Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পরাজয় স্বীকার

ববি রায় জানেন কখন, ঠিক কখন পরাজয় স্বীকার করে নিতে হয়। ইন্দ্রজিৎকে পালানোর সময় দেওয়ার জন্য যে ডাইভারশনের দরকার ছিল তার চেয়ে অনেকটাই বেশি হয়ে গেল। বস-এর গোড়ালিতে হাতের কানা দিয়ে যে ক্যারাটে চপ বসিয়েছিলেন ববি রায় তাতে যে লোকটার পায়ের হাড় ভেঙে যাবে তা কে জানত!

বস যখন জান্তব একটা চিৎকার করতে করতে সারা ঘর এক পায়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে ঠিক সেই সময়ে তার বুন্ধু অ্যাসিস্ট্যান্ট খুবই বশংবদ পায়ে এগিয়ে এল। হয়তো বা বস-এর এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে ববি রায়কে ছিঁড়ে ফেলবার সদিচ্ছা নিয়েই।

হাতে রিভলভার থাকা সত্ত্বেও তা চালানো বারণ বলে লোকটা রিভলভারটা উলটে নিয়ে বাঁট দিয়ে মারল মাথায়। লাগলে ববি রায়ের খুলি চৌচির হত। কিন্তু ববি কার্পেটে শোয়া অবস্থাতেই লোকটার হাতে অনায়াসে লাথি চালিয়ে রিভলভারটা উড়িয়ে দিলেন। তারপর উঠে দাঁড়ালেন।

ভারতীয় গুন্ডারা আজ অবধি সত্যিকারের পেশাদার হল না। শুধু মোটা দাগের কাজ ছাড়া তারা কিছুই জানে না। বস-এর এই সহকারীটি আড়েদিঘে ববির দেড়া, গায়ে যথেষ্ট পেশী এবং মোটা হাড়ের সমাবেশ। রীতিমতো ভীতি উৎপাদক চেহারা। ঘুসিটুসি নিশ্চয়ই ভাল চালায়।

ববি পর পর তার তিনটে ঘুসি কাটিয়ে দিলেন শুধুমাত্র মাথাটা এদিক সেদিক চটপট সরিয়ে। যে-কোনও শিক্ষিত মুষ্টিযোদ্ধাই জানে যে, প্রতিপক্ষের ঘুসি কাটাতে হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে, এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ভগ্নাংশ সময়ে, চোখের পলকে। পর পর তিনটে ঘুসি হাওয়ায় ভেসে যাওয়ায় লোকটা এমন বেসামাল ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ল যে ববি তাকে উলটে মায়াভরে মাত্র একটি ঘুসি মারলেন। লোকটা পাহাড় ভাঙার শব্দ করে, মেঝে কঁপিয়ে, চেয়ার টেবিল নিয়ে মেঝেয় গড়িয়ে পড়ল। আর তখন বস নিজের গোড়ালি চেপে ধরে হাঁটু গেড়ে বসে অবিশ্বাসের চোখে ববিকে দেখছে।

যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে চেয়ে ববি রায় বুঝলেন, তিনি জয়ী। তবু নিজের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানেন, এটা যা ঘটল তা অনেকটা যাত্রা-থিয়েটারের মতো ব্যাপার। তার প্রতিপক্ষ ভালই জানে যে সাতঘাটের জল খাওয়া ববি রায়কে মাত্র দুটো গুন্ডা দিয়ে ঢিট করা যাবে না। সুতরাং রি-ইনফোর্সমেন্ট তারা রাখবেই। কিন্তু তারা কোথায় ওত পেতে আছে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।

ববি বস-এর দিকে চেয়ে ইংরিজিতে বললেন, এ খেলার একটা নিয়ম আছে, বস।

কী নিয়ম?

আমি তোমাকে এই অবস্থায় রেখে যেতে পারি না। তুমি সচেতন অবস্থায় থাকলে টেলিফোনে সাহায্য চাইতে পারো বা আমার পিছনে লোক লাগাতে পারো। এ খেলার নিয়ম হচ্ছে, হয় প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলো, না হয় তো অজ্ঞান করে দাও।

লোকটা অতিশয় কাতর মুখ করে বলল, আমার নড়বার সাধ্যই নেই। গোড়ালি ভেঙে গেছে।

ববি একটা রিভলভার তুলে নিলেন। বললেন, তবু নিয়ম। মাথার পিছনে ছোট্ট একটা চাটি। তারপর তুমি অনেকক্ষণ ঘুমোবে।

নাঃ! প্লিজ।

ববি মৃদু একটু হাসলেন। নিয়ম মানে না এ কেমন খেলোয়াড়?

মাথার খুলিতে মারা একটা আর্ট। অপটিমামের একটু বেশি হলেই কংকাশন। মারতে হয় ওজন কবে, খুব মেপে, খুব সাবধানে।

বস স্থির দৃষ্টিতে ববিকে দেখছিল। লক্ষ করছিল ববির সমস্ত নড়াচড়া। মৃদু স্বরে সে হঠাৎ বলল, লাভ নেই মিটার রায়। আমাকে মাবলেও আমাদের জাল কেটে বেরোনো অসম্ভব।

ববি অত্যন্ত সমঝদারের মতো মাথা নেড়ে বললেন, আমি জানি। শুধু জানি না তোমরা কিসের কোড আমার কাছে চাও।

বস অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে উঠে একটা সোফায় বসল। তারপর বলল, আমেরিকা থেকে তুমি একটা যন্ত্র চুরি করেছিলে।

ববি রায় অবাক হয়ে বললেন, কিসের যন্ত্র?

ক্রাইটন।

ববি মাথা নাড়লেন, খবরটা ভুল।

বস স্থির দৃষ্টিতে ববিকে নিরীক্ষণ করে বলল, খবরটা ভুল ঠিকই। তুমি যন্ত্রটা চুরি করোনি, কিন্তু তার নো-হাউ জেনে নিয়েছিলে।

ববি উদাস গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ক্রাইটনের মতো সফিস্টিকেটেড জিনিস তৈরি করতে কত সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি লাগে জানো? আর কতজন হাইলি-কোয়ালিফায়েড লোক?

বস মাথা নাড়ল, আমি বিজ্ঞানের লোক নই।

জানি। বিজ্ঞানের লোকেরা ওরকম বোকার মতো কথা বলে না।

কিন্তু তোমার কাছে আলট্রাসোনিক ক্রাইটন যে আছে তা আমরা ঠিকই জানি।

ভুল জানো। ভারতবর্ষে এমন কোনও কারখানা নেই যেখানে ক্রাইটন তৈরি করা যায়। আর শোনো বোকা, ক্রাইটনের বিশেষণ হিসেবে কখনও আলট্রাসোনিক কথাটা ব্যবহার করা যায় না।

বস গনগনে চোখে চেয়ে বলল, তুমি কি আমার পরীক্ষা নিচ্ছ?

মা, তোমার মতো গাড়লেরা কতটা বিজ্ঞান জানে তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তোমার প্রভু বা প্রভুৱা বোধকরি তোমার মতোই গাড়ল, যদি না তারা আমেরিকান বা ফরাসি হয়ে থাকে।

সেটা যা-ই হোক, আমরা শুধু জানঙে চাই, ক্রাইটনটা কোথায় আছে।

প্রথম কথা, ক্রাইটন নেই। দ্বিতীয় কথা, থাকলেও জেনে তোমাদের লাভ নেই। বাঁদরের কাছে টাইপরাইটার যা, তোমাদের কাছে ক্রাইটনও তাই।

শোনো বায়, তোমার সেক্রেটারি মিস ভট্টাচারিয়া আমাদের নজরবন্দি। চব্বিশ ঘণ্টা তার ওপর নজব রাখা হচ্ছে। আমরা একদিন না একদিন তাকে ক্র্যাক করবই।

ববি অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে লাথিত গলায় বললেন, তাকে নজরবন্দি করে কী হবে? তোমরা কি ভালো ববি রায় সামান্য বেতনভুক তার এক কর্মচারীর কাছে ক্রাইটনের খবর দেবে? ববি রায় তার সেক্রেটারিদের তত বিশ্বাস করে না।

তবু আমরা তাকে ক্র্যাক করবই, যদি তোমাকে না পারি।

ববি এবার ঘড়ি দেখে বললেন, তোমাকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। আর নয়। এবার তোমাকে আমি ঘুম পাড়াব। তারপর আমার কয়েকটা কাজ আছে।

বস এই সময়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। ববি খুব হিসেব-নিকেশ করে তার অপটিমাম শক্তিতে রিভলভারের বঁটটা বসিয়ে দিলেন বস-এর মাথায়। বস যথারীতি কাটা কলাগাছের মতো পড়ে গেল মেঝেয়।

ববি দ্রুত পকেট সার্চ করলেন। কোনও কাগজপত্র নেই। তার স্যাঙাতের পকেটও পরিষ্কার। ববি গিয়ে চিকার ঘরের দরজা খুললেন।

ঘরে কেউ নেই। কিন্তু বাথরুম থেকে জলের শব্দ আসছে।

ববি ঘরটা ভাল করে দেখলেন। কোনও ইন্টিরিয়র ডেকরেটারকে দিয়ে সাজানো হয়েছে। ছবির মতো ঘর। ওয়ার্ডরোবটা খুলে ববি দেখলেন, ভিতরে অন্তত পঁচিশ-ত্রিশটা দামি ড্রেস হ্যাঙারে ঝুলছে। দরজার ওপরে একটা ডার্টবোর্ডে লক্ষ করলেন ববি, মাঝখানের বৃত্তে অন্তত পাচটি ডার্ট বিধে আছে। চিকা যে চমৎকার লক্ষ্যভেদী তাতে সন্দেহ নেই। একটা ওয়াইন ক্যাবিনেটে বিদেশি মদের এলাহি আয়োজন। এমনকী এক বোতল রয়্যাল স্যালুট অবধি রয়েছে।

ববি ওয়াইন ক্যাবিনেটের ঢাকনাটা বন্ধ করলেন। আর ঠিক সেই সময়েই বাথরুমের দরজাটা খুলে গেল। ববি চোখ বুজে ফেললেন। একেবারে নগ্ন মেয়েমানুষ দেখতে তার অ্যালার্জি আছে।

চিকা গুনগুন করে গান গাইছিল। কী গান তা বুঝলেন না ববি। বোধহয় কোনও উষ্ণ বিদেশি পপ গান।

চিকা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় যখন আয়নার সামনে দাঁড়াল তখনও সে ঘরের অতিশয় মৃদু আলোয় ববি রায়কে লক্ষ করেনি। সুতরাং ববিকেই জানান দিতে হল।

মৃদু স্বরে ববি বললেন, পুট অন সামথিং মাই ডিয়ার।

চিকা আতঙ্কিত আর্তনাদ করে ঘুরে দাঁড়াল। চোখে দুঃস্বপ্নের অবিশ্বাস। মুখ হাঁ।

ববি ফের ইংরেজিতে বললেন, যা তোক একটা কিছু পরো হে সুন্দরী। আমাদের মেলা কথা আছে। মেলা কাজ।

চিকা চোখের পলকে একটা রোব পরে নিল। তারপর ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, এটা কী করে সম্ভব? তোমার তো এতক্ষণে–

ববি মৃদু হেসে বললেন, বলো। থামলে কেন?

বিস্ময়টা আস্তে আস্তে মুছে গেল চিকার চোখ থেকে। একটু মদির হাসল সে। তারপর গাঢ় স্বরে বলল, সুপারম্যান।

ববি রায় দেখছিলেন, মেয়েটি কী দক্ষতার সঙ্গে নিজেকে সামলে নিল। তার হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল।

চিকা তার বিছানায় বসে অগোছালো চুল দু’হাতে পাট করতে করতে বলল, আমি জানতাম তুমি ওদের হারিয়ে দিলেও দিতে পারো।

ওরা কারা?

চিকা ঠোঁট উলটে বলল, রাফিয়ানস।

তোমার সঙ্গে ওদের সম্পর্ক কী?

চিকা তার রোবটা খুবই বিচক্ষণতার সঙ্গে ঈষৎ উন্মােচিত করে দিয়ে বলল, কিছু না। এইসব গুন্ডা বদমাশরা মাঝে মাঝে আমাদের কাজে লাগায় মাত্র।

তুমি ওদের চেনো?

চিকা তার বক্ষদেশ এবং পায়ের অনেকখানি অনাবৃত করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বলল, শুধু একজনকে। বস।

বস আসলে কে?

গ্যাং লিডার। বোম্বাইয়ের দক্ষিণ অঞ্চল বস শাসন করে। তুমি যদি ওকে মেরে ফেলে থাকো তাহলে তোমার লাশ সমুদ্রে ভাসবে।

আমি অকারণে খুন করি না। ওরা আমার কাছে কী চায়?

আমি জানি না। ওরা একটা কোড-এর কথা বলছিল।

আর কিছু নয়?

চিকা মৃদু হাসল। তারপর বলল, সুপাবম্যান, চিকা কি একেবারেই ফ্যালনা? তোমার কি একটুও ইচ্ছে করছে না চিকার মধ্যে ড়ুবে যেতে? কিংবা তুমি হোমোসেকসুয়াল নও তো!

না চিকা। আমি হোমোসেকসুয়াল নই। কিন্তু যে লোকটিকে প্রাণের ভয়ে কাটা হয়ে থাকতে হচ্ছে তার কাছে সুন্দরী মেয়ের শরীর অগ্রাধিকার পায় না।

আজ রাতে আমার শরীরের অতিথি হয়ে দেখো, মৃত্যুভয় তুচ্ছ মনে হবে।

চিকা রোবটা নিতান্ত তাচ্ছিল্যের সঙ্গে খুলে ফেলল।

ববি চোখ বুজলেন। বললেন, ডোন্ট মেক মি হেট ইউ চিকা। আমি ন্যাংটো মেয়েমানুষ দেখতে পারি না।

চিকা রোবটা আবার গায়ে দিয়ে বলল, বুঝেছি। তুমি চাও পোশাকটা নিজের হাতে খুলতে।

ঠিক তাই।

তাহলে খোলো সুপারম্যান।

বলে চিকা এগিয়ে এল।

বাইরের ঘরে দরজাটা খুব ধীরে ধীরে খুলে গেল এবং একটি দৈত্যাকার যুবক দরজা জুড়ে দাঁড়াল। চোখে প্রখর দৃষ্টি। মুখখানা লাল টকটকে।

চিকা!

চিকা চোখের পলকে ববি রায়ের কাছ থেকে তিন হাত ছিটকে সরে গেল।

মোট চারজন ঢুকল। একে একে।

নিঃশব্দে।

ববি রায় নিষ্কম্প দাঁড়িয়ে রইলেন।

তিনি জানেন, কোন সময়ে তার হার হয়েছে। পরাজয়। এই হচ্ছে পরাজয়।

তবু চারজন সশস্ত্র লোকও ববির যথার্থ প্রতিপক্ষ নয়। ইতিপূর্বে সংখ্যাধিক প্রতিপক্ষের হাত থেকে বহুবার তাকে আত্মরক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু ববি লক্ষ করলেন, চিকা তার বিছানার পাশের ছোট্ট বেডসাইড টেবিলের ওপর রাখা বাক্স থেকে একটা ডার্ট তুলে নিল। চিকার হাতটা ওপরে উঠল এবং এত দ্রুত নিক্ষেপ করল জিনিসটা যে হাতখানাকে ক্ষণেকের জন্য মনে হল ওয়াশ-এর ছবি।

ববি দ্রুত ঘুরে গেলেন। কিন্তু তবু এড়ানো গেল না। ডার্ট-এর তীক্ষ মুখ এসে গভীরভাবে গেঁথে গেল বাঁ কাঁধ আর ঘাড়ের সংযোগস্থলে। ছিটকে গেল রক্তবিন্দু। ববি সামান্য একটা শব্দ করলেন।

তারপরই মাথায় একটা তীব্র আঘাত।

চোখ অন্ধকার হয়ে গেল। ববি রায় জানেন, কখন পরাজয় স্বীকার করতেই হয়।

ওয়ান টু ওয়ান হলে ইন্দ্রজিৎ ভয় খায় না। সে লড়তে প্রস্তুত। প্রতিপক্ষ যদি একা হয়, তবে সে যত বলশালীই হোক, তার হাত এড়ানো শক্ত নয়। বিশেষ করে পালানোর প্রতিভা ইন্দ্রজিতের সত্যিই সাংঘাতিক। বলশালী লোকেরা, ইন্দ্রজিৎ লক্ষ করেছে, তেমন জোরে দৌড়তে পারে না।

কিন্তু ইন্দ্রজিতের বিস্ময় অন্যত্র। সে দিব্যি গঙ্গার ঘাটে বসে নিরাপদ দূরত্ব থেকে লীনা ও দোলনকে নজরে রাখছিল এবং তাদের সম্ভাব্য বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করার কথা ভাবছিল। ঠিক এই সময়ে তার মনে হল লীনা আর দোলন ছোকরা অকারণে তার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে। তারপরই লীনা গিয়ে ফস করে গাড়ি থেকে কী একটা নিয়ে এল। আর তার পরই একটা ঢ্যাঙা পালোয়ানের আবির্ভাব।

কোনও মানে হয় এর? কথা নেই বার্তা নেই ছোকরাটা এসেই ইন্দ্রজিতের দামি কোটের কলারটা ধরে হ্যাঁচকা টানে পঁড় করিয়ে দিল। কবজির কী সাংঘাতিক জোর!

এখানে কী হচ্ছে! অ্যাঁ?

ইন্দ্রজিৎ এ প্রশ্নের সঙ্গত উত্তরই দিল। তবে চিঁ চিঁ করে। ইংরিজিতে।

গঙ্গার হাওয়া খাচ্ছি।

খুব জোর একটা নাড়া দিয়ে ছোকরা বলল, হাওয়া খাচ্ছ না আর কিছু!

ডান হাতে পটাং করে একটা চড় কশাল ছোকরা। আর তাতে চোখে লাল নীল তারা দেখতে লাগল ইন্দ্রজিৎ। ওয়ান টু ওয়ান বটে, কিন্তু তার প্রতিপক্ষ যে একাই এতজন তা আগে জানা ছিল ইন্দ্রজিতের।

ববিকে সে বহুবার অনুরোধ করেছে দু’-একটা প্যাঁচ-পয়জার শেখানোর জন্য। কিন্তু কাজপাগল লোকটা শেখায়নি। ববি জুডোর ব্ল্যাক বেল্ট। দুর্দান্ত বক্সারও ছিল একসময়ে। ছোটখাটো চেহারা বলে মালুম হয় না, কত বড় বড় দৈত্য-দানবকে কাত করতে পারে।

কিন্তু ববির কথা মনে হতেই খানিকটা উদ্বুদ্ধ হল ইন্দ্রজিৎ। ছোরার হাতে ইঁদুরকলে ধরা অবস্থাতেই সে হঠাৎ হাঁটু ভাঁজ করে ছোকরার তলপেটে চালিয়ে দিল।

কাজ হল চমৎকার। ছোকরা তাকে এক মুহূর্তের জন্য আলগা করে দিল।

ইন্দ্রজিৎ হাতটা ছাড়িয়ে নিয়েই ছুটতে লাগল।

কিন্তু রাস্তায় পা দিতে না দিতেই একটা ট্যাক্সি ঘঁস করে এসে একদম সামনে দাঁড়িয়ে গেল।

ক্যা! ভাগ রহে হো? বেওকুফ!

ইন্দ্রজিৎ দেখল, সেই বুড়ো ট্যাক্সিওয়ালা। স্বজাতি এক শিখ যুবকের এরকম হেনস্তা দেখে বীরের জাত সর্দারজির ক্ষোভ হয়ে থাকবে। সিটের তলা থেকে একটা কৃপাণ বের করে বুড়ো নেমে এল। বয়স সত্তর হলে কী হয়, তেজ যুবকের চেয়ে বেশি।

কিন্তু ততক্ষণে লীনা, দোলন আর যুবকটি গাড়িতে উঠে পড়েছে।

ইন্দ্রজিৎ চট করে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ল।

বুড়ো সর্দারজি মুক্ত কৃপাণটি পাশে রেখে ড্রাইভারের সিটে উঠে বসে বলল, পিছা করু?

হাঁ।

সর্দারজি তার নিজস্ব ভাষায় যা বলল, তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ছুকরির তো বহুত এলেম দেখছি। এক ছুকরির পিছনে তিন-তিনজন বেওকুফ! আরে গবেট, মেয়েমানুষের মধ্যে আছেটা কী? মাংসের ডেলা ছাড়া আর কী পাও তোমরা?

এই দার্শনিক মন্তব্যসমূহে মাথা নেড়ে এবং হু হাঁ করে সায় দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার আছে ইন্দ্রজিতের?

প্রশ্ন হল, ছোকরাটা কে? হঠাৎ তার আবির্ভাব ঘটলই বা কেন?


অন্য গাড়িতে লীনা, দোলন আর ছেলেটা পাশাপাশি বসে।

লীনা জিজ্ঞেস করল, আপনি কে?

সাদা পোশাকের পুলিশ। আমরা কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন থাকি।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। লোকটা আমাদের পিছু নিয়েছিল।

কেন নিয়েছিল তা বলতে পারেন?

না। তবে—

তবে?

না, তেমন কিছু নয়।

আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি ম্যাডাম। পুলিশকে লোকে বিশ্বাস করতে চায় না ঠিকই, কিন্তু পুলিশ কতটা হেল্পফুল তা তারা জানে না বলেই।

লীনা অমায়িক হেসে বলল, বোধহয় লোকটা আমার প্রেমে পড়েছে।

চৌরঙ্গীতে ছেলেটা নেমে গেল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *