কালো নোট বই
বরমডিহি থেকে কলকাতা ফেরার পর কিছুদিন সেই ঘটনাটা নিয়ে অনেক থিওরি খাড়া করেছিলাম। কিন্তু কোনওটাই যুক্তি দিয়ে দাঁড় করাতে পারছিলাম না। আর কর্নেলকেও তা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে দেখিনি। তিনি প্রজাপতি সংক্রান্ত বইয়ে মগ্ন ছিলেন। কখনও দেখতাম তুর্কিভাষী সুলতানদের ইতিহাসের বইও ঘাঁটছেন।
আমি দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার সাংবাদিক। অফিসে অজস্র খবরের কাগজ আসে। খুঁটিয়ে পড়ি, যদি বরমডিহিতে কোনও খুনখারাপির কিংবা কারও নিরুদ্দেশের খবর চোখে পড়ে। কিন্তু তেমন কোনও খবর চোখে পড়ে না। দেখতে দেখতে শীত এসে গেল। ঘটনাটা গভীরভাবে তবু মনে গাঁথা রইল। দুঃস্বপ্ন দেখতাম কত রাত্রে। অবশেষে কর্নেলকে একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম, অ্যাডভোকেট শচীন্দ্রলাল মুখার্জি বা তাঁর বৈমাত্রেয় ভাইয়ের কলকাতার ঠিকানা যোগাড় করা উচিত ছিল। করেননি কেন?
কর্নেল বললেন, করেছি। ওঁরা বহাল তবিয়তে আছেন এবং মামলা এখন সুপ্রিমকোর্টে উঠেছে। শচীন্দ্রবাবু এখন আর প্র্যাকটিস করেন না। তরুণবাবু ব্যবসাবাণিজ্য করেন। তিনি মিটমাটের পক্ষপাতী। কিন্তু শচীন্দ্রবাবু ভীষণ একগুঁয়ে মানুষ। কারণ তার বক্তব্য, তার বাবা মহেন্দ্রলাল ন্যায্য উইল করে তাকে বরমডিহির বাড়িটা দিয়ে গেছেন। তরুণবাবুর বক্তব্য, উইলটা জাল। এতেই শচীন্দ্র বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ওপর খুবই ক্ষুব্ধ।
আপনি কি খুনের ঘটনাটা ওঁদের বলেছেন?
বলেছি। দুজনেরই মতে, ওই এলাকায় খুনখারাপি আকছার হয়। বাড়িটা পোডড়া হয়ে গেছে। কাজেই সেখানে যে যা খুশি করতেই পারে। আর সত্যিই ভোলা নামে শচীন্দ্রবাবুর একজন চাকর ছিল। সে বেঁচে নেই।
কিন্তু প্রায় দু মাস হয়ে গেল। কোনও কাগজে বরমডিহির কোনও—
কর্নেল আমার কথার ওপর বললেন, আজকাল সব খবর কাগজে বেরোয়। কাগজের লোক হয়ে এ তোমার জানার কথা। তার চেয়ে বড় কথা, পুলিশ আমার নাম ঠিকানা নিয়েছিল। তেমন কিছু ঘটলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করত।
তাহলে তো ব্যাপারটা সত্যিই ভুতুড়ে বলতে হয়।
এই সময় ডোরবেল বাজল। কর্নেলের ভৃত্য ষষ্ঠীচরণ এসে বলল, এক ভদ্রলোক এয়েছেন বাবামাশাই! বলছেন, খুব বিপদে পড়ে আপনার সাহায্য নিতে এয়েছেন। বললাম, বাবামশাই ব্যস্ত। উনি বললেন–
চোখ কটমটিয়ে কর্নেল বললেন, ডেকে নিয়ে আয়।…
একটু পরে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে কর্নেলকে নমস্কার করে করুণ হাসলেন, আপনাকে ডিসটার্ব করার জন্য দুখিত। কিন্তু আমার উপায় ছিল না। এতদিন ধরে পুলিশ কোনও কিনারা করতে পারল না। অগত্যা আপনার শরণাপন্ন হলাম।
আপনি বসুন।
ভদ্রলোকের পরনে সাধারণ প্যান্ট-শার্ট। কাঁধে একটা কাপড়ের নকশাদার ব্যাগ। কিন্তু ব্যাগটা পুরনো। তার চেহারা রোগা এবং ঢ্যাঙা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়িগোঁফ। সোফার কোনায় তিনি আড়ষ্টভাবে বসে বললেন, আমার নাম হরিচরণ গাঙ্গুলি। থাকি পাইকপাড়ায়। মাস দুয়েক আগে আমার মামাতো ভাই শ্যামসুন্দর হঠাৎ নিখোঁজ। তারপর
আমি বলে উঠলাম, বরমডিহি এবং তখনই কর্নেল চোখ কটমট করে আমাকে থামিয়ে দিলেন।
হরিচরণবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কী বললেন যেন?
কর্নেল যেন কথা ঘুরিয়ে দিতেই বললেন, আলাপ করিয়ে দিই। দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার রিপোর্টার জয়ন্ত চৌধুরি।
হরিচরণ নমস্কার করলেন। আপনার কথাও আমাকে মহীবাবু বলেছে কর্নেলসায়েবের ঠিকানা উনিই আমাকে দিয়েছে। রিটায়ার্ড পুলিশ অফিস স্যার। লেকটাউনে থাকেন। তা আপনি কী যেন বললেন কথাটা?
কর্নেল দ্রুত বললেন, সে অন্য কেস। আপনি বলুন।
হরিচরণ বললেন, জয়ন্তবাবু বমডিহি বললেন। আমার কানে কথাটা ২৯ করে বিধল। মানে, আমি স্যার একসময় এক অ্যাডভোকেট ভদ্রলোকের কাষ ছিলাম। তার কিছু বিষয়সম্পত্তি ছিল বমডিহিতে। সেই নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে মামলা মোকদ্দমা। দুই ভাই-ই সমান গোঁয়ার। তাতে পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই।
এবার কর্নেলের চোখ উজ্জ্বল দেখাল। আস্তে বললেন, আপনি কি শচীন্দ্রলাল মুখার্জির ক্লার্ক ছিলেন?
হ্যাঁ স্যার! তবে সে অনেক বছর আগের কথা। উনি ওকালতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। আর আমিও বেকার হয়ে গিয়েছিলাম। তো একটা কিছু না জোটালে বাঁচি কী করে? অগত্যা
টাইপিস্টের কাজ শুরু করেছিলেন?
হরিচরণ ফ্যালফ্যাল করে তাকালেন। আপনি স্যার সত্যিই অন্তর্যামী। মহীবাবু যা-যা বলেছিলেন, মিলে যাচ্ছে। আপনি কেমন করে জানলেন আমি টাইপিস্টের কাজ করি?
আপনার আঙুল দেখে মনে হল আপনি টাইপিস্ট। কর্নেল হাসলেন। আর বরমডিহির সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে মামলার খবর কাগজে বেরিয়েছিল।
আমি স্যার আলিপুর কোর্ট চত্বরে টাইপরাইটার নিয়ে বসি। স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করি। চলে যায় কোনওরকমে।
আপনার মামাতো ভাইয়ের ব্যাপারটা বলুন!
শ্যাম ছিল একের নম্বর বাউণ্ডুলে। মধ্যে মধ্যে আমার কাছে এসে থাকত। আবার কিছুদিনের জন্য কোথায় বেপাত্তা হয়ে যেত। তাই বছর সাত-আট আগে ও যখন উধাও হয়ে গিয়েছিল, গা করিনি। কিন্তু ইদানীং প্রায় ফি সপ্তায় একটা করে উড়োচিঠি আসতে শুরু করল। সব চিঠিতে লাল ডটপেনে লেখা, শ্যামসুন্দরের কালোরঙের নোটবইটা নিয়ে গঙ্গার ধারে আউট্রাম ঘাটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমরা চিনে নেব তোমাকে। ওটা পেলে শ্যামসুন্দর প্রাণে বাঁচবে।
হরিচরণ বিষণ্ণমুখে শ্বাস ছেড়ে চুপ করলে কর্নেল বললেন, তারপর?
মহীবাবুকে সঙ্গে নিয়ে অগত্যা লালবাজারে গিয়েছিলাম। শ্যামের কোনও জিনিসপত্র আমার ঘরে ছিল না। তো পুলিশ সাদা পোশাকে দিনকতক ফাঁদ পাতল। কিন্তু কেউ আমার কাছে এল না। আমি স্যার পুলিশের কথা মতো একটা কালো নোটবই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। যাই হোক, শেষে পুলিশ বলল, বোগাস! কেউ জোক করছে। আর তারপর থেকে পুলিশ আমাকে পাত্তা দিল না। কিন্তু তারপর এই চিঠিটা গতকাল ডাকে এসেছে দেখুন!
উনি একটা খাম দিলেন কর্নেলকে। কর্নেল আগে খামের টিকিটে ডাকঘরের ছাপটা আতস কাচ দিয়ে দেখে নিলেন। তারপর চিঠিটা বের করলেন। তার কাঁধের পাশ দিয়ে উঁকি দিলাম। সাদা কাগজে লালকালিতে লেখা আছে
ঘুঘু ধরতে ফাঁদ পেতেছিলে। এ বড় সেয়ানা ঘুঘু। তোমার বদমাইসির জন্য শ্যামকে খতম করে পুঁতে ফেলেছি। এবার তোমার পালা। আগামী ৭ ডিসেম্বরে মধ্যে শ্যামের কালো নোটবইটা না পেলে এবার তুমি খতম হয়ে শ্যামের মতোই মাটির তলায় চলে যাবে। এবার পুলিশকে জানালে ওটা পাই বা না পাই, তোমার নিস্তার নেই। কাজেই সাবধান। কোর্ট চত্বরে কোনও একদিন কোনও এক সময়ে কেউ তোমার কাছে টাইপ করাতে গিয়ে বলবে এন বি। তুমি তক্ষুণি তার হাতে ওটা দেবে। আর তাকে ধরে চ্যাঁচামেচি করলে হাটে ড্যাগার ঢুকে যাবে। বুঝলে বুদ্ধিমান? কেন ঝামেলা করছ? করবেই বা কেন?
কর্নেল চিঠিটা পড়ে বললেন, আজ দোসরা ডিসেম্বর।
হরিচরণ ব্যাকুলভাবে বললেন, আমি স্যার কোনও কালো নোটবই পাইনি। খামোক আমার ঘাড়ে এ কী বিপদ এসে পড়েছে দেখুন। আপনি আমাকে বাঁচান স্যার!
কর্নেল চুরুট ধরালেন। আমি বললাম, লোকটাকে ধরে ফেলতে অসুবিধে কী?
হরিচরণ বললেন, ধরে না হয় ফেললেন। কিন্তু তারপর? তারপর আমার লাইফরিস্ক কি না বলুন? সারাক্ষণ তো কেউ আমার বডিগার্ড হয়ে থাকতে পারে না! তার চেয়ে বড় কথা, শ্যামের তেমন কোনও নোটবই সত্যি আমি খুঁজে পাইনি–বিশ্বাস করুন!
কর্নেল চিঠিটা আতস কাঁচে পরীক্ষা করছিলেন। বললেন, আগের চিঠিগুলো কি আপনি পুলিশকে দিয়েছেন?
আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার। নৈলে কিসের বেসিসে পুলিশের সাহায্য চাইব?
কর্নেল কিছুক্ষণ চুপচাপ চুরুট টানার পর বললেন, পাইকপাড়ায় আপনার নিজের বাড়ি, নাকি ভাড়াবাড়িতে থাকেন?
ভাড়া বাড়ি। একখানা মোটে ঘর। আমার ফ্যামিলি থাকে মেদিনীপুরের গ্রামে।
আপনি কত বছর শচীন্দ্রবাবুর ক্লার্কের কাজ করেছেন?
তা বছর দশেকের বেশি হবে।
বিরমডিহিতে কখনও গেছেন?
একবার গেছি। হরিচরণ স্মরণ করার ভঙ্গিতে বললেন,–বছর আষ্টেক আগে। শচীনবাবুর ফ্যামিলির সঙ্গে গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর জায়গা স্যার! সিনসিনারি অপূর্ব! একটা লেক আছে পাহাড়ের মাথায়। আধখানা চাঁদের মতো দেখতে। তাই মুন লেক নাম।
ভোলাকে চিনতেন নিশ্চয়?
হরিচরণ মাথা নেড়ে বললেন, হ্যাঁ। খুব চিনতাম। পরে ভোলাকে শচীনবাস বরমডিহির বাড়ির কেয়ারটেকার করেছিলেন। সে সেখানেই থাকত। অসুখবিসুখে মারা যায়। বলে টাইপিস্ট ভদ্রলোক একটু গম্ভীর হলেন। এক ওই বাড়িটা স্যার ভাল নয়।
কেন ভাল নয়।
বাড়িটার বদনাম ছিল। ভূতপ্রেতের ব্যাপার আর কী! রাতবিরেতে কী সৎ শব্দ হত। আমিও শুনেছি স্যার!
কী শব্দ শুনেছেন?
একটা ঘরে হাঁটাচলার শব্দ। গোঙানির শব্দ। যেন কেউ–মানে ঠিক। বোঝাতে পারব না। মরণাপন্ন মানুষের চাপা আর্তনাদ। কিংবা–
হরিচরণের মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল। কর্নেল বললেন, আচ্ছা হরিচরণবাব, ওই বাড়িতে আপনি তো ভৌতিক শব্দ শুনেছেন। কিছু ভৌতিক ব্যাপার কি দেখেছেন?
দেখেছি স্যার! হরিচরণের মুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠল। সেবার দিন দশেক ছিলাম ওখানে। এক রাত্রে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। কে যেন পাশের ঘরে গোঙাচ্ছে। তো এ শব্দ আগের রাত্রেও শুনেছিলাম। তাই সাহস করে উঠে পড়লাম। শব্দটা দোতলার একটা ঘর থেকে আসছিল। ওই ঘরে পুরনো আসবাবপত্র ঠাসা ছিল। দরজা খুলোম। তালা আটকানো ছিল না। তো আমার হাতে টর্চ। টর্চ জ্বেলেই দেখি, ওঃ, সে কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য!
কী দৃশ্য?
একটা রক্তমাখা লোক পড়ে গোঙাচ্ছে।
তারপর?
হরিচরণ শ্বাস ছেড়ে বললেন, কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার! এক পলকের দেখা। তারপর দেখি কিছু নেই। তক্ষুণি দরজা বন্ধ করে কাঁপতে কাঁপতে ফিরে এলাম। ওঃ।
এ কথা কাউকে বলেছিলেন?
না স্যার! হেসে উড়িয়ে দেবে বা আমাকে ভীতু বলবে বলে কাউকে বলিনি। আর উঁকিলবাবুর যা মেজাজ! ওঁর বাড়িতে ভূতের বদনাম সহ্য করতে পারতেন না। বলতেন, সব তরুণের চক্রান্ত! এখন আমি যদি ওঁকে বলি, রাত্রে ওই ঘরে রক্তাক্ত বডি দেখেছি, তাহলে কী হত ভাবুন!
আমি উসখুস করছিলাম। কর্নেল আমার দিকে চোখ কটমটিয়ে তাকালেন। বললেন, ঠিক আছে হরিচরণবাবু! আমরা ওবেলা আপনার বাসায় যাব। খুঁজে দেখা দরকার, সত্যি শ্যামবাবু আপনার ঘরে কোনও কালো নোটবই রেখে গেছেন কি না।
আমি খুঁজে দেখেছি স্যার। পাইনি। তবে আপনার চোখ। আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনিও খুঁজে দেখবেন। তাহলে উঠি স্যার! আমার প্রাণ আপনার হাতে। অনুগ্রহ করে–
কর্নেল আশ্বাস দিয়ে বললেন, ভাববেন না। আমি আপনাকে সাহায্য করব। আপনার নাম-ঠিকানাটা লিখে দিয়ে যান। বিকেল চারটে-সাড়ে চারটে নাগাদ আমরা যাব।
হরিচরণ পকেট থেকে একটা ছাপানো নেমকার্ড বের করে দিলেন। তারপর নমস্কার করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
কর্নেল কার্ডটা দেখতে দেখতে বললেন, ভদ্রলোক রীতিমতো পেশাদার। তলায় ইংরেজিতে লেখা আছে, সবরকম আইন-আদালত সংক্রান্ত দলিলপত্র টাইপ করা হয়।
চাপা উত্তেজনায় অস্থির ছিলাম। বললাম, এই ভদ্রলোকও রক্তাক্ত বডি দেখেছিলেন। আমরাও দেখেছি। তারপর পুলিশ গিয়ে কিছু খুঁজে পায়নি। এরপরও কি আপনি বলবেন ব্যাপারটা ভৌতিক নয়?
কর্নেল টাকে হাত বুলিয়ে একটু হাসলেন। ভৌতিকই মনে হচ্ছে, তবে কালো রঙের নোটবইটা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর এই উড়ো চিঠিটার ভাষা লক্ষ্য করেছ?
চিঠিতে কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। সাদামাঠা চিঠি।
ঠিক। কিন্তু–কর্নেল আবার চিঠিটা পড়লেন। পড়ার পর বললেন, নাহ্। ঠিক নয়। উনি জোরে মাথা নেড়ে বললেন ফের, চিঠিটার বৈশিষ্ট্য আছে। একেবারে মৌখিক ভাষার চালে লেখা। দেখ জয়ন্ত, লিখিত ভাষা এবং মৌখিক ভাষার মধ্যে তফাত আছে। সাধারণত আমরা যখন চিঠি লিখি, তখন কলমের ডগায় ভাষার শব্দচয়ন একরকম এবং মুখে কথা বলি যখন, তখন অন্যরকম। যাঁরা পেশাদার লোক তারাও এর ব্যতিক্রম নন। এই চিঠিটা যেন চিঠি নয়, মুখোমুখি কথা বলা। কর্নেল চোখ বুজে গুম হয়ে গেলেন। কামড়ানো চুরুটের নীল ধোঁয়া ওঁর টাকের ওপর দিয়ে পেঁচিয়ে উঠল এবং সাদা দাড়িতে এক টুকরো ছাই খসে পড়ল।