Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।


ছিঃছিঃ ছিঃছিঃ কি।লজ্জা শশীর!তবু ও মেয়ের কথায় শান্তি হয়েছে। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল আমার মরণ হলে কি করবি?তাই বলি কি বিয়ে তে রাজী হয়ে যা।পরীক্ষা হয়ে গেলে বিয়ে কর। না। আমি আরো পড়বো। এরপর ও তো তুই রাজী হবি না?আমি কোন রকমে বিয়ে আটকে রেখেছি।একবার ও যদি জানতে পারে যে তুই রাজী না তাহলে জোর করে বিয়ে দেবে। কি বলে বাবাকে রাজী করিয়েছো? কি আবার, বললাম আমার বুকটা একেবারে খালি হয়ে যাবে। তেমনি দুর্দিন এলে তখন বিয়ের কথা ভাববো। বাবার মতো ই তো আর একটা পুরুষ এসে জুটবে। দুর বেটা সব আদমি এক কিসিমের কা নহী হোতা। একটা ছেলে আছে, তোর বাবুজী বুলছিল। বিরিজ ইনিসপেকটর।তোকে তার বহত পসন্দ। কিন্তু আমাদের জাতীয় না। কি জাত? তুমি জাত মানো? আমি কিছু ই মানিক না।শুধু চাই একটা ভালো ছেলে তোকে খুব ভালোবাসবে। শশীর চোখে জল দেখে বাদামী মাকে জড়িয়ে ধরে। মায়ের চোখ উপচানো জলে জীবনের কষ্ট মাখো মাখো হয়ে গড়িয়ে পড়েছে মায়ের গালে।মায়ের চোখ মুছে দিয়েছে বাদামী। কেঁদো না মা, আমি আছি তো।

ব্রিজ ইন্সপেক্টর তেজপুর থেকে রিলিভিং করতে এসেছে শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ির ব্রিজ ইন্সপেক্টর বিশেষ ট্রেনিং এ গেছে বিদেশে। সেই জায়গায় এসেছে হর কিষণ সিং।দুজনেই সিং হলেও হর কিষণ সিং পাঞ্জাবি। সুবোধ সিং হাত ছাড়া করতে চায়নি সুযোগটা। ব্রিজ ইন্সপেক্টর জামাই হলে সুবোধ সিং এর পদোন্নতি হবেই। তাছাড়া টাকা কড়ি ও কিছু হবে আশা। কারণ হর কিষণ এর বয়স বাদামীর থেকে বছর কুড়ির বেশী হবে ই।অবশ্য দেখে কেউ বলবে না হর কিষণ বয়সটা থামিয়ে দিয়েছে একই জায়গায়। আটত্রিশ এর হর কিষণ সতেরোর ভরন্ত যুবতী বাদামীকে দেখতে এসেছে।সেই পুরুষের চোখ জোড়া শুধু ভালবাসার কথাই বলতে পারে বলে মনে হয়েছে বাদামীর। তাঁর দু চোখে কোন ছলনা, লালসার ঠাঁই নেই তাই মনে হয়েছে বাদামীর। হিন্দু নিয়মেই বিয়ে হয়ে গেল। দুলহনের পা মাটিতে পড়লেও যেন দুলহার কষ্ট হয়। বাদামী ভাবে মা ঠিক ই বলেছে, সব মানুষ সমান হয় না। সবাই বাবুজীর মতো নয়। বাদামী এতো ভালোবাসা পাবে তা ভাবতে ও পারেনি। এমন একটা পুরুষ যে আছে তা বিয়ে না করলে জানতে ও পারতো না। এমন মানুষ কে প্রাণ “নিছাবর ” করতে দ্বিধা নেই বাদামীর। বাদামীর প্রি ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট বের হতে ঘরের মানুষের এত আনন্দ তা বাবুজীর কোনদিন হয়নি। পরীক্ষার ভালো ফল হতে দেখে বাদামী পড়তে চেয়েছে। হর কিষণ বলেছএই বছর বাদ দাও।তুমি কলেজ চলে গেলে একা আমি ঘরে কি করব?মাঝে মাঝে ঘরে এলে তোমাকে পাবো না। তুমি তো অফিস এ থাকবে। তা হোক। এ বছরটা বাদ দাও। অফিস এ সব চেয়ে উঁচুপদে আসীন ব্যক্তিটির বিবি হয়েছে বাদামী।নানান রসে বসে রান্না টা বাদামীই করে। মনের মানুষের জন্যই রাঁধে বাদামী। পাঞ্জাবের ছেলে তাই মকাই কা রোটি, চানে কা শাক,মুলী কা পরাঠা। এ সবই তৈরি করে। সবই স্বামীর মন রাখতে করা।

কেতায় কিছু কম যায় না বাদামী। স্কুল জীবনে বান্ধবীদের বাড়িতে, শিক্ষিকাদের বাড়িতে ডাইনিং হল এ টেবল এর ড্রেসিংকরা দেখে শিখে নিয়েছে সব।সে সবই এখানে কাজে লাগাচ্ছে। কখনো যাতে ঘরের মানুষ টার আফশোস না হয় গরিব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে। যার জন্য এতো ব্যবস্থা, তার কিন্তু খাওয়ার দিকে নজর ই নেই ।তাঁর অন্য খিদে দেখে আশ্চর্য বাদামী। আগে গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নাও। আমি খাদ্য রসিক না।

হর কিষণ বাদামীকে বিছানায় নিয়ে গেছে। ওষুধ টা খেয়েছো তো? হ্যাঁ। ওটা কিসের ওষুধ বলো তো? হর কিষণ হাসতে হাসতে বলেছে। ওটা খেলে তোমার শরীর ভালো হবে। আমার শরীর তো ভালোই আছে।শুধু শুধু খাবো কেন?কাল থেকে আর খাব না। তা করো না। তুমি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছো। সত্যি কথাটা বলো তো। ওটা খেলে তোমার পেটে বাচ্চা আসবে না।

বাদামী চিৎকার করে উঠলো। নহী, মুঝে বাচ্চা চাহিয়ে। এখন ই। বাদামী, বি এ গুড গার্ল। আমরা তেজপুর গেলে তুমি যা ইচ্ছা করো। এখানে নানান ঝামেলা হয়ে যাবে। তাছাড়া আমাদের তো তেজপুর ফিরতে হবে। নিরুপায় বাদামীকে রাজী হতেই হয়েছে। মনে ভেবেছে ঠিক বলেছে হর কিষণ। এক জায়গায় থিতু না হলে এ সব এখন না হলে ই ভালো । কতো চিন্তা ভাবনা করে হর কিষণ। কারখানার চারটের সিটি বাজবার সঙ্গে সঙ্গে হরকিষণ এসে যায় বাড়িতে। কোনদিন দেরি করে না। যতো রঙ ঢঙ সব বাদামীর সঙ্গে। একেবারে বাবুজীর উল্টো। মেয়ের স্বামী সোহাগী রুপ টা ভালো লাগে শশীর। মনে মনে বলে,”হে রাম ওকে আমার মতো কপাল দিও না। শান্তি দিও। মেয়ে কে সকালে ঢুকতে দেখে বলেছে, কি রে কেমন আছিস?জামাই কেমন? তুমি ঠিক ই বলেছ মা,সব পুরুষ সমান হয় না। একেবারে বাবুজীর উল্টো। অফিস ছাড়া সারাদিন ঘরেই কাটায়। শশীর জল এসে যায় চোখে, মেয়ের কথা শুনে। মেয়ে সুখী,তাতেই শশীর সুখ। ভালো থাক। অনেক উঁচুতে ওঠ।তবে আমার মতো ভুল করিস না। নিজের পায়ে দাঁড়াস। শশী ক’দিন আগে সুবোধ সিং এর হাতে এক গোছা নোট এর তাড়া দেখেছে। ভয়ে বুক কেঁপেছে শশীর ।ধরেই নিয়েছে যে মেয়ের কপাল ও পুড়েছে।
মা,কি ভাবছো?
না,জামাই বাবাজি তেজপুর যাবার কথা কিছু বলেছে?
না,জিজ্ঞেস করিনি।
কিঁউ নহী পুছা?পুছ লে না। সেখানে কৌন কৌন আছে সব পুছ লে না। তোর বয়স টা কাঁচা তাই আমার চিন্তা।
বেশি চিন্তা করবে না। তাহলে তোমার তকলিফ বাড়বে বৈ কমবে না। মেয়ের বিয়ের পর শশী একা হয়ে গেছে। সুবোধ সিং এর অত্যাচারে মেয়ে কে জড়িয়ে বুক টা হালকা করত। সে উপায় নেই এখন তাই এখন বুকে চাপ চাপ ব্যথা বয়ে বেড়ায় শশী। শয়নে জাগরণে শুধু ই রামের ধ্যান।’ হে রাম, হে ভব তারণ হরি, পাড় উতার। উদ্ধার কর হরি, রাম । চোখ জলে ভরে যায়।

সুবোধ সিং ঘরে ফিরতে সাহস করেই শশী ভয়ে ভয়ে কথাটা তুলেছ, হাঁ জী দুলহা বাবাজি কবে তেজপুর যাবে?অত দূর মেয়ে টা চলে যাবে ভাবতে কষ্ট হয়।
বাদামী সেখানে যাবে না। এখানে ই থাকবে সে কথা হর কিষণ পহলেই বলেছে। সেখানে বাদামী কে নিয়ে যেতে পারবে না।
কেন পারবে না?তাহলে বিয়ে কেন করল?
চুপ যা শালি। ওখানে ওর ঔরত আছে। বুকের ছাতি পিটে পিটে কাঁদতে লাগল শশী।
হে রাম, আমার বিটিয়া রানীর কি হলো গো।
একদম চুপ যা।
তুম আদমি ইয়া জানয়র? বাপ কভি আপনা বেটি কো বেচতা হ্যয়? কাঁদতে কাঁদতে শশী বলে, “হে রাম , মুঝে উঠা লো”।
একদম চুপ হো যা।আট হাজার রূপায়া দিলো এমনি? বাদামী কে বললে তুঝে ম্যায় মার ডালুঙ্গা।
মুঝে মার ডালো। রো রো কর জীনে সে মরনা আচ্ছা হ্যয়। বিটিয়ার সাদিকা ছে মহিনা বাদ মে জানলম।
ফের ভি রো তি হ্যায়? বলতে বলতেই উত্তম মধ্যম প্রহার শুরু হলো।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress