Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিষাদের সুর || Samarpita Raha

বিষাদের সুর || Samarpita Raha

পাঁচ বছর হলো বৃদ্ধাশ্রমে আছে মাসীমা।মাঝে মধ্যে ছেলের ফোন আসে।

ছেলে হঠাৎ পৈতৃক বাড়ি বেচে একটা ফ্ল্যাট নিয়েছিল।ও বলেছিল মা আমার নামে ফ্ল্যাট কিনলে অফিস থেকে লোন নিতে পারব। বাড়ি বিক্রির টাকা ছাড়া অফিস থেকে লোন নিতে হবে।মা বলেছিল আরে তোর নামে কিনলে কি অসুবিধা।তুই একমাত্র ছেলে।সব তোর।
এখন কদিন ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকি।আমাদের ফ্ল্যাটে রঙ করা বাকি।রঙ হলে তোমাকে দেখিয়ে আনব।
না রে বাবা দেখানোর কি আছে।একেবারে দেখব।

তারপর ভাড়া ফ্ল্যাট ছেড়ে অফিসের কাজে ছেলে বৌমা ফ্রান্স।তোমার পাসপোর্ট হোক নিয়ে যাব…ততদিন বৃদ্ধাশ্রমে থাকো। মাসীমার তারপর আশ্রয় হলো বৃদ্ধাশ্রম।
সরলমনা মা..ঠিক আছে বাবা..পাসপোর্ট পেলে তো চলে যাব।সেই ছেলেকে শেষ দেখা।মা উদাস মনে বৃদ্ধাশ্রমের উপর থেকে ছেলেকে লক্ষ্য করে…..
মাসীমা কষ্টের কবিতা সযতনে মনে মনে লিখে ফেলেন।
উপর থেকে উঁকি মারে মা
বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেল ছেলে
ওপর থেকে বলছে মা
বাছা আসিস সময় পেলে।
সময়মত খাবার খাস বাবা
সাবধানে যাস রে সোনা
রাস্তা দেখে পার হোস
চলে গেলে আর বলব না।

দুর্গাপুজো আসলে প্রতিবারের মত এবারেও দুচোখের পাতা জলে ভর্তি হয়ে আসে।মনে পড়ে শ্বশুরের ভিটেতে দুর্গা পূজার কথা।বাড়ির পুজো মানেই ঘরোয়া আড্ডার পাশাপাশি নানাধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হতো। চুপচাপ ঠাকুর দালানে বসে বসে ছাঁচের প্রতিমা গড়া দেখতেন
ভাগ্য ভালো ওনার কোনো অসুখ ছিল না।
যার কেউ নেই..তাদের ভগবান রোগ দেন না।

মাসীমা ভাবে যখন বৃদ্ধাশ্রমে আসে নাতির কি কান্না।সাত বছর বয়স ছিল।ঠাম্মা দেখো আমার মা ,বাবা… বুড়ো ,বুড়ি ,হয়ে গেলে আমিও বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যাব।

এখন মাসীমার বাষট্টি বছর বয়স। সব সময় ছেলের কথা মনে পড়ে …শৈশব স্মৃতি ….
মনে পড়ে দুর্গাপূজার দশমীর দিনে বাড়ির পুজোয় নিয়ম করে নীলকণ্ঠ পাখিকে আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার কথা।পাখি ওড়ানো ছিল শুভ।
নীলকণ্ঠ শিবের আরেক নাম।
অনেকের মতে নীলকণ্ঠ পাখির দর্শনে পাপমুক্তি ও ইচ্ছাপূরণ হয়।
হে ঈশ্বর একটা নীলকন্ঠে পাখির দেখা পেতাম।তাহলে ছেলেকে দেখার বড্ড ইচ্ছা..সেটা যদি পূরণ করতে পারতাম।
বেশ কিছু শহরে প্রচলন আছে খাঁচায় কাপড় ঢেকে পয়সার বিনিময়ে এই পাখি দর্শন করার।
দুর্গাপুজোর নানা রীতি-রেওয়াজের মধ্যে ছিল দশমীতে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথাও। যদি নীলকণ্ঠ পাখি ধরা বা কেনা-বেচা অনেকদিন ধরেই হিন্দু ধর্মে বেআইনী বলে কথিত।নীল বর্ণের জন্য নীলকণ্ঠ পাখিকে শিবের দোসর বলে মনে করা হয় । দশমীতে দুর্গা প্রতিমার ভাসানের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা চালু হয়… এই বিশ্বাস থেকে যে …নীলকণ্ঠ পাখি আগে কৈলাশে গিয়ে …মহাদেবকে পার্বতীর আগমন বার্তা দেবে। অনেকদিন পর নীলকন্ঠ পাখির কথা মনে পড়তেই বেশ ভালো লাগে মাসিমার।

মাসিমা ছাদে গিয়ে তারাদের প্রায় লক্ষ্য করে।
একটা তারা যেন বলে আমাকে খুঁজছ তুমি।না না তোমাকে খুঁজছি না।তুমি ঠিক বলতে যখন তোমার ছেলে পেটে ছিল..উফ কি পা ছুঁড়ত ।তুমি বলতে এই বড় হলে আমাদের দেখবি তো…তখন লাথি মারিস না কিন্তু।

ভাগ‍্যিস আমার জন্য গচ্ছিত টাকা রেখে গেছিলে…সেই টাকায় বৃদ্ধাশ্রমের খরচ চালাতে পারি।
হঠাৎ একটি অল্পবয়সী মেয়ে এসে হাজির।
হাতে লম্বা লম্বা কাশফুল।তার বক্তব্য
আমি এখানে ডাক্তারী করতে আসব বিনা পারিশ্রমিকে।তার সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও করাবো।দুর্গা পুজায় আপনাকে নাচাবো দিদা।
কদিন ধরে নাটকের রিহার্সাল চলছে।পঞ্চমির দিন থেকে দশমী নানান অনুষ্ঠান।
গবাক্ষ ধরে ছেলের অপেক্ষায়।নীল আকাশে সাদা মেঘ….কাশ ফুল…শিউলির গন্ধ….একটি একটি করে ১০৮টা পদ্মের কুঁড়ি ফোটানো….মায়ের তাড়া….বুড়িমা তাড়াতাড়ি ফুল দে…ঠাকুর মশাই চাইছেন..গরাদ ধরে ভাবতে ভাবতে মাসীমা ছেলের কাছে পৌঁছে যায়।দেখ খোকা আমি এসে গেছি।তুই আমাকে লাথি মারতে মারতে পৃথিবীর আলো দেখলি ,বড় ‌হয়ে মারলে তা শুনব কেন??
এখানে তো দুর্গা পুজো হয় না।তবুও মন্ত্র ভেসে আসছে
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু……নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমঃ নমহ।আসতে আসতে শব্দ ক্ষীণ হয়ে আসছে।বুকে ঢাকের শব্দ।?বুকে চাপ দিচ্ছে।ক্র মশঃ বুকেতেই জোরে জোরে ঘুষি.?মরণের দ্বারে উপস্থিত হয়েছেন…উফ কি লোভ হচ্ছে …নাতিকে দেখবার…ঐ তো আমার নন্দকিশোর ঢাক বাজাতে বাজাতে আসছে…হ‍্যাঁ ঐ ঢাকটায় তো রথতলার মেলা থেকে কিনে দিয়েছিলাম…মাসীমা ভাবছেন কেন অতলে ডুবে যাচ্ছেন…মুখে কে যেন জল দিচ্ছে।ফ্রান্সের রাজধানী প‍্যারিসে এসেছেন।নাতি দুর্গা পূজার ঢাক বাজাচ্ছে।
ঢাং কুড়াকুড় ঢাং কুড়াকুড়
বলো বলো দুর্গা মাঈ কি…
মাসীমা বিড়বিড় করে বলেন “জয় “।

কে যেন বলছে মাসীমার ছেলেকে ফোন করেছি…ফোন ধরচে না…কতক্ষণ দেহ আর রাখা হবে….মাসীমা চুপিচুপি চলে যাচ্ছে….তার ছেলে ,নাতি যদি কষ্ট পায়।

আনন্দময়ীর আগমনে পৃথিবীর আকাশ বাতাস মুখরিত হয়।ফুললো সাগর,দুললো আকাশ ,ছুটল বাতাস—চারিদিকে কেবল শোনা যায় ঢাকের বাদ‍্যি,শঙ্খধ্বনি,উলুধ্বনি—ভেসে আসে চন্দনের সৌরভ —মা আসছেন ঘরে বর্ষপরে।আর ওদিকে আরেক মা সন্তানের অপেক্ষা করতে করতে চিরবিদায় নিচ্ছেন।
মাসীমা আপনার ছেলে হলো ছেলে মানব জাতির কলঙ্ক।তার দোসর ও তাই।ঠাকুর তাদের ও যে মাসীমার মতো দশা হয়।
আমি যাচ্ছি চলে—-অনুগ্রহ করে আপনারা আমার ছেলে ও বৌমাকে অভিশাপ দেবেন না।
গুনধর খোকা বৃদ্ধাশ্রমের কতৃপক্ষকে বলেছে..সব যখন শেষ….আর আমাকে আর কি লাগবে?বুঝতেই পারছেন যেতে গেলে অনেক খরচ।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা
নমস্তসৈ নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমহ নমঃ
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরুপেণ সংস্হিতা
নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমহ নমঃ
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরুপেণ সংস্হিতা
নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমহ নমঃ।

এই কদিন মাসীমা এই মন্ত্র সারাক্ষণ বলতেন।নাটকের রিহার্সাল ও করেছেন।
“বাজল তোমার আলোর বেনু-“–গানটি একদিনে তুলে নিয়েছিলেন।
মাসীমার হঠাৎ মৃত্যুতে বিষাদের সুর বাজে বৃদ্ধাশ্রমে।
বৃদ্ধাশ্রমের সবাই খুব কষ্ট পেয়েছেন।তাই কোনো নাটক হচ্ছে না।তাছাড়া মাসীমার পাঠ কে করবে!আগমনীর আগমন হলেও…মাসীমার মৃত্যুতে সকলের অনুভূত হয়…জগৎজননীর বোধনেই বিসর্জন হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *