বাণীরুদ্র
পোশাকি নাম বাণীরুদ্র । নামটা ছেটে বাণী করা হয়েছে । এ নামেই ঘরে ডাকা হয় । শিশুকাল খেকেই এই বাণী নামটা ওর পছন্দের ছিল না । পাড়ার মেয়েরা মসকরা করতো – এমা তোর নাম বাণী? তুই কি মেয়ে নাকি রে ? এই সব সইতে হত বাণীকে । দেখতে দেখতে বড় হতে লাগল বাণী । এবার ওদের কথাগুলো আরও শাণ দেওয়া হল । ‘এমা ! তুই কি মেয়ে নাকি ? মেয়েদের মত ঢং করিস কেন ?’ প্রথম প্রথম ওদের কথায় হাসতো বাণী । পরে ওদের কথার ঝালে গা জ্বলেছে বাণীর । এই গায়ে বেঁধার ব্যাপারটা শুরু হয়েছে ক্লাস ফাইভ্ থেকে । কারনটা বাণীর অঙ্গভঙ্গি । লেখাপড়ায় বাণী এক নম্বরে থাকায় বন্ধুরা বেশী কাবু করতে পারেনি বাণীরুদ্রকে । তবুও ঐ মেয়ে বলে গাল দেওয়াটা অসহ্য লেগেছে । রাগটা মায়ের ওপরই পরে । কেন যে তার নাম বাণী রাখতে গেল । একটা কথা ওর মনকে ছুটিয়ে বেড়িয়েছে । ওকি সত্যিকারের মেয়েদের মত দেখতে ! আয়নায় খুঁটিয়ে দেখেছে নিজেকে । ও কি মেয়েদের মত রং ঢং করে ? বাণী কি পাগল হয়ে যাবে ? ছেলেদের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে শুরু করল । মেয়েদের সাথে মিশলে কোন ঝামেলা নেই । তাই করলো বাণী । অলি, বেলা, সুতপা, রনিতা ওরা সব বাণীর বন্ধু হয়ে গেল । ক্লাস সিক্স-এর ফাইনাল-এ বাণী প্রথম হল । জয় জয়কার বাণীর । বাণী ভাবল – এবার বুঝি ছেলেরা ওকে মেয়ে বলে বিদ্রুপ করবেনা । তা হল না । কিছু ছেলে চুপ করে গেলেও বাকিরা উত্যক্ত করতে ল । একদিন দুদিন করে পার হয়ে গেল । বাণী স্কুলে গেল না । মা-বাবা বুঝিয়েও ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারলো না । ওর ঐ এক গোঁ – ওরা আমায় মেয়ে বলে । আমি ঐ স্কুলে পড়বো না । বাণীর বাবা মা থেমে গেছেন ছেলের ঐ কথায় । কারন তারাও বুঝতে পারছেন পরিবর্তনটা । তবুও ছেলেকে বুঝিয়েছেন পরিমলবাবু ।
– তুমি জানো, তোমার স্কুলে না যাবার ফলটা কি হবে ? তোমায় তাড়িয়ে দেবে ঐ স্কুল থেকে ।
বানীরুদ্র- ওরা আমায় মেয়ে বলে খেপায় । ওখানে যেতে ভাল লাগেনা । বাণীর বাবা ছেলের ঐ কথায় বলেন- সে কি ? কেন ? ভাল রেজাল্ট হয়েছে তোমার, তিনটে বছর পরই মাধ্যমিক । ভালো লাগেনা বললে হয় ?
বাণী- ওরা আমায় মেয়ে বলবে কেন ?
পরিমল বাবু- ঠিক আছে, আমি হেডস্যারের সাথে কথা বলবো ।
ছেলের চোখে জল দেখে বুকটা মুচড়ে উঠেছে । কাছে টেনে নিয়েছেন ছেলেকে । পিঠে হাত বুলিয়ে ছেলেকে বলেছেন, – বাবা, ওরা তোমায় মেয়ে বলে, তাই বলে তুমি মানুষ হবে না ? সবাইকে দেখিয়ে দাও যে তুমি একটা মানুষের মত মানুষ হয়েছ । তোমার পরিচয় একটা ছেলে বা মেয়ে নয় । তুই একটা মানুষের মতই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত কর । করবি তো বাবা ?
বাবার চোখের জল দেখে বাণীরুদ্র নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে । বাবা তো ঠিকই বলেছে । বলুকগে ওকে মেয়ে । ভগবান ওকে মানুষ হিসাবে সৃষ্টি করেছে । সেই সৃষ্টি যাতে উৎকৃষ্ট হয়, সে চেষ্টা করবে বাণীরুদ্র । শক্ত করে নিয়েছে নিজেকে । খুব পড়বে । অনেক বড় হতে হবে । বাবার কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে । প্রায় এক মাস পর স্কুলএ গেল । স্কুল-এ পা দেবার সাথে সাথে গুনগুন শুরু হয়ে গেল । সে সব কথা কানে দিলনা । মন্ত্রের মত মনে মনে বলতে লাগল, ‘আমাকে মানুষের মত মানুষ হতে হবে । আমি শুধুই মানুষ হব’ । ইচ্ছে করেই পেছনের বেঞ্চে বসল । যেখানে কেউ বসেনি । ইংলিশের স্যার, ক্লাসে ঢুকতেই গুঞ্জন থেমে গেল । স্যার বললেন, ‘বাণীরুদ্র এতদিন আসনি কেন ? এ্যাপলিকেশন এনেছ ?
বাণী – হ্যাঁ স্যার ।
স্যার- পেছনে কেন ? সামনে এসে বস।
স্যারের আদেশেই সামনে বসেছে । সেই থেকেই একই জায়গায় বসেছে প্রতিদিন । স্কুলে কি করে রটে গেছে বাণীকে মেয়ে বলায় এতদিন বাণী স্কুলে আসেনি । স্কুল তোলপার হয়ে গেলেও বাণীকে কেউ টলাতে পারেনি। বছরের পর বছর বাণী প্রথমস্থান অধিকার করেছে । সহপাঠীদের গোঁফের রেখা দেখা গেলেও বাণীর মুখ চাছাছোলা । বুকের গড়ন বিসদৃশ । না ! কষ্ট পেলে চলবে না । বাণীর সাহায্য যারা নিয়েছে তারা বাণীর কাছের হয়ে গেছে । বাণীর বাবা মায়ের কর্মক্ষেত্রেও নানারকম আলোচনা হতে থাকলো । বাড়িতে সবারই কথা কমে আসতে লাগলো । মাধ্যমিকে ফার্স্ট হয়ে কলেজে ভর্তি হল বাণী । ঘরের বাতাসও দুষিত হতে শুরু করল । মায়ের মেজাজের তল পাওয়া যায়না । স্নেহ ভালবাসা যেন কোথায় উবে গেল । বিশেষ করে মায়ের । সেদিন বাবা মায়ের এক টুকরো কথা কানে এল।
– তোমার ছেলের কথা শুনতে শুনতে আমি পাগল হয়ে যাব । আমি আর অফিস যেতে পারবো না ।
বাবা বললেন – চুপ করো, শুনলে কষ্ট পাবে ।
মা- আমিই অন্যায় করেছি ওকে জন্ম দিয়ে । তখন যদি জানতাম এমন হবে, তাহলে – ।
বাবা- থামবে তুমি ? ওর কি দোষ ?
মা- আমি এখন আমার মৃত্যুছাড়া আর কিছু চাই না ।
কান্নায় বাণীর মায়ের গলা বুজে আসে ।
বাবা- ছিঃ ছিঃ তুমি না ওর মা । ও সব শুনতে পেয়েছে । বাণী কি এসেছিস্ ?
উত্তর না দিয়ে বাণী পাশের ঘরের থেকে বেড়িয়ে এসেছে । বাবা আজকাল বাণীকে ছেলে বলেনা, বলে আমাদের সন্তান । কারন ঐ ভাষাটা উভয় লিঙ্গ হতে পারে । এই মা কি সেই মা ! যে সেই ছোট্ট বেলায় ওকে ছেড়ে দিতে চায়নি মামার সাথে । মনে পড়ে সে কথা।
মা -সে কি রে তুই যাবি ? আমি যাব না তো ।
বাণী বলেছে – আমি স্টিমারে চড়বো ।
বাণীর তখন সবে সাত । মামা পান্ডু থেকে আমিন গাঁও নিয়ে গিয়েছিল । তখন নলিনী বাণীকে ছাড়তে কি কান্নাই না কেঁদেছিল ।
– বল আমায় ছেড়ে যাবিনা কোনদিনও ।
সেই প্রতিশ্রুতি করার কথা নলিনী ভুলে গেছে আজ। তখন বাণী মাকে ভয় দেখিয়েছিল, ‘যদি বকো তাহলে চলে যাব’ । আজ নলিনী যা বলছে তা বকারই সামিল । কটন’ কলেজে ভর্তি হল বাণীরুদ্র । ছাত্রদের সাথে, লেকচারারদের সাথে পরিচয় হল । প্রথম সারিতে বসা একজনের দিকে সকলের দৃষ্টি । কানে মাকড়ী, চুল গুলো গোছ করে পেছন দিকে বাঁধা । পড়নে চাঁপা প্যান্ট, উর্দ্ধাঙ্গে বড় গলা গেঞ্জি । বুকের গড়ন চোখে পড়তেই সে চোখে চমক লাগল সকলেরই । তবে কি মেয়ে ? তখুনি দৃষ্টি গেল তার মুখে । ভঙ্গি নারী সুলভ। তবে চিবুকের ঢল দেখে বোঝা যাচ্ছে যে গোঁফ ও দাড়ি বাড়ানোর চেষ্টায় বেশ ক’বার ব্লেড চালানো হয়েছে । উৎসুক কয়েকজন এগিয়ে এসেছে । হাসি ছাড়া বাণী একটা কথাও খরচ করেনি । ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে দারুন পার্থক্য রয়েছে । মেয়েদের পাশ কাটিয়ে যাবার সময় মেয়েদের মুখে কষ্টের ছাপ । ছেলেরা একেবারে আলাদা । বাণীকে বাণ মেরেই ওদের আনন্দ । দিনে দিনে বাণীর মনে কঠিন আস্তরন পড়ে গেল । নিরেট পাথর হয়ে গেল সহপাঠী সুতপা একদিন বলল। – কিছু বলিস না কেন ওদের ? ওরা তোকে আজে বাজে কথা বলে । তাতেও হাসে বাণী । যত কম কথা বলবে ততই ভাল। অন্য কথা বলেছে বাণী ।
– বল, তোর প্রিপারেশন কেমন হল ?
সুতপা- নারে ভাল হয়নি । ‘পোর্সিওর’ ট্রায়াল সিনটা বোধহয় আসতে পারে তাইনা ?
বাণী- নোটস দরকার হলে আমার থেকে নিস্ ।
সুতপা – বাণী, তুই কি ভাল রে !
বাড়ির পরিবেশ যারপর নেই খারাপ । ঘরে ঢুকলেই কানে আসে বাবা আর মায়ের ঝগড়া । ওকে নিয়েই সব কথা। বাবা সামাল দিতে পারেনা মায়ের মুখকে । মায়ের গলা কানে আসে ।
– বুঝলাম ওর সমস্যা আছে । তাই বলে নিজেকে না ঢেকে তা আরও প্রকট করার কি দরকার ? কানের মাকড়ি, হাতে বালা, চুলগুলো মেয়েদের মত ক’রে বাঁধার কোন দরকার আছে ?
বাবার গলা কানে কানে আসে । – আরে আজকাল সিনেমায় দেখোনা ? তাতে কি হয়েছ-।
নলিনী- -একে জ্বালায় মরছি তায় আবার তুমি ছেলের হয়ে বলে আমায় জ্বালিওনা । বুকটা কি বলবে !ওটা চেপে চুপে রাখা যায়না ? তা করবে কেন ? তাহলে যে আমার শান্তি হয়ে যাবে ।
– ‘বাণী’,। বাবার ডাকে বাণী ঘুরে দাঁড়িয়েছে ।
বানী- বলো ।
বাবা- তোর মা বলছিল যে –
বানী- শুনেছি । তবে আমি যেটা নই সেটা দেখিয়ে ভন্ডামি করতে পারবো না ।
মা নলিনী- তা করবি কেন ? রাজ্যশুদ্ধ লোককে জাহির করবি যে তুই একটা –
বাণী – জাহির করছি কিনা জানিনা । ভাঁওতা দিতে পারবো না ।
নলিনী- ভাওতার কি দেখলি তুই । বুকের গরণটা একটু চেপে রাখলেই তোকে পুরুষ বলে মনে হয় ।
বানী- না হয়না । একটা কথা মনে রেখো মা, আমি যা, তা যদি মেনে নিতে না পার তবে আমায় ছেড়ে দাও ।
নলিনর ক্ষোভের গলা- শুনলে তুমি, বাণী কি বলছে ? ওর জেদটাই বড় হল, আমাদের কথা একবারও ভাবল না ।
বানী- আমার মনটার কথা কে ভেবেছে ? জীবনটা অন্য মুখে চলতে থাকলে কত কষ্ট হয় তা জানো ? তুমি কেন ,সমাজই আমাদের দাম দেয়না ।
ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে বাণী। পথে দেখা সুতপার সাথে । ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে এসেছে দু’জনে । দূরের স্টীমার দেখা যাচ্ছে । আরও দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে । বহুদিনের সেই স্টীমারে চড়া, মামাবাড়ি যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল । মনে হল, মামাবাড়ি গেলে কেমন হয় ! না, ওখানেও ঝড় উঠতে পারে । মামাকেও বিদ্রুপ শুনতে হবে। সেটা হতে দিতে পারেনা বাণী ।
সুতপা- কিরে বাণী কি ভাবছিস্ ?
বাণী- ভাবছিলাম বাড়িতে পড়া হচ্ছে না । একটা জায়গা পেলে ভালো হত ।
সুতপা- জায়গা ? আছে । আমাদের বাড়ির ভাড়াটে উঠে গেছে । থাকলে থাকতে পারিস ।
বাণী- ভাড়া কত দিতে হবে ?
সুতপা – দুর ঐ ক’দিনের জন্য আর কিসের ভাড়া ? তবে হ্যাঁ দরকারে আমায় হেলপ করতে হবে । ইংরাজীটা শুধু ! আর সব আমি পারবো ।
বাণী- কবে যাব বল ?
সুতপা- আজই চল ।
বাণী- না। কালই যাব ।
বইপত্র রাত্রেই গোছ করে রেখেছিল । তাই দুপুরেই বাবা-মা বাড়ি না থাকার সময়টা বেছে নিল বাণী । বেশ কিছু টাকা জমান ছিল সেটাও নিয়ে নিল । আগাম ভাড়া দিতে হবে । বেড়িয়ে পড়ল বাবা-মায়ের ছত্রছায়া থেকে অজানা উদ্দেশে ।দেখতে দেখতে পরীক্ষা এসে গেল ।বি.এ. তে প্রথম হয়ে পাশ করল বাণী । এম.এ তে ভর্তি হয়ে গেল । সঙ্গে চলল টিউশন করা । বাণীকে কে আটকায় ! দেখতে দেখতে দু’টো বছর পার হয়ে গেল । ইংলিশ-এ মাষ্টার ডিগ্রী হোল্ডার, একেবারে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট । এর মাঝে বাবা একবার দুবার এসেছে বানীকে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাণী নিজের সিদ্ধান্তে অটল।
সুতপাই খবরটা দিয়ে গেল, বাণীকে ।
-বাণী, তুই লেকচারারের পদটা পেয়ে গেছিস ।
যে সে কথা নয়, গৌহাটি ইউনিভার্সিটির লেকচারার বাণীরুদ্র বোস ।
বাণী- সুতপা তুই লেকচারার-এর পদে আমার নাম দেখেছিস্ ?
কথা বলতে বলতে চোখে জল এসে গেছে বাণীর ।
সুতপা- হ্যাঁ রে।আজতো আনন্দের দিন । বাড়ি যা । বাবা, মাকে প্রণাম করে আয় ।
বাণী- ‘তুই জানিস্ না সুতপা ।
সুতপা- আমি সব জানি । তোর বিপদের দিন ঐ ঘরে ভাড়াটে নেই বলেছিলাম । সত্যি ভাড়াটে কোনদিন ছিলনা । তোর মনটাকে আমি খুব কাছের করে দেখেছিলাম । তাই বাবাকে বলে তোর জন্যই ঘরটা খালি করেছিলাম ।
বাণী- সুতপা তোর মত কেন সব মানুষগুলো হয়না । কেন ওরা আমায় আঘাত দেয় । আমার সৃষ্টির জন্য কি আমি দায়ী ?
সুতপা- আর দেবেনা । দেখে নিস তুই । এবার তোকে সমীহ করবে । উপরের তলায় উঠে গেলে আর কেউ কিছু বলার সাহস পায়না । সব সময় মনে রাখবি, সুতপা বলে তোর একটা বন্ধু আছে ।
সেই সুতপার বিয়ে হয়ে গেল । খুব খালি লাগছে বাণীর। কে ছিল সুতপা ? কিছুই না ! তার খুবই আপনএকজন।
কথায় বলে – মায়ের থেকে বাড়া কেউ নেই । সুতপা কি মায়ের থেকে বেশী ভালো বেসেছিল বাণীকে ! হয়তো বা! পার্থক্য ছিল । বাণীকে কিছু বললে, মায়ের বুকটা পোড়ে । ছেলেকে স্বাভাবিক প্রতিপন্ন করতে না পারার জ্বালায় জ্বলতে থাকে । সুতপা হয়তো করুনা করেছে বাণীকে ।
বাণীরুদ্র থেমে থাকেনি । ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে পড়াতে পি.এইচ্.ডি করে ফেলেছে । এখন সে ডক্টর বাণীরুদ্র বোস । গৌহাটী ইউনিভার্সিটির প্রফেসর । হেড অফ দা ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট । হাস্যস্পদ হতে হয়না আর । এখন ছাত্র-ছাত্রীরা গর্ব ভরে চেয়ে থাকে অমন একটা উজ্জ্বল পথিকৃৎ-এর দিকে । কাটাকাটা চোখ মুখ । যেন মেক্সিকান বিউটি । নরম পেলব একটা মিষ্টি হাসি সব সময় লেগেই থাকে।
এই রূপেই যেন বাণীরুদ্রকে মানায় । মেয়ে হলে কেমন লাগতো ? মোটামুটি । ছেলে হিসাবে ? চলন সই ।
কিন্তূ সে সবে এই নির্ভয়ে খুলে মেলে ধরার ভঙ্গিটা কি ফুটে উঠতো ? বাইরেটা নরম, কিন্তূ ভেতরটা কত শক্ত হলে প্রকৃতিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে একেবারে সমাজের শীর্ষে উঠতে পারে। ক্লাস শেষ হতে চেম্বারে ঢুকল বাণী । একি ! ও কে বসে আছে ! এতো বাবা । পরিমল বাবু চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন । এগিয়ে গেলেন বাণীর দিকে ।
পরিমল বাবু বললেন – বাবাকে ভুলে গেলি ?
বাণী- তোমাকে কি ভুলতে পারি বাবা ? তুমিই তো আমায় পথ দেখিয়েছ । নইলে আজ এখানে পৌঁছতে পারতাম ?
পরিমল – তোর মাও এসেছে, তোর কাছে আসতে লজ্জা পাচ্ছে ।
বাণী ছুটে গেছে ভিজিটর্স চেয়ারের দিকে, সেখানে মা বসে আছে । শরীর একেবারে ভেঙ্গে গেছে । বাণী হাত ধরল মায়ের।
বাণী- চলো,মা ভেতরে বসবে ।
নলিনী নিজেকে আর চেপে রাখতে পারলেন না ।কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাণী- কেঁদোনা মা । সব ঠিক হয়ে গেছে । তুমি দেখো, আমি তোমার সেই বাণীই আছি । একটুও পালটাইনি ।
বাণীর চোখে জল । নলিনী জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে । ঘরে ফিরে চল্ বাবা ।