকে যখনই তিনটে মেয়ে বেরোবে, আমি তোকে বলে দেব, কোন মেয়েটাকে দিতে হবে চিঠিটা।
সজোরে ঘাড় কাত করেছিল কৈলাস। তারপর ওর নিজের কাজে ভিড়ে যায়। ঠিক সময়েই দেবপ্রিয়ারা গলি থেকে বেরিয়েছিল। কৈলাসও নির্দেশের অপেক্ষায় অলীকের পাশে এসে দাঁড়ায়। দেবপ্রিয়ার দিকে আঙুল তুলে অলীক বলে, ওই যে লম্বা মতো, হলুদ সালোয়ার কামিজ পরা দিদি, ওর হাতেই চুপিচুপি চিঠিটা দিবি। পাশের দুটো মেয়ে জানতে না পারলে ভাল হয়।
মুখ থেকে কথা খসার সঙ্গে সঙ্গে কৈলাস দৌড়ে রাস্তার ওপারে। দেবপ্রিয়ার পাশে পাশে হাঁটছে। ঈষিতা আর লহরী যখনই নিজেদের মধ্যে কথায় ব্যস্ত হয়েছে, কৈলাস টোকা মারে দেবপ্রিয়ার হাতে। অবাক হয়ে তাকায় দেবপ্রিয়া। কৈলাস চিরকুটটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে একগাল হাসে। মুহূর্তের মধ্যে দেবপ্রিয়া বুঝে নেয়, চিরকুটটা কে পাঠিয়েছে। ঘাড় ফিরিয়ে ফটিকদার দোকানের দিকে দেখে। অলীকের মুখে তখন করুণ হাসি। উত্তরে একচিলতে
হেসে দেবপ্রিয়া এগিয়ে গিয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে। তখনই মনে মনে দুটি প্রার্থনা করে অলীক। এক, বড় হলে কৈলাস যেন ডাকবিভাগে চাকরি পায়। প্রচুর উন্নতি করবে। দুই, চিঠির প্রস্তাব মতো দেবপ্রিয়া যেন কোম্পানি-বাগান মাঠে আসে। চিরকুটে নাম, সম্বোধন, ইতি, কিছুই লেখা নেই। পাছে মাসির কোর্টে কেস দিয়ে দেয় দেবপ্রিয়া। তখন যদি বৃষ্টির দেবতাকে ছোট্ট একটা রিকোয়েস্ট করে রাখত অলীক, এত মেঘ হয়তো দুপুরে জমত না।
দাড়ি কাটা শেষ। জানলার কাছে যায় অলীক। এখান থেকে আকাশটা ভাল দেখা যায় না। সিংহরায়দের বাড়িটা গার্ড করে। ঘড়িতে সাড়ে তিনটে। এখনও আধঘণ্টা। ছাদে গিয়ে একবার আবহাওয়ার মতিগতি দেখে আসলে হয়।
অলীক এখন ছাদে। ঘন কালো মেঘ ঘনিয়েছে শুধুমাত্র বউবাজারের মাথাতেই। বাকি কলকাতার আকাশ ফাঁকা। এখান থেকে মাসির বাড়ির পিছন দিকটা দেখা যাচ্ছে। কী রাশভারী। যেন এই মেঘলা দিনে দেবপ্রিয়া বেরোতে গেলেই বকবে।
মেঘের নীচে একদল চাতক পাখি অস্থির ওড়াউড়ি করছে। বৃষ্টি তার মানে হবেই। পাখিদের নীচে দাঁড়িয়ে আর একজন মনেপ্রাণে চাইছে, বৃষ্টি যেন না হয়।
জয় মিত্তির স্ট্রিট ধরে হেঁটে যাচ্ছে অলীক। আকাশে বৃষ্টির আয়োজন দেখে, রাস্তায় লোকজন বেশ কম। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মা বলেছিলেন, কতদূর যাচ্ছিস? সঙ্গে ছাতা নে।
এড়িয়ে গেছে অলীক। ফার্স্ট ডেটিং-এ প্রেমিকের হাতে ছাতা, ভীষণ বোকা বোকা লাগবে। এমনিতে ড্রেসটাও বোধহয় একটু লাউড হয়ে গেল। বুটকাট জিন্স, লাইট ইয়োলো শার্ট। এত কিছুর পর যদি গিয়ে দেখে দেবপ্রিয়া আসেনি, পুরো মুরগি!
মোড় ঘুরতেই কোম্পানিবাগান মাঠ। নতুন করে সাজিয়ে এখন নাম হয়েছে ‘রবীন্দ্রকানন’। বুকে ব্যান্ড টিমের ড্রাম বাজছে। অবশেষে ‘জয় মা’ বলে মোড়টা ঘুরে যায় অলীক। কিন্তু এ কী? পার্কের গেটে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই, সে দেবপ্রিয়া নয়, ঈষিতা !
বন্ধুকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে, আসতে পারবে না কোনওদিনই। সত্যিই, কী শিক্ষিত শিষ্টাচার! এখান থেকেই ফিরে যাবে অলীক। উপায় নেই, দেখে নিয়েছে ঈষিতা। অদ্ভুত ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি হাসছে। কত নির্মল, অথচ কী নিষ্ঠুর ওই হাসি। প্রত্যাখ্যান সহ্য করার মধ্যেও একধরনের বীরত্ব থাকে। এগিয়ে যায় অলীক।
পাঁচটা বাজতে চলল, ঈষিতা এখনও ফিরল না। দুশ্চিন্তায় নিজেদের রুমে পায়চারি শুরু করছে দেবপ্রিয়া। মাঝেমধ্যে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বারান্দা থেকে আকাশের অনেকটা দেখা যায়। কত লোক যাচ্ছে-আসছে, নেকু-শিরোমণির ফেরার নাম নেই। কী কথা বলছে এতক্ষণ ধরে? সিন তো পরপর সাজানোই আছে। দু’-চারটে কথা বিনিময়ের পরই ঘোর
ভাঙবে ঈষিতার এবং একই সঙ্গে মাসির ভাল ছেলের।
ঘরের কোণে লহরী নিজের বেডে হুমড়ি খেয়ে ইংলিশ থ্রিলার পড়ছে। কী যে পায় ওর মধ্যে, কে জানে! ঈষিতাকে নিয়ে লহরীর কোনও টেনশন নেই। সবটাই বইতে হচ্ছে দেবপ্রিয়াকে। একসময় অধৈর্য হয়ে লহরীর উদ্দেশে বলে ওঠে, হ্যাঁ রে, তোর তো দেখছি কোনও চিন্তাই নেই। ঈষিতা ঘণ্টাখানেক হল বেরিয়েছে, সে খেয়াল আছে?
পেজে আঙুল রেখে বই মুড়ে উঠে বসে লহরী। মজা করা ভঙ্গিতে বলে, আহা রে, মেয়েটার আজ প্রেমের প্রথম দিন। এত তাড়াতাড়ি কথা শেষ হয়? কতদিন ধরে লাফাচ্ছে বল তো?
লহরী নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে যা বলছে, ভুল নেই কোনও। গন্ডগোলটা টের পাচ্ছে একমাত্র দেবপ্রিয়া। কিছু বলতেও পারছে না। দোষটা তার। হয়েছিল কী, আজ যখন চায়ের দোকানের বয়টা এসে তাকে চিরকুট দিল, তখন একটুও অবাক হয়নি দেবপ্রিয়া। জানত, এরকমই কোনও একটা রাস্তা বেছে নেবে অলীক। ছেলেটির দৃষ্টি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে দেবপ্রিয়ার বুঝতে অসুবিধে হয়নি, অলীক তার ব্যাপারেই ইন্টারেস্টেড। কিন্তু এ কথা বন্ধুদের কে বোঝাবে? অবশ্য তার জন্য লহরী-ঈষিতাকে দায়ী করা যায় না। দোষ সম্পূর্ণ অলীকের। প্রেম নিবেদনে এতই সতর্ক, সাবধানী সে, লহরী-ঈষিতা দু’জনেই ভেবে বসল, তাদেরই একজনের জন্য অলীক দাঁড়িয়ে থাকে মিনার্ভার সামনে। এ ব্যাপারে ঈষিতার উৎসাহ বেশি। এমন লাফালাফি শুরু করল, রণে ভঙ্গ দিল লহরী। ঈষিতা এক লহমায় অলীককে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিতে পারে। তারপর শুরু করে প্রশংসা, আজ মেরুন টি-শার্টটা পরে কী সুন্দর লাগছিল বল ওকে! অথবা, আজ ও শেভ করেনি। ব্যাপক লাগছে, কী সুইট না? কোনও ভোরে ঘুম থেকে উঠে বলল, জানিস, আজ রাতে ওকে স্বপ্নে দেখলাম। কলকাতায় নয়, দেখা হল আমাদের চন্দননগরের পাড়ায়… যতসব ন্যাকা ন্যাকা কথা। এদিকে দেবপ্রিয়া বলতে পারছে না, ঈষিতা তুই ভুল করছিস। ছেলেটা আমার জন্যই রোজ দাঁড়িয়ে থাকে। কথাটা হ্যাংলার মতো শোনাবে। ব্যাপারটার শেষ চাইছিল দেবপ্রিয়া। অলীক যদি তাকে সরাসরি প্রোপোজ করত, অসুবিধে ছিল না। সরাসরি বলে দিতে পারত, সরি, আমি এনগেজড।
ইন্দ্রনীলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেবপ্রিয়া। ক্লাস এইট থেকেই ইন্দ্রদার সঙ্গে ওর সম্পর্ক। দেবপ্রিয়ার বর্ধমানের বাড়ির কাছেই ইন্দ্রদার বাড়ি। গ্র্যাজুয়েশনের পর ইন্দ্রদা এখন পৈতৃক ব্যবসায় মন দিয়েছে। ফোনে প্রায়ই কথা হয়। দু’বাড়ির লোক সব জানে। শুধু জানাতে পারা যায়নি অলীককে। চিরকুট পাঠিয়ে আরও সমস্যায় ফেলে দিল আজ। কম্পিউটার ক্লাসে যেতে যেতে এক ফাঁকে লেখাটা পড়ে নিয়েছিল দেবপ্রিয়া। লেখা আছে, এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। যদি রাজি থাকো, বিকেল চারটেয় রবীন্দ্রকাননের সামনে চলে এসো। চিঠিটা পড়ার পর মাথায় যে কী চাপল, ঈষিতাকে কাগজটা দিয়ে দেবপ্রিয়া বলে, এই নে তোর চিঠি। তোর রোমিও পাঠিয়েছে। চায়ের দোকানের ছেলেটা দিয়ে গেল।
এই দু’-চার লাইন লেখা যেন ঈষিতার মহাপ্রাপ্তি। তখনই যা লাফালাফি শুরু করল, আনন্দে একেবারে আত্মহারা। একটু কি খারাপ লাগছিল না দেবপ্রিয়ার? লাগছিল, ওই লাইনগুলো তো তার উদ্দেশে লেখা।
সারা দুপুর ধরে সাজল ঈষিতা। বারবার ড্রেস চেঞ্জ করে, কোনওটাই মনঃপূত হয় না। শেষে ঠেলে পাঠাতে হল। কিন্তু সিনটা তো মিনিট দশেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ঈষিতা পার্কে গিয়ে দাঁড়াবে। অলীক আসবে, বলবে, চিঠিটা তোমার জন্য নয়। এই তো মোদ্দা ব্যাপার। তার জন্য এত সময় লাগছে কেন? ঈষিতা ফিরে আসবে গোমড়ামুখে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সমস্ত কথাই সাজিয়ে রেখেছে দেবপ্রিয়া। বলবে, আমার কী দোষ বল? চিঠিতে তো কাউকে অ্যাড্রেস করেনি। তুই ওর ব্যাপারে বেশি ইন্টারেস্ট দেখাতিস। ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই কোনও আলাদা সাইন পেয়েছিস ওর কাছ থেকে। যাক, ছেড়ে দে। এরকম হয়েই থাকে…
সান্ত্বনার বাক্যগুলো দেবপ্রিয়ার মাথায় ঘুরতে ঘুরতে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে ক্রমশ। কোথাও একটা গড়বড় হয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বারান্দায় চলে এসেছে, দেবপ্রিয়ার খেয়াল নেই। ফের ঘরে ফিরে আসে। লহরী যথারীতি থ্রিলারে বুঁদ হয়ে আছে। দেবপ্রিয়া বলে, হ্যাঁরে, গিয়ে দেখব একবার? কাছেই তো পার্কটা।
ঘাড় ফিরিয়ে লহরী বলে, কী দেখবি? কেন মিছিমিছি ডিসটার্ব করতে যাবি ওদের! এমন কিছু তো বেলা হয়নি।
না, আসলে মেঘ করেছে তো। যদি বৃষ্টি…
দুর্বল অজুহাত। সঙ্গে সঙ্গে লহরী বলে, তোমাকে অত চিন্তা করতে হবে না। ঈষিতা ছাতা নিয়ে গেছে।
একটু দমে গেলেও মুহূর্তে আর একটা যুক্তি খাড়া করে দেবপ্রিয়া। বলে, মাসিমা যদি জিজ্ঞেস করেন, মেয়েটা এতক্ষণ নেই কেন? কী বলবি?
উত্তরে ফিচেল হাসি হেসে লহরী বলে, বলব আপনার ভাল বোনপোকে খারাপ করতে গেছে।
লহরীর সঙ্গে আর কোনও কথা চালানো যায় না। নিজের বিছানায় গিয়ে বসে দেবপ্রিয়া। মাথায় হঠাৎই একটা আশঙ্কা কড়া নাড়ে। অলীকের কাছে অপমানিত হয়ে ঈষিতা সোজা চন্দননগরের বাড়িতে চলে যায়নি তো? আর কোনওদিন মুখ দেখাবে না বন্ধুদের। তা হলে তো পড়াশোনার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে ওর। নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগছে দেবপ্রিয়ার। কী যে করবে, কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। এত অসহায় অবস্থায় আগে সে পড়েনি।
এমন সময় পরদা সরিয়ে ঘরে ঢোকে ঈষিতা। সোজা তাকিয়ে আছে দেবপ্রিয়ার দিকে। হাসি-কান্না মেশানো অদ্ভুত এক্সপ্রেশন। মুখটা পড়তে না পেরে ভিতরে ভিতরে গুটিয়ে যায় দেবপ্রিয়া। হঠাৎ হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে আসে ঈষিতা। বাঁধভাঙা আবেগে জড়িয়ে ধরে দেবপ্রিয়াকে। ঝড়াস করে একটা চুমু খেয়ে বলে, ইউ আর মাই সুইটেস্ট ফ্রেন্ড দেবপ্রিয়া। লাভলি গার্ল। তুই যদি আজ হিংসে করে চিঠিটা আমায় না দিতিস, আমি যে জীবনে কী মিস করতাম ভাবতে পারবি না। অলীকের মতো ছেলে আই নেভার মেট। কাছ থেকে ওকে আরও অনেক সুইট লাগে। সামনের রবিবার আমরা আবার দেখা করছি।
কথার মাঝে লহরী নিজের বেড থেকে উঠে আসে। প্রবল কৌতূহলে জানতে চায়, বল না, বল না, কী কী কথা হল?
বন্ধুদের ঘেরাটোপ থেকে সরে আসে দেবপ্রিয়া। কোথাও একটা মেজর গোলমাল হয়ে গেছে। এক্ষুনি তাকে সেটা জানতে হবে। বন্ধুদের উদ্দেশে বলে, আমার একটা রিফিল কেনার আছে। মানিকদার দোকানে যাচ্ছি।
অলীকের গল্পে দুই বন্ধু এতই মশগুল যে, দেবপ্রিয়ার কথা শুনল কিনা বোঝা গেল না। দেবপ্রিয়া বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
বৃষ্টি আর হল না। আকাশের সব মেঘ উধাও। রাস্তায় বেরিয়ে দেবপ্রিয়া প্রথমে ঠিক করেছিল, সরাসরি অলীকের কাছেই চলে যাবে। জিজ্ঞেস করবে, চিঠিটা সে আসলে কাকে দিয়েছিল। দেবপ্রিয়া কি তা হলে এতদিন ভুল মানে করেছিল অলীকের মুগ্ধ চাউনির? বাড়িতে যাওয়া বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে সাব্যস্ত করে পাড়ার টেলিফোন বুথে এসেছে। অলীকের ফোন নম্বর তারা জোগাড় করেছিল মাসিমার সঙ্গে কথার কৌশলে। সেই নম্বরে রিং করে কাচের ঘরে দাঁড়িয়ে আছে দেবপ্রিয়া। ও প্রান্তে রিং হচ্ছে। হ্যালো বলে পুরুষকণ্ঠ। দেবপ্রিয়া বলে, অলীক রায় আছেন?
বলছি।
আমি দেবপ্রিয়া।
হ্যাঁ, বলো।
কী নিরুত্তাপ কণ্ঠ! সেই মুগ্ধ চাউনির সঙ্গে মেলানো যায় না। নিজেকে সংযত রেখে দেবপ্রিয়া বলে, চিঠিটা কি আপনি আমাকেই দিয়েছিলেন? হ্যাঁ।
তা হলে যে…
কথা কেড়ে নিয়ে অলীক বলে, ঈষিতা যা বলেছে, সব সত্যি। প্রত্যাখ্যানের যে পদ্ধতি তুমি আমার জন্য বেছেছিলে, সেটা হয়তো আমি সহ্য করে নিতাম। কারণ ব্যাপারটা ছিল একতরফা। ক্ষতি হয়ে যেত ঈষিতার। আমাকে দেখে কী সরল বিশ্বাসে এগিয়ে এল সে, আমি সেই বিশ্বাস ভাঙতে পারিনি। মনে হচ্ছিল, যেন কাচঘরে ঢুকিয়ে পাথর ছুড়তে বলা হচ্ছে। একবার যদি মন ভেঙে যেত ঈষিতার, বেঁচে থাকাটাই বিস্বাদ ঠেকত তার কাছে। প্রথম প্রেমের এরকম নিষ্ঠুর পরিণতি সে কোনওদিনই ভুলতে পারত না। তোমাকেও পারত না ক্ষমা করতে। ঈষিতাকে স্বীকার করে নেওয়াটা আমার তরফ থেকে তোমাকে দেওয়া প্রথম এবং শেষ উপহার বলে ধরে নিতে পারো। রাখছি।
অলীক ফোন কেটে দেওয়ার অনেক পরে রিসিভার নামিয়ে রাখে দেবপ্রিয়া। বুকের কাছে একটা কষ্ট খামচে ধরেছে। এই প্রথম অলীককে ভীষণ, ভীষণ ভালবাসতে ইচ্ছে করছে তার। উপায় নেই।
বউবাজারের মাথা থেকে কালো মেঘটা চলে গেলেও কখন জানি বৃষ্টি ভরে দিয়ে গেছে দেবপ্রিয়ার চোখে। সেই অঝোর ধারাই এখন নামছে দেবপ্রিয়ার গাল বেয়ে।
উনিশ কুড়ি, জুলাই ২০০৪