বাদামী -5
ঘরে ফিরে ই নজরে পড়েছে বিছানায় মা শুয়ে আছে। ভয় পেয়ে গেল বাদামী।
—–কি হয়েছে মা?পেটের ব্যথাটা কি বেড়েছে?
—–হ্যাঁ, ঠিক হয়ে যাবে। ভয় পাস না।
—-কিছু খেয়েছো ?
—–না তু খা লে। মেয়ে রান্না ঘরে চলে গেছে। শশী চেয়ে চেয়ে দেখছে মেয়ে কে।কী খাটুনি না খাটছে মেয়েটা।বুকটা মুচরে উঠছে শশীর। একটু পরে ই বাদামী রান্না ঘর থেকে ফিরেছে ।হাতে একটা বড়ো বাটি।
——এই নাও,এটা খেয়ে নাও।
——কী ওটা?
——–চিড়ে সিদ্ধ করে লেবু,নুন, চিনি দিয়ে দিয়েছি ।
—বিটিয়া, তোরটা কোথায়? শশীর চোখে স্নেহের চাহনি।
—–এই তো এখন ই আনছি।
খাওয়া হতেই জোর করে রেলওয়ের হাসপাতালে নিয়ে গেল মা কে।হাসপাতালে পৌঁছেই বাদামীকে শশী বললো
—–সকালে ই নিয়ে আসলি হামাকে। তোর বাবুজী আমাকে ঘরে না দেখলে খুব ঝগড়া করবে।
——-মা এভাবে ভয়ে ভয়ে কি মানুষ বাঁচতে পারে?
——–না না পারে না। তোকে ফেলে আমার মরণে ও সুখ নেই। শশী চোখ ঢেকেছে কান্না সামাল দিতে।
——যাক গে, আমি বাড়ি যাচ্ছি।তুমি চিন্তা করো না। তাছাড়া বাবুজী বারোটার আগে ফিরবে না। তার আগেই ঘরে ফিরতে পারবে। ঘরে ফিরে ও মায়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে। মায়ের এতো দেরি তো হবার নয়। বাবুজী ঘরে ফিরে অশান্তি করবে না তো!ভয় করছে বাদামীর। অবশ্য রান্না হয়ে গেছে। নিজেকে শাসন করেছে, এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? মা তো অন্য কোথাও যায় নি যে বাবুজী রাগ করবে? তবু ও মনের খুঁতখুঁত করছে। মায়ের কিছু হয়নি তো!—হে রাম,মা কে ভালো রেখো। দরজায় জোর শব্দ হতে ছুটে গেল বাদামী, যাক্ মা এসে গেছে। দরজা খুলে দেখল সুবোধ সিং দাঁড়িয়ে।
——কি রে ,দরজা বন্ধ করেছিস কেন?তোর মা কোথায়?
—–মায়ের পেটে ব্যথা হচ্ছিল তাই হাসপাতালে দিয়ে এসেছি। চলে আসবে। এমন টা আশা করেনি সুবোধ সিং ,তাই চুপ করে রইল। বাদামীর মনে হলো বাবুজী যেন অন্য রকম মানুষ। তাজ্জব কি বাত!মা বাড়ি নেই তাতে বাবুজীর রাগ নেই বরং একটু খুশির আমেজ চোখে মুখে। সন্দেহ টা মাথায় আসতেই বাদামীর মনে হলো শরীর টা তালগোল পাকিয়ে গেল ।সহজ হতে পারছে না। বাবুজীর দৃষ্টি টা যেন অচেনা লাগছে। পাড়ার মাস্তানগুলোর মতো চাউনি। বিদ্যুত খেলে যায় মগজে। মনে মনে বলে “হে রাম ,মা কে এনে দাও”।সহজ হবার জন্য বলে
—-বাবুজী, তুমি স্নান করে নাও। আমি তোমাকে খেতে দিয়ে দি।
——না তোর মা আসুক। এক গ্লাস জল দে তো।একটু শোবো। মুখে দিচ্ছি বললেও ইচ্ছে করেই কল ঘরে কলঘরে গ্লাস মাজতে বসে যায়। মনে মনে রামের ধ্যান করে চলেছে। একেবার মাটি দিয়ে ঝকমকে করে তুলছে গ্লাস। আবার মাজছে। মনে মনে রামের ধ্যান করে চলেছে। হঠাৎ চোখে পড়ল বাবুজী সদর দরজা বন্ধ করছে। ওদের দরজা তো শোবার আগে বন্ধ হয় না। তবে যে ভয় পাচ্ছিল তাই ঘটতে যাচ্ছে!!
——কি রে কতক্ষণ লাগবে জল আনতে ?
—–গ্লাস টা মেজে আনছি।
——–জল লাগবে না, এদিকে আয়।
ভেতরে কাঁপুনি, মনে “হে রাম রক্ষা করো।” অমনি দরজায় কড়াঘাত। প্রাণটা জুড়ালো বাদামীর। মায়ের গলার স্বর যে এতো মধুর তা জানা ছিল না আগে। সব যন্ত্রণার অবসান হলো। বাবুজীকে দরজা খুলতে দেখে বাদামী জল নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
——-এই নাও জল। রেগে গেল সুবোধ সিং।
–এতক্ষণে টাইম হলো পানী লানেকা?
ঝলসানো দৃষ্টি মেয়ের দিকে। চোর ধরা পড়ার মতো সুবোধ সিং এর আড় ভাবে পড়েছে শশীর দিকে। শশীর নজর প্রশ্ন করেছে স্বামীকে, তুমি ঘরে আছ তবু দরজা বন্ধ কেন?সে দৃষ্টি একবার মেয়ের দিকে আর একবার স্বামীকে দেখেছে। মেয়ের নিস্তার পাওয়া ভাব খানা দেখে শশীর বুক কেঁপে উঠেছে। কি হতে যাচ্ছিল ভেবে শশীর পেটে পা সেঁধিয়ে যাচ্ছে। তখুনি কলঘরে ছুটেছে। সাঁঝের বেলায় টিউশন থেকে ফিরেই মায়ের কাছে বসেছে বাদামী।
—–চিরুনি টা লিয়ে আয়। ইস চুলগুলো কি হয়েছে? শশীর মুখে ফোটে নি সেই লজ্জার কথা বলতে। কী করে মেয়ের কাছে স্বামীর কথা বলতে। স্তবদ্ধতা ভেঙেছে মেয়ে। মেয়ের কথায় চমকে ফিরেছে মেয়ের দিকে।
—–মা তুমি আমাকে একা ঘরে রেখে যেও না। ছিঃছিঃ ছিঃছিঃ। কি লজ্জা শশীর।