Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে || Rana Chatterjee

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে || Rana Chatterjee

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে

“না দিদি দোহাই তোমায়, আমার খোকাকে এত কাছে টানবে না ,তোমার নিঃশ্বাসে বিষ আছে”-কথাগুলো বিশ্রীভাবে বলে হিড়হিড় করে বিট্টুকে টান মারলো পড়শী মিঠু ।খাটে বাপ্পা, বিট্টুর সঙ্গে লুডো খেলছিলো আর করুণা ওদের জন্য সবে সুজির পায়েস চাপিয়েছে।”একি বলছো গো মিঠু, আমি কিনা তোমার ছেলেকে.…”..কথাটা বলার আগেই ওরা ততক্ষণে বাড়ি। বিট্টুর কান্না গলা শোনা যেতেই থ্রিতে পড়া বাপ্পা হতাশ হয়ে বললো মা,তুমি তো আমার মতোই ওকে ভালোবাসো,কত কি বানাও, কিনে দাও তবু এমন কেন করলো মা! আমরা গরীব তাবলে ঠাকুর বন্ধুকেও কেড়ে নেবে বলে আক্ষেপে লুডো গুটিয়ে কেঁদে ফেলল।

লাগোয়া জানালা ধড়াম করে লাগিয়ে মিঠু বিট্টুকে মারধর করতে বুকটা মোচড় দিলো করুনার।মাস ছয়েক আগে হার্ট অ্যাটাকে স্বামীর মৃত্যু ওদের খাদের কিনারে এনে দিয়েছে।অদম্য মনের জোরে আয়ার কাজ নিয়ে সংসার টানছে সে। ফিরতে একটু দেরি হলে চিন্তা বাড়ে ছেলেটা একা থাকে ,কখনো বাপ্পা খেলতে আসে।মিঠুর আজ যে কি হলো! সব বোঝে করুণা, সংসারের হাল ধরতেই পাড়ায় ফিসফাস গুঞ্জন! কু মন্ত্রণার ঝড়।”কোথায় কাজ করে,কি কাজ, না কোথাও ফুর্তি করতে যায়”-ইস মানুষ পারেও বটে।তবু করুনার মাথা গরম করা উচিত নয় কারণ বিট্টুকে মানুষ করা একমাত্র লক্ষ্য।

নিস্তব্দ রাতে বুক হালকা করে নামা কান্নার স্রোত আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে ।ইস তাবলে কিনা আমার নিঃশ্বাসে বিষ! কি অবলীলায় বলল মিঠু যাকে কিনা এত স্নেহ করে। বাপ্পার খুব জ্বরের জন্য দুদিন কাজে যেতে পারেনি করুণা। আজ জরুরী তলবে “বাবুরে,সোনা আমার,আজ কাজে যেতেই হবে বাইরে চাবি দিয়ে যাচ্ছি কেমন,জলদি ফিরবো। একটা রোগীকে ড্রেসিং করিয়ে বাড়ি মুখো হতেই আকাশ ভেঙে বজ্র বিদ্যুৎ যোগে বৃষ্টি।
আর কত অপেক্ষা,মনটা কু ডেকে উঠলো কি যে করছে একা বাপ্পা!শহর ডুবেছে অন্ধকারে,এক হাঁটু জল টপকে ফিরতেই কিন্তু একি এত লোকের ভিড় চালা ঘরের সামনে!পাগলের মত চিৎকার করে কাছে গিয়ে দেখে ঝলসে যাওয়া বাপ্পা মাথা গুঁজে।বাজ পরে ঘরটা জ্বলে ঝাঁজরা।ঘন্টি বাজিয়ে এলো দমকল।পুলিশ উৎসাহী জনতার ভিড় ।সব শেষ স্বপ্ন,কিসের রইল ভবিষ্যত! আজ দশ বছর পেরিয়েছে।মোড়ের মাথায় ডাস্টবিনের পাশে যে পাগলিটা ঘুরে বেড়াতে ,প্রায়শঃ চিৎকার করে ওটাই করুণা।

মা কোনো পুরানো চাদর আছে?বিট্টুর আবদার বন্ধুরা মিলে অসহায় দুঃস্থ দের সাহায্য করবে।মিঠু একটা প্যাকেট বের করে দিতেই ,”মা এটা তোমায় করুণা আন্টি গিফট করেছিল,অন্য দাও,আমি ওকেই দেব ভাবছিলাম!
বিট্টু আরো বললো ,তুমি-বাবা শিক্ষা দিয়েছিলে “উপহার যতই ছোট হোক না কেন তা ফেরাতে নেই!” দুচোখে বেঁচে থাকার ধুলিস্মাৎ স্বপ্নে করুণা পাগলী চাদরটা খামচে কি জেনে ভেবে ফিক করে হেসে ফেলল।বিচারের বাণী এভাবেই নীরবে নিভৃতে কাঁদে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *