Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাসর রাত || Suchandra Basu

বাসর রাত || Suchandra Basu

ডিউটি সেরে সবে মাত্র বিশ্রাম নেয়ার জন্য ঘুম ঘুম চোখে বিছানায়। ইমারজেন্সি থেকে কল আসছে বারবার।ঘুম চোখে ইমারজেন্সিতে এসে চমকে গেলাম।

গায়ের চাদর রক্তে ভেজা। মুখের রঙ ফ্যাকাসে, সাদা। রোগীর নাম হিষ্ট্রি জানতে চাইলাম।দেখলাম সদ্য বিবাহিত জামা’ই, এবং আরও অনেকে রোগীর সাথে।

আমার প্রশ্ন শুনেই যেন জামাই চোরের মত,পালিয়ে গেল। এক মহিলা তেজের সাথে বলল, ওর নাম রুমি।

মুখে পান চিবোতে চিবোতে ভদ্রলোক বলল, মেয়ে দেখতে সুন্দর। সারাদিন ঘরে একলা থাকে। মেয়ের বাবা সকালে বেড়িয়ে যায়।তাই দেরি না করেই পাত্রস্থ করে ফেললেন।মেয়ে হলে তো বিদায় দিতেই হবে। ক্লাস নাইন পর্যন্ত মেয়েকে পড়িয়েছে। কম কি! তাছাড়া আমাদের ছেলেও ভাল চাকুরে।এমন ছেলে কোথায় পাবেন মিয়া।

বর পক্ষের যারা এসেছিল , কথা বার্তায় অভিজাত ও ব্য’ক্তিত্বপূর্ণ।মনে হয় দর কষাকষি করে কনে পক্ষ থেকে যৌ’তুক হিসেবে যা নিয়েছে, তা কম নয়। শুধু কম হয়ে গেছে কনের বয়স। সবে মাত্র ১৪ পেরিয়ে ১৫ বছরে পড়েছে রুমি।মা মরা মেয়েকে বিদায় দিতে পেরে খুশি হয়েছে বাবা। মৃদু হাসলাম আর ভাবলাম বিয়ে তো একটি সামাজিক বৈধতা মাত্র।পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে সতীত্ব যাচাই করার উৎসব।বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেয়েকে বন্দী করা হয় নতুন ঘরে। যে মেয়েটি সবে মাত্র জীবনের সংজ্ঞা শিখতে শুরু করেছে, শৈশব থেকে কৈশোরে পা রাখতে যাচ্ছে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই, সাজিয়ে হয় বাসর রাত। সমাজ অনেক এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিয়ের সময় মেয়ের মতামতটা এখনও গৌন।

বাসর ঘরে চিৎকার করা যে উচিত নয়, এতটুকু বুঝতে শিখেছে রুমি। হাত পা ছুঁড়ে বরের লালসার যজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসার মিথ্যে চে’ষ্টা। ‘বর’, যখন আদিম পশুত্ব থেকে বাস্তবে ফিরে আসে, তখন রুমি রক্তে ভেজা অচেতন। তখনও ফিনকির মত রক্ত পড়ছে আর অচেতন অবস্থায় রুমিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখনও রুমির শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা কানাকানি করে কথা বলছিল, ব্যঙ্গাত্মক হাসি তামাশা করছিল। লজ্জায় কারও দিকে তাকাতেও আমার ঘেন্না করছিল।

আমি নার্সকে সাথে নিয়ে, রুমিকে পরীক্ষা করলাম। ভয়াবহ রকমের পেরিনিয়াল টিয়ার (যৌনাঙ্গ ও তার আশপাশ ছিঁ’’ড়ে গেছে)।হাতে পালস দেখা হল।অপারেশন করে ছিঁ’ড়ে যাওয়া অংশ ঠিক করতে গেলাম। এই ভয়াবহ সংকটাপন্ন রোগীকে নিয়ে হিমসিম খাওয়ার অবস্থা তখন আমার।

রোগীর সাথে যারা এসেছিল তাদের জানালাম রক্ত দরকার। শুনে জানালো, তারা রক্ত জোগাড় করতে পারবে না। যা হয় হবে! বুঝানোর চে’ষ্টা করে কোন লাভ হল না। শেষে ধমক দিতে তারা রক্ত জোগাড় করতে রাজি হল।অপারেশন থিয়েটারে রুমির সাথে বাকী রাত। রুমির বাবা ভোরে আসতেই রক্ত জোগাড় হল কোন রকমে আর শ্বশুর বাড়ির সবাই উধাও। ছয়দিন পর, রোগীর সেপ্টিসেমিয়া ডেভলপ করলো।

কিন্তু ইনফেকশন রক্তে ছড়িয়ে গেছে। ভাল অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। রোগীর বাবা বললেন, আর খরচ চালাতে পারবেন না।তাই রিলিজ নিয়ে রুমিকে বাড়ি নিয়ে গেলেন। বাড়ি যাওয়ার চারদিন পরে আরও বেশি অসুস্থ হওয়ায় আবার হাসপাতালে ভর্তি হয়। পালস দেখলাম,একবার চোখ খুলে বন্ধ করলো রুমি। সেই বন্ধ শেষ বন্ধ। এই সমাজের প্রতি ঘৃণায় তার চোখ জ্বল জ্বল করছিল কি না কেউ দেখেনি। ভোরের স্বল্প আলোয় বিদায় জানালো জীবনের নিষ্ঠুরতাকে! রুমি ‘একিউট রেনাল ফেইলরে’ মারা গেছে। ডায়ালাইসিসের কথা বলা হয়েছিল,কিন্তু তারা এত ঝামেলা করতে চায়নি। শ্বশুরবাড়ি থেকে সেই বাসর রাতের পর, কেউ আসেনি। তাদেরই বা এত চিন্তা কি, একটা বউ মরলে দশটা বউ পাওয়া যায়! রুমি একা নয়, এ রকম ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু সচেতনতা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress