Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাড়িকোঠি || Purabi Dutta

বাড়িকোঠি || Purabi Dutta

আজিমগঞ্জ — মাঝে গঙ্গা, নাম তার ভাগিরথী, ওপাড়ে জীয়াগঞ্জ, জমজ দুই বালিকা শহর। অনবরত এপাড়- ওপাড় — মোটা মজবুত ,পরপর বাঁশ জোড়া দিয়ে তৈরি সেথা খেয়াপাড়াবার নৌকো–বেশ কয়েক টন নিয়ে সাঁতড়ে যেতে পারে।তাই অনায়াসেই গুচ্ছের টোটো, মোটর গাড়ি শুদ্ধ বোঝা নিয়ে অনবরত এপাড় ওপাড়। (গাড়ি নিয়ে নৌকোয় পাড়!!! বাপরে, ভয় না সংস্কার?)

তাই আজিমগঞ্জ পৌছে গিয়েছিলাম কল্যাণী এক্সপ্রেস ধরে NH12

“বাড়িকোঠি”, জৈনপট্টি ,মুর্শিদাবাদ এ এক হেরিটেজ আবাসন,যা মাত্র পাঁচ বছর আগে ২০১৯ এ সূচনা– গঠন শৈলী অসাধারণ এই জৈনপট্টির,আসল নাম ” বড়িকোঠি “। সেই সেকালে যখন মুর্শিদাবাদ ছিল বাংলা,বিহার, ঊড়িষ্যার রাজধানী, নবাবী আমল সবে কলুষিত হতে শুরু হচ্ছিল বৃটিশরাজের সংস্পর্শে। তাবাদে ছিল বাণিজ্য প্রসারে বনিকদের আনাগোনা গুজরাট থেকে মুর্শিদাবাদ।

আবলুশ কাঠ আসবাব , ঝাড়লণ্ঠন,আর নক্সাদার পাথরের সাথে স্থপতি ও প্রকৃতির গাঢ় নীল আকাশের সন্ধি।

সেই সুদুরকালে ১৭৭৪ সালে, এ “বড়িকোঠি” বাসবাড়ি তৈরি করেছিলেন শেহেরওয়ালী দুধোরিয়ার পূর্ব পুরুষ।

“বড়িকোঠি” অর্থাৎ বড়ো কুটির বা বড়দের বাড়ি।

বাংলা, বিহার, ঊড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদে ছিল জৈনদের ব্যবসা — পাথর, বাঁশ,পাট, তুলা ও তাঁত শিল্প আর ছিল মহাজনী কারবার।

আড়াইশো বছর পূর্বের স্থাপত্য–অটুট রয়ে গেছে এখনও “ঝাড়োখা” অর্থাত মধ্যযুগের বিশেষ হাতে রঙ করা মিনে কাজের কাঠের wall hanging গোলাপী মোটিফস, দরবার হল, মিল্টন টাইলস। আছে জেনানা মহল।

প্রায় অর্ধ শতাব্দী তালাবন্ধ থাকার পর এ “বড়িকোঠি” মালিকের বংশধর দর্শন দুধোরিয়া ও তার সহোদরা লিপিকা এই পর্যটন আবাসনের বর্তমান অধিকর্তা।

সেই নবাবী আমলে “বড়িকোঠির ” মালিকের আশপাশে ছিল মেহনতি কর্মচারীদের কাঁচা ঘরের আবাস স্থল– খুব কাছাকাছি তাই অতি সঙ্কীর্ণ সব গলি পথ।

ঢেলে সাজানোর পরিবর্তে পাকা হয়েছে তাদের বাড়ি, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্য , রয়ে গিয়েছে তাই ঐ অলিগলি পথ,যেখানে শুধু টোটোই চলতে পারে।

গা ঘেঁষে ঘোলাজলের ভাগিরথী, নদীপাড়ে আকাশ চালের নীচে ব্যবস্থা আছে প্রাতরাশ,ডিনার — প্রকৃতির অবস্থা বুঝে অবশ্যই, ঘোলা নদীর মোহময় তীরের দৃশ্যের সাথে সাথে পেটপূজো।

এ নদীতে জোয়ার ভাটার ত প্রশ্ন নেই। প্রায় সারা বছরই একই ভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে স্রোত প্রবাহিত।

এক সন্ধ্যায় নৌকা বিহার হলো সন্ধ্যা তারা আর শুক্লপক্ষের কাস্তে চাঁদের সাথে। নৌকাটি শুধুই আমাদের — বাঁশের তৈরি নৌকো, কোন কাঠের নয়। আছে তাকিয়া দেওয়া লাল মখমল গদীর ব্যবস্থা — আধশোয়া অবস্থায় প্রকৃতি উপভোগ। অন্ধকার মুক্তির জন্য সাবেকি হ্যারিকেন। আর ডান হাতের কারবারের জন্য কাঁচের গোল টেবিল, চেয়ার আর একদিকে । সার সার লাইফ জ্যাকেট, এর পেছনে পর্দাঘেরা বোটচালকদের রান্নাঘর তথা কিচেন। আমাদের আপ্যায়নের জন্য নানাবিধ ফল, চা, স্নাকস্, কেক ইত্যাদি কিছুক্ষণ পরপরই নিয়ে আসছিলেন বড়িকোঠির সেবিকারা। সকলের পরনেই লালপাড় সাদা শাড়ি।

উজান বেয়ে উত্তরে তারপর হাল ছেড়ে স্রোতের সাথে দক্ষিণে। পশ্চিমাকাশে জ্বলজ্বলে সাক্ষি সন্ধ্যাতারা। চওড়া নদীর ওপাড়ে অন্ধকার গাছের সারি, প্রচুর আম গাছ আর বাঁশঝাড়– কোন লোকালয় নেই, নেই কৃত্রিম আলো, পাখিরা আলয়ে,নেই তাদের কলতান। পৃথিবীর গোল বলয়ে শুধুই আমরা, চারদিক ধুসর এক সান্ধ্যআলোর রোশনাই, বাকা চাঁদ ক্রমশই গাঢ় সোনালী হয়ে উঠছিল । প্রকৃতির বুকে ভেসে বেড়ানো ! অবশ্যই দু-একটি নৌকো দেখা যাচ্ছিল, আর নানা ঘাটের ক্ষীণ আলোর রোশনাই। আর মাথার উপরে আকাশে একটি একটি করে জ্বলে উঠছিল নক্ষত্র উদয়ের আলো। নেই কোন নাগরিক কোলাহল–আছে নিস্তব্ধ প্রকৃতির নিঃশ্বাস- প্রশ্বাস।

বড়িকোঠিতে সন্ধ্যেরাতে শুনলাম বাউল গান তাদের নিজস্ব আবার কিছু ফরমায়েজী।সাথে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিহিতা তরুণীদের নাচ।

এ হেরিটেজ হোটেলে আছে পনেরোটি বিলাসবহুল সুইট। আছে এক প্রশস্ত দুর্গামন্ডপ, প্রতি বছর পূজা হয়। অংশগ্রহণ করেন পর্যটকেরাও। এক প্রান্তে সংরক্ষিত আছে কপিকল সহ প্রাচীন পাতকুয়ো। সাবেকি প্রাসাদের সাথে যুক্ত হয়েছে সুবিধার্থে বর্তমান বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবস্থা। যথাযথ নবনির্মিত আধুনিক স্নানাগার। খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা অবশ্যই নিরামিষ — হরেক রকম — লোভনীয়।

আছে এক দোকানঘর। বাঁশ ও চটের ও নানা সৌখীন দ্রব্য থেকে নবাবী আতর। অবশ্যই কিছু কিনে নিলাম– বাহার, বেলাফুল ও কাকচিকালি । এ ভ্রমন যেন টাইম মেশিনে ২৫০ বছর আগের এক স্থাপত্য ইমারত দর্শন।

ভালো লাগল—- সবচেয়ে ভালো লেগেছে লালপাড় সাদা সূতীর শাড়ি পরিহিতা পরিসেবিকাদের সেবা ও যত্ন।

আবার সমাদরে আমার পদপাতায় চিত্রিত করে দিলেন অলক্ত -আলপনায়।

ওখানে সকলেই নারী কোন পুরুষ পরিসেবক নেই। যত্ন ও দেখভাল এতই আন্তরিক ছিল যে মনে হচ্ছিল আমরা শুধুই পরম আদরের অতিথি, যা অভাবনীয়–

প্রথম প্রবেশেই পেয়েছিলাম ফুলচন্দন সিঁদুর ও গোলাপজলের অভ্যর্থনা।

সত্যিই সে এক আশাতিত যত্ন ও আন্তরিক ভালোবাসা।

মনের কোঠায় জমা রইল – “বড়িকোঠি”র ছবি, যা হলো মধ্যযুগের ও বর্তমান যুগের আমোদ অনুভূতির এক মিশ্র রসায়নের মেলবন্ধন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *