Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বর্ণমালা দিয়ে গাঁথা || Shamsur Rahman

বর্ণমালা দিয়ে গাঁথা || Shamsur Rahman

তুমি কি আমাকে এই মুহূর্তে ডাকছো খুব কাছে?
এখন তোমার কণ্ঠ থেকে বেরুচ্ছে না
কোনো শব্দ কিছুতেই। ওরা জালে আটকে রেখেছে
তোমার শব্দের পাখিদের, চোখ বেঁধে
রেখেছে আড়ালে, পাছে তুমি দেখে ফ্যালো
হঠাৎ আমার মুখ। এইতো কয়েক ঘণ্টা আগে দেখা হলো,
অথচ তোমাকে কত যুগ
দেখিনি। আমার
হৃদয় মাড়িয়ে যাও, তবু আমি আর্তনাদ করি না কখনো
ভুলেও, স্বপ্নেরা কলকলে আগুনের স্পর্শ লাগা
মৌচাকের মৌমাছির মতো
মরে থাকে চারদিকে। দ্যাখো আমাদের ভালোবাসা
নাম্না গাছটিকে আষ্টেপৃষ্টে
জড়িয়ে রেখেছে এক সাপ চক্রান্তের
কুণ্ডলীর মতো। বলো দেখি,
কী করে বাঁচাই একে ছোবলের বিষক্রিয়া থেকে?

এখানে আসবে তুমি শেষবেলা গায়ে
মেখে, চোখে নিয়ে
হরিণীসুলভ কবিতার খুব গাঢ় কোমলতা, বলেছিলে।
কী করে আসবে বুকে নক্ষত্রের মৃত্যু, নির্ভরতা,
নিরাপত্তাহীনতার করোটির জানাজার স্মৃতি
বয়ে, এ সড়ক বেয়ে? এতো দূর পথ, বারুদের গন্ধময়,
টিয়ার গ্যাসের জ্বালা সর্বত্র ছড়ানো,
পুলিশের হুইসিল, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া,
কী করে আসবে তুমি পথচারীদের চোখে-মুখে
নাচিয়ে শাড়িরে জয়োল্লাস?

গোলাপ মুঠোয় দ্রুত ম্লান হয়ে যায় বলে
গোলাপ অনিনি। তুমি আসবে কি আসবে না, এই
দ্বিধা বার বার
কামড়ে ধরেছে, তাই রজনীগন্ধার পরিবর্তে আমি একা
হতাশা কিনেছি আর উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি সন্ত্রাস,
কতবার আমরা চালান হয়ে গেছি
গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রে শ্বাপদের
মতো অন্ধকারে; আমাদের বেচে দেয়
ওরা অগোচরে
সামাজ্যবাদের কাছে। পুনরায় ঘাতকেরা শান্তির নিবাসে
ধানমণ্ডি লেকের এপারে।
বুলেটের ঝড় তোলে; ঘৃণা দিয়ে ওদের তাণ্ডব
থামানো যাবে না। বেচে আছি অস্ত্রহীন অসহায়,
ফ্যাসিবাদীদের মুখোমুখি। ফুল আর জ্যোৎস্না দিয়ে
বেপরোয়া ঘাতকের সঙ্গে আজ লড়াই করবো,
ওদের বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে কল্পনায়
সাজাবো রঙিন সেনা, কী করে সম্ভব?

এ সড়কে যেতে যেতে ভাবি,
কতবার এখানে চলেছে নির্যাতন পাশবিক,
কতবার বয়ে গ্যাছে রক্তস্রোত, তর তাজা ঘ্রাণ
এখনো ফোটায় গুচ্ছ গুচ্ছ রক্ত গোলাপ এখানে।

এ সড়কে কতবার পিতার বুকের হাহাকার,
থেঁতলানো সন্তানের মাথা নিয়ে বুকে
আর্তনাদ করেছেন মাতা,
স্বামীকে হারিয়ে কত বিপন্ন মহিলা হয়েছেন
উন্মাদিনী জীবনের প্রখর দুপুরে, কতবার অগণিত
বিশ্বাসঘাতক এ সড়কে ইশারায় আশ্রয়ের
একাগ্র আশ্বাস দিয়ে কত জীবনকে অঙ্গারে হাঁটিয়ে নিয়ে
পৌঁছে দিয়েছ খুনীদের আস্তানায়। এ সড়কে বেঈমান
সময়ের ধূর্ত ঘাড় মুচড়ে দিয়েছে রোদে-পোড়া সব হাত।

চলো না আমরা হাঁটি এ সড়কে পাশাপাশি, একটু দাঁড়াই,
চোখ ভরে দেখে নিই, শুনি
অশ্রুত অনেক গাঁথা বীরত্বের। রক্তাক্ত পায়ের ছাপ রেখে
সাজাই ফুলের তোড়া শহীদের পবিত্র উদ্দেশে।
যদি ওরা ডালকুত্তাদের
ভীষণ লেলিয়ে দেয় আমাদের দিকে, পরস্পর
চুম্বনে চুম্বনে মুছে দেবো ভয় ডর
সকল হিংস্রতা, এ রকম আলিঙ্গনে
মৃত্যু অনেক শ্রেয় নির্যাতিত মানুষের বর্ণনা করার
মতো শিল্প আমরা দু’জন
রেখে যাবো, বর্ণমালা দিয়ে গাঁথা উত্তরাধিকার,
তুমি আসবে তো? দ্যাখো, সূর্য তার শেষ বর্ণচ্ছটা
তোমার আসার পথে বিছিয়ে দিয়েছে, যেন পারস্য গালিচা।
মানুষের মহামিলনেই মুক্তি, তুমি আসছো তো?
আমাকে দেখিয়ে ওরা বলবে সবাই, দ্যাখো যায়,
স্মৃতি স্বপ্ন বিলিয়ে বেড়ানো কবি যায়, মাথার ভেতর যার
হিরন্ময় লতাগুল্ম, গোলাপের বন, কণ্ঠস্বর কী স্পর্ধায়
আকাশকে ছোঁয়, যায় মানুষের হাটে,
কবি গিয়ে মিছিলের কাতারে দাঁড়ায়। মড়কের
ব্যাপক ভৌতিক হাহাকারে
তবকের মোড়কে নিঃশব্দে প্রেম এসে
থতোমতো খেয়ে ঠাঁই খোঁজে আমাদের হৃদয়ের ঝর্ণাজলে।
মানব বন্ধনে ভালোবাসা পেয়ে যাবে
প্রগতির সমঅধিকার, তার চোখে তৃষ্ণা, নক্ষত্রের গান।

এ সাহস পেলে হে কোথায়, অনেকেই প্রশ্ন করে। হেসে বলি,
আমার বুকের মুধ্যে ঘুমন্ত সিংহের মতো ছিল। চতুর্দিকে
আগ্নেয়াস্ত্র বড় বেশি ধমকাচ্ছে বলে
সে-ও চোখ পাকিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে এখন।
উন্মত্ত নির্মম ঝড়ে শৃংখলিত হতে পারে ক্ষণকাল, তবু
থামবে না তার মৃত দিনরাত্রি ঝাঁকানো গর্জন।

নিশ্চুপ থেকো না আর চলে এসো, অন্য কোনো পথ
নয়, এ পথেই চলে এসো হাওয়ায় উড়িয়ে চুল
জোর কদমের তালে তালে দুলবে তোমার স্তনভার, তুমি
মাধুর্যের নদী হয়ে বয়ে যাবে, যা আমার খুব
ভালো লাগে, যতোক্ষণ তুমি ছুঁয়ে না যাও আমাকে, ততোক্ষণ
পোড়া-খাওয়া মানুষের ভিড়ে ঝোড়ো হৃদপিণ্ড এবং
প্রতীক্ষা থরোথরো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress