বাসের জানালার ধারের সিট
শৈশবের সারল্য কখনও ভোলা যায় না ! কিন্তু বাসে উঠেই আপনি আমি প্রথমেই জানালার ধারের সিট খুঁজি। আর এ হল একধরনের উন্মাদনা, যেখানে বয়স কোনো বাধা নয় ! আর শহর ঘুরে আমার শহর হয়ে বাসটি যখন নিজ গন্তব্যে এগিয়ে চলে, তখন সেই জানালার ধারের সিটে বসে বাইরের নানান দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবন, অসংখ্য পথচারী। কিম্বা সদ্য প্রেমে পড়া যুবক যুবতী ! পাশ দিয়ে হয়তো হুশ করে তীব্র গতিতে একটি বাস ওভারটেক করছে ! সদাসতর্ক ট্র্যাফিক পুলিশের দৃষ্টি এড়ায় না ! এদিকে আমাদের বাসটি এগিয়ে চলেছে, আরও কিছুটা এগলো । চোখে পড়ল হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক। হয়তোবা অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে তাঁর! এদিকে আমাদের বাসের কন্ডাক্টর আপন মনে টিকিট কেটে চলেছেন।মাঝেমধ্যে কারোর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বচসা হচ্ছে। ওই দেখুন, তীব্র দাবদাহে তৃষ্ণার্ত মানুষজনের জন্য জলসত্রের আয়োজন করেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এদিকে আমার মনটা যেন কল্পনার আকাশে ডানা মেলে! হঠাৎ বৃষ্টি এলো ! রেসকোর্সের পাশ দিয়ে যখন বাসটি ছুটছে, তখন প্রথম বৃষ্টিতে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধটা আমার মনকে আরও মাদকতায় আচ্ছন্ন করে দিল! জানালার ধারের সিটে বসে প্রত্যক্ষ করলাম একটা শববাহী শকটে মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য চলেছে। হঠাৎ চোখে পড়ল একটা রাজনৈতিক দলের নাতিদীর্ঘ মিছিল ! কেউ হয়তো পথের ধারে আখের রস খাচ্ছেন। বাসের জানালার ধারের সিট থেকে দেখি সারিবদ্ধ দোকানে ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে ! এই ‘২৪ সালে এসে এখন আর আগের মতো বাসে লেবু লজেন্স ওয়ালা লজেন্স বিক্রি করতে তেমন একটা ওঠে না। কদাচিৎ চোখে পড়ে তাদের। কিন্তু ইদানিং হিজড়া মাসিরা প্রায়শই বাসে উঠে যাত্রীদের থেকে কিছু পয়সা প্রার্থনা করে ! এভাবেই বয়ে চলে জীবন !’ তিলোত্তমা কলকাতা’ অথবা ‘সিটি অব জয় ‘ যেনামেই অভিহিত করি না কেন, আজও বাসের জানালার ধারের সিট থেকে দেখা কলকাতা আছে কলকাতাতেই !